আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ প্রিয় বন্ধুরা। মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে শুকরিয়া যানাচ্ছি আমাকে এই পোষ্টটি করার তৌফিক দান করার জন্য। আমার পরিচয়, আমি মুসলিম। পবিত্র আল-কোরআন এবং সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য কোন বাণী বা বাক্যে আমি বিশ্বাসী নই। দোয়া করি সকলেই যেন পবিত্র আল-কোরআন এবং সহীহ হাদীসের আলোকে নেক আমল করে যেতে পারেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
আসুন এখন মূল পোষ্টের আলোচনায় আসি………..
গত পোষ্টটি যারা পড়েন নি তারা এখান থেকে পড়ে নিন সহীহ্ বোখারী শরীফ (হাদিস ১১ থেকে ২০)
পরিচ্ছেদ ১৫ :- আমলের দিক থেকে ঈমানদারদের শ্রেষ্ঠত্বের স্তরভেদ – হাদিস নং ২১ এবং ২২
হাদিস -২১
আবু সাইদ খুদরি রাঃ হতে বর্ণিত,নবী করিম সাঃ বলেছেন,জান্নাতিরা জান্নাতে আর জাহান্নামিরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।পরে আল্লাহ তায়ালা (ফিরিশতাদের) বলবেন,যার অন্তরে একটি সরিষা পরিমাণও ঈমান রয়েছে,তাকে দোযখ থেকে বের করে নিয়ে আস।তারপর তাদেরকে দোযখ থেকে বের করে নিয়ে আসা হবে এমন অবস্থায় যে,তারা (পুড়ে) কালো হয়ে গেছে।এরপর তাদের বৃষ্টিতে বা হায়াতের নদিতে ফেলা হবে।ফলে তারা সতেজ হয়ে উঠবে,যেমন নদির পাশে ঘাসের বীজ গজিয়ে উঠে।তুমি কি দেখতে পাওনা সেগুলো কেমন হলুদ রঙ্গের হয় ও ঘন হয়ে গজায়?
হাদিস -২২
হযরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্নিত,তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃএকবার আমি ঘুমন্ত অবস্থায় (স্বপ্নে) দেখলাম যে,লোকদেরকে আমার সামনে হাজির করা হচ্ছে।আর তাদের পরনে ছিল জামা।কারো জামা বুক পর্যন্ত কারো জামা এর নিচ পর্যন্ত।আর ওমর ইবনে খাত্তাবকে আমার সামনে হাযির করা হল এমতাবস্থায় যে, তিনি তার জামা (এত লম্বা যে) টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন।সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন,ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি এর (স্বপ্নের) কি ব্যাখ্যা করবেন?তিনি বললেন,(এই জামা হল) দিন।
পরিচ্ছেদ ১৬ :- লজ্জা ঈমানের অংগ – হাদিস নং ২৩
হাদিস -২৩
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত,একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক আনসারির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।আর ঐ আনসারি তার ভাইকে (অধিক) লজ্জা ত্যাগের জন্য বলতেছিলেন।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঐ আনসারিকে বললেন,তাকে ছেড়ে দাও।কারণ লজ্জা ঈমানের অংশ।
পরিচ্ছেদ ১৭ :- যারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় – হাদিস নং ২৪
হাদিস -২৪
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আদিষ্ট হয়েছি,যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে,আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই ও মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লহার রাসুল,আর নামাজ কায়েম করে,যাকাত দেয়।তারা যদি এ কাজগুলো করে,তবে আমার পক্ষ থেকে তাদের জান-মালের নিরাপত্তা লাভ করলো;তবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী কোন শাস্তি থাকলে তা ভিন্ন কথা।আর তাদের হিসাবের ভার আল্লাহর উপর ন্যস্ত।
পরিচ্ছেদ ১৮ :- যে বলে, ‘ঈমান আমলেরই নাম’ – হাদিস নং ২৫
হাদিস -২৫
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে থেকে বর্নিত,রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করা হল,কোন আমলটি উত্তম?তিনি বললেনঃ “আল্লাহ ও তার রাসুলের উপর ঈমান আনা।”প্রশ্ন করা হল,তারপর কোনটি?তিনি বললেনঃআল্লহর রাস্তায় জিহাদ করা।আবার প্রশ্ন করা হল,তারপর কোনটি?তিনি বললেন,কবুল হজ্জ।
পরিচ্ছেদ ১৯ :-ইসলাম গ্রহণ যদি খাঁটি না হয় – হাদিস নং ২৬
হাদিস -২৬
হযরত সা’দ (রাঃ) হতে বর্নিত,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একদল লোককে কিছু দান করলেন।সা’দ (রাঃ) সেখানে ছিলেন।সা’দ (রাঃ) বলেন,রাসুল (সাঃ) তাদের একজন লোককে কিছু দিলেন না।সে ব্যক্তি আমার কাছে তাদের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় ছিল।তাই আমি বললাম,হে আল্লাহর রাসুল! আপনি অমুক ব্যক্তিকে বাদ দিলেন কেন?আল্লহর কসম! আমি তাকে মুমিন হিসেবেই জানি।তিনি বললেন (মুমিন) না মুসলিম?তখন আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম।তারপর আমি তার সম্পর্কে যা জানি,তা প্রবল হয়ে উঠলো।তাই আমি আমার বক্তব্যে আবার বললাম,আপনি অমুককে দানের ব্যাপারে বিরত রইলেন?আল্লাহর কসম! আমি তাকে মুমিন বলেই জানি।তিনি বললেন,না মুসলিম? আল্লহর কসম! আমি তাকে মুমিন হিসেবেই জানি।তিনি বললেন, না মুসলিম?তখন আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম।তারপর আমি তার সম্পর্কে যা জানি,তা প্রবল হয়ে উঠলো।তাই আমি আমার বক্তব্য আবার বললাম।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আবারও সেই জবাব দিলেন।তারপর বললেনঃসা’দ আমি কখনো ব্যক্তি বিশেষকে দান করি,অথচ অন্য লোক আমার কাছে তার চাইতে অধিক প্রিয়।আর এটা এ আশংকায় যে,(সে ঈমান থেকে ফিরে যেতে পারে পরিণামে)আল্লাহ তায়ালা তাকে অধোমুখে জাহান্নামে ফেলে দিবেন।
পরিচ্ছেদ ২০ :-সালামের প্রচলন করা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত – হাদিস নং ২৭
হাদিস -২৭
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্নিত,এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করলো,ইসলামে কোন কাজটি সবচাইতে উত্তম?তিনি বললেনঃতুমি লোকদের আহার করাবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সাবাইকে সালাম দিবে।
পরিচ্ছেদ ২১ :- স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা – হাদিস নং ২৮
হাদিস -২৮
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। (আমি দেখি), তার অধিবাসীদের অধিকাংশই স্ত্রীলোক; (কারণ) তারা কুফরী করে। জিজ্ঞাস করা হল, ‘তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে?’ তিনি বললেনঃ ‘তারা স্বামীর অবাধ্য হয় এবং অস্বীকার করে’। তুমি যদি দীর্ঘকাল তাদের কারো প্রতি ইহসান করতে থাক, এরপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখলেই বলে, ‘আমি কখনো তোমার কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাইনি’।
পরিচ্ছেদ ২২ :- পাপ কাজ জাহিলী যুগের স্বাভাব – হাদিস নং ২৯ এবং ৩০
হাদিস -২৯
আহনাফ ইবনে কায়স (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি (সিফফীনের যুদ্ধে) এ ব্যক্তিকে [আলী (রাঃ) কে] সাহায্য করতে যাচ্ছিলাম। আবু বাকরা (রাঃ) এর সাথে আমার সাক্ষাত হলে তিনি বললেনঃ ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ’? আমি বললাম, ‘আমি এ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে যাচ্ছি”। তিনি বললেনঃ ফিরে যাও। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, দুজন মুসলমান তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ হত্যাকারী (তো অপরাধী), কিন্তু নিহত ব্যক্তির কি অপরাধ? তিনি বললেন, (নিশ্চয়ই) সে তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল।
হাদিস -৩০
মা’রুর (রাঃ) থেকে বর্নিত আছে, তিনি বলেন, আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবু যর (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করলাম। তখন তার পরনে ছিল একজোড়া (লুঙ্গি ও চাদর) আর তার চাকরের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাকে এর (সমতার) কারণ জিজ্ঞাস করলাম। তিনি বললেনঃ একবার আমি এক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেনঃ আবু যর! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো জাহিলি যুগের স্বভাব রয়েছে। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদের ভাই। আল্লাহ তায়ালা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন তাকে নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরে, তাকে তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিওনা, যা তাদের জন্য খুব বেশী কষ্টকর। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সাহায্য করবে।
দেখতে পারেন। সহীহ্ বোখারী শরীফ (হাদিস ৩১ থেকে ৪০)