দাঁতের সুরক্ষায় করণীয়


দাঁত  মানুষের দেহের গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ। বর্তমানে আমাদের দেশে দাঁত সুরক্ষার জন্য বেশ আধুনিক চিকিৎসা চালু হয়েছে। দাঁতের সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা বিশিষ্ট ডেন্টাল সার্জন ডা. সৈয়দ তমিজুল আহসান রতন।
প্রশ্ন : দাঁতের চিকিৎসা এখন আমাদের দেশে অত্যন্ত আধুনিক। বিশ্বে যে ধরনের আধুনিক দাঁতের চিকিৎসা রয়েছে, তার সবই বাংলাদেশে আছে। আপনার দৃষ্টিতে দাঁতের সুরক্ষার জন্য আধুনিক চিকিৎসা মানে কী?
উত্তর : মুখ হচ্ছে একটা মাত্র প্রবেশদ্বার শরীরের ভেতরে যাওয়ার। এত বড় প্রবেশ দ্বার আর নেই। সে জন্য এটা যদি ঠিক না থাকে ভেতরের জিনিসগুলো কীভাবে ঠিক থাকবে? তাই দাঁতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি যদি ঠিক রাখি, সব ঠিক থাকবে। এখন মুখের পরিচ্ছন্নতা ঠিক রাখার বিষয়টি কী? আন্তর্জাতিকভাবে বলা হয়, ছয় মাস পরপর সম্পূর্ণ চেকআপ করা। তার মুখের কোথায় কী সমস্যা আছে সেটি দেখা। এখন চেকআপ করার পর দেখা যায় তার ক্ষয়, গর্ত আছে। এই দাঁতটা যাতে ফেলে না দিতে হয়, এর আধুনিক চিকিৎসা বের হয়ে গেছে অনেক ধরনের।

প্রশ্ন : কী ধরনের?

উত্তর : এখন যদি একটা লোকের সাধারণ গর্ত হয়, তখন ফিলিং করে  বন্ধ করে দিতে পারি, তাহলে এটা এরপর আর ক্ষতি হবে না। যদি ক্ষতি হয়েই যায় তাহলে দাঁত ফেলতে হবে না। কারণ আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। রুট ক্যানেল করে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করে সেই দাঁতটাকে মমি করে অনেক দিন পর্যন্ত রাখা যায়।
তিনটি লেয়ার রয়েছে দাঁতের। প্রথম লেয়ার, দ্বিতীয় লেয়ার এবং তৃতীয় লেয়ার। এরপরে যদি সমস্যা হয়, তখন আর সাধারণ ফিলিং দেওয়া সম্ভব হয় না। রোগী আর থাকতে পারে না। প্রচণ্ড ব্যথা হয়। আগেকার দিনে চিকিৎসা ছিল ফেলে দেওয়া। আধুনিক চিকিৎসা হলো দাঁতটা রাখা। এখন আর দাঁতটা ফেলতে হয় না। তাকে রুট ক্যানেল করলে হয়। রুট ক্যানেল করার পর সেখানে আমরা একটি ক্যাপ লাগিয়ে দিই। এই দাঁতটি দিয়ে সে সারা জীবন স্বাভাবিক দাঁতের মতো থাকতে পারে।

প্রশ্ন : ফিলিং করে দাঁত রক্ষা করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম ফিলিং আছে। কোনোটা কালো, মেটালিক, মার্কারি বেইজ। এই রকম ভেদ কেন এবং এর মধ্যে ভালো কোনটা?

উত্তর : যখন কোনো ধরনের ফিলিং ম্যাটেরিয়াল ছিল না তখন মেটাল জাতীয় ফিলিং মেটেরিয়ালগুলো ব্যবহার করা হতো। এলয় এবং মার্কারি এর সমন্বয়ে একটি জিনিস তৈরি করা হয় সেটাকে মেটাল ফিলিং বলে। কিন্তু মার্কারি হলো ক্ষতিকর এবং কারসিনোজেনর রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিকভাবে সবাই বলছে এই জিনিসগুলো ব্যবহার করা যাবে না। এর পরিবর্তে অনেক ধরনের জিনিস বের হয়েছে। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে দাঁতের রঙে ফিলিং করা যায়। পাশাপাশি এর শক্তি অনেক বেশি হয়। কেউ যদি মনে করে এটা কি চিরস্থায়ী ফিলিং? আসলে চিরস্থায়ী বলে তো পৃথিবীতে কিছু নেই। কারণ প্রতিটি ফিলিংই পাঁচ বছর পরপর চেকআপ করে পরিবর্তন করা উচিত। এই কম্পোজিট ফিলিংগুলো অনেকদিন থাকে, তবে পরির্বতন করতে হয়। দাঁতটা বেঁচে যায় তবে ফিলিং ম্যাটেরিয়ালগুলো ক্ষয় হবে।

প্রশ্ন : অনেকে মনে করে ম্যাটালিক ফিলিং শক্ত বেশি। মাড়ির দাঁতের জন্য তাই কসমেটিক ফিলিং হবে কি না?

উত্তর : আমরা মাড়ির দাঁতে এই ফিলিং অহরহ করছি। কোনো সমস্যা নেই।

প্রশ্ন : এই ফিলিং করার জন্য যে আল্ট্রাভায়োলেট-রে দেওয়া হয়। এই রে যে মাত্রায় দেওয়া হয় সেটা ক্ষতিকর কি না?

উত্তর : না, একদমই কোনো ক্ষতি করে না। এখানে যতটুকু রে ব্যবহার করা হয়, সেটা তেমন ক্ষতিকর নয়। যে চিকিৎসক করছেন তাঁর কি ক্ষতি হচ্ছে না? আসলে জিনিসটি এত স্বল্প মাত্রায় এতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

প্রশ্ন: আধুনিক চিকিৎসা বলতে এখন একটি শব্দ জড়িয়ে গেছে সেটা হলো লেজার চিকিৎসা। মুখের বা দাঁতের আধুনিক চিকিৎসায় লেজারের ভূমিকা কী?

উত্তর : অনেকের দেখা যায় গাম বা মাড়ির রং বিভিন্ন হয়। এই রং প্রাকৃতিক করার জন্য লেজারের কিছু ভূমিকা রয়েছে।

প্রশ্ন : আর দাঁতের সমস্যায়?

উত্তর : আসলে দাঁতের সমস্যায় সার্জারির কিছু ভূমিকা রয়েছে। দাঁতের সমস্যায় এখনো রুট ক্যানেল, সার্জারি করা হয়। আসলে আমাদের দেশে দাঁতের সমস্যায় এখনো তেমন লেজারের ব্যবহার নাই। আমাদের দেশে যদি লেজার ব্যবহার করতে যাই, আসলে এগুলো এত দামি যে সব দন্ত্যচিকিৎসকের ক্ষেত্রে করা সম্ভব নয়। একটা রুট ক্যানেল করতে বাইরের দেশে এক হাজার ২০০ ডলার নিচ্ছে। আমরা তো সেটা নিতে পারি না। আমরা এখন অনেক আধুনিক মেশিন ব্যবহার করছি। যেমন ডিজিটাল এক্সরে মেশিন রয়েছে। তবে সব দন্ত্যচিকিৎসক লেজার ব্যবহার করতে পারবেন না। আর রংটা দূর হয় ঠিকই তবে কিছুদিন পর আবার আগের রং ফিরে আসে। আমরা ব্লিচিং করি। ব্লিচিং থাকে কিছুদিন। তবে একপর্যায়ে স্পর্শকাতর হয়ে যায়। আমি সাধারণত কম উৎসাহী করি, বলি খুব বাধ্য না হলে করো না।

প্রশ্ন : একটা সময় ছিল দাঁতে ব্যথা হলে, দাঁত ভেঙে গেলে, ক্রাউনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা ফেলে দেওয়া হতো। দাঁত ফেলে দেওয়ার অনেক ক্ষতি রয়েছে। মানুষ সচেতন, এটা বোঝেন। এই দাঁতটা রাখতে হলে রুট ক্যানেল এবং ক্যাপ করেন আপনারা। এই বিষয়টি কী?

উত্তর : আসলে দাঁতকে ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে যে মমি করা হয়, ভেতরের যে নার্ভগুলো সেগুলো যদি দিনকে দিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় তখন এটা করতে হয়। এক একটা দাঁতে এক একটা নার্ভের ঘর থাকে। পাল্প থাকে। আমরা সেগুলোকে বের করি। এরপর সম্পূর্ণ পরিষ্কার করি। এরপর এর ভেতরে কৃত্রিম ফিলার দিয়ে দিই। আমি সাধারণত দাঁত ফেলি না। এর উপরে একটা কভার লাগিয়ে দিই। এই দাঁত দিয়ে সে সব করে।

প্রশ্ন : অনেকে প্রশ্ন করে রুট ক্যানেলে আপনি নার্ভ ফেলে দিচ্ছেন, রক্তনালি ফেলে দিচ্ছেন, দাঁতটা তো মরে যাবে। এর ওপর একটি কাভার বসিয়ে দেবেন। এই দাঁত দিয়ে খেয়ে কি আমি স্বাদ পাব?

উত্তর : কোনো সময় কেউ কি খেয়াল করেছে আমি নির্দিষ্ট দাঁত দিয়ে খেয়ে আরাম পাচ্ছি, স্বাদ পাচ্ছি। স্বাদ প্রকাশ পায় জিহ্বে। দাঁত কেবল চাবায়। আসলে দাঁতের কাজ চিবিয়ে খাওয়া। এটা তখন হয়। আর পাল্প ফেলে দিলে পুরোপুরি মরে যাওয়ার যে ধারণা, সেটা আসলে হয় না। দাঁতের সঙ্গে হাড়ের সম্পর্ক থাকছে। রুট ক্যানেল করলে সে আরো শক্ত হয়ে যায় হাঁড়ের সঙ্গে। আর সে ভাঙতে চায় না।
সূত্র : এনটিভি

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »