হার্টের অপারেশনের পর অনেকেই চিন্তিত থাকেন রোগীকে কী ধরনের খাবার খাওয়াবেন। সাধারণত সার্জারির ৬-৮ সপ্তাহ সময় লাগে রোগীর ক্ষত শুকানোসহ খাবারের রুচি ও শরীরের শক্তি পুনরায় ফিরে পেতে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুস্থ হতে তিন মাসের মতো সময় লাগে। সাধারণত একজন হৃদরোগীকে কী ধরনের খাবার দিতে হবে, তা নির্ধারণ করা হয় রোগীর করনারি হার্টের অসুখ আছে কি না, রোগীর ওজন কত, তার রক্তচাপ ও লিপিড প্রোফাইল কেমন এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন হৃদরোগীদের এমন খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়, যাতে ফ্যাট, সম্পৃক্ত চর্বি, কোলেস্টেরল ও খাওয়ার লবণ কম থাকে এবং পূর্ণ শস্য, ফল, শাকসবজি, আমিষ ও খাদ্য আঁশ বেশি থাকে।
অপারেশনের পর তিন ধরনের খাবারের প্রতি লক্ষ রাখা দরকার। এগুলো হলো-
* ফ্যাট হকোলেস্টেরল হলবণ
সাধারণত দুই ধরনের ফ্যাট আছে- সম্পৃক্ত ফ্যাট ও অসম্পৃক্ত ফ্যাট। সম্পৃক্ত ফ্যাট হার্টের জন্য ক্ষতিকর। তাই পুরোপুরি বাদ দিন। সম্পৃক্ত ফ্যাট থাকে এমন খাবার হলো তেলে ভাজা যেকোনো খাবার, নারিকেল, পামতেল, গোশত, মাখন, ছানা ইত্যাদি।
যে খাবারগুলোতে কোলেস্টেরল বেশি সেগুলো বাদ দিন।
যেমন- ডিমের কুসুম, খাসির মাংস, কলিজা, পূর্ণ ননিযুক্ত দুধ ইত্যাদি।
বর্জন করতে হবে লবণযুক্ত খাবার। যেমন- আচার, লবণ দেওয়া বাদাম, চিপস, বিস্কুটসহ নানা রকম প্রসেস ফুড।
অপারেশন রোগীদের খাদ্য তৈরি বা পরিবেশনের সময় যে নিয়ম মেনে চলতে হবে
* সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ মোট ক্যালরির ৭ শতাংশের কম রাখা।
* ট্রান্স ফ্যাট মোট ক্যালরির ১ শতাংশের কম হওয়া।
* প্রতিদিন কোলেস্টেরল গ্রহণের পরিমাণ ৩০০ মিলিগ্রামের নিচে রাখা।
* সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন তেলসমৃদ্ধ মাছ খাবারে যুক্ত করা।
* খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার ও পূর্ণ শস্য রাখা।
* ফল ও শাকসবজি বেশি খাওয়ানো।
* দুধ ও দুধজাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে ননিবিহীন বা কম ননিযুক্ত খাবার বাছাই করা।
* লবণাক্ত যেকোন ধরনের খাবার বর্জন। তেমনি বেশি মিষ্টি ও চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করা।
* কম লবণ দিয়ে রান্না করা। একজনের জন্য দিনে সর্বোচ্চ এক চা চামচ (২০০০ মিলিগ্রাম) লবণ বরাদ্দ
* কফি ও অ্যালকোহল না দেওয়া।
* ওজন বেশি হলে প্রয়োজনীয় মোট ক্যালরির তুলনায় কিছুটা কম দেওয়া।
উপকারী খাবার
অপারেশনের পরের সময় বিশেষ কিছু খাবার খেলে উপকার পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মিষ্টি আলু, সবুজ শাক, তাজা ফল, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, লাল আটার রুটি, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি রাখুন।
ক্ষতিকর খাবার
এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো বাদ দিতে হবে। যেমন- চর্বিযুক্ত মাংস, কলিজা, লাল মাংস, মার্জারিন, লবণাক্ত যেকোন খাবার, চিনি, আইসক্রিম, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, ডিমের কুসুম, প্রসেস ফুড ।
অপারেশন-পরবর্তী সমস্যা ও সমাধান
প্রথম কয়েক সপ্তাহ রোগীদের মধ্যে খাবারে অরুচি, খাবারের স্বাদ পরিবর্তন, বমি বমি ভাব, গলা শুকিয়ে যাওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
এ সমস্যাগুলো থাকলে কী করবেন?
* প্রতিটি রোগীরই খাবারে অরুচি থাকে। সে জন্য রোগীকে একবারে বেশি না খেতে দিয়ে কম করে বারবার খেতে দিন। এমন খাবার দিন, যা খেতে সহজ ও হজম হয় সহজে। যেমন- স্যুপ, নরম ভাত, সাগুদানা, ফল ইত্যাদি।
* বমি করার প্রবণতা থাকলে গরম খাবারের পরিবর্তে ঠাণ্ডা খাবার দিন। ঠাণ্ডা কাস্টার্ড, দই, ফলের রস, স্যান্ডউইচ বা সালাদ দিতে পারেন।
* বারবার গলা বা মুখ শুকিয়ে এলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করান। এ ছাড়া চুইংগাম বা মিন্ট চকোলেট মুখে রাখতে পারে। অথবা ফলের রস বা সবজির সালাদ খাওয়ানো যেতে পারে। পানি পান করতে ভালো না লাগলে লেবুর শরবত খেতে দিন।
* কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে আঁশযুক্ত খাবার যেমন ডাল, পূর্ণ শস্য, তাজা ও শুকনা ফল, শাকসবজিসহ দিনে ৮-১০ গ্লাস তরল খেতে দিন। কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করান।