কোরবানির ফজিলত

কোরবানির ফজিলত


কোরবানির ফজিলত
(ক) কোরবানি দাতা নবী ইব্রাহীম (আ.) ও মুহাম্মদ (সা.)- এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন।
(খ) পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কোরবানি দাতা আল্লাহ রাববুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :-
لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمۡ لِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٧ [الحج: ٣٧]
আল্লাহর নিকট পৌছায় না উহার গোশত এবং রক্ত, বরং পৌছায় তোমাদের তাক্বওয়া। এ ভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়নদেরকে। [সূরা হজ্জ্ব:৩৭]।
(গ) পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা অন্য এক ধরনের আনন্দ যা কুরবাণীর গোশতের পরিমাণ টাকা যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হত না। কোরবানি না করে তার পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে কোরবানি আদায় হবে না। কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত কোন হাদিসই বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়; বরং এ সম্পর্কে বর্ণিত সবগুলো হাদিসই যঈফ ও জাল। তারপরও কোরবানির সময় নিকটবর্তী হলে ব্যাপক আকারে এ হাদিসগুলোর ছড়াছড়ি দেখা যায়। বক্তা, লেখক, প্রবন্ধকার সমানভাবে ঐ যঈফ ও জাল হাদিসগুলো চর্চা করেন। কেউ সেগুলি জুমআর খুৎবায় মধুর সুরে পাঠ করেন, কেউ তা নিজ প্রবন্ধে পরিবেশন করে প্রবন্ধের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন।
আবার কেউ বক্তৃতার মঞ্চে পাঠ করে মঞ্চ গরম করেন। আর কোরবানির ঈদের খুৎবার সময় তো শতকরা ৯৫ ভাগ খত্বীবই ঐ হাদিসগুলোকে খুৎবার মূল পুঁজি হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। এর একমাত্র কারণ হলো চরম উদাসীনতা ও অজ্ঞতা। ইমাম মুসলিম (রাহ.)- এর ভাষায়, যারা যঈফ ও জাল হাদিস জেনে শুনে (সতর্কীকরণ ছাড়াই) বলে বেড়ান তারা আলেম উপাধি পাবার চেয়ে জাহেল উপাধি পাবার অধিক হক্বদার এবং তারা সাধারণ মুসলিম সমাজকে ধোঁকাদানকারী বলে গণ্য হরে। (সহিহ মুসলিম শরীফের ভূমিকা দ্র.)।
কোরবানি বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী

কোরবানি বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী


কোরবানি করা আল্লাহর এক ইবাদত। সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় পোষা প্রাণীকে কোরবানী করা। আর কিতাব ও সুন্নাহ দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে, কোন আমল নেক বা ভাল হয় না, কিংবা গৃহীত হয় না; যতক্ষণ না তাতে প্রাথমিকভাবে ( যা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত) দুটি শর্ত পূরণ হয়েছে:

প্রথমত : 


ইখলাস, অর্থাৎ তা যেন খাটি আল্লাহরই উদ্দেশ্যে হয়। তা না হলে তা আল্লাহর নিকটে কবুল হবে না। যেমন : কাবীলের নিকট থেকে কোরবানি কবুল করা হয়নি এবং তার কারণ স্বরূপ হাবীল বলেছিলেন, আল্লাহ তো মুত্তাক্বীদের (পরহেযগার ও সংযমী) কোরবানিই কবুল করে থাকেন। [ সূরা মায়িদা (৫):২৭]।

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহর কাছে ওগুলোর (কোরবানির পশুর) না গোশত পৌঁছে, না রক্ত পৌঁছে বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি ওগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পার এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন, কাজেই সৎ কর্মশীলদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। [সূরা হজ (২২):৩৭]

দ্বিতীয়ত :


তা যেন  আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর নির্দেশিত বিধি-বিধান অনুযায়ী হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। [সূরা কাহফ:১১০]।

সুতরাং যারা কেবল বেশি করে গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কোরবানি দেয় অথবা লোক সমাজে নাম কুড়াবার উদ্দেশ্যে মোটা-তাজা অতিরিক্ত মূল্যের পশু ক্রয় করে এবং তা প্রদর্শন ও প্রচার করে থাকে তাদের কোরবানি যে ইবাদত নয়- তা বলাই বাহুল্য।

এছাড়া বাহ্যিকভাবে কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে:

শর্ত-০১ :

 এমন পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে যা শরীয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। অর্থাৎ কোরবানির পশু যেন সেই শ্রেণি বা বয়সের হয় যে শ্রেণি ও বয়স শরীয়ত নির্ধারিত করেছে। সেগুলো হলো উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। এগুলোকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় বাহীমাতুল আনআম। যেমন এরশাদ হয়েছে-

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ . (الحج : আর আমি প্রত্যেক সম্প্রদাযের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; এবং তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। [সূরা হজ্জ্ব(২২):৩৪]

হাদিসে আছে-

عن جابر- رضى الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم :لا تذبحوا إلا مسنة، إلا أن تعسر عليكم، فتذبحوا جذعة من الضأن. (رواه مسلم
 তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কোরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কোরবানি করতে পার।[মুসলিম, হাদিস নং ১৯৬৩]।

আর আল্লাহর রাসূল (সা.) উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য লোক জন্তু কোরবানি করেননি ও কোরবানি করতে বলেননি। তাই কোরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে। ইমাম মালিক (রহ.) এর মতে কোরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হলো শিংওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসূলে কারীম (সা.) এ ধরনের দুম্বা কোরবানি করেছেন বলে সহিহ বুখারি ও মুসলিম হাদিসে এসেছে। অধিকাংশ উলামাদের মতে, সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কোরবানির পশু হলো উট, অতঃপর গরু, তারপর মেষ (ভেড়া), তারপর ছাগল। আবার নর মেষ মাদী মেষ অপেক্ষা উত্তম। (আযওয়াউল বায়ান, ৫/৬৩৪)।

একটি উট ও গরু-মহিষে সাত ব্যক্তি কোরবানির জন্য শরীক হতে পারে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৩১৮)। অন্য এক বর্ণনামতে, উট কোরবানিতেও দশ ব্যক্তি শরীক হতে পারে। ইমাম শাওকানী বলেন, হজ্জের কোরবানিতে দশ এবং সাধারণ কোরবানিতে সাত ব্যক্তি শরীক হওয়াটাই সঠিক। (নায়লুল আওত্বার, ৮/১২৬)

যেমন হাদিসে আছে- যেমন হাদিসে এসেছে,
عن جابر- رضى الله عنه- أنه قال : نحرنا بالحديبية مع النبي صلى الله عليه وسلم البدنة عن سبعة، والبقرة عن سبعة. (رواه ابن ماجه ৩১৩২ صححه الألباني)
'আমরা হুদাইবিয়াতে রাসূলুল্লাহ স.-এর সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কোরবানি দিয়েছি।(ইবনে মাজা-৩১৩২)।

শর্ত-০২ :

 শরীয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ অন্তত দু'বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের। অবশ্য অসুবিধার ক্ষেত্রে ছয় মাস বয়সী মেষ কোরবানি করা যায় । প্রিয় নবী (সা.) বলেন, দাতালো ছাড়া জবেহ করো না। তবে তা দুর্বল হলে ছয় মাসের মেষ জবেহ কর। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৯৬৩)।
 কিন্তু উলামাগণ এ বিষয়ে একমত যে, ছমাস বয়সী মেষের কোরবানি সিদ্ধ হবে; তা ছাড়া অন্য পশু পাওয়া যাক অথবা না যাক। অধিকাংশ উলামাগণ ওই হাদিসের আদেশকে ইস্তিহবাব (উত্তম) বলে গ্রহণ করেছেন এবং বলেছেন যে, ওই হাদিসের মর্মার্থ এটা নয় যে, অন্য কোরবানির পশু পাওয়া না গেলে তবেই ছমাস বয়সের মেষ শাবকের কোরবানি বৈধ। যেহেতু এমন অন্যান্য দলীলও রয়েছে যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ওই বয়সী মেষেরও কোরবানি বৈধ; প্রকাশ থাকে যে, যদিও কোরবানিদাতা অন্য দাতালো পশু পেয়ে থাকে। যেমন রাসূল (সা.) বলেন, ছমাস বয়সী মেষশাবক উত্তম কোরবানি। (মুসনাদে আহমাদ, ২/৪৪৫; তিরমিযী) উক্ববা বিন আমের (রা.) বলেন, (একদা) নবী (সা.) কোরবানির পশু বিতরণ করলেন। উক্ববার ভাগে পড়ল এক ছমাসের মেষ। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাগে ছমাসের মেষ হলো? প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, এটা দিয়েই তুমি কোরবানি কর। (সহিহ বুখারি , হাদিস নং ২১৭৮; সহিহ মুসলিম, ১৯৬৫)
শর্ত-০৩ : কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদিসে এসেছে :


عن البراء بن عازب- رضى الله عنه- قال: قام فينا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : أربع لا تجوز في الأضاحي،- وفي رواية: تجزىء ু العوراء البين عورها، والمريضة البين مرضها، والعرجاء البين ضلعها، والكسيرة التي لا تنقى. (رواه الترمذي ১৫৪৬ وفي رواية النسائي ৪৩৭১) ذكر (العجفاء) بدل (الكسيرة) وصححه الألباني في صحيح سنن النسائي


সাহাবী বারা ইবনে আযেব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েয হবে না। অন্ধ. যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত; যার কোন অঙ্গ ভেঙে গেছে। নাসাঈর বর্ণনায় আহত শব্দের স্থলে পাগল উল্লেখ আছে। (তিরমিজি-১৫৪৬; নাসাঈ-৪৩৭১; আবূদাউদ; হাদিসটি সহিহ)। অতএব এ চারের কোন এক ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কোরবানি সিদ্ধ হয় না।

শর্ত-০৪ : যে পশুটি কোরবানি কারা হবে তার উপর কোরবানিদাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। অর্থাৎ কোরবানিদাতা যেন বৈধভাবে ওই পশুর মালিক হয়। সুতরাং চুরিকৃত, আত্মসাৎকৃত, বন্ধকী পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া, অবৈধ ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রীত পশু দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না। একই ভাবে অবৈধ মূল্য যেমন সুদ, ঘুষ, প্রবঞ্চনা, ধোঁকা প্রভৃতির অর্থ দ্বারা কেনা পশুর কোরবানি জায়েয নয়। যেহেতু কোরবানি এক ইবাদত যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা হয়। আর পাপ করার মাধ্যমে কোন প্রকার নৈকট্য লাভ সম্ভব নয়। বরং তাতে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ব্যতিত কিছু গ্রহণ করেন না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১০১৫)।
কোরবানি কাকে বলে।এর হুকুম কি?এর ইতিহাস কি?

কোরবানি কাকে বলে।এর হুকুম কি?এর ইতিহাস কি?



কোরনানি কি?


কোরবানি এটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলঃ

১,নৈকট্য অর্জন করা

২,কাছে আসা

৩, পুন্য

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়,


যে কাজের মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন করা যায় তাকে কোরবানি বলা হয়।

কোরবানির অপর নাম হলঃ اُضْحِيَّة যার অর্থ হলঃ

১,জবাই করা

২, উৎসর্গ করা

৩, শিকার করা

৪, পাকড়াও করা

৫, নৈকট্য অর্জন করা

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়,


هِيَ ذَبْحُ حَيَوَانٍٍِ مَّخْصُوْصٍِ فِيْ وَقْتٍِ مَّخْصُوْصٍٍٍِ بِطَرِقٍِ مَخْصُوصٍِ

নির্দিষ্ট সময়ে,নির্দিষ্ট পন্থায়,নির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে  اُضْحِيَّة     বলে। (ফাতওয়ায়ে শামি)

কোরবানি উম্মতে মুহাম্মদির জন্য কোনো বিশেষ প্রথা বা অভিনব হুকুম নয়। পুর্ববর্তি উম্মতদের উপরও ছিল। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

وَلِكُلِّ أُمَّةٍۢ جَعَلْنَا مَنسَكًۭا لِّيَذْكُرُوا۟ ٱسْمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلْأَنْعَـٰمِ ۗ فَإِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌۭ وَ‌ٰحِدٌۭ فَلَهُۥٓ أَسْلِمُوا۟ ۗ وَبَشِّرِ ٱلْمُخْبِتِينَ

আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও। [হাজ্জ,৩৪]


কোরবানির হুকুম কি ? 

ওয়াজিব না সুন্নত ? এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের মাঝে দুটো মত রয়েছে।



প্রথম মত : কোরবানি ওয়াজিব।


ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানীফা রহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন।

(এক) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন :

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنْحَرْ

‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’ [কাওসার,২]

আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।

(দুই)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ، وَلَمْ يُضَحِّ، فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا»

রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।[মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজা- ৩১২৩ হাদিসটি হাসান]

যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্ক-বাণী। তাই কোরবানি ওয়াজিব।



(তিন) রাসূলে কারীম স. বলেছেন

: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِي كُلِّ عَامٍ أُضْحِيّة

: হে মানব সকল ! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি দেয়া। [মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজা- ৩১২৫ হাদিসটি হাসান]

দ্বিতীয় মত : কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।


এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। এবং ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রহ.-এর প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন : সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ।

যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কোরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কোরবানি হল ইসলামের একটি মহান নিদর্শন।

যারা কোরবানি সুন্নত বলেন তাদের দলিল :




(এক) রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :

إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ وَعِنْدَهُ أُضْحِيَّةٌ يُرِيدُ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلَا يَأْخُذَنَّ شَعْرًا، وَلَا يَقْلِمَنَّ ظُفُرًا

‘তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করতে চায়, যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কোরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নখ না কাটে।[ মুসলিম- ১৯৭৭]

এ হাদিসে রাসূল স.-এর ‘যে কোরবানি করতে চায়’ কথা দ্বারা বুঝে আসে এটা ওয়াজিব নয়।

(দুই) রাসূল স. তার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছেন। তার এ কাজ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে কোরবানি ওয়াজিব নয়।

শাইখ ইবনে উসাইমীন রহ. উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন: এ সকল দলিল-প্রমাণ পরস্পর বিরোধী নয় বরং একটা অন্যটার সম্পূরক। সারকথা হল যারা কোরবানিকে ওয়াজিব বলেছেন তাদের প্রমাণাদি অধিকতর শক্তিশালী। আর ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মত এটাই।

কোরবানির ইতিহাসঃ


কোরবানির বিষয়টি মানব ইতিহাসের মতো অতি প্রাচীন। হজরত আদম আঃএর পুত্রদ্বয় হাবিল-কাবিলের মাধ্যমে সর্বপ্রথম কোরবানির সূচনা হয়। সে সময় কোরবানির নিয়ম ছিল অন্য রকম। ভেড়া, দুম্বা,শস্য বা গম ইত্যাদি কোরবানির জন্য আল্লাহর দরকারে পেশ করা হতো। যার কোরবানি কবুল হতো আল্লাহর হুকুমে আকাশ হতে আগুন এসে তা ভস্মীভূত করে দিতো। আর যারটা কবুল হতো না তারটা পড়ে থাকত। হজরত নূহ আঃ, হজরত ইয়াকুব আঃ, হজরত মূসা আঃ-এর সময়েও কোরবানির প্রচলন ছিল। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে মুসলিম জাতির জনক হজরত ইব্রাহিম আঃ আল্লাহর প্রেমে প্রিয় পুত্রকে কোরবানি করার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক অবিস্মরণীয় সোনালি ইতিহাস সৃষ্টি করে গিয়েছেন।

হজরত ইব্রাহিম আঃ-এর প্রিয় বস্তু কোরবানিঃ

হজরত ইব্রাহিম আঃ স্বপ্নযোগে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি দেয়ার জন্য আদিষ্ট হন। এ জন্য তিনি তিন দিনে শত শত উট কোরবানি করলেন কিন্তু তা আল্লাহর দরবারে কবুল হলো না। বারবারই স্বপ্নযোগে আদেশ করা হলো, ‘তোমার প্রিয়বস্তু কোরবানি করো।’ হজরত ইব্রাহিম আঃ বুঝতে পারলেন, বৃদ্ধ বয়সে প্রাপ্ত একমাত্র প্রাণাধিক প্রিয় সন্তান এবং হজরত হাজেরার নির্বাসিত হয়ে বহু কষ্টে লালিত নয়নের মণি হজরত ইসমাইল আঃ সেই প্রিয় বস্তু।আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে হজরত ইব্রাহিম আঃ ও মা হাজেরা কোরবানির জন্য কলিজার টুকরা পুত্রকে সাজিয়ে নিলেন। কিশোর ইসমাইল আঃ নিজের জানকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দিয়ে আত্মত্যাগের বিস্ময়কর ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। পবিত্র কুরআনে ওই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। ‘হজরত ইব্রাহিম আঃ বললেন, বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে,আমি তোমাকে জবেহ করছি, এখন তোমার অভিমত কী? বলো। তিনি বললেন, আব্বাজান! আপনি যে বিষয়ে আল্লাহর তরফ থেকে আদিষ্ট হয়েছেন, তা পূর্ণ করুন। ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। যখন তারা উভয়ে আত্মসমর্পণ করলেন এবং পিতা কাত করে পুত্রকে শোয়ালেন, তখন আমি তাকে ডাকলাম, হে ইব্রাহিম! নিশ্চয়ই আপনি স্বপ্নকে সত্য পরিণত করে দেখিয়েছেন। আমি বিশিষ্ট বান্দাদের এরূপ পুরস্কার প্রদান করে থাকি। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল বড় পরীক্ষা। আর ইসমাইল আঃ-এর পরিবর্তে একটি শ্রেষ্ঠ জবেহর পশু দান করলাম।’ (সূরা সাফফাত, আয়াত ১০২ থেকে ১০৭)।

আল্লাহু আকবার তাকবিরঃ হজরত ইব্রাহিম আঃ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কলিজার টুকরা পুত্রের গলায় যখন ছুরি চালান, তখন হজরত জিব্রাইল আঃ আল্লাহর নির্দেশে বেহেশত থেকে একটা দুম্বা নিয়ে রওনা হলেন। তাঁর মনে ভয় ছিল না জানি পৃথিবীতে পৌঁছার আগেই ইব্রাহিম আঃ জবেহ কাজ শেষ করে দেন! আর এ জন্যই জিব্রাইল আঃ আকাশ থেকে উচ্চস্বরে ধ্বনি দিতে থাকেন ‘আল্লাহু আকবার’।এমন মধুর ধ্বনি শুনে হজরত ইব্রাহিম আঃ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন ।‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’।  হজরত ইসমাইল আঃ পিতার মুখে তাওহিদের বাণী শুনতে পেয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’ হজরত জিব্রাইল আঃ এবং দুই নবীর কালামগুলো আল্লাহর কাছে এতই পছন্দনীয় হলো যে, কিয়ামত পর্যন্ত ঈদুল আজহার দিনগুলোতে বিশ্ব মুসলিমের কণ্ঠে ওই কালামগুলো উচ্চারিত হতে থাকবে।

সুন্নতে ইব্রাহিমঃ আল্লাহর প্রেমিক হজরত ইব্রাহিম আঃ এর ধারালো ছুরি হজরত ইসমাইল আঃ-এর একটি পশমও কাটতে পারেনি। তার পরিবর্তে আল্লাহর হুকুমে জিব্রাইল আঃ বেহেশত থেকে জান্নাতি দুম্বা এনে দিলে তিনি তা কোরবানি করেন। হজরত ইব্রাহিম আঃ প্রাণ প্রিয় পুত্রকে কোরবানি দেয়ার কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহর প্রেমের গভীরতা কত তাই প্রমাণ করেছেন। তাই অনন্তকাল ধরে কোরবানির এ মডেল সুন্নতে ইব্রাহিম হিসেবে বিশ্বের সব মুসলমানের কাছে আজ স্মরণীয়, বরণীয় এবং অবশ্য পালনীয় হয়ে আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।

সাহাবাদের কোরবানি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সা.) বলেছিলেন,¬ ‘সুন্নাতা আবিকুম ইবরাহিম’ অর্থাৎ এটা তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম আঃ-এর প্রতিষ্ঠিত আদর্শ (ইবনে মাজাহ)।

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কোরবানি মূলত মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে একটি মহান পরীক্ষাস্বরূপ ছিল।


কুরআনে এরশাদ হয়েছে,¬

إِنَّ هَـٰذَا لَهُوَ ٱلْبَلَـٰٓؤُا۟ ٱلْمُبِينُ

নিশ্চয়ই এটা ছিল সুস্পষ্ট পরীক্ষা’ (সূরা সাফফাত-আয়াত-১০৬)।

পবিত্র কুরআনের সূরা আস সাফফাত, ৯৯ থেকে ১১৩ নম্বর আয়াতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কোরবানি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। একান্ত প্রার্থনায় ৮৬ বছর বয়সে হজরত ইবরাহিম (আ. পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে লাভ করেন। তাফসিরে মাজহারির বর্ণনা মতে, হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর বয়স যখন ১৩ বছর (মাত্র বালেগ), তখন পিতা ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে দেখেন, তিনি প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাঈল-কে (আ.) জবাই করছেন। (কোনো কোনো তাফসিরে বর্ণিত আছে¬, এ স্বপ্ন হজরত ইবরাহিমকে (আ.) তিনবার দেখানো হয়)। আম্বিয়া কেরামের স্বপ্ন যেহেতু ওহি হিসেবে গণ্য, তাই তিনি ৯৯ বছর বয়সে প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর সম্মতিক্রমে আল্লাহর আদেশ পালনার্থে প্রস্তুত হন। কিন্তু শয়তান পিতা-পুত্রের সে সাধনায় বাদ সাধে। মহামহিম আল্লহতায়ালার সে অগ্নিপরীক্ষায় পিতা ইবরাহিম (আ.) ও পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর আত্মত্যাগ যেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, শয়তান সে লক্ষ্যে তিন তিনবার ধোঁকা দেয়। প্রতিবারেই পিতা-পুত্র পর্বতসম ঈমানী চেতনা নিয়ে সে চক্রান্ত প্রতিহত করেন। ২১টি প্রস্তর নিক্ষেপে শয়তানকে নিরাশ করে তারা সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। (এ জন্যই হাজিরা মিনায় শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করেন।) তাদের উভয়ের প্রতি আল্লাহ খুশি হয়ে পুত্র ইসমাঈলের পরিবর্তে ফেরেস্তাদের দ্বারা আনীত পশু কোরবানির ব্যবস্থা করেন।

উম্মতে মুহাম্মদির কোরবানি হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কোরবানিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর গোটা জীবন ছিল কোরবানি তথা অতুলনীয় আত্মোৎসর্গ ও আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল। প্রিয় পুত্র ইসমাঈলকে কোরবানি করা ছিল ইবরাহিমি জীবনের অসংখ্য কোরবানির চরম ও শ্রেষ্ঠতম ঘটনা।

‘কোরবানি’ ও ‘ইসলাম’ উভয়‌ আনুগত্য, আত্মসমর্পণ, আত্মত্যাগ ও উৎসর্গীকরণের অর্থ বোঝায়। তাই পবিত্র কুরআনে ইবরাহিমি কোরবানির এ মহান আদর্শ ‘ইসলাম’ শব্দের মাধ্যমে প্রকাশিত। এরশাদ হয়েছে :                     إِذْ قَالَ لَهُۥ رَبُّهُۥٓ أَسْلِمْ ۖ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ

অর্থাৎ তার প্রতিপালক যখন তাকে (ইবরাহিমকে) বলছিলেন আত্মসমর্পণ করো, তিনি বললেন, বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম(সূরা বাকারাহ, আয়াত-১৩১)।                                    এই আয়াত প্রমাণ করে যে, ইবরাহিমি মিল্লাতের মৌলিক নীতি ও স্বরূপ ‘ইসলাম’ শব্দের মধ্যেই নিহিত। (মা’রেফুল কুরআন, মাওলানা মহিউদ্দীন খান অনূদিত পৃষ্ঠা ৬৭)                                                   শুধু তাই নয়, হজরত ইবরাহিম (আ.)আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলেন¬

رَبَّنَا وَٱجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةًۭ مُّسْلِمَةًۭ لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَآ ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ

‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে (ইবরাহিম ও ইসমাঈল) মুসলিম (আনুগত্যশীল) করো এবং আমাদের বংশধর থেকেও একদলকে আনুগত্যকারী করো।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১২৮)।

উম্মতে মুহাম্মদি তথা মুসলমান তারই দোয়ার ফসল। আগেই তিনি এ জাতির নাম মুসলমান রেখেছিলেন।                                                                                                                            এরশাদ হয়েছে,

مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَ‌ٰهِيمَ ۚ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلْمُسْلِمِينَ

এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিম আ.-এর ধর্ম। তিনিই ইতঃপূর্বে তোমাদের ‘মুসলমান’ নামকরণ করেছেন এবং এতেও (কুরআনে) এ নাম রাখা হয়েছে (সূরা হজ, আয়াত-৭৮)।

ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনাদর্শে মুগ্ধ হয়ে মহান আল্লাহতায়ালা উম্মতে মুহাম্মদিকে তাঁর আদর্শের প্রতি দীক্ষিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।                                                                                                       এরশাদ হয়েছে,

قُلْ صَدَقَ ٱللَّهُ ۗ فَٱتَّبِعُوا۟ مِلَّةَ إِبْرَ‌ٰهِيمَ حَنِيفًۭا وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ

‘বলো আল্লাহ সত্য বলেছেন, অতঃপর একনিষ্ঠভাবে ইবরাহিমী মিল্লাত অনুসরণ করো’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত-৯৫।

সূরা মুমতাহিনায় এরশাদ হয়েছে ;


قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَاء مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاء أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ إِلَّا قَوْلَ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن شَيْءٍ رَّبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ


তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে। কিন্তু ইব্রাহীমের উক্তি তাঁর পিতার উদ্দেশে এই আদর্শের ব্যতিক্রম। তিনি বলেছিলেনঃ আমি অবশ্যই তোমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব। তোমার উপকারের জন্যে আল্লাহর কাছে আমার আর কিছু করার নেই। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমারই দিকে মুখ করেছি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন।


মাহে রমজানের মর্যাদা ও ফজিলত

মাহে রমজানের মর্যাদা ও ফজিলত


রমজান মাস সিয়াম সাধনা ও তাকওয়ার মাস, কল্যাণ ও বরকতের মাস, রহমত ও মাগফিরাত এবং জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তি লাভের মাস। মহান আল্লাহ এ মাসটিকে বহু ফজিলত ও মর্যাদা দিয়ে অভিষিক্ত করেছেন। এ গুরুত্ববহ তাৎপর্যময় মাস সারা বিশ্বের মুসলমানদের সুদীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়। মুমিন বান্দার জীবনে বছরের মধ্যে রমজান মাসটিই এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয়। তাই এ পুণ্যময় মাসের গুরুত্ব এত বেশি। এ কারণেই বলা হয়, পবিত্র রমজান মাস হচ্ছে ইবাদত, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, জিকর, শোকর ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মৌসুম। একদা নবী করিম (সা) মাহে রমজানের প্রাক্কালে বলেন, “রমজান মাস আগতপ্রায়, এ মাস বড়ই বরকতের মাস, আল্লাহ তাআলা বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং খাস রহমত বর্ষণ করেন, গুনাহ মাফ করেন ও দোয়া কবুল করেন।” রোজাদারের মর্যাদা উল্লেখ করে হাদিস শরিফে রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন,

“রোজাদারের নিদ্রা ইবাদতের সমতুল্য, তার চুপ থাকা তসবিহ পাঠের সমতুল্য, সে সামান্য ইবাদতে অন্য সময় অপেক্ষা অধিকতর সওয়াবের অধিকারী হয়। ঈমান ও এহতেসাবের সঙ্গে যে ব্যক্তি রোজা রাখে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।” আর রোজাদারের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, “মানুষ যত প্রকার নেক কাজ করে আমি তার সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করে দিই। কিন্তু রোজা এই নিয়মের বাইরে। রোজার সওয়াব একই নিয়মে সীমাবদ্ধ বা সীমিত নয়। রোজার সওয়াবের পুরস্কার স্বয়ং আমি প্রদান করব। অথবা আমি নিজেই রোজার সওয়াবের পুরস্কার।” এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে উল্লেখ হয়েছে, যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নফল কাজ করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজই আদায় করল। আর যে এ মাসে কোনো ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল। নবী করিম (সা) ঘোষণা করেছেন, “যারা রমজান মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা পালন করেছে, তারা ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপরূপে প্রসব করেছিলেন।”
রামাদান মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজই হল সিয়াম। আর সিয়াম হলো ফজরের উদয়লগ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়াতসহ পানাহার ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা। রামাদান মাসের রোজাকে ফরজ করে যে আয়াত নাজিল হয় তাতে আল্লাহ রোজার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নির্দেশ করেছেন।

সিয়াম পালন তথা রোজা ফরয এবং এটি ইসলামের অন্যতম একটি রুকন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমদের ওপর রোজা ফরজ করে দেয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।” (সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৩)
“সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে।’’ (সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫)
রোজার গুরুত্ব আরো প্রকটিত হয় সে সব ফজিলতের দ্বারা, যদ্বারা একে বিশেষত্ব দান করা হয়েছে। সে সবের মধ্যে রয়েছে :
১.    রমজান হলো কুরআন নাজিলের মাস : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: “রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কুরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।” (সূরা বাকারা : ১৮৫) রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র আল-কুরআন একবারে নাজিল হয়েছে। সেখান হতে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম সা.-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল রাসূলুল্লাহ (সা)-কে পূর্ণ কুরআন শোনাতেন এবং রাসূল সা.-ও তাকে পূর্ণ কুরআন শোনাতেন। আর জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসূল দুই বার পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করেছেন। সহি মুসলিমের হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত।
২.    এ মাসে জান্নাতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয়, জাহান্নামের দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “রমজান মাসে এলে জান্নাতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয় জাহান্নামের দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮০০)
৩.    এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল ক্বদেরর ন্যায় বরকতময় রজনী : মহান আল্লাহ বলেন, “লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাত্রে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হন প্রত্যেক কাজে, তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিময় এ রজনী, ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’’ (সূরা আল ক্বদর : ৩-৫)
৪.    এ মাস দোয়া কবুলের মাস : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “(রমজানের) প্রতি দিন ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) আল্লাহর কাছে বহু বান্দা মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। তাদের প্রত্যেক বান্দার দোয়া কবুল হয়ে থাকে (যা সে রমজান মাসে করে থাকে)।’’ (সহীহ সনদে ইমাম আহমদ কর্তৃক বর্ণিত, হাদিস নং ৭৪৫০)
৫.    রোজার পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং নিজে প্রদান করবেন : একটি হাদিসে কুদসিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ বলেন, “বনি আদমের সকল আমল তার জন্য, অবশ্য রোজার কথা আলাদা, কেননা রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার দেবো।’’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮০৫)

৬.    রোজা রাখা গোনাহের কাফফারা স্বরূপ এবং ক্ষমালাভের কারণ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রামাদান মাসে রোজা রাখবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৯১০)
৭.    রোজা জান্নাত লাভের পথ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যাকে বলা হয় ‘রাইয়ান’। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে রোজাদারগণ প্রবেশ করবে। অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না….. রোজাদারগণ প্রবেশ করলে এ দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে আর কেউ সেখান দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ (সহীহ বুখারি, হাদিস নং ১৭৯৭)
৮.    সিয়াম রোজাদারের জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: “কিয়ামতের দিন রোজা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে রব! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির কামনা হতে বাধা দিয়েছি; সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ কুরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতের বেলায় ঘুমাতে দেয়নি; সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। ফলে এ দুয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ ’’ (মুসনাদ, হাদিস নং ৬৬২৬)
৯.    রোজা জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তিলাভের ঢাল : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : যে বান্দাহ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখে আল্লাহ তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে ৭০ বছরের দূরত্ব তৈরি করেন। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৪)
১০.    এ মাসের রোজা রাখা একাধারে বছরের দশ মাস রোজা রাখার সমান : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য, ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান, এ যেন সারা বছরের রোজা।”
১১.    রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার শপথ! রোজাদারের মুখের গন্ধ কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মিসকের চেয়েও সুগন্ধিময়।’’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৪)
১২.    রোজা ইহ-পরকালে সুখ-শান্তি লাভের উপায় : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “রোজাদারের জন্য দুটো খুশির সময় রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় এবং অন্যটি স্বীয় প্রভু আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার সময়।’’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮০৫)
রোজার আরো ফজিলতের মধ্যে রয়েছেÑ
এতে ইচ্ছা ও সঙ্কল্পে দৃঢ়তা সৃষ্টি হয়, চারিত্রিক মাহাত্ম্য অর্জিত হয়, শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায় এবং সর্বোপরি তা মুসলিম উম্মাহ্ একতাবদ্ধ হওয়ার এক বাস্তব নিদর্শন।
এক. রোজাদারকে ইফতার করানো : সহীহ সনদে তিরমিযী ও আহমাদ বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করায়, সে উক্ত রোজাদারের সাওয়াবের কোনরূপ ঘাটিত না করেই তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।’’ (সুনান তিরমিযী, হাদিস নং ৮০৭)
দুই. এ মাস সবর বা সহিষ্ণুতার মাস : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণিত এ হাদীসে রামাদান মাসকে সবরের মাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন : “সবরের মাসে রোজা রাখা ও প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখা অন্তরের অস্থিরতা দূর করে থাকে।” (আল বানী বলেন হাসান-সহীহ হাদিস নং ১৭০৩৩)
তিন. কুরআন তেলাওয়াত করা এবং এর মর্ম উপলব্ধি করা
রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস। এ মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরাইলের সাথে কুরআন পাঠ করতেন। তার সিরাত অনুসরণ করে প্রত্যেক মু’মিনের উচিত এ মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা, বোঝা এবং আমল করা। ইবনু আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “জিবরাইল রামাদানের প্রতি রাতে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
 সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাকে নিয়ে কুরআন পাঠ করতেন।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৩০৪৮)

চার. আল্লাহর রাস্তায় বেশি বেশি দান ও সদকা করা
আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা ও ব্যয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। সব সময় যাতে সামর্থ্যবান ব্যক্তিবর্গ এ ইবাদাত পালন করে সে ব্যাপারে ইসলাম ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করেছে। আর রমজান মাসে এ ইবাদাতের তাৎপর্য ও গুরুত্ব আরো বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। কেননা ইমাম বুখারী ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন যে, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল মানুষের চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। আর রমজান মাসে যখন জিবরাইল তার সাথে সাক্ষাতে মিলিত হতেন তখন তিনি আরো দানশীল হয়ে উঠতেন…। জিবরাইলের সাক্ষাতে তিনি বেগবান বায়ুর চেয়েও বেশি দানশীল হয়ে উঠতেন।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৩০৪৮)
পাঁচ. বেশি বেশি দোয়া, জিকর এবং ইস্তেগফার করা
রমজানের দিনগুলোতে পুরো সময়টাই ফজিলতময়। তাই সকলের উচিত এ বরকতময় সময়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা- দোয়া, যিকর ও ইসস্তেগফারের মাধ্যমে। কেননা রমজান মাস দোআ কবুল হওয়ার খুবই উপযোগী সময়, যেমন প্রবন্ধের শুরুতে একটি হাদিসের বর্ণনায় বলা হয়েছে।
ছয়. সকল প্রকার ইবাদতে নিজেকে ব্যাপৃত রাখা :
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদান মাসে অন্য মাসের চেয়েও বেশি বেশি ইবাদাত করতেন। আল্লামা ইবনুল কাইয়েম (রহ) বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ছিল রমজান মাসে সকল ধরনের ইবাদাত বেশি বেশি করা। তিনি ছিলেন সবচেয়ে দানশীল এবং রামাদানে আরো বেশি দানশীল হয়ে যেতেন,  কেননা এ সময়ে তিনি সদকা, ইহসান ও কুরআন তেলাওয়াত, নামাজ, যিকর ও ইতেকাফ ইত্যাদি সকল প্রকার ইবাদত অধিক পরিমাণে করতেন। তিনি রামাদানে এমন বিশেষ ইবাদাতসমূহ পালন করতেন যা অন্য মাসগুলোতে করতেন না। (যাদুল মাআ‘দ ১/৩২১)
সাত. কিয়ামু রমজান বা রমজানের তারাবিহের ফজিলত
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে রমজানের তারাবিহ আদায় করল তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য এক হাদিসে এভাবে ইরশাদ করেছেন, “যখন কোন ব্যক্তি ইমামের সাথে ইমাম তার নামাজ শেষ করা পর্যন্ত নামাজ আদায় করবে তার জন্য তা সারা রাত জেগে ইবাদত করা হিসেবে গণ্য হবে।”
আট. লাইলাতুল ক্বাদরের বিশেষ ফজিলত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “আমরা লাইলাতুল কাদরে তা (কুরআন) নাজিল করেছি, আপনি কি জানেন লাইলাতুল কাদর কী? লাইলাতুল ক্বাদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, এতে ফিরেশতাকুল ও জিবরাইল তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে সকল বিষয় নিয়ে অবতীর্ণ হয়, ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত ইহা শান্তিময়।”

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে লাইলাতুল কাদর জেগে ইবাদত করল তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।”
শরীয়ত যা বর্জন করতে নির্দেশ দিয়েছে
শরীয়তের পক্ষ থেকে মূলত ছোট-বড় সকল গোনাহ ও পাপ সর্বদা বর্জন করার নির্দেশ এসেছে। আর রমজান মাস  ফজিলতের মাস এবং আল্লাহর ইবাদাতের প্রশিক্ষণ লাভের মাস হওয়ায় এ মাসে সর্বপ্রকার গোনাহের কাজ পরিত্যাগ করা অধিক বাঞ্ছনীয়। তদুপরি রামাদান মাসে সৎকাজের সওয়াব ও নেকি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়, তাই রমজানের সম্মান ও ফজিলতের কারণে এ মাসে সংঘটিত যে কোন পাপের শাস্তি অন্য সময়ের তুলনায় ভয়াবহ হবে এটাই স্বাভাবিক। এ জন্যই রোজাদারদের উচিত তাকওয়াবিরোধী সকল প্রকার মিথ্যা কথা ও কাজ পরিপূর্ণভাবে বর্জন করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি (রোজা রেখে) মিথ্যা কথা ও সে অনুযায়ী কাজ করা বর্জন করে না তবে তার শুধু খাদ্য ও পানীয় বর্জন করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮০৪)
অন্য আরেকটি হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের কেউ রোজার দিনে অশ্লীল কথা যেন না বলে এবং শোরগোল ও চেঁচামেচি না করে। কেউ তাকে গালমন্দ করলে বা তার সাথে ঝগড়া করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার।’’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮০৫)
যে ব্যক্তি কল্যাণকামী মাস মাহে রমজান পেয়ে নিজের গুনাহ মাফ করতে পারলো না, সে হল সবচেয়ে হতভাগ্য ব্যক্তি। এ প্রসঙ্গে হাদিস : হযরত কাব কর্তৃক হাদিসটি বর্ণিত। একদা রাসূল (সা) মসজিদে ইরশাদ করলেন : “তোমরা মিম্বরের নিকটবর্তী হও। আমরা নিকটে গেলাম। হুজুর (সা) মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে বললেন, ‘আমীন’। এভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও দুইবার আমীন বললেন। খুতবা শেষে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে হযরত বললেন, এই মাত্র হযরত জিবরাঈল (আ) তাশরিফ এনেছিলেন। প্রথম সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তির ওপর লানত যে রমজান মাস পেয়েও নিজের পাপ মাফ করিয়ে নিতে পারেনি। আমি বললাম, ‘আমীন’ অর্থাৎ তাই হোক। দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই জিবরাঈল বললেন, লা’নত ঐ ব্যক্তির ওপর যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হওয়া সত্ত্বেও দরূদ পড়েনি। আমি বললাম, ‘আমীন’। অতপর তৃতীয় সিঁড়িতে আমি পা রাখতেই জিবরাঈল বললেন, লা’নত ঐ ব্যক্তির ওপর যার সামনে মাতা-পিতা উভয়ই অথবা দু’জনের একজন বার্ধক্যে পৌঁছেছে কিন্তু সে তাদের সেবাকর্মে নিজেকে জান্নাতের যোগ্য করতে পারলো না। উত্তরে আমি বললাম, ‘আমীন’।
শেষকথা
ত্বাকওয়া অর্জনের এ মুবারক মাসে মুমিনদের উপর অর্পিত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, সৃষ্টি হয়েছে পূণ্য  অর্জনের বিশাল সুযোগ এবং প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে মহান চরিত্র অর্জনের সুন্দর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এ অর্পিত দায়িত্ব পালন এবং সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আজ সারা বিশ্বের মুসলিমদের উচিত চারিত্রিক অধঃপতন থেকে নিজেদের রক্ষা করা, নেতিয়ে পড়া চেতনাকে জাগ্রত করা এবং সকল প্রকার অনাহুত শক্তির বলয় থেকে মুক্ত হয়ে হক প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞাকে সুদৃঢ় করা, যাতে তারা রিসালাতের পবিত্র দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে এবং কুরআন নাযিলের এ মাসে কুরআনের মর্ম অনুধাবন করতে পারে, তা থেকে হিদায়াত লাভ করতে পারে এবং জীবেনের সর্বক্ষেত্রে একেই অনুসরণের একমাত্র মত ও পথ রূপে গ্রহণ করতে পারে। মাহে রমজানে রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করেন। রিপুর তাড়না থেকে তাকে মুক্ত করে তার ভেতর তাকওয়া-খোদাভীতি ও আল্লাহপ্রেম জাগ্রত করতে চান। সেই সত্য-সুন্দরের পথ তাকে সাফল্য ও মুক্তির দ্বারপ্রান্তেনিয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে রমজান মাসের রোজা, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, সেহির, ইফতার, তারাবি নামাজ, সাদাকাতুল ফিতর, জাকাত, দান-খয়রাত প্রভৃতি আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতরাজি, যা রোজাদারদের কুপ্রবৃত্তি দমন ও তাকওয়া বা খোদাভীতিপূর্ণ ইবাদতের মানসিকতা সৃষ্টিতে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা জোগায়। পবিত্র মাহে রমযানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সর্বজনীন-কল্যাণের শাশ্বত চেতনায় সকল অকল্যাণ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মানবতাকে বিজয়ী করার পথে আমাদের এগিয়ে দিক। আল্লাহ আমাদের সকল আমল কবুল করুন এবং আমাদের সবাইকে আরো উত্তম আমল করার তাওফীক দান করুন।




সাহরী খাওয়ার হুকুম কি?

সাহরী খাওয়ার হুকুম কি?


উত্তরঃ সাহরী বলা হয়, সুবেহ সাদিকের পূর্বের শেষ রাতের খাওয়াকে। সকল ক্ষেত্রে সাহরী খাওয়া সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাহরী কর কেননে সাহরীর মাঝে বরকত রয়েছে। (বুখারী-১/২৫৭, মুসলিম-১/৩৫০)
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাদের ও আহলে কিতাবিদের রোজার মাঝে পার্থক্য হল সাহরী খাওয়া।(মুসলিম-১/৩৫০, তিরমিজী-১/১৫০)
সাহরী না খেলেও রোজা হয়ে যাবে, তবে এই বরকতকে উপেক্ষা করা মোটেও উচিৎ না।
                                                 শরয়ী দলীল
في صحيح مسلم:(ج1ص350 ) عن انس رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تسحروا فان في السحور بركة

و في الجوهرة النيرة: (ج1ص350) وَاعْلَمْ أَنَّ السُّحُورَ مُسْتَحَبٌّ لِقَوْلِهِ – عَلَيْهِ السَّلَامُ – «تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السُّحُورِ بَرَكَةً» السُّحُورُ اسْمٌ لِمَا يُؤْكَلُ فِي وَقْتِ السَّحَرِ وَهُوَ السُّدُسُ الْأَخِيرُ مِنْ اللَّيْلِ وَفِي الْحَدِيثِ إضْمَارٌ تَقْدِيرُهُ فَإِنَّ فِي أَكْلِ السُّحُورِ بَرَكَةً وَالْمُرَادُ بِالْبَرَكَةِ زِيَادَةُ الْقُوَّةِ فِي أَدَاءِ الصَّوْمِ وَيَجُوزُ أَنْ يَكُونَ الْمُرَادُ بِهِ نَيْلُ الثَّوَابِ لِاسْتِنَانِهِ بِأَكْلِ السُّحُورِ بِسُنَنِ الْمُرْسَلِينَ وَعَمَلِهِ بِمَا هُوَ مَخْصُوصٌ بِأَهْلِ الْإِسْلَامِ قَالَ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ – «فَرْقُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ أَكْلُ السُّحُورِ» .

প্রামাণ্য গ্রন্থাবলীঃ
১/ সহীহ বুখারী- ১/২৫৭
২/ সহীহ মুসলিম- ১/৩৫০
৩/ সুনানে তিরমিজী- ১/১৫০
৪/ সুনানে নাসায়ী- ১/২৩৩, ২৩৪, ২৩৫
৫/ ইবনে মাজা- ১২১
৬/ আল যাওহারাতুন নাইয়েরা- ১/৩৫০
৭/ আল মিরকাত- ৪/ ৪১৬
৮/ মারাকিল ফালাহ- ৬৮২
৯/ আল ইনায়া- ২/৩৭৭
১০/ আল বাহরুর রায়েক- ২/৫১১
والله اعلم بالصواب

ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উত্তম নারী ‍যিনি


আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

]قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ قَالَ الَّتِي تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ وَتُطِيعُهُ إِذَا أَمَرَ وَلا تُخَالِفُهُ فِي نَفْسِهَا وَمَالِهَا بِمَا يَكْرَهُ[

রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করা হল হে আল্লাহর রাসূল! কোন শ্রেণীর নারী সর্বোত্তম?

তিনি বলেন, “তার পরিচয় হচ্ছে তুমি তার দিকে চাইলে সে তোমাকে আনন্দিত করবে, কোন নির্দেশ দিলে তা বাস্তবায়ন করবে। তার নিজের ব্যাপারে এবং সম্পদের ব্যাপারে পছন্দ করেন না এমন কাজ করে তার বিরোধীতা করবে না।”[18]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, একদা রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওমর (রাঃ)কে লক্ষ্য করে বললেন,

]أَلا أُخْبِرُكَ بِخَيْرِ مَا يَكْنِزُ الْمَرْءُ الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَإِذَا أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِذَا غَابَ عَنْهَا حَفِظَتْهُ[

“আমি কি তোমাকে মানুষের আকর্ষণীয় শ্রেষ্ঠ গুপ্তধন সম্পর্কে বলে দিব না? তা হচ্ছে, নেক রমণী। তার দিকে তাকালে সে তাকে আনন্দিত করে দেয়, কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং বাড়িতে না থাকলে তার ইজ্জত-আবরু রক্ষা করে।”
তাওবা করার সঠিক নিয়ম কী?

তাওবা করার সঠিক নিয়ম কী?


মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলেও অনেক সময় বুঝে না বুঝে পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় এমন কিছু পাপ করে ফেলে যেগুলো তাওবা না করলে মহান আল্লাহ পাকের কাছ থেকে ক্ষমা আশা করাই ঠিক হবে না। আবার যেন তেন ভাবে তাওবা করলেও তা মহান আল্লাহ তায়ালা কবুল করবে না। তাই এখনই জেনে নিন তওবা করার সঠিক নিয়ম।

১. পাপ কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মুখে মুখে তাওবা করি, কয়েকদিন পর থেকে পাপ কাজটা ছেড়ে দেবো – এ রকম হলে তওবা হবে না।
২. অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ত্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করে তাঁর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩. অন্তরে ঐকাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেইগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
৪. লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত গুনাহ খাতার জন্য “ইস্তিগফার” করতে হবে (মাফ চাইতে হবে) + “তওবা” করতে হবে (গুনাহ করা বন্ধ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে)।
৫. কারো হক্ক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার হক্ক ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা যেইভাবেই হোক, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে।

উল্লেখ্য, তওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করলে সেটা বান্দা মাফ না করলে তিনি মাফ করবেন না।

৬. অন্তরে আশা রাখতে হবে, যে আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহীম – অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুতরাং তিনি আমার তওবা কবুল করবেন।
৭. তওবা করার পরে প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে, এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি করে নেকীর কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।

৮. যে পাপ কাজ থেকে তওবা করা হলো (সমস্ত পাপ কাজ থেকেই তওবা করা ফরয), কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজটা করে ফেললে সাথে সাথে আবার তওবা করে সেটা থেকে ফিরতে হবে। এইভাবে যখনই কোনো পাপ হবে সাথে সাথেই তওবা করতে হবে, মৃত্যু পর্যন্ত।

ইসলামে খ্রিস্টান ও ইহুদী নারীদের বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে যেভাবে


আল্লাহ তা‘আলা তাতে ইরশাদ করেন,

﴿ ٱلۡيَوۡمَ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُۖ وَطَعَامُ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ حِلّٞ لَّكُمۡ وَطَعَامُكُمۡ حِلّٞ لَّهُمۡۖ وَٱلۡمُحۡصَنَٰتُ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡمُحۡصَنَٰتُ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ إِذَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحۡصِنِينَ غَيۡرَ مُسَٰفِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِيٓ أَخۡدَانٖۗ وَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلۡإِيمَٰنِ فَقَدۡ حَبِطَ عَمَلُهُۥ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٥ ﴾ [المائ‍دة: ٥]

‘আজ তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো সব ভালো বস্তু এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে, তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ এবং তোমার খাবার তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে মোহর দেবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য ব্যভিচারকারী বা গোপনপত্নী গ্রহণকারী হিসেবে নয়’। {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৫}

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সতী-সাধ্বী খ্রিস্টান ও ইহুদীদের বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন।

ইমাম ইবন কাছীর রহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহ সাধারণভাবে শিরকে লিপ্ত সব নারীকে বিয়ে করা হারাম ঘোষণা করেছেন, চাই সে মূর্তিপূজক কিংবা আহলে কিতাব সম্প্রদায়ভুক্ত হোক। তবে পরবর্তীতে মায়িদার আয়াতে তাদের মধ্যে কেবল আসমানী কিতাবধারী সচ্চরিত্রা নারীদের বিশেষভাবে বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

উপরোক্ত ব্যাখ্যার আলোকে প্রতিভাত হয় যে বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষেই কেবল খ্রিস্টান বা ইহুদী নারীকে কোনো মুসলিম বিয়ে করতে পারে।

এক. বাস্তবিকই আহলে কিতাব হতে হবে। শুধু নামে ইহুদী কিংবা খ্রিস্টান হলে চলবে না। নামে ইহুদী-খ্রিস্টান অথচ সে নাস্তিক কিংবা নিজ ধর্মকে বিশ্বাস করে না; তাহলে চলবে না।

দুই. অবশ্যই তাকে পবিত্র হতে হবে। ব্যভিচারিণী হলে চলবে না।

তিন. এমন কাউকে বিয়ে করা যাবে না যার জাতি পুরো মুসলিম উম্মতের সাথে ঘোর শত্রুতা পোষণ করে, যেমন : বর্তমান সময়ের ইসরাঈলের ইহুদীরা।

চার. বিয়ের কারণে স্বামীর সন্তানের কোনো বৈষয়িক ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশংকা থাকলেও আহলে কিতাব বিয়ে করা যাবে না।
নবী-রাসূলগণের মধ্যে কে কোন দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন?

নবী-রাসূলগণের মধ্যে কে কোন দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন?



মানব জাতির আদি পুরুষ হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) পর্যন্ত বিভিন্ন নবী রাসূলগণ কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন মুসলমান হিসেবে এই তথ্য আমাদের প্রত্যেকের জেনে রাখা দরকার। এমটি নিউজের পাঠকদের জন্য নিচে বেশ কয়েকজন নবীদের জন্মস্থান উল্লেখ করা হলো-

১. আদম (আ.)- শ্রীলংকা।
২. নূহ (আ.)- জর্ডান।
৩. শোয়াইব (আ.)- সিরিয়া।
৪. সালেহ (আ.)- লেবানন।
৫. ঈব্রাহীম (আ.)- ইরাক।
৬. ইসমাঈল (আ.)- সৌদি আরব।
৭. ইয়াকুব (আ.)- ফিলিস্তিন।
৮. ইয়াহ ইয়া (আ.)- ফিলিস্তিন।
৯. জাকারিয়া (আ.)- ফিলিস্তিন।
১০. ইসহাক (আ.)- ফিলিস্তিন।
১১. ইউসুফ (আ.)- ফিলিস্তিন।
১২. লুত (আ.)- জর্ডান+ইরাক।
১৩. আইয়ুব (আ.)- জর্ডান।
১৪. হুদ (আ.)- ইয়েমেন।
১৫. মুহাম্মদ (সা.)- সৌদি আরব।
পৃথিবীর বৃহত্তম মাটির মসজিদ

পৃথিবীর বৃহত্তম মাটির মসজিদ


মাটির মসজিদ! সেও আবার পৃথিবীর বৃহত্তম! অবিশ্বাস্য হলেও এটিই সত্যি। পৃথিবীর বৃহত্তম মসজিদটি হচ্ছে মাটির তৈরি।

‘গ্র্যান্ড মস্ক অব ডিজেনি’ পৃথিবীর বৃহত্তম একটি মসজিদ এটি। পশ্চিম আফ্রিকার মালির ডিজেনি শহরে এই মসজিদটি মধ্যযুগে আফ্রিকার এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের প্রধান কেন্দ্র ছিল।

‘গ্র্যান্ড মস্ক অব ডিজেনি’ নির্মাণ করা হয় ১২০০ শতাব্দী থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে। তবে বর্তমান ওই মসজিদের অবকাঠামো দেখে বুঝা যায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৯০৭ সালে।

বানি নদীর তীরে অবস্থিত ‘গ্র্যান্ড মস্ক অব ডিজেনি’ নামের মসজিদটি নির্মাণ করা হয়ে শুকানো মাটি দিয়ে। মসজিদটি ২৪৫ বাই ২৪৫ ফুট (৭৫ বাই ৭৫ মিটার) আয়তনবিশিষ্ট তিন ফুট উঁচু প্লাটফর্মের ওপর তৈরি। বর্ষাকালে বানি নদীর পানি থেকে এই প্লাটফরম মসজিদটিকে সুরা করে।

মনোমুগ্ধকর নকশা খচিত এই মসজিদটি ও এর চার পাশের ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ১৯৮৮ সালে তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো  ।

বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়, ওই দেশটির সুলতান কুনবরু ইসলাম কবুল করার পর ‘গ্র্যান্ড মস্ক অব ডিজেনি’ নির্মাণ করেন। আর এটি তিনি নির্মাণ করেন তার প্রাসাদটি ভেঙে।

সেই সাথে মসজিদের পূর্ব দিকে নিজের বসবাসের জন্য তৈরি করেন অপর একটি প্রাসাদ।

এছাড়া ওই সুলতানের পরবর্তী উত্তরাধিকারীরা মসজিদের দু’টি টাওয়ার নির্মাণ করেন এবং তার পরবর্তী উত্তরাধিকারী মসজিদটির চার পাশের দেয়াল নির্মাণ করেন।

তথ্য সূত্রে আরো জানা যায়, ১৮২৮ সালের আগে ‘গ্র্যান্ড মস্ক অব ডিজেনি’ সম্পর্কে বাইরের কেউই কিছু জানতেন না। তবে সে বছর ফরাসি পর্যটক রেনে ওই এলাকা ভ্রমণ করেন।

রেনে তার সফর শেষে লেখেন, ‘ডিজেনি শহরে মাটির তৈরি একটি মসজিদ আছে। মসজিদটির দুই পাশে দু’টি দর্শনীয় কম উচ্চতার টাওয়ার রয়েছে’।

ধারণা করা হয় রেনের বর্ণনার পর থেকেই ‘গ্র্যান্ড মস্ক অব ডিজেনি’ মসজিদটি সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর স্থানীয় মুসলমানেরা মসজিদটির সংস্কারকাজ করেন। তবে ২০০৬ সালের ২০ জানুয়ারি মসজিদের ছাদের একটি অংশ এবং ২০০৯ সালের ৫ নভেম্বর দক্ষিণ দিকের টাওয়ারের একটি অংশ ধসে পড়লে ‘দ্য আগা খান ট্রাস্ট কালচার’ নিজস্ব খরচে এটির সংস্কার করে।
জেনে নিন, কোন নবী কত বছর বেঁচে ছিলেন

জেনে নিন, কোন নবী কত বছর বেঁচে ছিলেন


জুবায়ের আল মাহমুদ রাসেল: মূলত হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগের নবী এবং তাদের উম্মতরা বেশি দিন বাঁচত। ফলে তারা মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করার সময় বেশি পেত। পরে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে উম্মতদের জন্য ফরিয়াদ করলে আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের রাত কে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে শেষ নবীর উম্মতরা কম সময় বেঁচে থাকলেও অনেক বেশি ইবাদত করার সুযোগ পায়।

কোন নবী কত দিন বেঁচে ছিলেন তা জেনে নিয়ে একটু ধারণা নিন ওই সকল নবী এবং তাদের উম্মতরা মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করার জন্য কতটা সময় পেত-

১। আদম (আ)- ১০০০ বছর।
২। নূহ (আ)- ৯৫০ বছর।
৩। শুয়াইব (আ)- ৮৮২ বছর।
৪। সালেহ (আ)- ৫৮৬ বছর।
৫। যাকারিয়া (আ)- ২০৭ বছর।
৬। ইব্রাহিম (আ)- ১৯৫ বছর।
৭। সুলাইমান (আ)- ১৩৭ বছর।
৮। ইয়াকুব (আ)- ১২৯ বছর।
৯। মুসা (আ)- ১২৫ বছর।
১০। ইসহাক (আ)- ১৫০ বছর।
১১। হারুন (আ)- ১১৯ বছর।
১২। ইউসুফ (আ)- ১১০ বছর।
১৩। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)- ৬৩ বছর।
বেশি সময় ধরে রোজা হয় যেসব দেশে

বেশি সময় ধরে রোজা হয় যেসব দেশে


শুরু হয়েছে রমজান মাস। বিশ্বব্যাপি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রোজা রাখার মাস। তবে সব দেশে রোজার সেহরি ও ইফতারের সময় সমান নয়। কোনো দেশে কম কোনো দেশে বেশি। কোনো দেশে দেখা যায় ইফতারের দু’ঘণ্টা পরই সেহরি খেতে হয়। অর্থাৎ তাদের জন্য রোজা ২২ ঘণ্টার। একনজরে দেখে নেয়া যাক, এমনই কয়েকটি দেশ।

আইসল্যান্ডে রোজা ২২ ঘণ্টা

আইসল্যান্ড এমন একটি দেশ যেখানে রোজাদারদের ২২ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়। এদেশে মাত্র ৭৭০ জন মুসলমানের বাস। তবে ৭৭০ জনের মধ্যে যারা পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনা করেন, তারা এক দিক থেকে বিশ্বের আর সমস্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে ছাড়িয়ে যান। আইসল্যান্ডে এবার সেহরি খেতে হচ্ছে রাত দু’টায় আর ইফতার পরের দিন রাত ১২ টায়। ঘটনা কী দাঁড়ালো? ২২ ঘণ্টা না!

সুইডেনে রোজা ২০ ঘণ্টা

খুব গরমের মধ্যে রোজা হলে সুইডেনের মুসলমানদেরও কষ্টের সীমা থাকে না! দেশটিতে ৫ লাখ মুসলমানের বসবাস। এদেশে এসব মুসলমানদের অনেক দিন সেহরির ২০ ঘণ্টা পর ইফতার খেতে হয়।

আলাস্কায় রোজা ১৯ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় তিন হাজার মুসলমানের বাস। গ্রীষ্মকালে ভীষণ গরম থাকে সেখানে। তার ওপর কোনো কোনোদিন সূর্যোদয়ের ১৯ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর সূর্য ডোবে। এত লম্বা সময় ধরে রোজা রাখা তাই অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না।

জার্মানিতে রোজা ১৯ ঘণ্টা

রমজানে জার্মানির মুসলমানদেরও রোজা রাখতে ভীষণ কষ্ট হয়। এ বছর জার্মানিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে সেহরি খেতে হচ্ছে রাত সাড়ে ৩টায় আর ইফতার রাত দশটায়।

ইংল্যান্ডে রোজা ১৮ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট

ইংল্যান্ডে সেহরি থেকে ইফতারের সময়ের পার্থক্য প্রায় ২০ ঘণ্টা। রমজান শুরুর আগেই তাই মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন নামের একটি সংগঠন এত দীর্ঘ সময়ের রোজা রাখার আগে ভেবে দেখতে বলেছে। সংগঠনটির আশঙ্কা, এত লম্বা সময় রোজা রাখলে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। বিশেষ করে ডায়বেটিসে আক্রান্তদের প্রাণহানির শঙ্কাও দেখা দিতে পারে। ব্রিটেনে প্রায় ২৭ লক্ষ মুসলমানের বসবাস।

ক্যানাডায় রোজা ১৭ দশমিক ৭ ঘণ্টা

প্রায় ১০ লক্ষ মুসলমান বাস করে ক্যানাডায়। সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস টরন্টোতে। এবার কোনো কোনো দিন সেহরির প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর ইফতারি খেতে হবে তাদের।

তুরস্কে সাড়ে ১৭ ঘণ্টা

মুসলিমপ্রধান দেশ তুরস্কেও গরমকালে রোজা রাখতে হয় খুব কষ্ট করে। এবার সেহরির প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা পর ইফতার করতে হচ্ছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের।

























স্বল্প সময় রোজা হয় যে দেশগুলোতে

স্বল্প সময় রোজা হয় যে দেশগুলোতে


রমজান মাসের চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমানরা রোজা রাখার প্রস্তুতি নেন। অঞ্চলের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশে রোজার সময়-সীমা ভিন্ন। কোনো দেশে ২১ ঘণ্টা তো কোনো দেশে প্রায় ১২ ঘণ্টা।

বাংলাদেশেও আমরা রোজা রাখছি ১৫ ঘন্টার বেশি। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশসমূহেও ১৫ ঘন্টার বেশি সময় রোজা পালন করতে হচ্ছে।

অপরদিকে এবার সবচেয়ে কম সময়ে রোজা হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের দেশ চিলিতে। গতবার এ অবস্থানে ছিল অস্ট্রেলিয়ার।

যেসব দেশে কম সময়ের রোজা পালন করা হচ্ছে-

চিলি

এ বছর সবচেয়ে কম সময়ে রোজা হচ্ছে চিলিতে। সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের রোজার দেশ ডেনমার্ক থেকে প্রায় ৯ ঘণ্টা কম। চিলিতে রোজার সময়-সীমা ১১ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট।

দক্ষিণ আফ্রিকা

চিলির চেয়ে মাত্র দুই মিনিট বেশি রোজা রাখছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দারা। অর্থাৎ ১২ ঘণ্টা রোজা রাখছেন তারা।

আর্জেন্টিনা

দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটিতে রোজার সময় ১২ ঘণ্টা ২১ মিনিট।

অস্ট্রেলিয়ায়

গত বছর সবচেয়ে কম সময় রোজা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। সময়-সীমা ছিল ১০ ঘণ্টা। এবার দেশটির বাসিন্দারা রোজা রাখছেন গড়ে ১২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।

ব্রাজিল

ব্রাজিলে রোজার সময় ১৩ ঘণ্টা ৯ মিনিট।
রোজা ও ইফতারে সময় সীমা

রোজা ও ইফতারে সময় সীমা


রোজার সময় সীমা :

সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার সময় সীমা।এই সময়ের মধ্যে পানাহার ,পাপাচার এবং যৌনাচার থেকে বিরত থাকতে হবে ।তবে ভুল বশত যদি কেউ কিছু খেয়ে ফেলে ,তাহলে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা

রোজার সেহেরী ও নিয়ত ঃ

সেহেরী খাওয়া সুন্নাত।যদি ক্ষুধা না থাকে তাহলে সামন্য কিছু হলেও খেতে হবে সে পরিমানটা দু একটা খোরমার , পরিমান হলেও হবে সেহেরী অর্ধ রাতের পর খেতে হয় তবে রাতের শেষোংশে খাওয়া ভাল তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হতে হবে। এবং রোজার নিয়ত করতে হবে।
রোজা কবুলের পূর্ব শর্তাবলী

রোজা কবুলের পূর্ব শর্তাবলী



পবিত্র রমজান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনদের জন্য এক বিশাল নেয়ামত,যার গুণাবলী বর্ণনা করে কখনো শেষ করা যায় না ।মানুষের জীবন একদিন না একদিন শেষ হয়ে যাবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া যৌবন জীবন কেউ স্থায়ী ভাবে ধরে রাখতে পারে নাই তা এক দিন না একদিন শেষ হয়ে যায় যেমন শিশু তার শিশু কাল হারিয়ে যৌবনে পদার্পন করে আবার এ যৌবন হারিয়ে বৃদ্ধ হয়ে যায় এটাই প্রকৃতির নিয়ম এ নিয়ম যিনি বেধে দিয়েছেন তিনি হলেন মহা শক্তিধর আল্লাহ তিনি মানুষের জীবন কে অর্থবহ করা,দুনিয়ার জীবন এবং পরকালের সীমাহীন জীবন কে কিভাবে সফল করা যায় তার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা পাঁচটি মহান স্তম্ভ দান করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পবিত্র রমজানের রোজা ।রোজা কবুল হওয়ার যেমন শর্ত রয়েছে তেমনি সু-নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মহান আল্লাহ মানুষের জন্য ঠিক করে দিয়েছেন যেমন :
১ঃ রোজা ফরজ হওয়া সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন : হে ঈমানদার গন ।তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ।যাতে তোমরা মোত্তাকি হতে পার ।[সুরা বাকারা- ১৮৩] ২্ঃ রোজা কাদের উপর ফরজ নিম্ন লিখিত ব্যক্তিদের উপর রোজা ফরজ ।(ক)মুসলমান হওয়া । ( খ)সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন হওয়া। (গ )বালেগ হওয়া। ( ঘ )দারুল ইসলামে থাকা ।ঊপরোক্ত লোকদের মধ্য থেকে মহান আল্লাহ কিছু কিছু লোককে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকার অনুমতি প্রদান করেছেন ।তন্মধ্যে যেমন ঃ (ক) মুসাফির কেউ যদি ভ্রমন রত অবস্থায় থাকে এবং থাকা খাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা থাকে তাহলে আললাহ পাক তাকে রোজা না রাখার অনুমতি দিয়েছেন ।তবে সে রোজা গুলো পরবর্তীতে কাযা আদায় করতে হবে।(খ) অসুস্থ ব্যাক্তি যদি রোজা রাখা থেকে বিরত থাকতে পারেন যদি মুসলিম ডাক্তার তাকে রোজা রাখতে বারন করে অথবা যদি এমন হয় রোজা রাখার কারনে জীবন নিয়ে আশংকা থাকে তাহল সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রোজা থেকে বিরত থাকতে পারে তবে সুস্থ হওয়ার পর রোজা আদায় করে দিতে হবে।(গ)হায়েছ নেফাছ -মহিলারা হায়েয নেফাছের সময় রোজা রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে।তাছাড়া গর্ভবতী স্ত্রীলোক অথবা শিশু সন্তান কে দুধ পান করার কারনে যদি নিজের জীবনের আশংকা থাকে ,তাহলে তাকে রোজা না রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে।তবে সেই রোজা গুলো পরবর্তীতে আদায় করে দিতে হবে।
রোজার ফজিলত ও তাৎপর্য

রোজার ফজিলত ও তাৎপর্য



ফারস শব্দ রোজার আরবি অর্থ হচ্ছে সওম, বহুবচনে সিয়াম। সওম বা সিয়ামের বাংলা অর্থ বিরত থাকা। ইসলামী শরীয়তে সওম হল আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশে নিয়তসহ সুবহে সাদিকের শুরু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা। ২য় হিজরীর শাবান মাসে মদীনায় রোজা ফরজ সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয় “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা সংযমী হও”। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)। সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসকে পায় সে যেন রোজা রাখে”। পবিত্র রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসের কিতাবগুলোতে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এর ভেতর থেকে কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো- প্রিয় নবীজি (সা.) এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম) অপর হাদিসে এসেছে, হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম) বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমযান মাসের রাতে এবাদত করে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)
হাদিসে আরো এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোজা (জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢাল স্বরুপ। তোমাদের কেউ রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ তার সঙ্গে গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার। সেই মহান সত্তার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর সুঘ্রানের চেয়েও উওম। রোজাদারের খুশির বিষয় ২টি- যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। আর একবার যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে। (বুখারী)। অপর একটি হাদিস হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, রোজা এবং কোরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে)। (বায়হাকী) হাদিস শরীফে আরো এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন রমজানের প্রথম রাত আসে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই খোলা হয় না। বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই বন্ধ করা হয় না। এ মাসে এক আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে ভালোর অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে মন্দের অন্বেষণকারী! থামো। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে বহু ব্যক্তিকে দোযখ থেকে মুক্তি দেন। আর এটা এ মাসের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, যখন রমজান মাস উপস্থিত হতো রাসুল (সা.) সমস্ত কয়েদিকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক প্রার্থনাকারীকে দান করতেন। (বায়হাকী) হাদিসের বইয়ে আরো পাওয়া যায়, নবী করীম (সা.) বলেছেন, কেউ যদি (রোজা রেখেও) মিথ্যা কথা বলা ও খারাপ কাজ পরিত্যাগ না করে তবে তার শুধু পানাহার ত্যাগ করা (অর্থাৎ উপবাস ও তৃষ্ণার্ত থাকা) আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারী) পবিত্র রমজান মাস মহান আল্লাহর সঙ্গে প্রিয় বান্দার প্রেম বিনিময়ের সবচেয়ে উত্তম সময়। এই মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। তাই এ মাসের ফজিলত ও মর্যাদা বেড়ে গেছে আরো বহুগুণ। রমজানের ফজিলত নিয়ে আরো অনেক হাদিস বিভিন্ন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। হযরত সালমান ফারসী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, একবার রাসুল (সা.) আমাদের শাবান মাসের শেষ তারিখে ভাষণ দান করলেন এবং বললেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করেছে এক মহান মাস, মোবারক মাস। এটি এমন মাস যাতে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তায়ালা এই মাসের রোজাগুলোকে করেছেন (তোমাদের ওপর) ফরজ আর রাতে নামাজ পড়াকে তোমাদের জন্য করেছেন নফল। এই মাসে যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে ১টি নফল আমল করল সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এই মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করলো। এটা ধৈর্য্যের মাস। আর ধৈর্য্যের সওয়াব হলো বেহেশত। এটা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। এটা সেই মাস যে মাসে মুমিন বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তা তার জন্য গুনাহ মাফের এবং দোযখের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া তার ছওয়াব হবে রোজাদার ব্যক্তির সমান। অথচ রোজাদার ব্যক্তির সওয়াব কমবে না। এসব শুনে সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তো এমন সামর্থ রাখেনা যে রোজাদারকে (তৃপ্তি সহকারে) ইফতার করাবে? রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহ পাক এই ছওয়াব দান করবেন যে রোজাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ দিয়ে, অথবা একটি খেজুর দিয়ে, অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়ায় আল্লাহ তায়ালা তাকে হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করাবেন যার পর সে পুনরায় তৃষ্ণার্ত হবে না জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত। এটা এমন পবিত্র মাসের প্রথম দিক রহমত, মাঝের দিক মাগফিরাত, আর শেষ দিক হচ্ছে দোযখ থেকে মুক্তির। যে ব্যক্তি এই মাসে আপন অধীনস্থ দাস-দাসীদের কাজের বোঝা হালকা করে দেবে মহান আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন এবং তাকে দোযখ থেকে মুক্তি দান করবেন। (বায়হাকী) প্রিয় নবীর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু ওবায়দা (রা.) রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে আরেকটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরুপ যতক্ষণ পর্যন্ত তা ফেড়ে না ফেলা হয় (অর্থাৎ রোজা মানুষের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা নিয়ম অনুযায়ী পালন করা হয়)। (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ) সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেছেন, হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, অনেক রোজাদার ব্যক্তি এমন রয়েছে যাদের রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ব্যতিত আর কিছুই লাভ হয় না। আবার অনেক রাত জাগরণকারী এমন রয়েছে যাদের রাত জাগার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না। (নেক আমল যদি এখলাস ও আন্তরিকতার সঙ্গে না হয়ে লোক দেখানোর উদ্দেশে হয় তাহলে এর বিনিময়ে কোনো সওয়াব পাওয়া যায় না)। (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) আরো বলেছেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে শরীয়ত সম্মত কোনো কারণ ছাড়া রমজানের একটি রোজাও ভাঙে সে রমজানের বাইরে সারাজীবন রোজা রাখলেও এর বদলা হবে না। (তিরমিযী, আবু দাউদ) রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, রমজানের জন্য বেহেশত সাজানো হয় বছরের প্রথম থেকে পরবর্তী বছর পর্যন্ত। তিনি বলেন, যখন রমজান মাসের প্রথম দিন উপস্থিত হয় বেহেশতের গাছের পাতা হতে আরশের নিচে বড় বড় চোখ বিশিষ্ট হুরদের প্রতি বিশেষ হাওয়া প্রবাহিত হয়। তখন তারা বলে, হে পালনকর্তা! আপনার বান্দাদের মধ্য হতে আমাদের জন্য এমন স্বামী নির্দিষ্ট করুন যাদের দেখে আমাদের চোখ জুড়াবে এবং আমাদের দেখে তাদের চোখ জুড়াবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানের ফজিলত জেনে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।
রমজানের হুকুম আহকাম(যে সকল কারনে রোজা ভাংবে)

রমজানের হুকুম আহকাম(যে সকল কারনে রোজা ভাংবে)


রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমাজান। মহান আল্লাহ পাক অপার করুণায় সয়লাব এ পবিত্র মাস, অধিকহারে বান্দার পাপরাশির মোচন হয়; বান্দা পায় মুক্তি ও পরিত্রাণের কাঙ্খিত সফলতা। রমাজান মাসের রোজা মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-" হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা মুত্তাকী অর্জন করতে পারো।"
রোজা ইসলামের ৫ টি মূলভিত্তির একটি। কেউ রমাজান মাসের রোজাকে ফরয হিসেবে অস্বীকার করলে কিংবা রোজার প্রতি উপহাস বা বিদ্রুপ প্রকাশ করলে সে ঈমানহারা কাফির হয়ে যাবে। আর যে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে রোজা পালন করবে না, সে ফাসিক বা মস্তবড় গুনাহগার সাব্যস্ত হবে।
তাই সকল মুসলমানদের উচিত, মাহে রমাজানের সবগুলো রোজা যথাযথভাবে পালন করা। রোযার আহকামগুলো সঠিকভাবে আদায় করা..................
রোযার নিয়তঃ রোযার নিয়ত করা ফরয। অন্তরে সংকল্প বা ইচ্ছা-ইরাদাই নিয়ত। আর মুখে নিয়তের কথা উচ্চারণ করা ফরয নয়, বরং উত্তম বা মুস্তাহাব।আরবি উচ্চারণঃনাওয়াইতু বি-সাওমি গাদিম মিন শাহরি রামাজান।

রোজার নিয়ত: 

نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان المبارك فرضا لك ياالله فتقبل منى انك انت السميع العليم

বাংলায় নিয়তঃ আমি আগামিকাল রমাজানের রোজা রাখার নিয়ত করলাম।অথবা দিনে অবশ্যই ১১ টার পূর্বে এ নিয়ত করবে যে, "আজ আমি রোজা রাখলাম"।

রোজার সুন্নাতসমূহঃ

১. শেষ রাতে সাহরী খাওয়া। এ সর্ম্পকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"তোমরা সাহরী খাও। কেননা, সাহরীর ভিতরে বরকত রয়েছে।" (মিশকাত শরীফ)
২. শেষ রাতে বিলম্বে সাহরী খাওয়া সুন্নাত। তবে এমন দেরি করবে না যাতে সুবহে সাদিক প্রকাশ পাওয়ার আশংকা হয়।
৩. সূর্য অস্ত যাওয়া মাত্রই তাড়াতাড়ি ইফতার করা।
৪. কোন খেজুর কিংবা ফলমূল দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত।
৫. "বিসমিল্লাহি ওয়া'আলা বারাকাতিল্লাহ" বলে ইফতার করা।ইফতারের দুআঃহে আল্লাহ তায়ালা আমি আপনার নির্দেশিত মাহে রমাজানের ফরয রোজা শেষে আপনারই নির্দেশিত আইন মেনেই রোজার পরিসমাপ্তি করছি ও রহমতের আশা নিয়ে ইফতার আরম্ভ করিতেছি। তারপর "বিসমিল্লাহি ওয়া'আলা বারাকাতিল্লাহ" বলে ইফতার করা।যারা আরবিতে ইফতারের দুআ জানেন তারা আরবিতে দুআ করিতে পারিবেন। তবে উচ্চারণ সঠিক হওয়া চাই।

রোজা ভঙ্গ হবার কারণসমূহঃ

১. রোজা রেখে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত হবার পূর্ব সময়ে ইচ্ছাপূর্বক পানাহার অথবা স্ত্রীর সহিত সহবাস করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এ অবস্থায় রোজার কাযা এবং কাফফারা উভয়ই আদায় ওয়াজিব হবে। কাযা হচ্ছে- ভেঙ্গে ফেলা রোজার পরিবর্তে আরো একটা রোজা রাখা এবং কাফফারা হচ্ছে- একাধারে বিরতিহীনভাবে ৬০ টি রোজা রাখা।
২. স্বেচ্ছায় মুখ ভরে বমি করলে।
৩. ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যস্থলন করলে।হস্তমৈথুন কিংবা কাউকে চুম্বন বা উত্তেজনাসহ স্পর্শের জন্য বীর্য পাত হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
৪. মাসিক স্রাব এবং প্রসবোত্তর স্রাব শুরু হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এ অবস্থায় রোজা ও নামাজ ছেড়ে দিতে হবে এবং সুস্থ হলে রোজা ও নামাজের কাযা আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে রোজার কাযা আদায় করলেই চলবে কোন কাফফারা দিতে হবে না। লক্ষণীয় যে, যদি কারো দিনের বেলা স্রাব বন্ধ হয়ে যায় সেই দিন সেই সময় থেকেই সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং রোজাদারের ন্যায় আচরণ করতে হবে।
৫. রোজা অবস্থায় শরীরে রক্ত পুশ করালে অথবা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন কিংবা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত কোন ইনজেকশন বা স্যালাইন পুশ করালে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৬. নাকে বা কানে তৈল বা ওযুধ প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

রোজা মাকরূহ হবার কারণসমূহঃ

১. রোজা অবস্থায় উজুর সময় গড়গড়ার সাথে কুলি করা এবং নাকে পানি টেনে নেয়া মাকরূহ।
২. রোজা অবস্থায় যৌনকামনার সাথে স্ত্রীকে চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদি করলে।
৩. রোজা অবস্থায় উত্তেজনাসহ বার বার স্ত্রীর দিকে তাকানো কিংবা সহবাসের চিত্র বার বার মনে করা মাকরূহ।
৪. রোজা অবস্থায় বিনা প্রয়োজনে খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করা।৫. থুথু-কাশি মুখে জমা করে গলধঃকরণ করা মাকরূহ। তবে জমা না করে থুথু গিলা যাবে।
৫. রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট, মাজন দ্বারা দাঁত পরিস্কার করা মাকরূহ। তবে মিসওয়াক করা যাবে।

রোজা ভঙ্গ হয় না যে সব কারণেঃ

১. রোজার কথা ভুলে পানাহার করলে।
২. সুগন্ধি ব্যবহার করলে।
৩. নিজ মুখের থুথু-কফ জমা না করে গিলে ফেললে।
৪. শরীর বা মাথায় তৈল ব্যবহার করলে।
৫. দিনের বেলা ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হলে।
৬. মিসওয়াক করলে। মিসওয়াকে রক্ত বের হলে তা গলার ভেতরে না পৌঁছলে কোন ক্ষতি নাই।
৭. অনিচ্ছকৃতভাবে বমি করলে। ইচ্ছাকৃতভাবে অল্প পরিমাণ বমি করলেও রোজা ভাঙ্গবে না।
৮. চোখে সুরমা বা ওষুধ ব্যবহার করলে।
৯. ঠান্ডার জন্য গোসল করলে।১
০. অসুস্থতার জন্য ইনজেকশন নিলে রোজার ক্ষতি হবে নযেভাবে কাটাবেন মাহে রমাজান মাসঃমাহে রমাজান মাসে সম্পূর্ণ গোনাহমুক্ত থাকা চাই। একটি গোনাহ যেন না হয় আমাদের দ্বারা। খেয়াল রাখতে হবে যে-"এই মুবারক মাসে চোখ যেন ভুল জায়গায় দৃষ্টিপাত না করে, কান যেন ভুল ও অন্যায় জিনিস না শোনে, যবান দিয়ে যেন কোন অশ্লীল ও অশ্রাব্য বাক্য বের না হয়"

রোজা ফরয হওয়ার শর্তাবলী

রোযা ফরয হওয়ার শর্তাবলী 

১. মুসলমান হওয়া।
২. বালিগ হওয়া।
৩. জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া।
৪. সুস্থ হওয়া।
৫. মুক্বীম হওয়া। অর্থাৎ মুসাফির না হওয়া, কেননা মুসাফিরের জন্য বাধ্যবাধকতা থাকেনা। তবে মুক্বীম হওয়ার পর অবশ্যই ক্বাযা আদায় করতে হবে।


যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং শুধু ক্বাযা ওয়াজিব হয়


নিম্নলিখিত কারণসমূহে রোযা ভঙ্গ হয় এবং তার জন্য শুধু ক্বাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। সেগুলো হচ্ছে:
১. ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করলে।
২. আহলিয়াকে বুছা বা স্পর্শ করার কারণে মনি নির্গত হলে।
৩. কোন অখাদ্য বস্তু তথা পাথর, লোহার টুকরো, ফলের আঁটি ইত্যাদি গিলে ফেললে।
৪. স্বাভাবিক স্থান ব্যতীত অন্যস্থানে মেলামেশায় মনি নির্গত হলে।
৫. জোরপূর্বক রোযাদারকে কিছু খাওয়ানো হলে।
৬. ভুলক্রমে কিছু খেতে আরম্ভ করে রোযা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে পুনরায় আহার করলে।
৭. কুলি করার সময় পেটে পানি চলে গেলে।
৮. প্রস্রাব -পায়খানার রাস্তায় ওষুধ বা অন্য কিছু প্রবেশ করালে।
৯. রাত মনে করে ছুবহি ছাদিক্বের পর পানাহার করলে।
১০. সন্ধ্যা মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বেই ইফতার করলে।
১১. মুখে বমি এনে পুনরায় তা পেটে প্রবেশ করালে।
১২. দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্য কণা বের করে খেয়ে ফেললে।
১৩. শরীরের কোন ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগানোর ফলে তা ভেতরে প্রবেশ করলে।
১৪. রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন, ইনসুলিন ইত্যাদি ব্যবহার করলে।
১৫. নাকে বা কানে তেল বা তরল ওষুধ প্রবেশ করালে।
১৬. আগরবাতির ধোঁয়া নাকে প্রবেশ করলে।
১৭. রোযা রেখে পেস্ট, কয়লা, পাউডার, ছাই ইত্যাদি যে কোন প্রকার মাজন দ্বারা দাঁত মাজা মাকরূহ। এগুলোর সামান্য অংশও যদি গলায় প্রবেশ করে তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এছাড়া সর্বাবস্থায় গুল ব্যবহার করা হারাম। কারণ গুল মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত।
১৮. রাত্রি বাকি আছে মনে করে ছুবহি ছাদিক্বের পর পানাহার করলে বা নির্জনবাস করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়


নিম্নলিখিত কাজসমূহ দ্বারা রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব হয়। যথা:
১. ইচ্ছাকৃত নির্জনবাস করলে।
২. স্বেচ্ছায় পানাহার করলে।
৩. স্বেচ্ছায় ওষুধ পান করলে।
৪. শিঙ্গা লাগানোর পর রোযা নষ্ট হয়েছে মনে করে পানাহার করলে।
৫. ধূমপান করলে।

কাফফারা আদায় করার নিয়ম


কাফফারা হচ্ছে দু’মাস ধারাবাহিক রোযা রাখা অথবা ষাটজন মিসকীনকে দু’বেলা তৃপ্তিসহকারে খাদ্য খাওয়ানো অথবা কোন গোলাম আযাদ করা।

সন্তানসম্ভবা ও দুগ্ধদায়িনীর রোযা রাখার হুকুম

গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী যদি আশঙ্কাবোধ করে যে, 

রোযা রাখলে যথাক্রমে তাদের গর্ভস্থ ভ্রুণ ও দুগ্ধপানকারী সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাহলে তাদের জন্য রোযা না রাখা জায়িয হবে। পরে এর ক্বাযা আদায় করে নিবে। কাফফারা বা ফিদিয়া প্রদান করতে হবে না।

বয়ো-বৃদ্ধের রোজার হুকুম


অতিশয় বৃদ্ধ যে রোযা রাখতে অক্ষম তার জন্য অনুমতি রয়েছে যে, সে রোযা ভঙ্গ করতে পারবে এবং প্রতিদিনের রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে তৃপ্তি সহকারে দু’বেলা খাওয়াবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ ফরমান:

وعلى الذين يطيقونه فدية طعام مسكين

অর্থ: “যাদের রোযা রাখতে অতিশয় কষ্ট হয় তাদের কর্তব্য হলো এর পরিবর্তে ফিদিয়া তথা একজন অভাবগ্রস্তকে (মিসকীন) খাদ্য দান করা।”(সূরা বাক্বারা শরীফ)


সারমর্ম হচ্ছে-

১. চোখ দ্বারা নোংরা ছবি, সিনেমা কিংবা পরনারীর প্রতি দৃষ্টিপাত না করা।
২. কান দ্বারা গান-বাজনা, অশ্লীল কথাবার্তা না শোনা।
৩. মুখ দ্বারা মিথ্যা কথা বলা, গীবত করা, পরনিন্দা করা, চোগলখুরি করা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকা।মোটকথা, শরীরের সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গকে আল্লাহ তায়ালার যাবতীয় নাফরমানী থেকে পরিপূর্ণভাবে বিরত রাখতে হবে। কেননা, মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করল না, তার ক্ষুধার্থ ও উপবাস থাকায় আল্লাহ পাকের কোন প্রয়োজন নেই"। (মিশকাত শরীফ)
রোজা নষ্ট হওয়ার কারণগুলো

রোজা নষ্ট হওয়ার কারণগুলো


রোজা ফারসি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে দিন। যেহেতু এই আমলটি দিনের শুরু থেকে শেষাংশ পর্যন্ত পালন করা হয় তাই একে রোজা বলা হয়। আর আরবিতে এর নাম সাওম বা সিয়াম। যার শাব্দিক অর্থ কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি সবল মুসলমানের জন্য রমজান মাসের প্রতিদিন রোজা রাখা ফরজ বা অবশ্য পালনীয়।

রোজা ভঙের কারণ

১. ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে।
২. স্ত্রী সহবাস করলে।
৩. কুলি করার সময় হলকের নিচে পানি চলে গেলে (অবশ্য রোজার কথা স্মরণ না থাকলে রোজা ভাঙবে না)।
৪. ইচ্ছকৃত মুখভরে বমি করলে।
৫. নস্য গ্রহণ করা, নাকে বা কানে ওষুধ বা তেল প্রবেশ করালে।
৬. জবরদস্তি করে কেউ রোজা ভাঙালে।
৭. ইনজেকশান বা স্যালাইনের মাধ্যমে দেহে ওষুধ পৌঁছালে।
৮. কংকর, পাথর বা ফলের বিচি গিলে ফেললে।
৯. সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করার পর দেখা গেল সূর্যাস্ত হয়নি।
১০. পুরা রমজান মাস রোজার নিয়ত না করলে।
১১. দাঁত থেকে ছোলা পরিমান খাদ্যদ্রব্য গিলে ফেললে।
১২. ধূমপান করা, ইচ্ছাকৃত লোবান বা আগরবাতি জ্বালিয়ে ধোঁয়া গ্রহণ করলে।
১৩. মুখ ভর্তি বমি গিলে ফেললে।
১৪. রাত আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার করলে।
১৫. মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুবহে সাদিকের পর জাগরিত হলে।

রোজার মাকরুহ

১. অনাবশ্যক কোনো জিনিস চিবানো বা চাখা।
২. কোনো দ্রব্য মুখে দিয়ে রাখা।
৩. গড়গড়া করা বা নাকের ভেতর পানি টেনে নেয়া। কিন্তু পানি যদি নাক দিয়ে গলায় পৌঁছে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে।
৪. ইচ্ছাকৃত মুখে থুথু জমা করে গিলে খেলে।
৫. গীবত, গালা-গালি ও ঝগড়া-ফাসাদ করা। কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া-ফাসাদ করতে এলে বলবে, আমি রোজাদার তোমাকে প্রত্যুত্তর দিতে অক্ষম।
৬. সাড়া দিন নাপাক অবস্থায় থাকা।
৭. অস্থিরতা ও কাতরতা প্রকাশ করা।
৮. কয়লা চিবিয়ে অথবা পাউডার, পেস্ট ও মাজন ইত্যাদি দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা।
তারাবি ও রোজার নিয়ত এবং ইফতারের দোয়া

তারাবি ও রোজার নিয়ত এবং ইফতারের দোয়া



 নামাজ:

এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবি নামাজ’ বলা হয়। আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা।
রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবি নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ও কোরআন শরিফ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ।

তারাবি নামাজের নিয়ত:

نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر.
(নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা, রকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’আলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।)
অর্থ: আমি ক্বিবলামুখি হয়ে দু’রাকাআত তারাবিহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাযের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।

তারাবি নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া:

سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.
উচ্চারণ: সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানাযিল ইযযাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারূত। সুব্হানাল মালিকিল হায়্যিল্লাযি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।

রোজার নিয়ত:

نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان المبارك فرضا لك ياالله فتقبل منى انك انت السميع العليم
(নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।)
অর্থ: হে আল্লাহ! আগামীকাল পবিত্র রমযান মাসে তোমার পক্ষ হতে ফরয করা রোজা রাখার নিয়ত করলাম, অতএব তুমি আমার পক্ষ হতে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

ইফতারের দোয়া:

اللهم لك صمت و على رزقك افطرت.
(আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্ব দ্বারা ইফতার করছি।

বিভিন্ন নবীর যুগে রোজা

বিভিন্ন নবীর যুগে রোজা


মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের ঐতিহাসিক পটভূমির প্রতি ইঙ্গিত করে ইরশাদ করেন : হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যেমন তোমাদের পূর্বসূরিদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। এ পবিত্র আয়াতে সব শরিয়তেই রোজা ফরজ ছিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

হজরত আদমের (আ.) যুগে রোজা : পূর্বের শরিয়তসমূহে রোজা কোন ধরনের বা কত দিনের ছিল, কোন মাস অথবা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত ছিল কি না, এ সম্পর্কে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অত্যন্ত মুশকিল। হজরত আল্লামা আলূসীর মতে, হজরত আদমের প্রতিও রোজার হুকুম ছিল, কিন্তু সেই রোজার বিস্তৃত বর্ণনা আমাদের জানা নেই। অন্যান্য তাফসির বিশারদও এই ধরনের মত পোষণ করেছেন। এ সম্পর্কে ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা আরিফ বিল্লাহ শাইখুল হিন্দ আল্লামা মাহমুদুল হাসান (রহ.) উপরোক্ত আয়াতের তাফসিরে বলেন : 'রোজার হুকুম যথারীতি হজরত আদমের (আ.) যুগ হতে শুরু করে অদ্যাবধি বিদ্যমান রয়েছে।

হজরত নূহের যুগে রোজা : হজরত নূহ (আ.)-এর যুগে বিস্তৃত শরিয়ত অবতীর্ণ হয়। হজরত নূহের পূর্বেও শরীয়ত ছিল। কিন্তু পৃথিবীর তখন প্রথম যুগ, তাই সেই যুগে শরিয়তের বিষয়াদির অহি ছিল অত্যন্ত সীমিত। সেই যুগে বেশির ভাগই ছিল পৃথিবী গড়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলি সংক্রান্ত অহি। আর এই প্রশ্নে হজরত নূহের যুগ ছিল একেবারেই স্বতন্ত্র। এই যুগ থেকেই শুরু হয় খোদাদ্রোহিতা ও অহির আদেশের অমান্যতা। হজরত নূহকে লক্ষ্য করেই আল্লাহপাক ইরশাদ করেন : 'যারা ইমান এনেছে, তারা ব্যতীত আর কেউই ইমান আনবে না।' তখন হজরত নূহ (আ.) অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেছিলেন : 'হে আমার রব! পৃথিবীর বুকে কোনো কাফেরের গৃহ যে অবশিষ্ট না থাকে।' হাশরের ময়দানে শাফাআতের জন্য উম্মতগণ সর্বপ্রথম হজরত নূহের কাছে গমন করবে। হজরত নূহ (আ.)-কে পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম রসুল হিসেবে ঘোষণা করে বলা হয়েছে : 'আপনি বিশ্ববাসীর মাঝে শরিয়ত বর্ণনাকারী প্রথম রসুল।' আল্লামা ইবনে কাছীর স্বীয় প্রসিদ্ধ তাফসিরে লিখেছেন, হজরত নূহের যুগ থেকে প্রত্যেক মাসেই তিনটি রোজা পালন করার হুকুম ছিল এবং এ হুকুম বিশ্ব নবীর (সা.) যুগ পর্যন্ত বহাল ছিল। অতঃপর যখন রমজানে রোজা পালনের হুকুম হলো, তখন থেকে প্রতি মাসে তিনটি রোজা পালনের হুকুম রহিত হলো। এই বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে, হজরত নূহের যুগেও রোজার বিধান চালু ছিল।

হজরত মূসার যুগে রোজা : যখন আল্লাহপাক হজরত মূসা (আ.)-কে তূর পর্বতে ডেকে তাওরাত প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেন, তখন আল্লাহপাক হজরত মূসাকে সেখানে ত্রিশ রাত অবস্থানের নির্দেশ দিলেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : 'এবং স্মরণ কর ওই সময়কে, যখন আমি মূসার জন্য ত্রিশ রাত নির্ধারণ করেছিলাম এবং আরও দশ দ্বারা এটা পূর্ণ করেছিলাম। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত চল্লিশ রাত পূর্ণ হয়। হজরত ইবনে আব্বাসের মতে হজরত মূসা (আ.) জিলকদ মাসের ৩০ দিন ও জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন রোজা পালন করে আল্লাহর দরবারে হাজির হন এবং তাওরাত লাভ করেন। এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, হজরত মূসা (আ.)-এর যুগেও রোজার হুকুম ছিল।

হজরত দাউদের যুগে রোজা : হজরত ইবনে আমরকে রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা পালনের আদেশ এভাবে করেছিলেন : 'আল্লাহর কাছে যে রোজা উত্তম সেই রোজা রাখ। আর সেই রোজা হলো যা দাউদ রেখেছেন। তিনি একদিন রোজা রাখতেন আর একদিন ইফতার করতেন। এই হাদিস থেকে হজরত দাউদ (আ.)-এর যুগের রোজার সন্ধান পাওয়া যায়।

বাইবেলে রোজা : বাইবেলে 'দার' বাদশাহের যুগে বাইতুল ইলের বাসিন্দা ও বনী ইয়াহুদাদের প্রতি রোজা রাখার হুকুমের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এমনিভাবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সব শরিয়তেই রোজার সন্ধান পাওয়া যায়। বস্তুত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব জাতির মধ্যেই রোজা পালনের বিধান ছিল।

আত্দশুদ্ধির তাগিদে আদিকাল থেকেই বিভিন্ন বর্ণ, গোত্র ও ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে রোজা প্রচলিত ছিল। প্রাচীন চীনা সম্প্রদায়ের লোকরা একাধারে কয়েক সপ্তাহ রোজা রাখত। অনুরূপভাবে খ্রিস্টান পাদ্রী, পারসিক অগ্নিপূজক এবং হিন্দু-যোগীদের মধ্যেও রোজার রেওয়াজ ছিল। পারসিক ও হিন্দু যোগীদের রোজার প্রকৃতি ছিল এইরূপ যে, তারা রোজা থাকা অবস্থায় মাছ-মাংস, তরিতরকারি ইত্যাদি ভক্ষণ করা হতে বিরত থাকত বটে, কিন্তু ফলমূল ও পানীয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকত না। কিন্তু ইসলামে রোজার যে নীতি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা এ দুই বিপরীতমুখী প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ। আরবিতে এই অবস্থাকে এ'তেদাল বলা যেতে পারে। ইসলামে রোজা এক দিকে যেমন কঠোরতা মুক্ত, অপরদিকে সর্ব প্রকার বাতুলতা থেকেও পবিত্র। অর্থাৎ ইসলামে দীর্ঘ সময় একাধারে রোজা রাখাও যেমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তেমনিভাবে রোজাদারকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
প্রত্যেক মাসে কত দিন রোজা রাখবেন?  এবং কি বারে রোজা রাখা উত্তম?

প্রত্যেক মাসে কত দিন রোজা রাখবেন? এবং কি বারে রোজা রাখা উত্তম?


প্রত্যেক মাসে তিন দিন (নফল) রোজা রাখা মুস্তাহাব। আর দিনগুলো থেকে বৃহস্পতি ও সোমবারে রোজা রাখাও মুস্তাহাব। নিন্মে দলীলসহ আলোচনা করা হলো।
❀❖০১. হযরত আয়েশা (রা.) এর হাদীস-
سنن النسائي (4/ 203)
2364 - أَخْبَرَنَا إِسْحَقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ حَبِيبِ بْنِ الشَّهِيدِ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَمَانٍ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ الْمُسَيَّبِ بْنِ رَافِعٍ، عَنْ سَوَاءٍ الْخُزَاعِيِّ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ»
__________
[حكم الألباني] صحيح
অর্থ : হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখতেন। তিরমিযী-৪/২০৩, হাদীস-২৩৬৪। হাদীসটি সহীহ।
❀❖০২. হযরত আবূ কাতাদা আল আনসারী (রা.) এর হাদীস-
صحيح مسلم (2/ 820)
198 - (1162) وحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، عَنْ غَيْلَانَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَعْبَدٍ الزِّمَّانِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ؟ فَقَالَ: «فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ»
অর্থ : হযরত আবূ কাতাদা আল আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সোমবারে রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি জবাবে বলেন, এই দিনে আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমার উপর ওহী এসেছে। মুসলিম-২/৮২০, হাদীস-১১৬২।
❀❖০৩. হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) এর হাদীস-
سنن الترمذي ت شاكر (3/ 113)
747 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ رِفَاعَةَ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ، فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ»:
__________
[حكم الألباني] : صحيح
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিন বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, (মহান আল্লাহর নিকট) সোমবার ও বৃহস্পতিবারে আমল সমূহ পেশ করা হয় আর আমি এ বিষয়টি ভালোবাসি যে, আমার আমল সমূহ মহান আল্লাহ নিকট এমন অবস্থায় পেশ করা হবে, যে অবস্থায় আমি রোজাদার। তিরমিযী-৩/১১৩, হাদীস-৭৪৭।
░প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব কেন?
❀❖০১. হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) এর হাদীস-
صحيح البخاري (2/ 58)
1178 - حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا عَبَّاسٌ الجُرَيْرِيُّ هُوَ ابْنُ فَرُّوخَ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلاَثٍ لاَ أَدَعُهُنَّ حَتَّى أَمُوتَ: «صَوْمِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَصَلاَةِ الضُّحَى، وَنَوْمٍ عَلَى وِتْرٍ»
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার খলীল ও বন্ধু (নবী করীম সা.) আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করেছেন, আমৃত্যু তা আমি পরিত্যাগ করব না। (কাজ তিনটি হলো) ১. প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম (পালন করা), ২. সালাতুয-যোহা (চাশত এর সালাত আদায় করা) এবং ৩. বিতর (সালাত) আদায় করে ঘুমানো। বুখারী-২/৫৮, হাদীস-১১৭৮।
❀❖০২. হযরত মু’আযাতাল আদবিয়্যা (রা.) এর হাদীস-
صحيح مسلم (2/ 818)
194 - (1160) حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، عَنْ يَزِيدَ الرِّشْكِ، قَالَ: حَدَّثَتْنِي مُعَاذَةُ الْعَدَوِيَّةُ، أَنَّهَا سَأَلَتْ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ؟» قَالَتْ: «نَعَمْ»، فَقُلْتُ لَهَا: «مِنْ أَيِّ أَيَّامِ الشَّهْرِ كَانَ يَصُومُ؟» قَالَتْ: «لَمْ يَكُنْ يُبَالِي مِنْ أَيِّ أَيَّامِ الشَّهْرِ يَصُومُ»
অর্থ : হযরত মু’আযাতাল আদবিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) এর স্ত্রী আয়েশা (রা.) এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) কি প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, মাসের কোন কোন দিন তিনি রোযা রাখতেন? তিনি বললেন, এ ব্যাপারে তিনি কোন নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন বোধ করতেন না বরং মাসের যে কোন দিন তিনি রোযা রাখতেন। সহীহ মুসলিম-২/৮১৮, হাদীস-১১৬০।


অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন.......-وَصُمْ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، فَإِنَّ الحَسَنَةَ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، وَذَلِكَ مِثْلُ صِيَامِ الدَّهْرِ তুমি প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোজা রাখ, আল্লাহ তোমাকে দশগুন (পুরা মাসের) সাওয়াব প্রধান করবেন। এই তিন দিন রোজা রাখা, একাধারে (সারা জীবন) রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যায়.......। সহীহ বুখারী-৩/৪০, হাদীস-১৯৭৬।
❀❖০৪. হযরত মা’বিয়াতুবনু কুররা আল মা’যনী তার পিতা থেকে বর্ণিত হাদীস-
صحيح ابن حبان - محققا (8/ 413)
[3653] أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي عَوْنٍ، حَدَّثَنَا فَيَّاضُ بْنُ زُهَيْرٍ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ الْمُزَنِيِّ عَنْ أَبِيهِ -كان النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَسَحَ عَلَى رَأْسِهِ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "صِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ صِيَامُ الدَّهْرِ وَإِفْطَارُهُ"
অর্থ : হযরত মা’বিয়াতুবনু কুররা আল মা’যনী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম (সা.) তার মাথার উপর হাত বুলিয়েছেন এবং বলেছেন, প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখা, সারা জীবন একধারে (সারা জীবন) রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যায়। ইবনে হিব্বান-৮/৪১৩, হাদীস-৩৬৫৩।
উক্ত হাদীসটিকে ইমাম ইবনে হিব্বান, আল্লামা মুনজেরী, আল্লামা হায়সামী, আল্লামা ইবনুল কিসরানী, আল্লামা ওয়াদী, আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, আল্লাম সাফরানী আল হাম্বলীর মত বড় বড় ইমামগণ সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। আত তারগীব ওয়াত তারহীব-২/১৩৪, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ-৩/১১৯, যখিরাতুল হুফফাজ-৩/১৫৪৩, আস সহীহুল মুসনাদ মিম্মা লাইছা বিস সহীহাইন-১০৭৯, তোহফাতুল আহওয়াযী-৩/১৮৫, শারহু সোলাসিয়াতিল মুসনাদিল আহমাদ ইবনে হাম্বাল-১/৬১১।
✔মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে উত্তম দিবসগুলোর প্রতি লক্ষ্ রেখে প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোজা রাখার তাওফীক দান করুন। আমীন

কেউ যদি ভুলক্রমে কিছু খেয়ে ফেলে তবে কি তার সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে?

কেউ যদি ভুলক্রমে কিছু খেয়ে ফেলে তবে কি তার সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে?





 উত্তর: না, ভাঙ্গবে না।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِذَا نَسِيَ فَأَكَلَ وَشَرِبَ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وَسَقَاهُ

১. যদি কেউ ভুলক্রমে পানাহার করে তবে সে যেন তার সিয়াম পূর্ণ করে নেয়, কেননা আল্লাহ তা’আলাই তাকে এ পানাহার করিয়েছেন (অর্থাৎ এতে তার রোযা ভাঙ্গেনি)। (বুখারী-১৯৩৩ ও মুসলিম-১১৫৫)

مَنْ أَفْطَرَ فِيْ رَمَضَانَ نَاسِيًا فَلاَ قَضَاءَ عَلَيْهِ وَلاَ كَفَّارَةَ

২. যে ব্যক্তি ভুল বশতঃ রমাযানের দিনে বেলায় কিছু খেয়ে ফেলল : সেজন্য কোন কাযা ও কাফফারা দিতে হবে না। (দারাকুতনী ২৪, বায়হাকী ৭৮৬৩)
সিয়াম বা রোজা পালনকারীকে আল্লাহ কী কী পুরস্কার দেবেন?

সিয়াম বা রোজা পালনকারীকে আল্লাহ কী কী পুরস্কার দেবেন?


সিয়াম পালনকারীকে যেসব পুরস্কার ও প্রতিদান আল্লাহ তা’আলা দেবেন তার অংশ বিশেষ এখানে উল্লেখ করা হল :

[১] আল্লাহ স্বয়ং নিজে সিয়ামের প্রতিদান দেবেন।

হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তা’আলা বলেন :

كُلُّ عَمَلِ بَنِىْ آَدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِيْ وَأَنَا أَجْزِئ بِهِ

“মানুষের প্রতিটি ভাল কাজ নিজের জন্য হয়ে থাকে, কিন্তু সিয়াম শুধুমাত্র আমার জন্য, অতএব আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। (বুখারী)

[২] সিয়াম অতি উত্তম নেক আমল

আবূ হুরাইরাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র একটি হাদীসে তিনি বলেছিলেন :

يَا رَسُوْلَ اللهِ مُرْنِيْ بِعَمَلٍ، قَالَ عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لاَ عَدْلَ لَهُ

“হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে একটি অতি উত্তম নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমমর্যাদা সম্পন্ন কোন আমল নেই।” (নাসাঈ)

অন্যান্য ইবাদত মানুষ দেখতে পায়। কিন্তু সিয়ামের মধ্যে তা নেই। লোক দেখানোর কোন আলামত সিয়াম পালনে থাকে না। শুধুই আল্লাহকে খুশী করার জন্য তা করা হয়। তাই এ ইবাদতের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ ইখলাস।

হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِيْ

“সিয়াম পালনকারী শুধুমাত্র আমাকে খুশী করার জন্যই পানাহার ও যৌন উপভোগ পরিহার করে।

[৩] ক- জান্নাত লাভ সহজ হয়ে যাবে।

সহীহ ইবনু হিব্বান কিতাবে আছে আবূ উমামা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন-

يَا رَسُوْلَ اللهِ دُلُّنِيْ عَلَى عَمَلٍ أَدْخُلُ بِهِ الْجَنَّةَ قَالَ عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لاَ مِثْلَ لَهُ

আবূ উমামা রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যার কারণে আমি জান্নাতে যেতে পারি। তিনি বললেন, তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমমর্যাদাসম্পন্ন কোন ইবাদাত নেই। (নাসাঈ)

খ. সিয়াম পালনকারীকে বিনা হিসেবে প্রতিদান দেয়া হয়

অন্যান্য ইবাদতের প্রতিদান আল্লাহ তা’আলা তার দয়ার বদৌলতে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু সিয়ামের প্রতিদান ও তার সাওয়াব এর চেয়েও বেহিসেবী সংখ্যা দিয়ে গুণ দিয়ে বাড়িয়ে দেয়া হবে। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন,

كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ (إِلاَّ الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِيْ وَأَنَا أَجْزِي بِهِ)

“মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, কিন্তু সিয়ামের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধুমাত্র আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব। (মুসলিম)

অর্থাৎ কি পরিমাণ সংখ্যা দিয়ে গুণ করে এর প্রতিদান বাড়িয়ে দেয়া হবে এর কোন হিসাব নেই, শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন সিয়ামের পুণ্যের ভাণ্ডার কত সুবিশাল হবে।

[৪] জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সিয়াম ঢাল স্বরূপ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

اَلصِّيَامُ جُنَّةٌ يَسْتَجِنُّ بِهَا الْعَبْدُ مِنَ النَّارِ

“সিয়াম ঢাল স্বরূপ। এ দ্বারা বান্দা তার নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পার।” (আহমাদ)

[৫] জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য সিয়াম একটি মজবুত দূর্গ

হাদীসে আছে,

اَلصِّيَامُ جُنَّةٌ وَحِصْنُ حَصِيْنٌ مِنَ النَّارِ

“সিয়াম ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার এক মজবুত দূর্গ।”

[৬] আল্লাহর পথে সিয়াম পালনকারীকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে দূরে রাখেন।

এ বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

ا- مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُوْمُ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ إِلاَّ بَاعَدَ اللهُ بِذَلِكَ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا

(ক) “যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন। (বুখারী ও মুসলিম)

ب-مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بَاعَدَ اللهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا

(খ) “যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে সিয়াম পালন করবে আল্লাহ তার কাছ থেকে জাহান্নামকে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেবেন। (মুসলিম)

ج-عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ مُرْنِي بِأَمْرٍ يَنْفَعُنِي اللهُ بِهِ قَالَ عَلَيْكَ بِالصِّيَامِ فَإِنَّهُ لاَ مِثْلَ لَهُ

(গ) আবূ হুরাইরাহ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, “আমি আল্লাহর রাসূলকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেন, তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমকক্ষ (মর্যাদা সম্পন্ন) কোন ইবাদত নেই। (নাসাঈ)

[৭] ইফতারের সময় বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।

হাদীসে আছে :

إِنَّ للهِ تَعَالَى عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلِكَ كُلّ لَيْلَةٍ

ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাযানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। (আহমাদ)

[৮] সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশ্‌কের চেয়েও উত্তম (সুগন্ধিতে পরিণত হয়)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

وَالَّذِيْ نَفْسِ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ.

যার হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জীবন সে সত্তার শপথ করে বলছি, সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ তা’আলার কাছে মিশকের ঘ্রাণের চেয়েও প্রিয় হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)

[৯] সিয়াম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি বিশেষ আনন্দ মুহূর্ত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ

সিয়াম পালনকারীর জন্য দু’টো বিশেষ আনন্দ মুহূর্ত রয়েছে : একটি হল ইফতারের সময়, আর দ্বিতীয়টি হল তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়। (বুখারী ও মুসলিম)

[১০] সিয়াম কিয়ামাতের দিন সুপারিশ করবে

হাদীসে আছে,

اَلصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ (رواه أحمد)

সিয়াম ও কুরআন কিয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ সিয়াম পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর।

অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে। (আহমাদ)

[১১] সিয়াম হল গুনাহের কাফফারা

(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ

নিশ্চয়ই নেক আমল পাপরাশি দূর করে দেয়। (সূরা হুদ : ১১৪)

(খ) নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَوَلَدِهِ وَجَارِهِ تُكَفِّرُهَا الصَّلَاةُ وَالصَّوْمُ وَالصَّدَقَةُ (بخارى ومسلم)

পরিবার পরিজন, ধন-সম্পদ ও প্রতিবেশীদের নিয়ে জীবন চলার পথে যেসব গুনাহ মানুষের হয়ে যায় সালাত, সিয়াম ও দান খয়রাত সেসব গুনাহ মুছে ফেলে দেয়। (বুখারী ও মুসলিম)

[১২] সিয়াম পালনকারীর এক রমযান থেকে পরবর্তী রমাযানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া ছগীরা গুনাহগুলোকে মাফ করে দেয়া হয়।

ক- আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلاً كَرِيْماً

“তোমরা যদি নিষিদ্ধ কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাক তাহলে তোমাদের ছগীরা গুনাহগুলোকে মুছে দেব এবং (জান্নাতে) তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা : ৩১)

খ-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

اَلصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفَّرَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنِبَتِ الْكَبَائِرُ

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এর মধ্যবর্তী সময় ও এক জুমুআ থেকে অপর জুমুআ এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে হয়ে যাওয়া ছগীরা গুনাহগুলোকে (উল্লেখিত ইবাদতের) কাফ্‌ফারাস্বরূপ মুছে দেয়া হয় সে যদি কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। (মুসলিম)

[১৩] সিয়াম পালনকারীর পূর্বেকার গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

[১৪] সিয়াম যৌন প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখে

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ

হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী। আর যে ব্যক্তি বিবাহের সামর্থ রাখেনা সে যেন সিয়াম পালন করে। কারণ এটা তার জন্য নিবৃতকারী। (অর্থাৎ সিয়াম পালন যৌন প্রবৃত্তি নিবৃত করে রাখে) (বুখারী ও মুসলিম)

[১৫] সিয়াম পালনকারীরা রাইয়ান নামক মহিমান্বিত এক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ (متفق عليه)

জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন শুধু সিয়ামপালনকারীরা ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, সিয়াম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। তারা প্রবেশ করার পর ঐ দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ আর সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে ঢুকতে পারবেনা। (বুখারী ও মুসলিম)


প্রশ্ন ৭ : কী ধরনের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে উপরে বর্ণিত অফুরন্ত ফযীলত ও সওয়াব হাসিল করা যাবে?

উত্তর : সিয়ামের বরকতময় সাওয়াব ও পুরস্কার হাসিলের জন্য নিম্নোক্ত শর্তাবলী পূরণ করা আবশ্যক

[১] শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য সিয়াম পালন করতে হবে। মনের মধ্যে লোক দেখানোর ইচ্ছা বা অপরকে শুনানোর কোন ক্ষুদ্র অনুভূতি থাকতে পারবে না।

[২] সিয়াম পালন, সাহরী, ইফতার ও তারাবীহসহ সকল ইবাদত রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নাত তরীকামত পালন করতে হবে।

[৩] খাওয়া-দাওয়া ও যৌনাচার ত্যাগের মত মিথ্যা, প্রতারণা, সুদ, ঘুষ, অশ্লীলতা, ধোঁকাবাজি ও ঝগড়াবিবাদসহ সকল অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। চোখ, কান, জিহ্বা ও হাত পা সকল ইন্দ্রীয়কে অন্যায় কাজ থেকে হেফাযতে রাখতে হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

أ-مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ وَالْجَهْلَ فَلَيْسَ للهِ حَاجَةٌ أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ (بخارى)

ক) যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মুর্খতা পরিত্যাগ করতে পারলনা, তার রোযা রেখে শুধুমাত্র পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী)

ب-…فَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفَثْ يَوْمَئِذٍ وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ

খ) তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও চেচামেচি করা থেকে বিরত থাকে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার দিকে মারমুখী হয়ে আসে তবে সে যেন তাকে বলে ‘আমি রোযাদার’। (অর্থাৎ রোযা অবস্থায় আমি গালিগালাজ ও মারামারি করতে পারি না। (মুসলিম)

ج-رُبَّ صَائِمٍ حَظُّهُ مِنْ صِيَامِهِ الْجُوعُ وَالْعَطَشُ وَرُبَّ قَائِمٍ حَظُّهُ مِنْ قِيَامِهِ السَّهَرُ (رواه أحمد)

গ) এমন অনেক রোযাদার আছে যার রোযা থেকে প্রাপ্তি হচ্ছে শুধুমাত্র ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। তেমনি কিছু নামাযী আছে যাদের নামায কোন নামাযই হচ্ছে না। শুধু যেন রাত জাগছে। (অর্থাৎ সালাত আদায় ও সিয়াম পালন সুন্নাত তরীকামত না হওয়ার কারণে এবং মিথ্যা প্রতারণা ও পাপাচার ত্যাগ না করায় তাদের রোযা ও নামায কোনটাই কবুল হচ্ছে না) (আহমাদ)

[৪] চতুর্থতঃ ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায় বা ঈমান থেকে বহিস্কৃত হয়ে যায় এমন কোন পাপাচার থেকে বিরত থাকা