রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত
জায়েদ বিন খালেদ জুহানি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি কাউকে ইফতার করাবে সে ওই ব্যক্তির সমান ছওয়াব পাবে। অথচ রোজাদার ব্যক্তির নেকি থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে- তাকে খাওয়াবে এবং পান করাবে সে তার সমান নেকি লাভ করবে অথচ তার নেকি থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, তাঁকে এক মহিলা ইফতার করানোর জন্য ডাকলে তিনি সে ডাকে সাড়া দিলেন এবং বললেন, তোমাকে আমি জানাচ্ছি যে, যে ব্যক্তি কোনো গৃহবাসীর কাছে ইফতার করবে, গৃহবাসী সে ব্যক্তির অনুরূপ নেকি পাবে। মহিলা বললেন, আমি চাই আপনি আমার কাছে ইফতার করার জন্য কিছুক্ষণ এখানে অবস্থান করবেন বা এ জাতীয় কিছু বলেছেন। আবু হুরায়রা রা. উত্তর দিলেন, আমি চাই এ নেকি আমার পরিবারই হাসিল করুক।
হাদিস থেকে যা শিখলাম :
১. আল্লাহ তা’আলার অসীম অনুগ্রহ যে, তিনি দান-খয়রাতের নানা ক্ষেত্র উম্মুক্ত করেছেন। নেকি অর্জনের বিবিধ দ্বার খুলে দিয়েছেন। এরই অন্যতম হল, মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করতে উদ্বুদ্ধ করা এবং এর জন্য প্রতিদানের ঘোষণা দেয়া।
২. রোজাদারকে ইফতার করানো একটি ফজিলতপূর্ণ আমল। যেমনটি জানা গেল- যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে সে তার অনুরূপ নেকি লাভে ধন্য হবে।
৩. রোজাদারকে ইফতার করালে তার বদলা মহান আল্লাহ রোজাদারের আমলনামা থেকে নয়; নিজের পক্ষ থেকে দিবেন। অতএব রোজাদারের নেকি সামান্য পরিমাণও কমানো হবে না। আর এভাবে নেকি নির্ধারণ করাও রোজার ফজিলতের প্রমাণ বহন করে।
৪. এ থেকে এও প্রতীয়মান যে, ইফতারের দাওয়াত দিলে তা গ্রহণ করা অসমীচীন নয়। বরং বুযুর্গি দেখিয়ে বা নেকি কমে যাওয়ার আশংকায় ইফতারের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা এক ধরনের বাড়াবাড়ি। কারণ অন্যের কাছে ইফতার করলে নিজের পুণ্য হ্রাস পায় না। তবে ইফতারের দাওয়াত যদি শুধু মিসকিনদের জন্য হয় আর সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয় কোনো ধনী লোক তাহলে ভিন্ন কথা। (এ ক্ষেত্রে তার নেকি হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।)
৫. আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে সদাচারের অংশ হিসেবে এবং তাদের মনোতুষ্টির খাতিরে দাওয়াতে সাড়া দেয়া, তাদের কাছে গিয়ে ইফতার করা যাতে তারা পুণ্য হাসিল করতে পারে উচিৎ কাজ। আবু হুরায়রা রা. এর উক্তি থেকে তাই বুঝা যায়।
৬. রোজাদারকে আপ্যায়নের উদ্দেশ্য হওয়া চাই- ইফতার করানোর নেকি কামাইয়ের মাধ্যমে নিজে উপকৃত হওয়া। খাদ্য-পানীয় সরবরাহের মাধ্যমে আপন ভাইকে সম্মানিত করা। গরিবদের ইফতার করানোর সময় এ চেতনা জাগ্রত রাখা সবিশেষ কর্তব্য।
৭. রোজাদারকে বাসায় নিয়ে আপ্যায়ন করা, তার জন্য খাবার প্রস্তুত করা বা কিনে দেয়া কিংবা প্রস্তুত করে তার উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়া বা ইফতার কিনে দেয়া- এসবই দাওয়াতের অন্তর্ভুক্ত। তবে এ ক্ষেত্রে বর্তমান যুগে যে অপচয়ের প্রবণতা দেখা দিয়েছে তা থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকা উচিৎ।
৮. গরিবকে যদি ইফতার কিনে খাওয়ার জন্য টাকা দেয়া হয় আর সে এর কিছু দিয়ে ইফতার কিনে বাকিটা রেখে দেয় তার অন্য কোনো প্রয়োজন মেটাবার জন্য তবুও এর দ্বারা হাদিসে বর্ণিত ইফতার করানোর সওয়াবের অধিকারী হবে। অথচ বেচারার প্রয়োজনও পূর্ণ হলো।
তথ্যসুত্রঃ
· তিরমিযি : ৮০৭, ইবনে মাজাহ : ১৭৪৬, নাসাযি : ৩৩৩০-৩৩৩১, ইবনে কুযাইমা : ২০৬৪, ইবনে হিব্বান : ৩৪২৯
· মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৯৭০৫ তাবরানি ৫/২৫৬
· মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৭৯০৮
· আরেজাতুল আহওয়াজি : ৪/২১
· ফয়জুল কাদির : ৬/১৮৭
◘◘◘◘ লাইক ও শেয়ারের মধ্যে দিয়ে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিন। ◘◘◘◘