পবিত্র রমযানের রোযার
পরিপূরক সংশোধনী
নৈকট্য অর্জনের
আরেকটি হাতিয়ার হ’ল
ছদকাতুল ফিতর আদায়
করা। এ সম্পর্কে রাসূল
(সঃ) এর বিভিন্ন দিক
নির্দেশনা রয়েছে। হযরত
ইবনে আব্বাস (রাঃ)
বলেন, রাসুল (সঃ)
যাকাতুল ফিতর ফরজ
করেছেন যেন সিয়াম
পালনকারী বাজে কথা,
অশ্লীল (ইত্যাদি ছোট-
ঘাট অপরাধ) থেকে
পবিত্র লাভ করে এবং
দরিদ্র মানুষেরা যেন
খাদ্য লাভ করতে সক্ষম
হয়। যে ব্যক্তি
সালাতুল ঈদের আগে তা
আদায় করবে তার জন্য তা
কবুলকৃত যাকাত বলে
গন্য হবে। আর যে
ব্যক্তি ঈদের পরে তা
আদায় করবে তার জন্য তা
একটি সাধারণ দান বলে
গন্য হবে (আবু দাউদ ২/১১১,
ইবলেমাজা ১/৫৫৮)। আবু
সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন
রাসূল (সঃ) এর সময়ে
আমরা একসা খাদ্য অথবা
একসা জব অথবা একসা
খেজুর অথবা একসা পনির
অথবা একসা কিসমিস
যাকাতুল ফিতরা
হিসেবে প্রদান করতাম
(বোখারী ২/৫৮৫, মুসলিম
২/৬৭৮)। আসমা বিনতে আবু
বকর (রাঃ) বলেন, রাসূল
(সঃ) এর যুগে আমরা
যাকাতুল ফিতরা আদায়
করতাম দুই মুদ্দ গম দিয়ে
(আহমাদ ৬/৩৫৫)। প্রত্যেক
সাহেবে নেসাব এর
ফিতরা আদায় করা
ওয়াজিব (একসা হ’ল চার
মুদ্দ, তাহলে দুই মুদ্দ
হ’ল অর্দ সা। সা এর
পরিমাপ নিয়ে ফকিহ গণের
মতবেদ রয়েছে। তবে ইমাম
আবু হানিফা (রঃ) এর
মতে একসা হ’ল
বাংলাদেশীদের
পরিমাপ ৩ কেজি ৩০০
গ্রাম, ইমাম আবু ইউসুফ ও
অন্যান্য তিন ইমামের
মতে একসা হ’ল প্রায় ২
কেজি ২শ গ্রাম)
উপরোক্ত বর্ননার
আলোকে আমরা জানতে
পারলাম রাসূল (সঃ) ১
খেজুর, ২ কিসমিস, ৩ পনির,
৪ জব বা জবের সাতু এই
চার প্রকার খাদ্য থেকে
প্রত্যেক ব্যক্তির
জন্য ৩কেজি ৩শ গ্রাম
ফেতরা হিসেবে দিতে
হবে। আর একটি বর্ননায়
দেখতে পাই যে, গম বা
আটার ক্ষেত্রে এর
অর্ধেক অর্থাৎ ১ কেজি
৬৫০ গ্রাম হিসেবে
ফেতরা দিলেও চলবে।
আমাদের দেশে
উল্লেখিত ৫ প্রকার
খাদ্যের কোনটাই মূল
খাদ্য নয়। এজন্য সবচেয়ে
উত্তম হ’ল খেজুর বা
খেজুরের মূল্য প্রদান
করা। কারণ সাহাবীগন
ফেতরা খেজুর দিয়ে
প্রদান করতে
ভালবাসতেন। এছাড়া
দরিদ্রদের জন্য তা
অধিকতর উপকারী। তবে
আমাদের দেশে সাধারণত
ফেতরা দাতাদের
সুবিধার দিকে তাকিয়ে
আমভাবে আটার মূল্য
হিসেবে গয়রহ ফেতরা
প্রদান করার কথা বলা হয়।
শরীয়তের দৃষ্টিতে তা
বিবেচনার বিষয়। এ
হিসাবে সর্বনিম্ন গরীব
মানুষ নিজের রোযার
ত্র“টি মুক্ত করণার্থে
বাজারের উত্তম আটা
দিয়ে পরিবারের
প্রত্যেকের পক্ষথেকে
১ কেজি ৬৫০ গ্রাম করে
ফেতরা প্রদান করলে
স্বভাবত আদায় হবে। তবে,
ধনাঢ্য ব্যক্তি
লাখপতি-কোটিপতিদের
জন্য উক্ত পরিমান
ফেতরা আদায় করা
শরিয়তের দৃষ্টিতে
প্রশ্নবিদ্ধ। রাসূল
(সঃ) থেকে বর্ণিত আছে
ঈদের দিন রোযাদারের
রোযা আসমান-জমিনের
মধ্যেবর্তী ফেতরা না
দেওয়া পর্যন্ত ঝুলন্ত
থাকে। অর্থাৎ তার
রোযা কবুলিয়াতের
দরজায় পৌছায় না। যতক্ষন
পর্যন্ত না সে তার
নিজের পক্ষথেকে
ফেতরা আদায় না করে।
মানুষ ভুল-ত্র“টির
উর্দ্ধে নহে। বর্ণিত
হাদিস মতে প্রত্যেক
ব্যক্তির রোযা কিছু
না কিছু ত্র“টি অবশ্যই
আছে। তাই তার রোযা
মকবুল দরজায় পৌছাতে
ফেতরা আদায় করা সকলের
জন্য আবশ্যক। এ
দৃষ্টিকোণ থেকে একজন
গরীব মিসকিন ব্যক্তিও
যদিও সে ফেতরা খাওয়ার
উপযোগী তথাপিও সে
যদি নিজের রোযাকে
পরিশুদ্ধ করতে চায় তার
প্রাপ্ত ফেতরা থেকে
১টি ফেতরা অন্যকে
দিয়ে তার রোযাকে
কবুলিয়তের দরজায়
পৌছানোর প্রচেষ্টা
করা তার জন্য আবশ্যক।
আমাদের দেশে
অজ্ঞতার কারণে গয়রহ
আটার মূল্য হিসেবে
সাধারণত অজ্ঞ
মানুষদেরকে প্রদান
করার জন্য হুকুম দিয়ে
থাকে। অন্যান্য বস্তুর
কথা আদৌও বলা হয় না।
এযেন দ্বীন ইসলামের
নির্দেশকে আমরা যেনে
শুনে গোপন করছি এবং
গরীবের হক নষ্ট করছি। তাই
ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের
উচিৎ উল্লেখিত ৫
প্রকার খাদ্য দ্রব্যের
যেকোন ১টি দিয়ে সাধ্য
মোতাবেক ফেতরা আদায়
করা উচিৎ। বর্ণিত হাদিস
থেকে আরও বোঝা যায়
একজন গরীব মিসকিনও যেন
তার রোযার
পরিশুদ্ধতার জন্য
সর্বনিম্ন আটার মূল্য
দিয়ে ফেতরা আদায় করে
এবং তার সিয়াম
সাধনাকে মকবুলিয়াতের
দরজায় পৌছায়। একজন
স্ব্চ্ছল লাখপতি-
কোটিপতি কি? একজন
সাধারণ গরীব
রোযাদারের আটার
সমমূল্য ফেতরা আদায়
করবে ? আল্লাহ প্রদত্ত
তার নিয়ামতের শুকরিয়া
কি আদায় করবে না ? তাই
তাদের জ্ঞাতার্থে
জানাই প্রত্যেকের
পক্ষ থেকে ৩ কেজি ৬৫০
গ্রাম করে খেজুর বা
পনির বা কিসমিস অথবা জব
এর মূল্য হিসেবে আদায়
করে রাসূল (সঃ) ও তার
সাহাবীগণের আমলকে
জেনদা করি এবং গরীব
দুখীদের ঈদের দিনে
মুখে হাসি ফুটাই।
পরস্পরের মধ্যে মধুর
ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের
সহমর্মিতা দেখায়ে
আর্থসামাজিক উন্নয়ন
বলায় সৃষ্টি করি। এরূপ
সুন্নতের আমল করতে
পারলেই প্রকৃত ঈদের
খুশি সকলের মাঝে
প্রতিভাত হবে। মৌলিক
প্রয়োজনের অতিরিক্ত
নেসাব পরিমান সম্পদের
মালিক প্রত্যেক
মুসলিম নারী-পুরুষের
উপর সদকাতুল ফেতরা
ওয়াজিব। এরূপ সম্পত্তি
বর্ধনশীল হওয়া জরুরী নয়।
রুটি, চাউল বা অন্যান্য
খাদ্য দ্রব্য দিয়ে
ফেতরা দিতে হলে
শরীয়তের উল্লেখিত
দ্রব্যাদির নির্ধারিত
বস্তুর মূল্য ধরে এগুলি
দিয়ে ফেতরা দেওয়া
যাবে। দুর্বিক্ষের সময়
মূল্য না দিয়ে ফেতরা দিতে হলে
শরীয়তের উল্লেখিত
দ্রব্যাদির নির্ধারিত
বস্তুর মূল্য ধরে এগুলি
দিয়ে ফেতরা দেওয়া
যাবে। দুর্বিক্ষের সময়
মূল্য না দিয়ে খাদ্য
দিয়ে ফেতরা আদায় করা
উত্তম। আর অন্যান্য সময়
মূল্য দিয়ে ফেতরা
আদায় করা উত্তম।
সাদকাতুল ফিতর ওয়াজিব
হওয়ার সময় হ’ল ঈদুল
ফিতরের দিন সুবহে
সাদিক হওয়ার পর। সুবহে
সাদিকের পূর্বে কেউ
মারা গেলে তার উপর
ফেতরা ওয়াজিব হবে না।
সুবহে সাদিকের পূর্বে
জন্ম নিলে বা মুসলমান
হলে বা গরীব থেকে ধনী
হলে তার উপর ফেতরা
ওয়াজিব হবে। ধনী
ব্যক্তি এর পূর্বে যদি
দরিদ্র হয়ে যায় তার উপর
ফেতরা ওয়াজিব হবে না।
ঈদুল ফিতরের দিনের
পূর্বে ফেতরা আদায়
করলে তা আদায় করা
যায়েজ। ঈদুল ফিতরের
দিন তা আদায় করতে না
পারলেও অবশ্যই পরে তা
আদায় করতেই হবে, তবে
উক্ত আদায় হবে সাধারণত
দানের ন্যায়। ঈদুল
ফিতরের দিন ঈদগাহের
উদ্দেশ্যে বের হওয়ার
পূর্বে ফেতরা আদায়
করা মুস্তাহাব। নিজের
এবং নিজের নাবালেক
সন্তানদের পক্ষ হতে
সদকায়ে ফিতর
অভিভাবকের উপর আদায়
করা ওয়াজিব। স্ত্রী
এবং বালেক সন্তানগণ
ফেতরা নিজেরাই আদায়
করবে। স্বামী এবং
পিতার উপর তাদের
ফেতরা আদায় করা
ওয়াজিব নয়। অবশ্য দিয়ে
দিলে তা আদায় হবে।
নিজ পরিবার ভূক্ত নয় এমন
লোকের পক্ষ থেকে তার
অনুমতি ছাড়া ফেতরা
দিলে আদায় হবে না।
কোন ব্যক্তির উপর তার
পিতা-মাতার এবং ছোট
ভাই-বোন ও নিকট
আত্মীয়ের পক্ষ থেকে
ফেতরা আদায় করা
ওয়াজিব নয়। এক ব্যক্তির
ফেতরা এক মিসকিনকে
দিয়ে দেয়া
সর্বোত্তম। তবে
একাদিক মিসকিনকে
দেয়াও জায়েজ। একদল
লোকের উপর যে ফেতরা
ওয়াজিব তা এক
মিসকিনকে দেয়াও
জায়েজ।
অতএব, বর্ণিত
আলোচনান্তে সকল
ভ্রাতৃপতিম মুসলিম
ভাইদের নিকট শরীয়তের
নির্দেশকে যথাযথ পালন
করি এবং গরীবদের
প্রাপ্য হক আদায়ের
জন্য উল্লেখিত
দ্র্রব্যাদির বর্তমান
বাজার মূল্য যাচাই করে
তাদেরকে প্রদান করতঃ
সহমর্মিতা ভ্রাতৃত্ব
বন্ধনে একে অপরকে
আবদ্ধ করে ঈদকে প্রকৃত
আনন্দে উদ্ভাসিত করি।
আমীন আল্লাহ আমাদের
সবাইকে এর উপর আমল করার
তৈফিক দান করুন।