সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মোবারকের রহমতের দশকের আজ শেষ দিন। আগামীকাল থেকে শুরু হবে মাগফিরাত বা ক্ষমার দশক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবসময় বান্দার প্রতি করুণাসিক্ত। কিন্তু রহমতের দশ দিনে আল্লাহ তার রোজাদার বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। আর সব সময় তিনি বান্দার গুনাহ মাফ করলেও মাগফিরাতের দশকে তার ক্ষমা অবারিতভাবে দুনিয়াবাসীর প্রতি বর্ষিত হয়।
হাদিসে এসেছে, আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালা যত বিধি-বিধান আমাদের দান করেছেন, তা সবই আমাদের সার্বিক কল্যাণের জন্য। যদিও অনেক সময় আমাদের অতি সামান্য জ্ঞানের দ্বারা তা সম্যক উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই। যেমন মাহে রমজানে সিয়াম পালন করা ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ নির্দেশ প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)
কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, শুধু কাফির নয়, অসংখ্য মুসলমানের হৃদয়েও রয়েছে এ সিয়ামের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয়। সে কারণেই দেখা যায়, অসংখ্য মুসলমান কোনো শরিয়তি ওজর ছাড়াই দ্বিধাহীনচিত্তে সিয়াম ত্যাগ করছে। মুষ্টিমেয় যারা এ সিয়াম বা রোজা পালন করেন, তাদের অনেকেই আবারো জানেন না, কেন এ সিয়াম পালন করছি, কী মহতী লক্ষ্য উদ্দেশ্যে আল্লাহতায়ালা আমাদের ওপর এ সিয়ামকে ফরজ করেছেন। সে কারণেই দেখা যায়, অনেক রোজাদার জীবনে শুধু এক-দুবার কী তিনবার নয়, অসংখ্যবার এ মহিমান্বিত সিয়াম পালনের সৌভাগ্য তার হয়েছে। কিন্তু সামান্যও পরিলক্ষিত হয়নি তার জীবনে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আর খুঁজে পাওয়া যায়নি সিয়ামের কোনো নিদর্শন। সিয়াম সাধনার আগেও তার জীবনাচরণ যেমন ছিল, দীর্ঘদিন সিয়াম সাধনার পরও ঠিক তেমনি রয়ে গেছে।
ইরশাদ হচ্ছে ‘হে ইমানদাররা! তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করে দেয়া হলো_ যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকিন বা প্রকৃত খোদাভীতির গুণাবলী অর্জনে সক্ষম হও।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩) এ আয়াতের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে মুত্তাকিন হওয়ার জন্যই আল্লাহ পাক সিয়াম সাধনাকে আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করেছেন।
মুমিন জীবনে মুত্তাকিন হওয়ার প্রয়োজনিয়তা কতটুকু? এ প্রশ্নের জবাব অসংখ্য আয়াত ও হাদিস সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। কোরআনের একাধিক আয়াতে আছে ‘মুত্তাকিন হওয়া ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ অসম্ভব। কেননা জান্নাত তৈরি করা হয়েছে মুত্তাকিনদের জন্য।’ যেমন আল্লাহর ঘোষণা ‘তোমরা তীব্রগতিতে অগ্রসর হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের মতো, যা নির্মিত হয়েছে মুত্তাকিনদের জন্য।’ (আল-ইমরান : ১৩৩)
সুতরাং আমি যদি সত্যিই জান্নাতপ্রাপ্তির প্রকৃত পথযাত্রী হতে চাই, তবে অবশ্যই আমাকে মুত্তাকিন হতে হবে। আর জান্নাতপ্রাপ্তির জন্য মুত্তাকিন হওয়ার শর্ত এ কারণে যে মুত্তাকিন হওয়া ছাড়া একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। এ গুণ অর্জনের মাধ্যমেই একজন মানুষ তার যাবতীয় লোভ-লালসা ও চাওয়া-পাওয়া এবং প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সব ধরনের অন্যায় বর্জনের প্রয়োজনিয়তা উপলব্ধি করতে পারে। কোনো প্রলোভনেই সে প্রলুব্ধ হয় না। কেননা তার অন্তঃকরণে এমনই এক মহাপরাক্রমশালীর ভয় সদা বিরাজমান থাকে। একজন মুত্তাকিনের মনে সব সময় ভয় জাগ্রত থাকে, আমি যে কোনো অন্যায় কাজে পৃথিবীর সব শক্তিকে আড়াল করে লিপ্ত হতে পারি। কেউ আমাকে হয়তো দেখবে না। অথবা আমার এত শক্তি রয়েছে যে কেউ দেখলেও আমাকে কিছু করতে পারবে না। কিন্তু আমি কোনো অবস্থাতেই মহামহীয়ান আল্লাহর কুদরতি চোখকে আড়াল করতে পারবো না, যত গোপনেই হোক না কেন। আর তিনিই হচ্ছেন সব শক্তির আঁধার। দুনিয়াতেও যখন ইচ্ছা যে কোনো শাস্তি প্রদানে তিনি সক্ষম। তাছাড়া এ নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে যখন আমি স্থায়ী আখেরাতে পাড়ি জমাব, তখন এ দুনিয়ার যাবতীয় কর্মকাণ্ডে হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তার কাছে আমাকে দিতেই হবে।’
একজন মুত্তাকিনের এ চিরন্তন বাস্তবতার অনুভূতি তখন তার জীবনের যাবতীয় অন্যায় কর্মকাণ্ডের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। আর এটাই হচ্ছে মুত্তাকিনের বৈশিষ্ট্য। আর একজন মুসলমানের মুত্তাকিন হওয়ার বাস্তব প্রশিক্ষণ কর্মশালা হচ্ছে সিয়াম পালন। কেননা একজন রোজাদার মহান আল্লাহর নির্দেশনা মতে সুবহে সাদিকের আগেই স্ত্রী সম্ভোগ ও যাবতীয় পানাহার বন্ধ করে অপেক্ষায় থাকে কখন সূর্যাস্ত যাবে, তখনই পানাহার করব। এর আগে তার প্রবৃত্তি যতই প্রলুব্ধ হোক, পিপাসা তাকে যতই কাতর করুক, ক্ষুধার যন্ত্রণা যতই অনুভব করুক সবই নীরবে সহ্য করে অপেক্ষায় থাকেন ইফতারের। একজন মুত্তাকিনের তাকওয়ার অনুভূতিই তাকে বিরত রাখে শত কষ্টের মধ্যেও পানাহার পরিত্যাগে। পবিত্র সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আরো অনেক উত্তম গুণাবলী অর্জিত হয়। যেমন আত্মীক পবিত্রতা, চিন্তার বিশুদ্ধতা, নৈতিক পরিচ্ছন্নতা, চারিত্রিক উন্নয়ন, রুহানি তৃপ্তি, ধৈর্য, মিতব্যয়ী, আল্লাহপ্রেমে নতুন উদ্যম, ভোগের বিপরীতে ত্যাগের অনুপ্রেরণা।
মানুষ সৃষ