প্রত্যেক মাসে কত দিন রোজা রাখবেন? এবং কি বারে রোজা রাখা উত্তম?


প্রত্যেক মাসে তিন দিন (নফল) রোজা রাখা মুস্তাহাব। আর দিনগুলো থেকে বৃহস্পতি ও সোমবারে রোজা রাখাও মুস্তাহাব। নিন্মে দলীলসহ আলোচনা করা হলো।
❀❖০১. হযরত আয়েশা (রা.) এর হাদীস-
سنن النسائي (4/ 203)
2364 - أَخْبَرَنَا إِسْحَقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ حَبِيبِ بْنِ الشَّهِيدِ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَمَانٍ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ الْمُسَيَّبِ بْنِ رَافِعٍ، عَنْ سَوَاءٍ الْخُزَاعِيِّ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ»
__________
[حكم الألباني] صحيح
অর্থ : হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখতেন। তিরমিযী-৪/২০৩, হাদীস-২৩৬৪। হাদীসটি সহীহ।
❀❖০২. হযরত আবূ কাতাদা আল আনসারী (রা.) এর হাদীস-
صحيح مسلم (2/ 820)
198 - (1162) وحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، عَنْ غَيْلَانَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَعْبَدٍ الزِّمَّانِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ؟ فَقَالَ: «فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ»
অর্থ : হযরত আবূ কাতাদা আল আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সোমবারে রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি জবাবে বলেন, এই দিনে আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমার উপর ওহী এসেছে। মুসলিম-২/৮২০, হাদীস-১১৬২।
❀❖০৩. হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) এর হাদীস-
سنن الترمذي ت شاكر (3/ 113)
747 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ رِفَاعَةَ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ، فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ»:
__________
[حكم الألباني] : صحيح
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিন বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, (মহান আল্লাহর নিকট) সোমবার ও বৃহস্পতিবারে আমল সমূহ পেশ করা হয় আর আমি এ বিষয়টি ভালোবাসি যে, আমার আমল সমূহ মহান আল্লাহ নিকট এমন অবস্থায় পেশ করা হবে, যে অবস্থায় আমি রোজাদার। তিরমিযী-৩/১১৩, হাদীস-৭৪৭।
░প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব কেন?
❀❖০১. হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) এর হাদীস-
صحيح البخاري (2/ 58)
1178 - حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا عَبَّاسٌ الجُرَيْرِيُّ هُوَ ابْنُ فَرُّوخَ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلاَثٍ لاَ أَدَعُهُنَّ حَتَّى أَمُوتَ: «صَوْمِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَصَلاَةِ الضُّحَى، وَنَوْمٍ عَلَى وِتْرٍ»
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার খলীল ও বন্ধু (নবী করীম সা.) আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করেছেন, আমৃত্যু তা আমি পরিত্যাগ করব না। (কাজ তিনটি হলো) ১. প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম (পালন করা), ২. সালাতুয-যোহা (চাশত এর সালাত আদায় করা) এবং ৩. বিতর (সালাত) আদায় করে ঘুমানো। বুখারী-২/৫৮, হাদীস-১১৭৮।
❀❖০২. হযরত মু’আযাতাল আদবিয়্যা (রা.) এর হাদীস-
صحيح مسلم (2/ 818)
194 - (1160) حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، عَنْ يَزِيدَ الرِّشْكِ، قَالَ: حَدَّثَتْنِي مُعَاذَةُ الْعَدَوِيَّةُ، أَنَّهَا سَأَلَتْ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ؟» قَالَتْ: «نَعَمْ»، فَقُلْتُ لَهَا: «مِنْ أَيِّ أَيَّامِ الشَّهْرِ كَانَ يَصُومُ؟» قَالَتْ: «لَمْ يَكُنْ يُبَالِي مِنْ أَيِّ أَيَّامِ الشَّهْرِ يَصُومُ»
অর্থ : হযরত মু’আযাতাল আদবিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) এর স্ত্রী আয়েশা (রা.) এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) কি প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, মাসের কোন কোন দিন তিনি রোযা রাখতেন? তিনি বললেন, এ ব্যাপারে তিনি কোন নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন বোধ করতেন না বরং মাসের যে কোন দিন তিনি রোযা রাখতেন। সহীহ মুসলিম-২/৮১৮, হাদীস-১১৬০।


অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন.......-وَصُمْ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، فَإِنَّ الحَسَنَةَ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، وَذَلِكَ مِثْلُ صِيَامِ الدَّهْرِ তুমি প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোজা রাখ, আল্লাহ তোমাকে দশগুন (পুরা মাসের) সাওয়াব প্রধান করবেন। এই তিন দিন রোজা রাখা, একাধারে (সারা জীবন) রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যায়.......। সহীহ বুখারী-৩/৪০, হাদীস-১৯৭৬।
❀❖০৪. হযরত মা’বিয়াতুবনু কুররা আল মা’যনী তার পিতা থেকে বর্ণিত হাদীস-
صحيح ابن حبان - محققا (8/ 413)
[3653] أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي عَوْنٍ، حَدَّثَنَا فَيَّاضُ بْنُ زُهَيْرٍ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ الْمُزَنِيِّ عَنْ أَبِيهِ -كان النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَسَحَ عَلَى رَأْسِهِ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "صِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ صِيَامُ الدَّهْرِ وَإِفْطَارُهُ"
অর্থ : হযরত মা’বিয়াতুবনু কুররা আল মা’যনী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম (সা.) তার মাথার উপর হাত বুলিয়েছেন এবং বলেছেন, প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখা, সারা জীবন একধারে (সারা জীবন) রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যায়। ইবনে হিব্বান-৮/৪১৩, হাদীস-৩৬৫৩।
উক্ত হাদীসটিকে ইমাম ইবনে হিব্বান, আল্লামা মুনজেরী, আল্লামা হায়সামী, আল্লামা ইবনুল কিসরানী, আল্লামা ওয়াদী, আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, আল্লাম সাফরানী আল হাম্বলীর মত বড় বড় ইমামগণ সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। আত তারগীব ওয়াত তারহীব-২/১৩৪, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ-৩/১১৯, যখিরাতুল হুফফাজ-৩/১৫৪৩, আস সহীহুল মুসনাদ মিম্মা লাইছা বিস সহীহাইন-১০৭৯, তোহফাতুল আহওয়াযী-৩/১৮৫, শারহু সোলাসিয়াতিল মুসনাদিল আহমাদ ইবনে হাম্বাল-১/৬১১।
✔মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে উত্তম দিবসগুলোর প্রতি লক্ষ্ রেখে প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোজা রাখার তাওফীক দান করুন। আমীন

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »