বিতৃষন্নাবোধ এবং বমি


লক্ষণ ও উপসর্গ

বিতৃষন্নাবোধ এবং বমি সাধারণত নিম্নোক্ত সমস্যাগুলোর সাথে একসাথে উদিত হয়:
১. উদরে বা তলপেটে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হওয়া|
২. ডায়রিয়া|
৩. জ্বর, ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং অবসাদ|
৪. মাথা ব্যথা|
৫. খাবারের প্রতি অভক্তি|

কী করা উচিত
যদি আপনার মনে হয় যে আপনি তীব্রভাবে বিষাক্ত খাবার (ফুড পয়জনিং) কিংবা রাসায়নিক দ্রব্যের (কেমিকাল পয়জনিং) বিষাক্ততায় আক্রান্ত হয়েছেন:
১. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞরা আপনার লক্ষণ দেখে এবং আপনাকে পরীক্ষা করে বলতে পারবে যে কোথা থেকে বা কিভাবে আপনার এই সমস্যা হয়েছে এবং আপনার কি কোন চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কি না।
২. যদি কেবল সাধারণ বমি হওয়া কিংবা ডায়রিয়ায় আপনি আক্রান্ত হন:
১. ডায়রিয়া কিংবা বিতৃষäাবোধের লক্ষণগুলো ধরা পড়ার পর অন্তত ২৪ ঘন্টায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডায়রিয়া বা বিতৃষন্নাবোধ দূর করার কোন ওষুধ নিজে নিজে কিনে খাবেন না। বমি এবং ডায়রিয়া হলো শরীরের নিজস্ব পদ্ধতি, যে পদ্ধতি দিয়ে শরীর অভ্যন্তরিন দাহজনক পদার্থগুলো নির্গত করে দেয়। (তবে শিশুদের জন্যে ওষুধের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যকিয়, কেননা তারা দ্রুত পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হয়)।
২. একবার যদি তরল আপনার পাকস্থলিতে সয়ে যেতে শুরু করে, তাহলে স্বচ্ছ ধরনের তরলগুলো পরবর্তী ১২ ঘন্টা যাবৎ পান করতে থাকুন। এরপর, পরবর্তী একদিন সাধারণ খাবার যেমন ভাত, পোড়ানো বা সিদ্ধ আলু, কিংবা সাধারণ স্যুপ ইত্যাদি আহার করুন - অবশ্য যদি আপনার পাকস্থলি সেগুলো সহ্য করে নিতে পারে।
৩. যতদিন এই রোগের লক্ষণগুলো দূর না হচ্ছে ততদিন প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিন। কেননা, বার বার বমি করার কারণে আপনার শরীর প্রচুর পরিমাণ তরল হারাবে। এক্ষেত্রে পানি শূন্যতা একটা মারাত্মক ঝুঁকি হতে পারে, বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে। এ সংক্রান্ত লক্ষণগুলো হলো, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, লালা ঘন ও আঠালো হয়ে ওঠা, মাথা ঘোরা কিংবা দুর্বলতা এবং অবসাদগ্রস্ততা, গাঢ় হলুদ পস্রাব, এবং মাঝে মধ্যে তীব্র পিপাসা।
৪. যদি আপনি পানীয় পান করে সেটা শরীরে ধরে রাখতে না পারেন এবং তীব্র পানি শূন্যতায় আক্রান্ত হন সেক্ষেত্রে আপনাকে হয়তো দ্রুত ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হবে এবং শিরার অভ্যন্তরে বিকল্প তরলের সরবরাহ (ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড রিপ্লেসমেন্ট) করতে হবে।


কখন ডাক্তার দেখাবেন
১. যদি বমি এবং উদর বা তলপেটের ব্যথার সাথে আপনি দৃষ্টির অস্পষ্টতা, পেশিতে দুর্বলতা, কথা বলতে সমস্যা হওয়া, কিংবা গিলতে সমস্যা হওয়া, কিংবা পেশির অক্রিয়তা ইত্যাদি লক্ষণেও আক্রান্ত হন। এই লক্ষণগুলো হয়তো বটুলিজম বা জীবননাশী বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হবার লক্ষণ। যদিও বটুলিজমে সাধারণত মানুষ আক্রান্ত হয় না, কিন্তু এটা ব্যাকটেরিয়া বাহিত খাদ্যের বিষক্রিয়া থেকে ঘটতে পারে, এবং এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।
২. যদি আপনার মধ্যে খাদ্যের রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হবার লক্ষণ দেখা যায়: বমি হওয়া, ডায়রিয়া হওয়া, ঘাম হওয়া, মাথা ঘোরা, দুই চোখ জলময় হয়ে থাকা, প্রচুর পরিমাণ লালা আসা, মানসিক বিভ্রান্তি এবং পাকþহলিতে পীড়া হওয়া - ইত্যাদি লক্ষণগুলো যদি খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে শুরু হয়। এই সমস্যার সূচণা প্রায়শই হয় পেসটিসাইড বা পোকামাকড়ের বিষ গলাধকরণের ফলে কিংবা নষ্ট বা টিনজাত এবং সময়োত্তীর্ণ খাবার আহারের ফলে, এবং এটা জীবননাশীও হয়ে উঠতে পারে।
৩. আপনার বমিতে যদি রক্ত থাকে কিংবা অন্যকিছু থাকে যেটা দেখতে গ্রাউন্ড কফি বা কফির পাতার গুড়ার মতো দেখা যায়।
৪. যদি আপনার মলের সাথে রক্ত নির্গত হয়, কিংবা মল যদি আলকাতরার মতো কালো দেখায়, সেক্ষেত্রে এটা ইন্টারনাল ব্লিডিং বা দেহাভ্যন্তরীন রক্তপাতের লক্ষণ।
৫. যদি আপনার শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে, যদি তলপেট বা উদর ফেঁপে বা ফুলে ওঠে, কিংবা মলদ্বার বা মলনালীতে কোন সমস্যা দেখা যায়; সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো কোন উদর সম্বন্ধীয় মারাত্মক সমস্যার শিকার হয়েছেন।
৬. যদি পানি শূন্যতায় আক্রান্ত হবার লক্ষণগুলো আপনার মধ্যে দেখা যায় যেমন, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, লালা ঘন ও আঠালো হয়ে ওঠা, মাথা ঘোরা কিংবা দুর্বলতা এবং অবসাদগ্রস্ততা, গাঢ় হলুদ পস্রাব, এবং মাঝে মধ্যে তীব্র পিপাসা। ছোট শিশুদের জন্যে পানি শূন্যতা অত্যন্ত মারাত্মক একটি সমস্যা।
৭. চিকিৎসার পরও যদি লক্ষণগুলো আপনার মধ্যে আবারও দেখা যায়, সেক্ষেত্রে হয়তো এই সমস্যাগুলোর মূলে অন্য কোন কারণ রয়েছে যেমন মলাদ্বারে কোন জীবাণুর আক্রমান বা ইনটেস্টিনাল প্যারাসাইট।
৮. যদি আপনার বমি এবং ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করে এবং দুই বা তিনদিনেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়।
৯. আপনার যদি ১০১ কিংবা তারও বেশি জ্বর থাকে।


কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
পাকস্থলীতে ভাইরাসবাহিত সমস্যা দ্বারা সৃষ্ট ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু থেকে রক্ষা পেতে:
১. আপনার হাত দুটো একটু পর পর ধুয়ে ফেলুন।
২. আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সবল রাখতে যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম নিন, ব্যায়াম করুন এবং স্বাþহকর খাবার আহার করুন

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »