সহীহ্ বোখারী শরীফ (হাদিস ৪১ থেকে ৫০)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ প্রিয় বন্ধুরা। মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে শুকরিয়া যানাচ্ছি আমাকে এই পোষ্টটি করার তাওফিক দান করার জন্য। আমার পরিচয়, আমি মুসলিম। পবিত্র আল-কোরআন এবং সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য কোন বাণী বা বাক্যে আমি বিশ্বাসী নই। দোয়া করি সকলেই যেন পবিত্র আল-কোরআন এবং সহীহ হাদীসের আলোকে নেক আমল করে যেতে পারেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
আসুন এখন মূল পোষ্টের আলোচনায় আসি………..
গত পোষ্টটি যারা পড়েন নি তারা এখান থেকে পড়ে নিন  সহীহ্ বোখারী শরীফ (হাদিস ৩১ থেকে ৪০)
পরিচ্ছেদ ৩২ :-আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচাইতে পছন্দনীয় আমল সেটাই যা নিয়মিত করা হয় – হাদিস নং ৪১
হাদিস – ৪১
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম (সাঃ) একবার তাঁর কাছে আসেন, তার নিকট তখন এক মহিলা ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইনি কে? আয়িশা (রাঃ) উত্তর দিলেন, অমুক মহিলা, এ বলে তিনি তাঁর সালাতের উল্লেখ করলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ‘থাম, তোমরা যতটুকু সামর্থ্য রাখ, ততটুকুই তোমাদের করা উচিত। আল্লাহতায়ালা ততক্ষণ পর্যন্ত (সওয়াব দিতে) বিরত হন না, যতক্ষন না তোমরা নিজেরা ক্লান্ত হয়ে পড়। আল্লাহর কাছে সবচাইতে পছন্দনীয় আমল তা-ই, যা আমলকারী নিয়মিত করে থাকে।
পরিচ্ছেদ ৩৩ :-ঈমানের বাড়া-কমা – হাদিস নং ৪২ এবং ৪৩
হাদিস – ৪২
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ যে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমানও নেকী থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি গম পরিমানও নেকী থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমানও নেকী থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।
হাদিস – ৪৩
উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে বর্ননা করেন, এক ইয়াহুদি তাকে বললঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহুদি জাতির উপর নাযিল হত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করতাম। তিনি বললেন, কোন আয়াত? সে বললঃ
“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ন করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম”। (৫:৩)
উমর (রা) বললেন, এটি যে দিনে এবং যে স্থানে নবী করীম (সাঃ) এর উপর নাযিল হয়েছিল তা আমরা জানি; তিনি সেদিন আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন এবং তা ছিল
জুম’আর দিন।
পরিচ্ছেদ ৩৪ :-যাকাত ইসলামের অঙ্গ – হাদিস নং ৪৪
হাদিস – ৪৪
তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাজদবাসী এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এলো। তার মাথায় চুল ছিল এলোমেলো। আমরা তার কথার মৃদু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু সে কি বলছিল, আমরা তা বুঝতে পারছিলাম না। এভাবে সে কাছে এসে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। সে বলল, আমার উপর এ ছাড়া আরো সালাত আছে? তিনি বললেনঃ না, তবে নফল আদায় করতে পার। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ আর রমজানের সিয়াম। সে বলল, আমার উপর এ ছাড়া আরও সওম আছে? তিনি বললেনঃ না, তবে নফল আদায় করতে পারো। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ তার কাছে যাকাতের কথা বললেন। সে বলল, আমার উপর এ ছাড়া আরো দেয় আছে? তিনি বললেন, না; তবে নফল হিসেবে দিতে পারো।
বর্ণনাকারী বলেন, সে ব্যক্তি এই বলে চলে গেলেন; আল্লাহর কসম! আমি এর চেয়ে বেশীও করব না এবং কমও করব না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ সে সফলকাম হবে যদি সত্য বলে থাকে।
পরিচ্ছেদ ৩৫ :-জানাযার অনুগমন ঈমানের অঙ্গ – হাদিস নং ৪৫
হাদিস – ৪৫
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় কোন মুসলমানের জানাজায় অনুগমন করে এবং তার সালাত-ই-জানাজা আদায় ও দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সাথে থাকে, সে দুই কিরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে। প্রতিটি কিরাত হল উহুদ পর্বতের মতো। আর যে ব্যক্তি শুধু তার জানাজা আদায় করে, তারপর দাফন সম্পন্ন হওয়ার আগেই চলে আসে, সে এক কিরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে।
পরিচ্ছেদ ৩৬ :-অজ্ঞাতসারে মু’মিনের আমল নষ্ট হওয়ার আশংকা – হাদিস নং ৪৬ এবং ৪৭
হাদিস – ৪৬
যুবাইদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আবু ওয়াইল (র) কে মুরজিয়া* সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, আবদুল্লাহ (ইবনে মাসুদ)আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।
[মুরজিয়া= একটি বাতিল ফিরকা, যাদের মত হল, ভাল হোক বা মন্দ হোক কোন আমলের মূল্য নেই এবং ঈমান আনার পর কোন গুনাহ ক্ষতিকর নয়।}
হাদিস – ৪৭
উবাদা ইবনে সামিত (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা) লায়লাতুল কদর সম্পর্কে খবর দেওয়ার জন্য বের হলেন। তখন দু’জন মুসলমান পরস্পর বিবাদ করছিল। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের লায়লাতুল কদর সম্পর্কে খবর দেওয়ার জন্য বেরিয়েছিলাম; কিন্তু তখন অমুক অমুক বিবাদে লিপ্ত থাকায় তা (নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কিত জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর হয়তো বা এটাই তোমাদের জন্য কল্যানকর হবে। তোমরা তা অনুসন্ধান করো ২৭, ২৯ ও ২৫ তম রাতে।
পরিচ্ছেদ ৩৭ :-রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে ঈমান,ইসলাম – হাদিস নং ৪৮
হাদিস – ৪৮
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জনসম্মুখে বসা ছিলেন, এমন সময় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন “ঈমান কি?” তিনি বললেনঃ “ঈমান হল, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তার ফিরিশতাগণের প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তার সাঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং রাসুলগনের প্রতি। আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি”। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন “ইসলাম কি?” তিনি বললেনঃ “ইসলাম হল, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তাঁর সঙ্গে শরীক করবেন না, সালাত কায়েম করবেন, ফরয যাকাত আদায় করবেন এবং রমযান এর সাওম পালন করবেন। ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, “ইহসান কি?” তিনি বললেনঃ আপনি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি তাকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাকে দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে,) তিনি আপনাকে দেখছেন”। ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, “কিয়ামাত কবে?” তিনি বললেনঃ “ এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশী জানেন না। তবে আমি আপনাকে কিয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছিঃ বাঁদী যখন তার প্রভুকে প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (কিয়ামতের বিষয়) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না”। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেনঃ
“কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহরই নিকট……”। (৩১:৩৪)
এরপর ঐ ব্যক্তি চলে গেলে তিনি বললেনঃ তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন। তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, “ইনি জীবরীল (আ)। লোকদেরকে তাদের দীন শেখাতে এসেছিলেন”।
আবু আবদুল্লাহ বুখারী (র) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এসব বিষয়কে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
পরিচ্ছেদ ৩৮ :-পরিচ্ছেদ – হাদিস নং ৪৯
হাদিস – ৪৯
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবু সুফিয়ান ইবনে হারব আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, হিরাকল তাঁকে বলেছিল, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তারা (ঈমানদারগণ) সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি উত্তর দিয়েছিলে, তারা সংখ্যায় বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের ব্যাপার এরূপই থাকে যতক্ষন না তা পূর্ণতা লাভ করে। আর আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, কেউ তাঁর দীন গ্রহণ করার পর তা অপছন্দ করে মুরতাদ হয়ে যায় কি-না? তুমি জবাব দিয়েছ, “না”। প্রকৃত ঈমান এরূপই, ঈমানের স্বাদ অন্তরের সাথে মিশে গেলে কেউ তা অপছন্দ করে না।
পরিচ্ছেদ ৩৯ :-দীন রক্ষাকারীর ফযীলত – হাদিস নং ৫০
হাদিস – ৫০
নু’মান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, ‘হালাল ও স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দুয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয় – যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তার উদাহরণ সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহর সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলোর সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তার সংরক্ষিত এলাকা হলো তার নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল কলব।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »