পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা। সালাত ও সালাম মহান রাসূল, আল্লাহর হাবীব ও মানবতার মুক্তিদূত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও সঙ্গীদের উপর। মুসলমানদের জ্ঞানের উৎস দুটি।
- ১. আল্লাহ’র ওহী।
- ২. আল্লাহ’র সৃষ্টি।
এক্ষেত্রে আমরা বস্তুবাদী, নাস্তিক ও যারা কোন বিশ্বস্ত গ্রন্থ পায়নি তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করি। তাদের জন্য একমাত্র জ্ঞানের উৎস এই পৃথিবী, আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকুল।
আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কথা জানি। এই পদ্ধতি আমাদের সত্য উদঘাটনে সাহায্য করে। আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি জ্ঞানের অন্য উৎস হতে সত্য উদঘাটনের জন্যও একটি পদ্ধতি আছে। সুতরাং প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য আমরা যেমন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করি, তেমনি পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অন্তর্নিহিত জ্ঞান আহরণের জন্য একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
সুতরাং, এই দুই উৎস মুসলমানদের জ্ঞানের উৎস। কেননা আল্লাহ তাআলা এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা করে পাই, একজন মুসলমানের তা অস্বীকার করা উচিত নয়। অনেক মানুষ মনে করে শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সত্যই মুসলমানদের জন্য সত্য। তারা মনে করে যদি কোন সত্য বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কুরআনে এর প্রমাণ থাকতে হবে। কিন্তু না-এটা যেমন নির্ভরযোগ্য উৎস, ওটাও নির্ভরযোগ্য উৎস। আল্লাহ তাআলা যা বলেছেন প্রকৃতিতে সে ব্যাপারে প্রমাণ সংগ্রহের দরকার নেই, তেমনি আল্লাহ প্রকৃতিতে যা বর্ণনা করেছেন কুরআন ও হাদীসে সেই ব্যাপারে প্রমাণ সংগ্রহের প্রয়োজন নেই।
কিন্তু কখনও কখনও এটা মানুষের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে যদি আমরা কুরআনে এমন কিছু পাই যা কুরআনের অবতীর্ণকালের মানুষ জানত না এবং তা প্রায় কয়েকশ বছর পরে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। সে কুরআন বিশ্বাস করে, এবং এই ঘটনা তার বিশ্বাস আরও সংহত করে – আল্লাহ তা‘আলাই কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। তা না হলে কিভাবে মহানবী (সঃ) এর সময়কালের মানুষ বিংশ শতাব্দীর কোন ঘটনা জানতে পারবে?
সুতরাং প্রকৃতি এবং আল্লাহ তাআলার প্রেরিত ওহী্ – উভয়ই জ্ঞানের উৎস। বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে তাই কোন দ্বন্দ্ব নেই। আল্লাহ বলেছেন:
আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কথা জানি। এই পদ্ধতি আমাদের সত্য উদঘাটনে সাহায্য করে। আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি জ্ঞানের অন্য উৎস হতে সত্য উদঘাটনের জন্যও একটি পদ্ধতি আছে। সুতরাং প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য আমরা যেমন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করি, তেমনি পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অন্তর্নিহিত জ্ঞান আহরণের জন্য একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
সুতরাং, এই দুই উৎস মুসলমানদের জ্ঞানের উৎস। কেননা আল্লাহ তাআলা এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা করে পাই, একজন মুসলমানের তা অস্বীকার করা উচিত নয়। অনেক মানুষ মনে করে শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সত্যই মুসলমানদের জন্য সত্য। তারা মনে করে যদি কোন সত্য বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কুরআনে এর প্রমাণ থাকতে হবে। কিন্তু না-এটা যেমন নির্ভরযোগ্য উৎস, ওটাও নির্ভরযোগ্য উৎস। আল্লাহ তাআলা যা বলেছেন প্রকৃতিতে সে ব্যাপারে প্রমাণ সংগ্রহের দরকার নেই, তেমনি আল্লাহ প্রকৃতিতে যা বর্ণনা করেছেন কুরআন ও হাদীসে সেই ব্যাপারে প্রমাণ সংগ্রহের প্রয়োজন নেই।
কিন্তু কখনও কখনও এটা মানুষের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে যদি আমরা কুরআনে এমন কিছু পাই যা কুরআনের অবতীর্ণকালের মানুষ জানত না এবং তা প্রায় কয়েকশ বছর পরে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। সে কুরআন বিশ্বাস করে, এবং এই ঘটনা তার বিশ্বাস আরও সংহত করে – আল্লাহ তা‘আলাই কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। তা না হলে কিভাবে মহানবী (সঃ) এর সময়কালের মানুষ বিংশ শতাব্দীর কোন ঘটনা জানতে পারবে?
সুতরাং প্রকৃতি এবং আল্লাহ তাআলার প্রেরিত ওহী্ – উভয়ই জ্ঞানের উৎস। বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে তাই কোন দ্বন্দ্ব নেই। আল্লাহ বলেছেন:
“যখন তুমি ভূমিষ্ঠ হও, তুমি কিছুই জানতে না…অতঃপর আল্লাহ্ তোমকে দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং মনদিয়েছেন।” (আননহল ৭৮)
যখন আমরা মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হলাম, আমরা কিছুই জানতাম না। তাহলে আমরা কিভাবে জ্ঞান অর্জন করব? ইন্দ্রিয় ও মনের সাহায্যে – জ্ঞান অর্জনের অন্য কোন উপায় নেই। এমনকি কুরআনের ক্ষেত্রেও, আমরা কিভাবে কুরআনকে জানি? আমরা এটা শুনি বা পড়ি, সুতরাং আমাদের ইন্দ্রিয় ব্যবহার করতেই হয়। আমাদের যুক্তি সম্পন্ন হতে হয়, আমাদের বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন হতে হয়। অন্যথায় আমরা কিছুই বুঝব না তা সে আল−াহর বাণীই হোক বা অন্য কারো।
প্রকৃতি থেকে জ্ঞান আহরণের জন্যও আমাদের এসব দরকার। সুতরাং ধর্ম বা প্রকৃতি হতে জ্ঞান আহরণের মাধ্যমগুলো অভিন্ন। যদি এই দুইয়ের মধ্যে বৈপরীত্য দেখা যায়, তখন কি হবে? তখন আমরা কি করব? মনে করুন কুরআনে বা কোন প্রাথমিক হাদীসে এমন কিছু পাওয়া গেল, বৈজ্ঞানিকগণ যার বিপরীতে মত দেন। এর জবাবে বলা যায় যে, প্রকৃত দ্বন্দ্ব কখনও হতে পারে না। অন্যথায় এটা আসমানী কিতাব হতে পারে না। যদি আল্লাহ তাআলা পৃথিবী সৃষ্টি করেন, তাহলে তিনি তার সৃষ্টি সম্বন্ধে জানেন। আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি, কুরআন আল্লাহর বাণী। আল্লাহ অবশ্যই প্রতারক নন। তিনি সত্যবাদী। সুতরাং, তিনি একভাবে পৃথিবী তৈরি করে আমাদের অন্য কিছু বলবেন – তা হতে পারে না। যদি আমরা এমন কিছু নিশ্চিতভাবে জানি এবং কেউ বলে যে, আল্লাহ অন্য কথা বলেছেন, আমরা বলব “না, এ সত্যহতে পারে না।”
এই কারণে কিছু বিজ্ঞ খ্রিস্টান বাইবেল ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য এই দুইয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, বাইবেল আল্লাহ তাআলার বাণী হতে পারে না, অন্তত পক্ষে সম্পূর্ণটা নয়। একটা উদাহরণের কথা মনে পড়ছে। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধাচারীরা বলে যে মৌলবাদীরা বিশ্বাস করে বাইবেলে একটি আয়াত আছে যেখানে বলা হয়েছে খরগোশ চিবিয়ে খায়। তারা বলে যে, এটা সত্য নয়। আমরা জানি যে, খরগোশ চিবায় না, কিন্তু সে মুখ এমনভাবে নাড়ায় যে সাধারণ কেউ সহজেই বলবে যে, খরগোশ উটের মত চিবায়। সুতরাং, আল্লাহ খরগোশ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি ভালোভাবেই জানেন খরগোশ কি করে। যদি কেউ বলে যে আল্লাহ এ কথা বলেছেন, এর মানে এই দাঁড়ায় যে আল্লাহ এ সম্পর্কে জানেন না। সুতরাং এটা হতে পারে না। অতএব বাইবেল আল্লাহর বাণী নয়।
সুতরাং, প্রথম কথা হচ্ছে আল্লাহর বাণী ও বিজ্ঞানের মাঝে প্রকৃত দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। যদি আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, এটা আল্লাহ তা‘আলার বা রাসূলের বাণী বা এটা আল্লাহ তাআলার বা তাঁর রাসূলের বক্তব্যের অর্থ এবং আমরা যদি নিশ্চিতভাবে জানি এটা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য প্রমাণিত, তাহলে এই দুইয়ের মাঝে প্রকৃত কোন দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। অর্থাৎ দ্বন্দ্বটা আপাতঃ হতে পারে।
আমি এখন এ ব্যাপারে ইবন তাইমিয়া’র বক্তব্য পেশ করছি। তিনি বলেছেন, বিশ্বাস এবং যুক্ত্তিযুক্তির পরিবর্তে আমি বিজ্ঞান বলছি কেননা তাদের জন্য এটা সহজে বোধগম্য। এখন আমি তোমাদের অন্য একটি প্রশ্ন করছি যেটা তোমাদের জন্য সহজ হবে। মনে কর আমরা নিশ্চিতভাবে কোন হাদীস জানি এবং এর অর্থও। কিন্তু অন্যদিকে কোন বৈজ্ঞানিকের সূত্র, কোন প্রমাণিত সত্য নয়। কোনটি তুমি গ্রহণ করবে। অবশ্যই প্রথমটি।
এখন এটা অন্যভাবে চিন্তা কর। মনে কর, আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে এটা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য হিসেবে প্রমাণিত কিন্তু হাদীসে এর কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই – তুমি কোনটি পছন্দ করবে? আমরা বৈজ্ঞানিক মতকে গ্রহণ করব (হাদীসের নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত হওয়ায় দুটি শর্তের একটি এটা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছ্ছে – বিশ্বস্ততা ও অর্থের স্বচ্ছতা) । মনে কর, হাদীসের প্রমাণ সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত কিন্তু এর অর্থ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত নই, তখন আমরা কি করব? আমরা বৈজ্ঞানিক মতকেই গ্রহণ করব এবং প্রামাণ্য হাদীসটির অর্থ অনুধাবনে একে ব্যবহার করব। তাই তিনি বলেছেন, আমরা সেটিই গ্রহণ করব যা প্রমাণিত, নির্দিষ্ট, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই।
ঐশী বাণী বা সৃষ্টি বা বিজ্ঞান যেটাই হোক না কেন, আমরা সন্দেহ থেকে নিশ্চিতকেই গ্রহণ করব। তারপর তিনি (তাইমিয়া) তৃতীয় প্রশ্ন করেছেন। যখন দুইয়ের মাঝে কোনটিই নিশ্চিত নয়, তখন আমরা কি করব? আমরা হাদীসটির প্রামাণ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত নই আবার বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত নই। তখন আমরা কি করব? আমরা অন্ততঃ কিছুদিনের জন্য সেটিই গ্রহণ করব যার পক্ষে অধিক সাক্ষ্য রয়েছে। আমি জানি যে, এটা বিচার করা কঠিন। তাই আমরা বলব আমরা জানি না, আর যদি বলতেই হয় তাহলে আমরা সেটিই গ্রহণ করব যার পক্ষে বেশী সাক্ষ্য রয়েছে।
মুসলমানদের কুরআন সম্পর্কে মতামত, কুরআন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি, একজন বিজ্ঞানীর প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির মতই। মনে কর, বিজ্ঞানীগণ একটি নিশ্চিত তত্ত্ব আবিষ্কার করলেন। অতঃপর তিনি এমন একটি জিনিস আবিষ্কার করলেন যা পূর্বের বিপরীত। তখন তিনি কি করেন? তিনি কি বলেন যে প্রকৃতি এই বৈপরীত্য ধারণ করে? সুতরাং গবেষণার দরকার নেই?
তিনি কি করেন? তিনি তার অন্তের কি বিশ্বাস করেন? তিনি কেন গবেষণা চালিয়ে যান? কারণ তিনি মনে করেন যে তিনি এর সমাধান করতে পারবেন। তিনি বিশ্বাস করেন প্রকৃতিতে কোন দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। কুরআনের ক্ষেত্রেও তাই। সুতরাং যখন কুরআনের একটি আয়াত অন্য একটি আয়াতের বিরোধিতা করে বলে মনে হলে হতাশ হওয়া যাবে না। শয়তানকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এই দ্বন্দ্বটা সাময়িক।
উদাহরণস্বরূপ, আমার স্কুলের একটি ঘটনা মনে পড়ে। একদিন শিক্ষক বললেন, প্রথম ফুটন্ত পানির তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয় স্বাভাবিক উচ্চতার কোন স্থানে। পরবর্তীতে কিছু বিজ্ঞানী পাহাড় বা উঁচু এলাকায় আরও কম তাপমাত্রায় পানি ফুটানো যায়্ – এই তথ্য উদ্ভাবন করেছিলেন। তারা বলেননি যে পানির দুই ধর্মই আছে। তারা গবেষণা চালিয়ে গেছেন এবং পরবর্তীতে তাপমাত্রা ও চাপের মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করেন।
একই ব্যাপার প্রযোজ্য কুরআনের বেলায়। যখন আয়াতের অর্থের মধ্যে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়, বুঝতে হবে যে, এটা তোমার অজ্ঞতা। এটা নিশ্চিত যে কুরআনের দুই আয়াতের অর্থে বা কোন সহীহ হাদীসের অর্থে বৈপরীত্য থাকতে পারে না। বিজ্ঞানীরা কেবলমাত্র স্বতন্ত্র বাসব্ত ঘটনার উপর নির্ভর করে না, তাদের রয়েছে বিভিন্ন থিওরি বা সূত্র। অনুরূপ আমাদের আছে ফিক্হ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হুকুম জানলেই কেবল একজনকে ফকীহ বলা হয় না। ফকীহ হচ্ছেন তিনি যিনি ধর্ম সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান রাখেন, ধর্মীয় আইন জানেন, একজন ফকীহ এসব ঘটনা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে বা কুরআন হাদীসের অনুসরণ করে উলামা সমপ্রদায়ের মত দ্বারা ব্যাখ্যা করেন। এটাই উসুল-আল-ফিকহএরমধ্যে আমরা পাই।
এবার সেই পদ্ধতি প্রসঙ্গে আসি, যাকে আমি বলব (কুরআন ও হাদীস থেকে অর্থ বের করার) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। কুরআন ও হাদীসের প্রকৃত অর্থ জানার উপায় কি?
প্রকৃতি থেকে জ্ঞান আহরণের জন্যও আমাদের এসব দরকার। সুতরাং ধর্ম বা প্রকৃতি হতে জ্ঞান আহরণের মাধ্যমগুলো অভিন্ন। যদি এই দুইয়ের মধ্যে বৈপরীত্য দেখা যায়, তখন কি হবে? তখন আমরা কি করব? মনে করুন কুরআনে বা কোন প্রাথমিক হাদীসে এমন কিছু পাওয়া গেল, বৈজ্ঞানিকগণ যার বিপরীতে মত দেন। এর জবাবে বলা যায় যে, প্রকৃত দ্বন্দ্ব কখনও হতে পারে না। অন্যথায় এটা আসমানী কিতাব হতে পারে না। যদি আল্লাহ তাআলা পৃথিবী সৃষ্টি করেন, তাহলে তিনি তার সৃষ্টি সম্বন্ধে জানেন। আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি, কুরআন আল্লাহর বাণী। আল্লাহ অবশ্যই প্রতারক নন। তিনি সত্যবাদী। সুতরাং, তিনি একভাবে পৃথিবী তৈরি করে আমাদের অন্য কিছু বলবেন – তা হতে পারে না। যদি আমরা এমন কিছু নিশ্চিতভাবে জানি এবং কেউ বলে যে, আল্লাহ অন্য কথা বলেছেন, আমরা বলব “না, এ সত্যহতে পারে না।”
এই কারণে কিছু বিজ্ঞ খ্রিস্টান বাইবেল ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য এই দুইয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, বাইবেল আল্লাহ তাআলার বাণী হতে পারে না, অন্তত পক্ষে সম্পূর্ণটা নয়। একটা উদাহরণের কথা মনে পড়ছে। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধাচারীরা বলে যে মৌলবাদীরা বিশ্বাস করে বাইবেলে একটি আয়াত আছে যেখানে বলা হয়েছে খরগোশ চিবিয়ে খায়। তারা বলে যে, এটা সত্য নয়। আমরা জানি যে, খরগোশ চিবায় না, কিন্তু সে মুখ এমনভাবে নাড়ায় যে সাধারণ কেউ সহজেই বলবে যে, খরগোশ উটের মত চিবায়। সুতরাং, আল্লাহ খরগোশ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি ভালোভাবেই জানেন খরগোশ কি করে। যদি কেউ বলে যে আল্লাহ এ কথা বলেছেন, এর মানে এই দাঁড়ায় যে আল্লাহ এ সম্পর্কে জানেন না। সুতরাং এটা হতে পারে না। অতএব বাইবেল আল্লাহর বাণী নয়।
সুতরাং, প্রথম কথা হচ্ছে আল্লাহর বাণী ও বিজ্ঞানের মাঝে প্রকৃত দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। যদি আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, এটা আল্লাহ তা‘আলার বা রাসূলের বাণী বা এটা আল্লাহ তাআলার বা তাঁর রাসূলের বক্তব্যের অর্থ এবং আমরা যদি নিশ্চিতভাবে জানি এটা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য প্রমাণিত, তাহলে এই দুইয়ের মাঝে প্রকৃত কোন দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। অর্থাৎ দ্বন্দ্বটা আপাতঃ হতে পারে।
আমি এখন এ ব্যাপারে ইবন তাইমিয়া’র বক্তব্য পেশ করছি। তিনি বলেছেন, বিশ্বাস এবং যুক্ত্তিযুক্তির পরিবর্তে আমি বিজ্ঞান বলছি কেননা তাদের জন্য এটা সহজে বোধগম্য। এখন আমি তোমাদের অন্য একটি প্রশ্ন করছি যেটা তোমাদের জন্য সহজ হবে। মনে কর আমরা নিশ্চিতভাবে কোন হাদীস জানি এবং এর অর্থও। কিন্তু অন্যদিকে কোন বৈজ্ঞানিকের সূত্র, কোন প্রমাণিত সত্য নয়। কোনটি তুমি গ্রহণ করবে। অবশ্যই প্রথমটি।
এখন এটা অন্যভাবে চিন্তা কর। মনে কর, আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে এটা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য হিসেবে প্রমাণিত কিন্তু হাদীসে এর কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই – তুমি কোনটি পছন্দ করবে? আমরা বৈজ্ঞানিক মতকে গ্রহণ করব (হাদীসের নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণিত হওয়ায় দুটি শর্তের একটি এটা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছ্ছে – বিশ্বস্ততা ও অর্থের স্বচ্ছতা) । মনে কর, হাদীসের প্রমাণ সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত কিন্তু এর অর্থ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত নই, তখন আমরা কি করব? আমরা বৈজ্ঞানিক মতকেই গ্রহণ করব এবং প্রামাণ্য হাদীসটির অর্থ অনুধাবনে একে ব্যবহার করব। তাই তিনি বলেছেন, আমরা সেটিই গ্রহণ করব যা প্রমাণিত, নির্দিষ্ট, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই।
ঐশী বাণী বা সৃষ্টি বা বিজ্ঞান যেটাই হোক না কেন, আমরা সন্দেহ থেকে নিশ্চিতকেই গ্রহণ করব। তারপর তিনি (তাইমিয়া) তৃতীয় প্রশ্ন করেছেন। যখন দুইয়ের মাঝে কোনটিই নিশ্চিত নয়, তখন আমরা কি করব? আমরা হাদীসটির প্রামাণ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত নই আবার বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত নই। তখন আমরা কি করব? আমরা অন্ততঃ কিছুদিনের জন্য সেটিই গ্রহণ করব যার পক্ষে অধিক সাক্ষ্য রয়েছে। আমি জানি যে, এটা বিচার করা কঠিন। তাই আমরা বলব আমরা জানি না, আর যদি বলতেই হয় তাহলে আমরা সেটিই গ্রহণ করব যার পক্ষে বেশী সাক্ষ্য রয়েছে।
মুসলমানদের কুরআন সম্পর্কে মতামত, কুরআন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি, একজন বিজ্ঞানীর প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির মতই। মনে কর, বিজ্ঞানীগণ একটি নিশ্চিত তত্ত্ব আবিষ্কার করলেন। অতঃপর তিনি এমন একটি জিনিস আবিষ্কার করলেন যা পূর্বের বিপরীত। তখন তিনি কি করেন? তিনি কি বলেন যে প্রকৃতি এই বৈপরীত্য ধারণ করে? সুতরাং গবেষণার দরকার নেই?
তিনি কি করেন? তিনি তার অন্তের কি বিশ্বাস করেন? তিনি কেন গবেষণা চালিয়ে যান? কারণ তিনি মনে করেন যে তিনি এর সমাধান করতে পারবেন। তিনি বিশ্বাস করেন প্রকৃতিতে কোন দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। কুরআনের ক্ষেত্রেও তাই। সুতরাং যখন কুরআনের একটি আয়াত অন্য একটি আয়াতের বিরোধিতা করে বলে মনে হলে হতাশ হওয়া যাবে না। শয়তানকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এই দ্বন্দ্বটা সাময়িক।
উদাহরণস্বরূপ, আমার স্কুলের একটি ঘটনা মনে পড়ে। একদিন শিক্ষক বললেন, প্রথম ফুটন্ত পানির তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয় স্বাভাবিক উচ্চতার কোন স্থানে। পরবর্তীতে কিছু বিজ্ঞানী পাহাড় বা উঁচু এলাকায় আরও কম তাপমাত্রায় পানি ফুটানো যায়্ – এই তথ্য উদ্ভাবন করেছিলেন। তারা বলেননি যে পানির দুই ধর্মই আছে। তারা গবেষণা চালিয়ে গেছেন এবং পরবর্তীতে তাপমাত্রা ও চাপের মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করেন।
একই ব্যাপার প্রযোজ্য কুরআনের বেলায়। যখন আয়াতের অর্থের মধ্যে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়, বুঝতে হবে যে, এটা তোমার অজ্ঞতা। এটা নিশ্চিত যে কুরআনের দুই আয়াতের অর্থে বা কোন সহীহ হাদীসের অর্থে বৈপরীত্য থাকতে পারে না। বিজ্ঞানীরা কেবলমাত্র স্বতন্ত্র বাসব্ত ঘটনার উপর নির্ভর করে না, তাদের রয়েছে বিভিন্ন থিওরি বা সূত্র। অনুরূপ আমাদের আছে ফিক্হ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হুকুম জানলেই কেবল একজনকে ফকীহ বলা হয় না। ফকীহ হচ্ছেন তিনি যিনি ধর্ম সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান রাখেন, ধর্মীয় আইন জানেন, একজন ফকীহ এসব ঘটনা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে বা কুরআন হাদীসের অনুসরণ করে উলামা সমপ্রদায়ের মত দ্বারা ব্যাখ্যা করেন। এটাই উসুল-আল-ফিকহএরমধ্যে আমরা পাই।
এবার সেই পদ্ধতি প্রসঙ্গে আসি, যাকে আমি বলব (কুরআন ও হাদীস থেকে অর্থ বের করার) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। কুরআন ও হাদীসের প্রকৃত অর্থ জানার উপায় কি?
- প্রথমতঃ ভাষা। ঐশী বাণী এবং সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সৃষ্টি বস্তুবিশেষ। সুতরাং সৃষ্টি সম্পর্কে জানার পদ্ধতি হচ্ছে পর্যবেক্ষণ। আমরা এগুলো দেখি বা শুনি। কিন্তু ঐশী বাণীর ক্ষেত্রে আমরা শব্দ পাই এবং এসব বাণী বা বাক্যগুলো বুঝতে হলে আমাদের ভাষা বুঝতে হবে। কুরআনের বহু আয়াতে বলা হয়েছে কুরআন আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা এটা বারবার বলেছেন যাতে কেউ কুরআনকে এমনভাবে ব্যাখ্যা না করে যাতে আরবী ভাষার সাথে বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।সুতরাং কুরআন ভালভাবে বোঝার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে আরবী ভাষা বোঝা। এটা তাদের জন্য প্রযোজ্য নয় যারা অনুবাদের উপর নির্ভর করে কেননা অনুবাদ তো করা হয়েছে আরবী ভাষা বোঝার উপর নির্ভর করেই। আরবী ভাষা জানা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় যারা সরাসরি কুরআন থেকে জ্ঞান আহরণ করতে চায়। অন্যথায় আরবীভাষী জনগণও সরাসরি কুরআন বুঝতে পারবে না, তাদেরকে উলামা সমপ্রদায়ের উপর নির্ভর করতে হয় কেননা কুরআনে ব্যবহৃত আরবী এবং বর্তমানে প্রচলিত আরবী এক নয়। আমি আরবী বলতে পারি, কিন্তু আমাকে তাফসীর পড়তে হয়। এমন অনেক শব্দ আছে যেগুলো বর্তমানে আরবীভাষী জনগণের পরিচিত নয়্ – এসব শব্দের অর্থ জানতে তাদের ডিকশনারী বা ভাষ্যকারের শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সময়কালের আরবী ভাষায়। আমরা যারা আধুনিক আরবী বলি তারা এমন অনেক ভুল করি যা কুরআনের অনুবাদ যারা পড়ে তারা ভুল করে না। কেন? কারণ কিছু শব্দ বর্তমানে নতুন অর্থ পেয়েছে, রাসূল (সঃ) এর সময়ে এসব শব্দের অর্থ এরকম ছিল না। ফলস্বরূপ, আমরা যারা কুরআন পড়ি, তারা কুরআনের নতুন অর্থ করি, যা মূল অর্থ হতে ভিন্ন।সুতরাং কুরআনের অর্থ ব্যাখ্যা করতে হবে রাসূল (সঃ) এর সময়কার আরবী ভাষায়। যারা কুরআনের ভুল অর্থ করেন তারা এই প্রথম শর্ত ভঙ্গ করেন। যদি তুমি কুরআনকে বিকৃত করতে চাও তোমাকে আরবী ভাষা পরিবর্তন করতে হবে। অনেক মুতাসাওয়িফা, কোন কোন মুতা’যিলা এমনকি কিছু তথাকথিত আধুনিক মানুষ পাশ্চাত্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কুরআনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই শর্ত ভঙ্গ করেন।
- দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে “তাফসিরুন নাসি বিন নাস”। নাস হচ্ছে একটি বক্তব্য। আরবী ভাষা জানার পর কুরআনের মাধ্যমেই কুরআনের বক্তব্যকে ব্যাখ্যা করতে হবে যেমনটি আরবীতে বলা হয়ে থাকে“ইয়ুফাসিরু বা‘দুহু বা‘দান”। –অর্থাৎ কুরআননিজেই এর ব্যাখ্যাস্বরূপ। তাই কোন আয়াতেসাধারণভাবে কোন কিছু উল্লেখ করা হলে অন্যআয়াতে এর বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। একইকথা প্রযোজ্য হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর হাদীসেরক্ষেত্রেও। আমরা কুরআনের ব্যাখ্যা করব হাদীসেরআলোকে কেননা কুরআনে বলা হয়েছে যে, হযরতমুহম্মদ (সঃ) এর কাজ হচ্ছে কুরআনের ব্যাখ্য করা,যা কিনা কুরআনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারেনা। সুতরাং হযরত মুহম্মদ(সঃ) যা করেছেন,কুরআনে অনত্ত পক্ষে তার অনুমতি রয়েছে। তাইকেউ যদি হযরত মুহম্মদ (সঃ) করেছেন এমনকোন কাজ কুরআনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে দাবীকরে তবে তা অগ্রহণযোগ্য। অতএব আমরাকুরআনকে ব্যাখ্যা করব কুরআনের আলোকে,কুরআনকে ব্যাখ্যা করব হাদীসের আলোকে।আমরা রাসূলের সুন্নাহ ব্যাখ্যা করব তার সুন্নাহরআলোকে।
- তৃতীয় প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে সাহাবীদের বক্তব্য, তাঁদের ব্যাখ্যাসমূহ ভালভাবে বোঝা। তাঁরা সবিশেষ মর্যাদার অধিকারী-কারণ এই নয় যে আমরা বিশ্বাস করি তারা নিষ্পাপ বরং তাঁদের মর্যাদার কারণগুলো হল: প্রথমত, কুরআনের ভাষা ছিল সেই ভাষা, যে ভাষায় তাঁরা কথা বলতেন, সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তী প্রজন্মের লোকদের থেকে তাঁরা কুরআন বেশী ভালভাবে বুঝতেন। দ্বিতীয়ত, তাঁরা হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর সাথে বাস করতেন। তাঁরা কুরআনের অবতীর্ণ হওয়ার সময়, ঘটনা ও উপলক্ষ জানতেন। তৃতীয়ত, তাঁরা সরাসরি হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
- চতুর্থত, তাঁরা সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলমান। তাঁরা নবীরাসূলের মত ছিলেন না, তারা অভ্রান্ত ছিলেন না, কিন্তু তাঁরা মুসলিম জাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই আমরা জানি নিশ্চিত না হয়ে তাঁরা কোন আয়াতের ব্যাখ্যা দিতেন না। যদি নিশ্চিত না হতেন তাহলে বলতেন “আমি নিশ্চিত নই” , না হলে বলতেন “আমার মনে হয় এই আয়াতের ব্যাখ্যাএরূপ”।
- যদি কোন নিশ্চিত ব্যাখ্যা না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে ঐ আয়াতের বা ঐ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইজমা’ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া রয়েছে কিয়াস। কিয়াস কুরআন থেকে সরাসরি গৃহীত কোন দলিল নয়, বরং যেসব ব্যাপারে কুরআনে সরাসরি নির্দেশ নেই, সেক্ষেত্রে আল্লাহ তা’য়ালার হুকুম জানার পদ্ধতি। কিয়াস-শব্দটির অর্থের ব্যাখ্যা এরূপ- আমরা কুরআন ও হাদীস থেকে জানি যে, ‘ক’ এর ক্ষেত্রে নির্দেশ ‘খ’, এখন আমরা ‘গ’ খুঁজে পেলাম যা ‘ক’ এর মত। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, ‘গ’ এর ক্ষেত্রেও নির্দেশ ‘খ’। এটাই কিয়াস।
- ষষ্ঠ প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে ইখলাস বা একনিষ্ঠতা। যে কেউ এমনকি যদি সে মুসলমান নাও হয়, সে ভাষা রপ্ত করতে পারে, সে হাদীস এবং কুরআনের আয়াতসমূহ শিখতে পারে, মুখস্থ করতে পারে, সে এসব আয়াতের অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা বুঝতে পারে, কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা তাকে প্রকৃত জ্ঞান দিবেন না- যে জ্ঞান একজন মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে, তিনি তাকে হিদায়াত দিবেন না যদি না তার ইখলাস থাকে।
আমরা কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান আহরণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব। আমরা আরবী শিখব, আমরা চিন্তা করব, কুরআন তেলাওয়াত করব, যত বেশী সম্ভব হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর হাদীস পড়ব, সাহাবাদের জীবনী পড়ব। সুতরাং আমরা সবকিছু করব, কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। আমাদের আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করতে হবে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য, আমাদের বিশ্বস্ত হতে হবে তাঁর প্রতি। ইবনে তাইমিয়া বলেছেন:
“আমি একটি আয়াতের একশত তাফসীর পড়ি, এরপরমসজিদে যাই এবং বলি, “ইয়া মু‘আল্লিমুল খালিলীআলিমনী” অর্থাৎ “হে খলীলের (ইব্রাহীম (আ)) শিক্ষক,আমাকে শেখান।”
এভাবেই আমাদের উলামা সমপ্রদায় বিশাল জ্ঞানের অধিকারী হয়েছেন। তাঁরা শুধু হাদীস ও কুরআন মুখস্থ করেননি, তাঁরা শুধু স্বতন্ত্র বিষয়গুলো সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার হুকুম আহকাম সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করেননি – বরং আল্লাহ্ তাআলা তাঁদের দিয়েছেন ফিকহ্ – কুরআন ও হাদীসের গভীর জ্ঞান।