ফিতরা (সদকাতুল ফিতর) কী এবং কেন?

ফিতরা (সদকাতুল ফিতর) কী এবং কেন?



পবিত্র রমজান মাসে
বিশেষ কিছু আমল
আমাদের জন্য রাখা
হয়েছে। এর মধ্যে
সাদকাতুল ফিতর একটি
অন্যতম ইবাদত। ঈদের দিন
গরিবদের খাবারের জন্য
শরিয়তপ্রদত্ত একটি
ব্যবস্থাপত্র।
সাদকাতুল ফিতর
সম্পর্কে নবীজি (সা.)
বলেছেন, তোমরা এ
দিনটিতে তাদেরকে
অন্যের কাছে চাওয়া
থেকে বিরত রাখো।
জাকাতের মতো এটিও
দরিদ্র মানুষের ওপর
মহান আল্লাহ কর্তৃক
নির্ধারিত আমলি
সহযোগিতা। ইসলামী
শরিয়তের হুকুম
মোতাবেক ঈদের দিনের
ফজরের নামাজের আগে
যে সন্তান জন্মগ্রহণ
করবে তারও ফিতরা আদায়
করা ওয়াজিব।
ফিতরা কী?
ইসলামী শরিয়তের হুকুম
মোতাবেক এটি একটি
ওয়াজিব আমল। ঈদুল
ফিতরের দিন সুবহে
সাদিকের সময় জীবিকা
নির্বাহের অত্যাবশকীয়
সামগ্রী ছাড়া নিসাব
পরিমাণ বা অন্য কোনো
পরিমাণ সম্পদের
মালিকদের পক্ষ থেকে
গরিবদের জন্য
নির্দিষ্ট পরিমাণের
একটি অর্থ প্রদান করার
বিশেষ আয়োজনকে
সাদকাতুল ফিতর বলা হয়।
ফিতরার পরিমাণ
জনপ্রতি আধা সা
অর্থাৎ এক সের চৌদ্দ
ছটাক বা পৌনে দুই
সের গম বা সমপরিমাণ
গমের মূল্য ফিতরা
হিসেবে প্রদান করতে
হবে।
ফিতরার পরিমাণ আসলে
কত?
আমাদের দেশে প্রতি
বছর ইসলামিক
ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন
ইসলামিক সেন্টার
মাথাপিছু একটি পরিমাণ
ঘোষণা প্রদান করে এবং
সে ঘোষণা অনুযায়ী
কোটিপতি ও মধ্যবিত্ত
নির্বিশেষে সবাই
ফিতরা প্রদান করে।
আমাদের জেনে রাখা
প্রয়োজন, নবীজি (সা.)-
এর যুগে মোট চারটি পণ্য
দ্বারা সাদকাতুল ফিতর
আদায় করা হতো, যেমন
খেজুর, কিশমিশ, জব ও
পনির।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি
(রা.) বলেন, আমাদের সময়
ঈদের দিন এক সা খাদ্য
দ্বারা সাদকা আদায়
করতাম। আর তখন আমাদের
খাদ্য ছিল জব, কিশমিশ,
পনির ও খেজুর। [সহিহ
বোখারি]
রাসুল (সা.)-এর যুগে
গমের ভালো ফলন ছিল না
বিধায় আলোচিত চারটি
পণ্য দ্বারাই ফিতরা
আদায় করা হতো। এরপর
হজরত মুয়াবিয়ার (রা.)
যুগে গমের ফলন বেড়ে
যাওয়ায় গমকে আলোচিত
চারটি পণ্যের সঙ্গে
সংযোজন করা হয়। আর তখন
গমের দাম ছিল বাকি
চারটি পণ্যের তুলনায়
বেশি। আর মূলত এই দাম
বেশি থাকার কারণেই
হজরত মুয়াবিয়া গমকে
ফিতরার পণ্যের
তালিকভুক্ত
করেছিলেন।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে
উমর বলেন, নবীজি (সা.) এক
সা খেজুর বা এক সা জব
দিয়ে ফিতরা আদায় করার
আদেশ দিয়েছেন।
পরবর্তী সময় লোকজন
(সাহাবা আজমাইনরা) দুই
মুদ গমকে (আধা সা)
এগুলোর সমতুল্য মনে
করে এবং আদায় করে।
[বোখারি]
অতএব, ওপরের আলোচনা
থেকে বোঝা যায়, গম
দ্বারা আদায় করলে
আধা সা বা এক কেজি
৬২৮ গ্রাম দিলেই ফিতরা
আদায় হয়ে যাবে। আর
বাকি চারটি পণ্য
অর্থাৎ খেজুর, জব, পনির
ও কিশমিশ দ্বারা আদায়
করার ক্ষেত্রে
জনপ্রতি এক সা বা তিন
কেজি ২৫৬ গ্রাম দিতে
হবে। দেখা যাচ্ছে যে
গম ছাড়া অন্য পণ্য
দ্বারা ফিতরা আদায়
করলে এক সা পরিমাণ
দিতে হচ্ছে, যা গমের
ওজনের দ্বিগুণ এবং
মূল্যের দিক দিয়েও
অনেক তফাত। হাদিসে এক
সা আদায় করার কথা
উল্লেখ থাকার পরও তখন
এর মূল্য অনেক বেশি
হওয়ায় সাহাবারা আধা
সা পরিমাণ গম আদায়ের
সিদ্ধান্ত
নিয়েছিলেন। তখন আধা
সা গমের মূল্যও অন্য
চারটি পণ্যের এক সা-এর
চেয়েও বেশি ছিল।
কিন্তু বর্তমান সময়ে
আলোচিত পাঁচটি
পণ্যের মধ্যে গমই হচ্ছে
সবচেয়ে কম দামি পণ্য।
তাহলে এখন প্রশ্ন হলো,
বর্তমানে গমের পরিমাণ
হিসেবে আধা সা
ফিতরা আদায় করলে হবে?
হাদিসের আলোচনা
থেকে এ কথাটি
স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান
হয় যে সাহাবারা
খেজুর, জব, পনির ও
কিশমিশ থেকে হলে এক
সা পরিমাণ এবং গম
থেকে হলে আধা সা
পরিমাণ ফিতরা আদায়
করতেন। কারণ তখন গমের
দাম অন্য সব পণ্যের
তুলনায় বেশি ছিল। আর
বর্তমানে অন্য চারটি
পণ্যের তুলনায় গমের
দাম কম। এ পর্যন্ত
হাদিসের এমন কোনো
সূত্র পাওয়া যায়নি যে
সাহাবারা সবাই
সর্বনিম্ন দামের বস্তু
দ্বারা ফিতরা আদায়
করেছেন। বরং তাঁদের
সবার আগ্রহ ছিল
সর্বাধিক দামি পণ্য
দ্বারা ফিতরা আদায়
করা। তাহলে বর্তমানে
সবাই সর্বনিম্ন দামের
পণ্য দ্বারা ফিতরা
আদায় করছে কেন?
আমাদের সময়ের
সম্পদশালী আর
মধ্যবিত্ত
নির্বিশেষে আধা সা
গম বা তার সমপরিমাণ
মূল্য দ্বারা
সাদকাতুল ফিতর আদায়
করা সমীচীন হচ্ছে কি?
এবং এতে সাদকাতুল
ফিতরের আসল হক কি আদায়
হচ্ছে?
শরিয়তের বর্ণনা ও
হাদিসের আলোচনা
অনুযায়ী সমাধান হলো-
যার সামর্থ্য অনুযায়ী
উলি্লখিত পাঁচটি
পণ্যের যেকোনো একটি
পণ্যের নির্দিষ্ট
পরিমাণে ফিতরা আদায়
করতেন। যার সামর্থ্য
আছে উন্নতমানের
খেজুর দ্বারা সে
খেজুর দ্বারাই আদায়
করবে। আর যার সামর্থ্য
আছে কিশমিশ কিংবা জব
দ্বারা আদায় করার সে
তা দ্বারা আদায় করবে।
যার গম দ্বারা আদায়
করা ছাড়া অন্য পণ্য
দ্বারা আদায় করার
সামর্থ্য নেই সে গম
দ্বারা ফিতরা আদায়
করবে। বেশি সম্পদশালী
এবং কম সম্পদশালী
নির্বিশেষ গম বা
সর্বনিম্ন দামের পণ্য
দ্বারা সাদকাতুল ফিতর
আদায় করার বিষয়টি
বিবেকবর্জিত এবং
হাদিস ও শরিয়তের
নির্দেশনার পরিপন্থী।
তাই আসুন! আমরা সবাই
নিজেদের সামর্থ্য
অনুযায়ী সাদকাতুল
ফিতর আদায় করি এবং
দায়সারা আদায় পদ্ধতি
ত্যাগ করি।

ফিতরার আর্থ-সামাজিক
গুরুত্ব
ফিতরা আদায় করা মহান
আল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ
একটি আদেশ। বিত্তবান
মুসলিম নাগরিকের ওপর
ফিতরা ওয়াজিব করে
দেওয়া হয়েছে। গরিব-
অসহায় মানুষদের হক
হিসেবে আখ্যায়িত
করা হয়েছে এই
সাদকাতুল ফিতরাকে।
পবিত্র রমজান মাসে
রোজা পালনের
পুরস্কার হিসেবে
আল্লাহ মহান ঈদের
আনন্দ প্রদান করেছেন।
সমাজে বসবাসকারী ধনিক
শ্রেণীর মানুষদের
সঙ্গে সঙ্গে গরিবরাও
যাতে ঈদের আনন্দ
উপভোগ করতে পারে,
এজন্য এই সাদকাতুল
ফিতরের আমলকে ওয়াজিব
করা হয়েছে। ফিতরার
মাধ্যমে মুসলিম সমাজে
বসবাসকারী ধনীদের অর্থ
গরিবদের মধ্যে বণ্টিত
হয় এবং এ দ্বারা
গরিবদের জীবন-যাপনে
কিছুটা হলেও গতি
ফিরে আসে। এ জন্য
ইসলামে সাদকাতুল
ফিতরের গুরুত্ব
অপরিসীম। এ ফিতরা
দানের মাধ্যমে সমাজে
বসবাসকারী
জনসাধারণের মধ্যে
সমতা ফিরে আসে এবং
সহযোগিতার মানসিকতার
বিস্তার ঘটে। একে
অন্যের সঙ্গে
সামাজিক সম্পর্ক
সাধিত হয় এবং এই
সামাজিক সম্পর্কের
উন্নয়ন হয়।
বিশেষ পরামর্শ
ইসলামিক ফাউন্ডেশন,
বাংলাদেশের বিভিন্ন
ইসলামিক সংস্থা, ইমাম,
খতিবসহ যারাই এ বিষয়টির
সঙ্গে জড়িত আছেন, সবার
উচিত এই বিষয়ে বিশেষ
সতর্কতা অবলম্বন করা
এবং সবাইকে আসল
ব্যাপারটা বুঝিয়ে
সামর্থ্য অনুযায়ী
সদকাতুল ফিতর আদায়
করার আগ্রহ সৃষ্টি করা।
এ ব্যাপারে ইসলামিক
ফাউন্ডেশনকেই বিশেষ
পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
কারণ এটা একটি সরকারি
ইসলামী প্রতিষ্ঠান
এবং তাদের মতামতের
প্রভাব অনেক বেশি।
ফিতরা আদায় করা
প্রত্যেক উপযুক্ত
ব্যক্তির নিজস্ব
দায়িত্ব। এটা গরিবের
হক। এ হক নষ্ট করা
কোনোভাবেই উচিত হবে
না। তাই আমাদের সবার
উচিত নিজের সঠিক
সামর্থ্য অনুযায়ী
বেশি মূল্যের পণ্য
দ্বারা সাদকাতুল ফিতর
আদায় করার মাধ্যমে
নিজে লাভবান হওয়া
এবং গরিবদের বেশি
বেশি সহযোগিতা করা।
সদকাতুল ফিতর ও কিছু
নতুন ভাবনা
ঈদুল ফিতরের সঙ্গে
ফিতরার একটা ঘনিষ্ঠ
সম্পর্ক রয়েছে। কেননা
ব্যক্তির ওপর ফিতরা
ওয়াজিব হয় বলিষ্ঠ
মতানুসারে ঈদের দিন
সুবহে সাদিকের সময়। আর
তা আদায় করতে হয় ঈদের
নামাজের আগে। অবশ্য
কেউ যদি ঈদের দিনের
আগে সদকায়ে ফিতর
আদায় করে দেয়, তাহলে
এতে শরিয়তের পক্ষ
থেকে কোনো আপত্তি
নেই।
সদকায়ে ফিতর গরিবদের
ঈদের খুশিতে শরিক করার
জন্য দেয়া হয় বলে
সাধারণ্যে যে ধারণা
প্রচলিত রয়েছে তা
যথার্থ নয়; বরং হাদিসে
সদকায়ে ফিতরকে প্রথমে
কাফফারাতুন লিসসাওম
অর্থাত্ রোজা
অবস্থায় অবচেতনভাবে
যে ত্রুটি-বিচ্যুতি
হয়ে যায়, যার কারণে
রোজা ভঙ্গ না হলেও
দুর্বল হয়ে যায়—তার
কাফফারা বা ক্ষতিপূরণ
বলে উল্লেখ করা
হয়েছে। অতঃপর তুমআতুন
লিল মাসাকিন বা
গরিবদের আহার্যের
ব্যবস্থা বলে উল্লেখ
করা হয়েছে। এর দ্বারা
পরিষ্কার বোঝা যায়,
সদকায়ে ফিতর আদায়ের
প্রধান উদ্দেশ্য হলো
রোজাদারের রোজা
পূর্ণাঙ্গ করা, আর এতে
করে গরিবের আহার্যের
ব্যবস্থাও হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়
প্রশ্ন যেটি অধুনা
আমাদের সামনে আসছে
তা হলো সদকায়ে
ফিতরের পরিমাণ
নির্ধারণের শরয়ি
মানদণ্ডটি কী?
অর্থাত্ সদকায়ে ফিতর
বাবদ প্রতিজন
ব্যক্তিকে কোনো
দ্রব্য কী পরিমাণ বা কত
টাকা আদায় করতে হবে?
হাদিসের কিতাবাদি
ঘাঁটাঘাঁটি করলে
দেখা যায়, তামার বা
খেজুর এবং শাঈর বা যব
দ্বারা ১ সা বা
আমাদের মাপে সাড়ে ৩
সের পরিমাণ আদায়ের
কথা বহু হাদিসে বিবৃত
হয়েছে। যে হাদিসগুলো
বুখারি ও মুসলিম উভয়
গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে
অর্থাত্ হাদিসগুলো
সহিহ মানে উের গেছে।
অতএব এর দ্বারা দলিল
গ্রহণ করা যায়। আবার
কোনো কোনো হাদিসে
যাবিব বা কিশমিশের
কথা উল্লেখ আছে; আর
কোনো কোনো হাদিসে
আকিত বা পনিরের কথা
উল্লেখ আছে। এ মর্মের
হাদিসগুলোও বুখারি ও
মুসলিম উদ্ধৃত করেছেন।
অর্থাত্ প্রমাণ
হিসেবে এগুলোও
গ্রহণীয়। কিশমিশ বা
পনির দ্বারা আদায়
করলেও ১ সা বা সাড়ে ৩
সের পরিমাণ জনপ্রতি
আদায় করতে হবে।
ইবনে হযম যাহেরি (রহ.)
অবশ্য বলেছেন যে, শুধু
খেজুর ও যবের দ্বারাই
সদকায়ে ফিতর আদায়
করতে হবে, অন্যগুলো
দ্বারা নয়। তার যুক্তি
হলো যেহেতু বহুসংখ্যক
হাদিসে খেজুর ও যবের
কথা উল্লেখ আছে, অতএব
এ দুটোই ধর্তব্য হবে।
কিন্তু সহিহ হাদিস
দ্বারা কোনো বিষয়
প্রমাণিত হলে
সেক্ষেত্রে কতসংখ্যক
হাদিস দ্বারা বিষয়টি
প্রমাণিত হলো তা
মোটেই বিবেচ্য হয় না।
হ্যাঁ, দুটি হাদিসের
মাঝে বৈপরীত্য থাকলে
সেক্ষেত্রে
সংখ্যাধিক্য
রিওয়ায়েত দ্বারা
প্রমাণিত বিষয়টি
প্রাধান্য পায়। অথচ
এখানে বৈপরীত্য নেই।
একশ্রেণীর হাদিস
দ্বারা দুটি বিষয়
প্রমাণিত হয়েছে, আর
অন্য শ্রেণীর হাদিস
দ্বারা অপর দুটি বিষয়
প্রমাণিত হয়েছে। অতএব
ইবনে হযমের (রহ.) বক্তব্য
যে বস্তুনিষ্ঠ নয় তা
সহজেই বোঝা যায়।
কিশমিশ দ্বারা সদকায়ে
ফিতর আদায়ের
ব্যাপারে
মুতাআখখেরিনদের কারও
কারও দ্বিমত থাকলেও
ইমাম নববী (রহ.) তার
মুসলিমের
ব্যাখ্যাগ্রন্থ শরহে
নববীতে বলিষ্ঠভাবে
তা প্রত্যাখ্যান
করেছেন। অনুরূপভাবে
ইমাম আহমদের (রহ.)
মতানুসারে আকিত বা
পনির দ্বারা ফিতরা
আদায় করা যাবে না।
অবশ্য আল্লামা
মাওয়ারদি ( রহ.) বলেছেন,
গ্রামীণ মানুষ যারা
পশু পালন করে জীবিকা
নির্বাহ করে তাদের
বেলায় পনির দ্বারা
ফিতরা আদায় করা বৈধ
হবে, নগরবাসীর জন্য নয়।
ইমাম নববী শরহে
মুহাযযাবে এসব
মতামতকে এই বলে
প্রত্যাখ্যান করেছেন
যে, যেহেতু কিশমিশ ও
পনির দ্বারা সদকায়ে
ফিতর আদায়ের কথা সহিহ
হাদিস দ্বারা
প্রমাণিত আছে, আর এর
বিপরীত কোনো বর্ণনা
হাদিসে বিদ্যমান নেই,
অতএব এগুলো দ্বারা
সদকায়ে ফিতর আদায় করা
যাবে না বলে যে মতামত
ব্যক্ত করা হয়েছে তা
আদৌ ঠিক নয়।
ইমাম মুসলিম (রহ.) এ চার
বস্তুর বিবরণ সংবলিত
হাদিসগুলো সংকলন করার
পর হজরত মুআবিয়ার (রা.)
গমের আধা সা দ্বারা
ফিতরা আদায়
সংক্রান্ত
হাদিসগুলো উল্লেখ
করেছেন। হাদিসগুলো
এরূপ যে, হজরত আবু সাঈদ
খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল
(সা.) যখন আমাদের মাঝে
বিদ্যমান ছিলেন তখন
আমরা বড়-ছোট, আজাদ
কিংবা গোলাম সবার
ক্ষেত্রেই
খাদ্যদ্রব্যের এক সা
কিংবা পনিরের এক সা
অথবা যবের এক সা
কিংবা খেজুরের এক সা
বা কিশমিশের এক সা
দিয়ে সদকায়ে ফিতর
আদায় করতাম। এভাবেই
আমরা আদায় করে
আসছিলাম। একবার হজরত
মুআবিয়া (রা.) হজ
কিংবা ওমরাহর
উদ্দেশ্যে আগমন করলেন।
তিনি মিম্বরে বসে
লোকদের সঙ্গে কথা
বললেন, আমি দেখেছি
যে, সিরিয়ার (উত্তম
জাতের) দুই মুদ গম
অর্থাত্ আধা সা
(আমাদের হিসাবে
পৌনে দুই সের প্রায়)
এক সা খেজুরের
মূল্যমান বহন করে। ফলে
লোকেরা এই অভিমত
গ্রহণ করে নিল। আবু
সাঈদ (রা.) বলেন, তবে
আমি যতদিন জীবিত থাকব
ততদিন আগের নিয়মেই
সদকায়ে ফিতর আদায় করে
যাব।
ইমাম মুসলিম (রহ.) হয়তো
মনে করেছেন যে,
সাহাবির বক্তব্য
প্রামাণিক ভিত্তি
হয়ে থাকে বিধায় এই
হাদিসটি উল্লেখ করলে
অর্ধ সা গমের দ্বারা
ফিতরা আদায় করার
বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে
যাচ্ছে। কিন্তু ইমাম
মুসলিমের (রহ.) এ ধরনের
উপস্থাপনার কারণে
পরবর্তীকালে এরূপ
একটি ভুল বোঝাবুঝি
হয়েছে যে, অর্ধ সা
গমের দ্বারা ফিতরা
আদায়ের বিষয়টি
সম্পূর্ণ হজরত
মুআবিয়ার (রা.)
ইজতিহাদ। তাই অনেকেই
অর্ধ সা গমের দ্বারা
ফিতরা আদায় করার
বিষয়টি শরয়ি মানদণ্ড
হিসেবে মেনে নিতে
চাননি। তারা বরং
এভাবে ব্যাখ্যা করতে
চেয়েছেন যে,
খাদ্যদ্রব্যের এক সা
দ্বারা ফিতরা আদায়ের
কথা যেহেতু হাদিসে
ব্যক্ত হয়েছে তাই গম বা
আটা দ্বারা আদায়
করলেও এক সাই দিতে
হবে। শাফেয়ি
মাজহাবের কোনো
কোনো ব্যক্তির এরূপ
অভিমত রয়েছে।

বর্তমানে আমাদের
দেশের কতিপয় ইসলামী
গবেষক সে সুরেই কথা
বলতে চাচ্ছেন, এ যেন
কুয়ার ব্যাঙের পৃথিবী
ভ্রমণের মতো বিষয়।
তারা ধরেই নিয়েছেন
যে, সদকায়ে ফিতরের মূল
উদ্দেশ্য গরিবের উপকার
করা। তাই তারা গরিবের
উপকারের দোহাই দিয়ে
গম বা আটা দ্বারা
ফিতরা দিলেও এক সাই
দিতে হবে এরূপ মতামত
জাতির সামনে তুলে
ধরতে চাচ্ছেন। যুক্তি
একটাই যে, গরিবের উপকার
হবে। আমার প্রশ্ন হলো,
গরিবের উপকারের দোহাই
দিয়ে শরিয়তের স্বীকৃত
একটি বিষয়কে কি
অস্বীকার করা যাবে?
মুসলিম শরীফ ছাড়াও
হাদিসের বহু গ্রন্থ
রয়েছে। সেসব গ্রন্থের
বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত
হাদিসে স্পষ্টতই
উল্লেখ আছে যে, গমের
অর্ধ সার দ্বারা
সদকায়ে ফিতর আদায়
করার বিষয়টি স্বয়ং
রাসুল (সা.) নিজেই
নির্ধারণ করেছেন।
নাসাঈ ও আবু দাউদ
শরীফে একটি হাদিস হজরত
ইবনে আব্বাস (রা.)
থেকে বর্ণিত হয়েছে।
তিনি বলেন : রাসুল
(সা.) এই সদকাই আমাদের
ওপর বাধ্যতামূলক করে
দিয়েছেন যে, খেজুর
কিংবা যব দ্বারা আদায়
করলে এক সা পরিমাণ
দিতে হবে, আর গম দ্বারা
আদায় করলে অর্ধ সা
দিতে হবে।
মিশকাত শরীফে
হাদিসটি দ্বিতীয়
অধ্যায়ে সংকলন করা
হয়েছে যার অর্থ
হাদিসটি হাসান
পর্যায়ের চেয়ে
নিম্নমানের নয়। আর
হাসান পর্যায়ের হাদিস
সবার কাছেই
প্রমাণযোগ্য। মিশকাত
শরীফের তৃতীয়
অধ্যায়ে আরও একটি
হাদিস সংকলন করা
হয়েছে। আমর ইবনে
শুয়ায়েরের সূত্রে
বর্ণিত হাদিসটির
বক্তব্য হলো এরূপ, নবী
(সা.) মক্কার গলিতে
গলিতে ঘোষক প্রেরণ
করলেন যে, শোন! সদকায়ে
ফিতর প্রত্যেক
মুসলমানের (সাহেবে
নেসাব) ওপরই ফরজ। পুরুষ
হোক বা নারী, স্বাধীন
হোক বা গোলাম,
প্রাপ্তবয়স্ক হোক বা
অপ্রাপ্তবয়স্ক—গম
দ্বারা আদায় করলে দুই
মুদ (অর্ধ সা) কিংবা
তার সমপরিমাণ মূল্য আর
অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য
দ্বারা আদায় করলে এক
সা। হাদিসটি ইমাম
তিরমিজি সংকলন
করেছেন। সনদে ইতিরাব
থাকলেও যেহেতু হাসান
পর্যায়ের ওপর বর্ণিত
হাদিসটি তার মুতাবে
অর্থাত্—অর্ধ সার
ক্ষেত্রে সমঅর্থ
প্রদানকারী। অতএব এটিও
প্রমাণযোগ্য।
আল্লামা
জামালউদ্দিন যাইলায়ি
(রহ.) অর্ধ সার বিবরণ
সংবলিত প্রায় দশটি
মরফু রিওয়ায়েত নাসবুর
রায়াহ গ্রন্থে সংকলন
করেছেন। সুতরাং গমের
অর্ধ সা দ্বারা ফিতরা
আদায়ের বিষয়টি নবী
(সা.) নিজেই নির্ধারণ
করেছেন, তা বহু সূত্রে
প্রমাণিত আছে। এটি
হজরত মুআবিয়ার (রা.)
ইজতিহাদ নয়। অতএব অর্ধ
সা গম দ্বারা ফিতরা
আদায় করা যাবে না বলে
যদি কেউ মতামত ব্যক্ত
করেন তাহলে তা কোনো
অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য
হবে না। আর হাদিসের
জগত্ সম্পর্কে যাদের
এত সীমিত জ্ঞান
তাদের বোধহয় এ ধরনের
নতুন ইজতিহাদের পথে
পা বাড়ানো ঠিক হবে
না।
আসলে হজরত মুআবিয়া
(রা.) নতুন কোনো
ইজতিহাদ করেননি; বরং
রাসুলের (সা.) বলা
কথাটাই নতুন করে স্মরণ
করিয়ে দিয়েছেন মাত্র।
রাসুল (সা.) গমের আধা
সার কথা বললেও যেহেতু
গম তাদের উত্পাদিত
বস্তু ছিল না, বাইরে
থেকে আমদানি করে
আনতে হতো, তাই গম
দ্বারা সাধারণত কেউ
ফিতরা আদায় করত না।
হজরত মুআবিয়া (রা.) যখন
দেখলেন যে, গমের
দুর্লভ্যতা কমে গেছে,
এখন ইচ্ছা করলে গম
দ্বারাই তারা ফিতরা
দিতে পারে, যা তাদের
প্রধান খাদ্য, তাই
তিনি গমের কথাটা
জনগণের দৃষ্টিতে
নিয়ে এসেছেন মাত্র।
আর গম দ্বারা দিলে কেন
অর্ধ সা দিতে হবে তার
যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা
করে দিয়েছেন। এরূপ না
হলে সাহাবারা এটা
অবশ্যই মেনে নিতেন না।
অন্তত দু-চারজন
প্রতিবাদ করতেন।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি
(রা.) ছাড়া বিষয়টির
ব্যাপারে অন্য কেউ
আপত্তি করেছেন বলে
জানা যায় না। তাই ধরে
নিতে হবে, আবু সাঈদ
খুদরির কাছে রাসুলের
(সা.) ওই বক্তব্যটুকু যে
কোনো কারণেই হোক
পৌঁছেনি। ফলে তিনি
সে মত মেনে নেননি।
অন্যরা জানতেন বিধায়
মেনে নিয়েছেন।
সুতরাং মুআবিয়ার ওই
বক্তব্যটুকু হুকমান
মারফু বলে গণ্য হবে। আর
যদি তার ইজতিহাদ ধরা হয়
তবে এই মত সব সাহাবি
মেনে নিয়েছেন বিধায়
ইজমায়ে সাহাবা
দ্বারা বিষয়টি
প্রমাণিত হয়েছে। কথা
থেকে যায় যে, হাদিসে
উল্লিখিত ওই পাঁচটি
দ্রব্য (অর্থাত্ গম অর্ধ
সা, খেজুর, যব, কিশমিশ,
পনির এক সা) দ্বারাই
সদকায়ে ফিতর আদায়
করতে হবে না, অন্য
কোনো দ্রব্য দ্বারা
আদায় করলেও চলবে। ইবনে
হযম যাহেরি মনে করেন,
কেবল খেজুর ও যব
দ্বারাই আদায় করতে
হবে। ইমাম আহমদ ইবনে
হাম্বলের (রহ.) সাধারণ
মত এই যে, হাদিসে
উল্লিখিত পাঁচটি
দ্রব্য দ্বারাই আদায়
করতে হবে। অন্য কোনো
দ্রব্য দ্বারা আদায়
করলে হবে না। মালেকি
ও শাফেয়িদের অভিমত
হলো, যে কোনো
খাদ্যদ্রব্য দ্বারা
আদায় করা যাবে। অবশ্য
কোনো কোনো শাফেয়ি
গবেষকের মত এরূপ যে,
খাদ্যদ্রব্য যেগুলো
সঞ্চয়যোগ্য সেগুলো
দ্বারা আদায় করতে হবে।

ইমাম আবু হানিফা মনে
করেন, এই পাঁচটি হলো
সদকায়ে ফিতরের
ক্ষেত্রে মানদণ্ড। এর
যে কোনো একটি দ্বারা
যেমন আদায় করা যাবে, এর
সমমূল্যের যে কোনো
দ্রব্য দ্বারাও আদায়
করা যাবে। এমনকি
মুদ্রা দ্বারাও আদায়
করা যাবে। অবশ্য আর তিন
ইমামের অভিমত এই ছিল
যে, মুদ্রা দ্বারা
আদায় করা যাবে না,
দ্রব্যের দ্বারাই আদায়
করতে হবে। তবে তাদের
অনুসারীরা
পরবর্তীকালে ইমাম আবু
হানিফার (রহ.) অভিমতকেই
মেনে নিয়েছেন। এখন
সবার দৃষ্টিতেই
সমপরিমাণ মুদ্রা
দ্বারা ফিতরা আদায়
করলে আদায় হয়ে যাবে।
তবে হ্যাঁ, শরিয়তের
নির্ধারিত মানদণ্ড
ঠিক রেখে যদি গরিবের
উপকার করা যায় তাতে
কোনো বাধা নেই; বরং
সেটি উত্তম কর্ম বলে
বিবেচিত হবে। তাই শুধু
আধা সা গমের মূল্য
পরিশোধ না করে এক সা
খেজুরের মূল্যের
সমপরিমাণ আদায় করতে
বাধা নেই, যার বর্তমান
বাজার দর প্রায় ১৪০০
টাকা হবে। কিংবা এক
সা কিশমিশের মূল্যের
সমপরিমাণও আদায় করা
যায়, যার বাজার দর ৪২০
টাকা প্রায়। কিংবা ১
সা পনিরের মূল্যের
সমপরিমাণও আদায় করা
যায়, যার বাজার দর ৭০০
টাকা প্রায়। সমাজের
বিত্তশালীরা যদি
খেজুরের মূল্যে
সদকায়ে ফিতর আদায়
করেন, মধ্যবিত্তরা যদি
পনির ও কিশমিশের
মূল্যে আদায় করেন আর
নিম্নবিত্ত যাদের ওপর
সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়
তারা যদি যব বা গমের
মূল্যে আদায় করেন
তাহলে গরিব লাভবান
হবে এবং সম্পদের পর্যায়
ভেদে এ অভ্যাস
সমাজের মানুষের মাঝে
গড়ে ওঠা উচিত। এজন্য
আলেম-ওলামা ও মসজিদের
ইমামরা মানুষকে
উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।
তবে শরিয়ত স্বীকৃত
কোনো বিষয়কে আইন করে
রহিত করার অধিকার কারও
নেই।
মাওলানা মিরাজ রহমান/
আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ

ইয়াহইয়া




ছদকাতুল ফেতর অর্থাৎ ফেতরা প্রদানের হুকুম ও ফযিলত

ছদকাতুল ফেতর অর্থাৎ ফেতরা প্রদানের হুকুম ও ফযিলত



পবিত্র রমযানের রোযার
পরিপূরক সংশোধনী
নৈকট্য অর্জনের
আরেকটি হাতিয়ার হ’ল
ছদকাতুল ফিতর আদায়
করা। এ সম্পর্কে রাসূল
(সঃ) এর বিভিন্ন দিক
নির্দেশনা রয়েছে। হযরত
ইবনে আব্বাস (রাঃ)
বলেন, রাসুল (সঃ)
যাকাতুল ফিতর ফরজ
করেছেন যেন সিয়াম
পালনকারী বাজে কথা,
অশ্লীল (ইত্যাদি ছোট-
ঘাট অপরাধ) থেকে
পবিত্র লাভ করে এবং
দরিদ্র মানুষেরা যেন
খাদ্য লাভ করতে সক্ষম
হয়। যে ব্যক্তি
সালাতুল ঈদের আগে তা
আদায় করবে তার জন্য তা
কবুলকৃত যাকাত বলে
গন্য হবে। আর যে
ব্যক্তি ঈদের পরে তা
আদায় করবে তার জন্য তা
একটি সাধারণ দান বলে
গন্য হবে (আবু দাউদ ২/১১১,
ইবলেমাজা ১/৫৫৮)। আবু
সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন
রাসূল (সঃ) এর সময়ে
আমরা একসা খাদ্য অথবা
একসা জব অথবা একসা
খেজুর অথবা একসা পনির
অথবা একসা কিসমিস
যাকাতুল ফিতরা
হিসেবে প্রদান করতাম
(বোখারী ২/৫৮৫, মুসলিম
২/৬৭৮)। আসমা বিনতে আবু
বকর (রাঃ) বলেন, রাসূল
(সঃ) এর যুগে আমরা
যাকাতুল ফিতরা আদায়
করতাম দুই মুদ্দ গম দিয়ে
(আহমাদ ৬/৩৫৫)। প্রত্যেক
সাহেবে নেসাব এর
ফিতরা আদায় করা
ওয়াজিব (একসা হ’ল চার
মুদ্দ, তাহলে দুই মুদ্দ
হ’ল অর্দ সা। সা এর
পরিমাপ নিয়ে ফকিহ গণের
মতবেদ রয়েছে। তবে ইমাম
আবু হানিফা (রঃ) এর
মতে একসা হ’ল
বাংলাদেশীদের
পরিমাপ ৩ কেজি ৩০০
গ্রাম, ইমাম আবু ইউসুফ ও
অন্যান্য তিন ইমামের
মতে একসা হ’ল প্রায় ২
কেজি ২শ গ্রাম)
উপরোক্ত বর্ননার
আলোকে আমরা জানতে
পারলাম রাসূল (সঃ) ১
খেজুর, ২ কিসমিস, ৩ পনির,
৪ জব বা জবের সাতু এই
চার প্রকার খাদ্য থেকে
প্রত্যেক ব্যক্তির
জন্য ৩কেজি ৩শ গ্রাম
ফেতরা হিসেবে দিতে
হবে। আর একটি বর্ননায়
দেখতে পাই যে, গম বা
আটার ক্ষেত্রে এর
অর্ধেক অর্থাৎ ১ কেজি
৬৫০ গ্রাম হিসেবে
ফেতরা দিলেও চলবে।
আমাদের দেশে
উল্লেখিত ৫ প্রকার
খাদ্যের কোনটাই মূল
খাদ্য নয়। এজন্য সবচেয়ে
উত্তম হ’ল খেজুর বা
খেজুরের মূল্য প্রদান
করা। কারণ সাহাবীগন
ফেতরা খেজুর দিয়ে
প্রদান করতে
ভালবাসতেন। এছাড়া
দরিদ্রদের জন্য তা
অধিকতর উপকারী। তবে
আমাদের দেশে সাধারণত
ফেতরা দাতাদের
সুবিধার দিকে তাকিয়ে
আমভাবে আটার মূল্য
হিসেবে গয়রহ ফেতরা
প্রদান করার কথা বলা হয়।
শরীয়তের দৃষ্টিতে তা
বিবেচনার বিষয়। এ
হিসাবে সর্বনিম্ন গরীব
মানুষ নিজের রোযার
ত্র“টি মুক্ত করণার্থে
বাজারের উত্তম আটা
দিয়ে পরিবারের
প্রত্যেকের পক্ষথেকে
১ কেজি ৬৫০ গ্রাম করে
ফেতরা প্রদান করলে
স্বভাবত আদায় হবে। তবে,
ধনাঢ্য ব্যক্তি
লাখপতি-কোটিপতিদের
জন্য উক্ত পরিমান
ফেতরা আদায় করা
শরিয়তের দৃষ্টিতে
প্রশ্নবিদ্ধ। রাসূল
(সঃ) থেকে বর্ণিত আছে
ঈদের দিন রোযাদারের
রোযা আসমান-জমিনের
মধ্যেবর্তী ফেতরা না
দেওয়া পর্যন্ত ঝুলন্ত
থাকে। অর্থাৎ তার
রোযা কবুলিয়াতের
দরজায় পৌছায় না। যতক্ষন
পর্যন্ত না সে তার
নিজের পক্ষথেকে
ফেতরা আদায় না করে।
মানুষ ভুল-ত্র“টির
উর্দ্ধে নহে। বর্ণিত
হাদিস মতে প্রত্যেক
ব্যক্তির রোযা কিছু
না কিছু ত্র“টি অবশ্যই
আছে। তাই তার রোযা
মকবুল দরজায় পৌছাতে
ফেতরা আদায় করা সকলের
জন্য আবশ্যক। এ
দৃষ্টিকোণ থেকে একজন
গরীব মিসকিন ব্যক্তিও
যদিও সে ফেতরা খাওয়ার
উপযোগী তথাপিও সে
যদি নিজের রোযাকে
পরিশুদ্ধ করতে চায় তার
প্রাপ্ত ফেতরা থেকে
১টি ফেতরা অন্যকে
দিয়ে তার রোযাকে
কবুলিয়তের দরজায়
পৌছানোর প্রচেষ্টা
করা তার জন্য আবশ্যক।
আমাদের দেশে
অজ্ঞতার কারণে গয়রহ
আটার মূল্য হিসেবে
সাধারণত অজ্ঞ
মানুষদেরকে প্রদান
করার জন্য হুকুম দিয়ে
থাকে। অন্যান্য বস্তুর
কথা আদৌও বলা হয় না।
এযেন দ্বীন ইসলামের
নির্দেশকে আমরা যেনে
শুনে গোপন করছি এবং
গরীবের হক নষ্ট করছি। তাই
ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের
উচিৎ উল্লেখিত ৫
প্রকার খাদ্য দ্রব্যের
যেকোন ১টি দিয়ে সাধ্য
মোতাবেক ফেতরা আদায়
করা উচিৎ। বর্ণিত হাদিস
থেকে আরও বোঝা যায়
একজন গরীব মিসকিনও যেন
তার রোযার
পরিশুদ্ধতার জন্য
সর্বনিম্ন আটার মূল্য
দিয়ে ফেতরা আদায় করে
এবং তার সিয়াম
সাধনাকে মকবুলিয়াতের
দরজায় পৌছায়। একজন
স্ব্চ্ছল লাখপতি-
কোটিপতি কি? একজন
সাধারণ গরীব
রোযাদারের আটার
সমমূল্য ফেতরা আদায়
করবে ? আল্লাহ প্রদত্ত
তার নিয়ামতের শুকরিয়া
কি আদায় করবে না ? তাই
তাদের জ্ঞাতার্থে
জানাই প্রত্যেকের
পক্ষ থেকে ৩ কেজি ৬৫০
গ্রাম করে খেজুর বা
পনির বা কিসমিস অথবা জব
এর মূল্য হিসেবে আদায়
করে রাসূল (সঃ) ও তার
সাহাবীগণের আমলকে
জেনদা করি এবং গরীব
দুখীদের ঈদের দিনে
মুখে হাসি ফুটাই।
পরস্পরের মধ্যে মধুর
ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের
সহমর্মিতা দেখায়ে
আর্থসামাজিক উন্নয়ন
বলায় সৃষ্টি করি। এরূপ
সুন্নতের আমল করতে
পারলেই প্রকৃত ঈদের
খুশি সকলের মাঝে
প্রতিভাত হবে। মৌলিক
প্রয়োজনের অতিরিক্ত
নেসাব পরিমান সম্পদের
মালিক প্রত্যেক
মুসলিম নারী-পুরুষের
উপর সদকাতুল ফেতরা
ওয়াজিব। এরূপ সম্পত্তি
বর্ধনশীল হওয়া জরুরী নয়।
রুটি, চাউল বা অন্যান্য
খাদ্য দ্রব্য দিয়ে
ফেতরা দিতে হলে
শরীয়তের উল্লেখিত
দ্রব্যাদির নির্ধারিত
বস্তুর মূল্য ধরে এগুলি
দিয়ে ফেতরা দেওয়া
যাবে। দুর্বিক্ষের সময়
মূল্য না দিয়ে ফেতরা দিতে হলে
শরীয়তের উল্লেখিত
দ্রব্যাদির নির্ধারিত
বস্তুর মূল্য ধরে এগুলি
দিয়ে ফেতরা দেওয়া
যাবে। দুর্বিক্ষের সময়
মূল্য না দিয়ে খাদ্য
দিয়ে ফেতরা আদায় করা
উত্তম। আর অন্যান্য সময়
মূল্য দিয়ে ফেতরা
আদায় করা উত্তম।
সাদকাতুল ফিতর ওয়াজিব
হওয়ার সময় হ’ল ঈদুল
ফিতরের দিন সুবহে
সাদিক হওয়ার পর। সুবহে
সাদিকের পূর্বে কেউ
মারা গেলে তার উপর
ফেতরা ওয়াজিব হবে না।
সুবহে সাদিকের পূর্বে
জন্ম নিলে বা মুসলমান
হলে বা গরীব থেকে ধনী
হলে তার উপর ফেতরা
ওয়াজিব হবে। ধনী
ব্যক্তি এর পূর্বে যদি
দরিদ্র হয়ে যায় তার উপর
ফেতরা ওয়াজিব হবে না।
ঈদুল ফিতরের দিনের
পূর্বে ফেতরা আদায়
করলে তা আদায় করা
যায়েজ। ঈদুল ফিতরের
দিন তা আদায় করতে না
পারলেও অবশ্যই পরে তা
আদায় করতেই হবে, তবে
উক্ত আদায় হবে সাধারণত
দানের ন্যায়। ঈদুল
ফিতরের দিন ঈদগাহের
উদ্দেশ্যে বের হওয়ার
পূর্বে ফেতরা আদায়
করা মুস্তাহাব। নিজের
এবং নিজের নাবালেক
সন্তানদের পক্ষ হতে
সদকায়ে ফিতর
অভিভাবকের উপর আদায়
করা ওয়াজিব। স্ত্রী
এবং বালেক সন্তানগণ
ফেতরা নিজেরাই আদায়
করবে। স্বামী এবং
পিতার উপর তাদের
ফেতরা আদায় করা
ওয়াজিব নয়। অবশ্য দিয়ে
দিলে তা আদায় হবে।
নিজ পরিবার ভূক্ত নয় এমন
লোকের পক্ষ থেকে তার
অনুমতি ছাড়া ফেতরা
দিলে আদায় হবে না।
কোন ব্যক্তির উপর তার
পিতা-মাতার এবং ছোট
ভাই-বোন ও নিকট
আত্মীয়ের পক্ষ থেকে
ফেতরা আদায় করা
ওয়াজিব নয়। এক ব্যক্তির
ফেতরা এক মিসকিনকে
দিয়ে দেয়া
সর্বোত্তম। তবে
একাদিক মিসকিনকে
দেয়াও জায়েজ। একদল
লোকের উপর যে ফেতরা
ওয়াজিব তা এক
মিসকিনকে দেয়াও
জায়েজ।
অতএব, বর্ণিত
আলোচনান্তে সকল
ভ্রাতৃপতিম মুসলিম
ভাইদের নিকট শরীয়তের
নির্দেশকে যথাযথ পালন
করি এবং গরীবদের
প্রাপ্য হক আদায়ের
জন্য উল্লেখিত
দ্র্রব্যাদির বর্তমান
বাজার মূল্য যাচাই করে
তাদেরকে প্রদান করতঃ
সহমর্মিতা ভ্রাতৃত্ব
বন্ধনে একে অপরকে
আবদ্ধ করে ঈদকে প্রকৃত
আনন্দে উদ্ভাসিত করি।
আমীন আল্লাহ আমাদের
সবাইকে এর উপর আমল করার
তৈফিক দান করুন।
যা দিয়ে ইফতার করা মোস্তাহাব

যা দিয়ে ইফতার করা মোস্তাহাব


সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার আয়োজনে ঘরে-বাইরে হরেক রকম খাবারের পসরা বসে। ইফতার আয়োজনের সেই সব রকমারি খাবারের মধ্যে কিছু খাবার রয়েছে যা গ্রহণ করা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে হাদিসে বলা হয়েছে-
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال :كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يفطر على رطبات قبل أن يصلي، فإن لم يكن رطبات فتمرات،فإن لم يكن تمرات، حسا حسوات من ماء. رواه أحمد
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতের পূর্বে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পাওয়া যেতো তবে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুর না পাওয়া যেতো তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন। -বর্ণনায়: আহমদ
এ হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ইফতারের আদব হলো- মাগরিবের নামাজের পূর্বে ইফতার করা। তাজা খেজুর বা শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করা। খেজুর দিয়ে ইফতার করার উপকারিতা হলো- খেজুর সহজপাচ্য। দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকায় খাওয়ার পর যে সমস্যা হওয়ার কথা খেজুর খেলে তা হয় না। এছাড়াও খেজুর হালকা খাবারের একটি। পানি, খেজুর এগুলো দিয়ে ইফতার করলে অলসতা সৃষ্টি হয় না। দ্বিতীয়ত পেট পুরে পানাহার ইসলাম সমর্থন করে না।
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ما ملأ ابن آدم وعاء بطنه، بحسب ابن آدم لقيمات يقمن صلبه، فإن كان لا محالة فاعلا فثلث لطعامه، وثلث لشرابه، وثلث لنفسه. رواهالترمذي
মানুষ সেসব পাত্র পূর্ণ করে তার মাঝে মানুষের পেট অপেক্ষা আর কোনো খারাপ পাত্র নেই। মানুষের কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েকটি লোকমাই যথেষ্ট। এর থেকেও বেশি যদি প্রয়োজন হয়, তবে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলের জন্য রেখে দেয়া উচিৎ। -বর্ণনায়: তিরমিজি
রোজাদারকে  ইফতার  করানোর ফজিলত

রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত


রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত
জায়েদ বিন খালেদ জুহানি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি কাউকে ইফতার করাবে সে ওই ব্যক্তির সমান ছওয়াব পাবে। অথচ রোজাদার ব্যক্তির নেকি থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে- তাকে খাওয়াবে এবং পান করাবে সে তার সমান নেকি লাভ করবে অথচ তার নেকি থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, তাঁকে এক মহিলা ইফতার করানোর জন্য ডাকলে তিনি সে ডাকে সাড়া দিলেন এবং বললেন, তোমাকে আমি জানাচ্ছি যে, যে ব্যক্তি কোনো গৃহবাসীর কাছে ইফতার করবে, গৃহবাসী সে ব্যক্তির অনুরূপ নেকি পাবে। মহিলা বললেন, আমি চাই আপনি আমার কাছে ইফতার করার জন্য কিছুক্ষণ এখানে অবস্থান করবেন বা এ জাতীয় কিছু বলেছেন। আবু হুরায়রা রা. উত্তর দিলেন, আমি চাই এ নেকি আমার পরিবারই হাসিল করুক।
হাদিস থেকে যা শিখলাম :
১. আল্লাহ তা’আলার অসীম অনুগ্রহ যে, তিনি দান-খয়রাতের নানা ক্ষেত্র উম্মুক্ত করেছেন। নেকি অর্জনের বিবিধ দ্বার খুলে দিয়েছেন। এরই অন্যতম হল, মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করতে উদ্বুদ্ধ করা এবং এর জন্য প্রতিদানের ঘোষণা দেয়া।
২. রোজাদারকে ইফতার করানো একটি ফজিলতপূর্ণ আমল। যেমনটি জানা গেল- যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে সে তার অনুরূপ নেকি লাভে ধন্য হবে।
৩. রোজাদারকে ইফতার করালে তার বদলা মহান আল্লাহ রোজাদারের আমলনামা থেকে নয়; নিজের পক্ষ থেকে দিবেন। অতএব রোজাদারের নেকি সামান্য পরিমাণও কমানো হবে না। আর এভাবে নেকি নির্ধারণ করাও রোজার ফজিলতের প্রমাণ বহন করে।
৪. এ থেকে এও প্রতীয়মান যে, ইফতারের দাওয়াত দিলে তা গ্রহণ করা অসমীচীন নয়। বরং বুযুর্গি দেখিয়ে বা নেকি কমে যাওয়ার আশংকায় ইফতারের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা এক ধরনের বাড়াবাড়ি। কারণ অন্যের কাছে ইফতার করলে নিজের পুণ্য হ্রাস পায় না। তবে ইফতারের দাওয়াত যদি শুধু মিসকিনদের জন্য হয় আর সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয় কোনো ধনী লোক তাহলে ভিন্ন কথা। (এ ক্ষেত্রে তার নেকি হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।)
৫. আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে সদাচারের অংশ হিসেবে এবং তাদের মনোতুষ্টির খাতিরে দাওয়াতে সাড়া দেয়া, তাদের কাছে গিয়ে ইফতার করা যাতে তারা পুণ্য হাসিল করতে পারে উচিৎ কাজ। আবু হুরায়রা রা. এর উক্তি থেকে তাই বুঝা যায়।
৬. রোজাদারকে আপ্যায়নের উদ্দেশ্য হওয়া চাই- ইফতার করানোর নেকি কামাইয়ের মাধ্যমে নিজে উপকৃত হওয়া। খাদ্য-পানীয় সরবরাহের মাধ্যমে আপন ভাইকে সম্মানিত করা। গরিবদের ইফতার করানোর সময় এ চেতনা জাগ্রত রাখা সবিশেষ কর্তব্য।
৭. রোজাদারকে বাসায় নিয়ে আপ্যায়ন করা, তার জন্য খাবার প্রস্তুত করা বা কিনে দেয়া কিংবা প্রস্তুত করে তার উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়া বা ইফতার কিনে দেয়া- এসবই দাওয়াতের অন্তর্ভুক্ত। তবে এ ক্ষেত্রে বর্তমান যুগে যে অপচয়ের প্রবণতা দেখা দিয়েছে তা থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকা উচিৎ।
৮. গরিবকে যদি ইফতার কিনে খাওয়ার জন্য টাকা দেয়া হয় আর সে এর কিছু দিয়ে ইফতার কিনে বাকিটা রেখে দেয় তার অন্য কোনো প্রয়োজন মেটাবার জন্য তবুও এর দ্বারা হাদিসে বর্ণিত ইফতার করানোর সওয়াবের অধিকারী হবে। অথচ বেচারার প্রয়োজনও পূর্ণ হলো।
তথ্যসুত্রঃ
· তিরমিযি : ৮০৭, ইবনে মাজাহ : ১৭৪৬, নাসাযি : ৩৩৩০-৩৩৩১, ইবনে কুযাইমা : ২০৬৪, ইবনে হিব্বান : ৩৪২৯
· মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৯৭০৫ তাবরানি ৫/২৫৬
· মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৭৯০৮
· আরেজাতুল আহওয়াজি : ৪/২১
· ফয়জুল কাদির : ৬/১৮৭
◘◘◘◘ লাইক ও শেয়ারের মধ্যে দিয়ে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিন। ◘◘◘◘
ইফতারে রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তেন

ইফতারে রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তেন


ইফতারকালে আহার-ভোজনসহ নানা আয়োজনে পরিবারের সকল সদস্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইফতারপূর্ব এই ব্যস্ততার ফলে তারা দোয়া কবুলের মহত্তম সময় থেকে বঞ্চিত হন। এছাড়াও তারা ভুলে যান রোজা শেষে আল্লাহর দরবারে নতজানু হয়ে প্রার্থনা জানাতে।
ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كان رسول الله صلي الله عليه و سلم إذا أفطر قال: ذَهَبَ الظَمَأُ، وَابْتَلَّتِ العُرُوْقُ، وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন (ইফতার সেরে) বলতেন— ‘পিপাসা নিবারিত হয়েছে, নিষিক্ত হয়েছে নালিগুলো আর আল্লাহ চাহে তো পুরস্কারও নির্ধারিত হয়েছে।’ (আবু দাউদ : ২৩৭৫)
ইফতারের পূর্বে অপেক্ষাকালীন সময়ে রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তেন:
اللّهُمَّ اِنِّيْ اَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِيْ
(আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বি রাহমাতিকাল্লাতি ওয়াসিয়াতকুল্লা শাইয়্যিন আনতাগফিরালি।)
একজন রোজা দারের যে সকল  গুণাবলি থাকতে হবে।

একজন রোজা দারের যে সকল গুণাবলি থাকতে হবে।


সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মোবারকের রহমতের দশকের আজ শেষ দিন। আগামীকাল থেকে শুরু হবে মাগফিরাত বা ক্ষমার দশক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবসময় বান্দার প্রতি করুণাসিক্ত। কিন্তু রহমতের দশ দিনে আল্লাহ তার রোজাদার বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। আর সব সময় তিনি বান্দার গুনাহ মাফ করলেও মাগফিরাতের দশকে তার ক্ষমা অবারিতভাবে দুনিয়াবাসীর প্রতি বর্ষিত হয়।

হাদিসে এসেছে, আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালা যত বিধি-বিধান আমাদের দান করেছেন, তা সবই আমাদের সার্বিক কল্যাণের জন্য। যদিও অনেক সময় আমাদের অতি সামান্য জ্ঞানের দ্বারা তা সম্যক উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই। যেমন মাহে রমজানে সিয়াম পালন করা ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ নির্দেশ প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)

কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, শুধু কাফির নয়, অসংখ্য মুসলমানের হৃদয়েও রয়েছে এ সিয়ামের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয়। সে কারণেই দেখা যায়, অসংখ্য মুসলমান কোনো শরিয়তি ওজর ছাড়াই দ্বিধাহীনচিত্তে সিয়াম ত্যাগ করছে। মুষ্টিমেয় যারা এ সিয়াম বা রোজা পালন করেন, তাদের অনেকেই আবারো জানেন না, কেন এ সিয়াম পালন করছি, কী মহতী লক্ষ্য উদ্দেশ্যে আল্লাহতায়ালা আমাদের ওপর এ সিয়ামকে ফরজ করেছেন। সে কারণেই দেখা যায়, অনেক রোজাদার জীবনে শুধু এক-দুবার কী তিনবার নয়, অসংখ্যবার এ মহিমান্বিত সিয়াম পালনের সৌভাগ্য তার হয়েছে। কিন্তু সামান্যও পরিলক্ষিত হয়নি তার জীবনে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আর খুঁজে পাওয়া যায়নি সিয়ামের কোনো নিদর্শন। সিয়াম সাধনার আগেও তার জীবনাচরণ যেমন ছিল, দীর্ঘদিন সিয়াম সাধনার পরও ঠিক তেমনি রয়ে গেছে।

ইরশাদ হচ্ছে ‘হে ইমানদাররা! তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করে দেয়া হলো_ যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকিন বা প্রকৃত খোদাভীতির গুণাবলী অর্জনে সক্ষম হও।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩) এ আয়াতের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে মুত্তাকিন হওয়ার জন্যই আল্লাহ পাক সিয়াম সাধনাকে আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করেছেন।

মুমিন জীবনে মুত্তাকিন হওয়ার প্রয়োজনিয়তা কতটুকু? এ প্রশ্নের জবাব অসংখ্য আয়াত ও হাদিস সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। কোরআনের একাধিক আয়াতে আছে ‘মুত্তাকিন হওয়া ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ অসম্ভব। কেননা জান্নাত তৈরি করা হয়েছে মুত্তাকিনদের জন্য।’ যেমন আল্লাহর ঘোষণা ‘তোমরা তীব্রগতিতে অগ্রসর হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের মতো, যা নির্মিত হয়েছে মুত্তাকিনদের জন্য।’ (আল-ইমরান : ১৩৩)

সুতরাং আমি যদি সত্যিই জান্নাতপ্রাপ্তির প্রকৃত পথযাত্রী হতে চাই, তবে অবশ্যই আমাকে মুত্তাকিন হতে হবে। আর জান্নাতপ্রাপ্তির জন্য মুত্তাকিন হওয়ার শর্ত এ কারণে যে মুত্তাকিন হওয়া ছাড়া একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। এ গুণ অর্জনের মাধ্যমেই একজন মানুষ তার যাবতীয় লোভ-লালসা ও চাওয়া-পাওয়া এবং প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সব ধরনের অন্যায় বর্জনের প্রয়োজনিয়তা উপলব্ধি করতে পারে। কোনো প্রলোভনেই সে প্রলুব্ধ হয় না। কেননা তার অন্তঃকরণে এমনই এক মহাপরাক্রমশালীর ভয় সদা বিরাজমান থাকে। একজন মুত্তাকিনের মনে সব সময় ভয় জাগ্রত থাকে, আমি যে কোনো অন্যায় কাজে পৃথিবীর সব শক্তিকে আড়াল করে লিপ্ত হতে পারি। কেউ আমাকে হয়তো দেখবে না। অথবা আমার এত শক্তি রয়েছে যে কেউ দেখলেও আমাকে কিছু করতে পারবে না। কিন্তু আমি কোনো অবস্থাতেই মহামহীয়ান আল্লাহর কুদরতি চোখকে আড়াল করতে পারবো না, যত গোপনেই হোক না কেন। আর তিনিই হচ্ছেন সব শক্তির আঁধার। দুনিয়াতেও যখন ইচ্ছা যে কোনো শাস্তি প্রদানে তিনি সক্ষম। তাছাড়া এ নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে যখন আমি স্থায়ী আখেরাতে পাড়ি জমাব, তখন এ দুনিয়ার যাবতীয় কর্মকাণ্ডে হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তার কাছে আমাকে দিতেই হবে।’

একজন মুত্তাকিনের এ চিরন্তন বাস্তবতার অনুভূতি তখন তার জীবনের যাবতীয় অন্যায় কর্মকাণ্ডের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। আর এটাই হচ্ছে মুত্তাকিনের বৈশিষ্ট্য। আর একজন মুসলমানের মুত্তাকিন হওয়ার বাস্তব প্রশিক্ষণ কর্মশালা হচ্ছে সিয়াম পালন। কেননা একজন রোজাদার মহান আল্লাহর নির্দেশনা মতে সুবহে সাদিকের আগেই স্ত্রী সম্ভোগ ও যাবতীয় পানাহার বন্ধ করে অপেক্ষায় থাকে কখন সূর্যাস্ত যাবে, তখনই পানাহার করব। এর আগে তার প্রবৃত্তি যতই প্রলুব্ধ হোক, পিপাসা তাকে যতই কাতর করুক, ক্ষুধার যন্ত্রণা যতই অনুভব করুক সবই নীরবে সহ্য করে অপেক্ষায় থাকেন ইফতারের। একজন মুত্তাকিনের তাকওয়ার অনুভূতিই তাকে বিরত রাখে শত কষ্টের মধ্যেও পানাহার পরিত্যাগে। পবিত্র সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আরো অনেক উত্তম গুণাবলী অর্জিত হয়। যেমন আত্মীক পবিত্রতা, চিন্তার বিশুদ্ধতা, নৈতিক পরিচ্ছন্নতা, চারিত্রিক উন্নয়ন, রুহানি তৃপ্তি, ধৈর্য, মিতব্যয়ী, আল্লাহপ্রেমে নতুন উদ্যম, ভোগের বিপরীতে ত্যাগের অনুপ্রেরণা।

মানুষ সৃষ
রোজাদারের দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না

রোজাদারের দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না


হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- তিন ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না:
১. রোজাদারের দুআ ইফতার করা পর্যন্ত
২. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর দুআ এবং
৩. মাজলুমের দুআ।
আল্লাহ তাআলা তাদের দুআ মেঘমালার ওপর উঠিয় নেন এবং এর জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। তাই আল্লাহ তাআলা বলেন- আমার ইজ্জতের কসম! বিলম্বে হলেও আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো। (মুসনাদে আহমাদ হাদিস: ৯৭৪৩, জামে তিরমিযি হাদিস ৩৪২৮, ইবনে মাজাহ হাদিস: ১৭৫২)
‘রোজাদারের জন্য ইফতারের সময় একটি কবুলযোগ্য দুআর সুযোগ রয়েছে। এ দুআটি কখন করতে হবে- ইফতারের আগে নাকি ইফতারের মাঝে নাকি ইফতারের পরে? এ সময়ে পড়া যায় এমন কোনো দুআ যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়ে থাকে সেটা যদি উল্লেখ করতেন।’
এ প্রশ্নটি শাইখ উছাইমীন (রহ.) এর কাছে উত্থাপন করা হলে তিনি বলেন- ইফতারের পূর্বে সূর্যাস্তের সময় এ দুআটি করা যেতে পারে। কারণ এ সময় মানুষের অন্তর বিগলিত হওয়ার সাথে মানুষ নতো হয়; উপরন্তু সে তো রোজাদার। এ অবস্থাগুলো দুআ কবুলের উপকরণ। আর ইফতার করার পরে তো আত্মা প্রশান্ত হয়, মন খুশি হয়; তাই এ সময়ে গাফলতি পেয়ে বসা স্বাভাবিক। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ইফতারের পরে উচ্চারণ করার জন্য একটি দুআ বর্ণিত হয়েছে যদি সে হাদিসটি সহিহ সাব্যস্ত হয়। সে দুআটি হচ্ছে-
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ
অর্থ- তৃষ্ণা দূর হয়েছে; শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং প্রতিদান সাব্যস্ত হয়েছে; ইনশাআল্লাহ। [সুনানে আবু দাউদ, আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থ (২০৬৬) ‘হাসান’ বলেছেন] এ দুআটি অবশ্যই ইফতারের পরে পাঠযোগ্য।
অনুরূপভাবে কোনো কোনো সাহাবি থেকে বর্ণিত আছে যে,
اللهم لك صمت وعلى رزقك أفطرت
অর্থ- হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার রিযিক দিয়ে ইফতার করছি।
অতএব, আপনি যে দুআকে উপযুক্ত মনে করেন সেটা পাঠ করতে পারেন।

এবার সর্বনিম্ন ফিতরা ৬০ টাকা

এবার সর্বনিম্ন ফিতরা ৬০ টাকা




১৪৩৬ হিজরি সনের সাদকাতুল ফিতর’র হার সর্বনিম্ন ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ১৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বধুবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে ফিতরা নির্ধারণী সভায় এর হার নির্ধারণ করা হয়। সভা শুরু হয় সকাল ১০টায়।
বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেয়া হয়। ফিতরা নির্ধারণী কমিটির সদস্য ও বিশেষজ্ঞরা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, ইসলামি শরিয়াহ মতে গম/আটা, খেজুর, কিসমিস, পনির ও যব ইত্যাদি পণ্যগুলোর যে কোনো একটি দিয়ে ফিতরা প্রদান করা যায়। গম বা আটা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে এক কেজি ৬৫০ গ্রাম অথবা এর বর্তমান বাজার মূল্য ৬০ টাকা আদায় করতে হবে।
খেজুর দিয়ে আদায় করলে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম কিংবা এর বাজার মূল্য ১ হাজার ৬৫০ টাকা, কিসমিস দিয়ে আদায় করলে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম কিংবা এর বাজার মূল্য ১ হাজার ২০০ টাকা। পনির দিয়ে আদায় করলে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম কিংবা এর বাজার মূল্য ১ হাজার ৬০০ টাকা এবং যব দিয়ে আদায় করলে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম অথবা বাজার মূল্য ২০০ টাকা ফিতরা আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৪৩৫ হিজরি সনের ফিতরা ছিল মাথাপিছু সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। এর আগের বছর সর্বনিম্ন ফিতরা ধরা হয়েছিল জনপ্রতি ৫৫ টাকা, তার আগের বছর ৫৩ টাকা।
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। নাবালক ছেলে-মেয়ের পক্ষ থেকে বাবাকে এ ফিতরা দিতে হয়। আর তা দিতে হয় ঈদ-উল ফিতরের নামাজের আগেই।
এদিকে ইসালামিক ফাউন্ডেশনের দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক ও জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা এ এম এম সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সরকারি মাদরাসা-ই আলিয়ার অধ্যক্ষ প্রফেসর সিরাজুদ্দীন আহমেদ, গোপালগঞ্জের গহরডাঙ্গা মাদরাসার মোহতামিম মুফতি মাওলানা রুহুল আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাইয়েত আবদুল্লাহ আল মারুপ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের প্রেস ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, প্রেস-ইমাম মুফতী মহিবুল্লাহ বাটি নদভী, প্রেস ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানসানুল হক, জামিয়া আরাবিয়া ফরিদাবাদের ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা মতিউর রহমান, জামিয়া আরাবিয়া ফরিদাবাদের সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি মো. নূরুল আমিন প্রমুখ।
রমজানে যেভাবে আল-কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন।

রমজানে যেভাবে আল-কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন।




 রমজান হলো পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস। আর কোরআন নাজিলের কারণে রমজান মাসের এতো মর্যাদা। এ মাসে অবশ্যই অন্য সব সময়ের চেয়ে বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিৎ।
হাদিসে এসেছে-
عن عبد الله بن عمرو أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: (الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة، يقول الصيام أي رب: منعته الطعاموالشهوات بالنهار، فشفعني فيه. ويقول القرآن : منعته النوم بالليل، فشفعني فيه. قال فيشفعان. رواه أحمد.
আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- সিয়াম ও কোরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে প্রতিপালক! আমি দিনের বেলা তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। আর কোরআন বলবে হে প্রতিপালক! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। তিনি (রাসূলুল্লাহ স.) বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। -বর্ণনায়: আহমদ
আর তাই যারা এই পবিত্র মাস রামাজানে আল-কোরআন খতম ও তিলাওয়াত করতে চান তারা প্রতিদিন কিভাবে এবং কতটুকু করে পড়লে তা শেষ করতে পারবেন, সেই বিষয়ে একটি সুন্দর কৌশল দেয়া হলো।
কিভাবে করবেন:
প্রতিদিন ৪ পৃষ্ঠা করে প্রত্যেক নামাজের পর পড়ুন। অবশ্যই চেষ্টা করবেন বুঝে পড়ার।
৫ ওয়াক্ত নামাজ x ৪ পৃষ্ঠা = ২০ পৃষ্ঠা।
২০ পৃষ্ঠা = ১ পারা।
১ পারা x ৩০ দিন = পুরা কোরআন শরিফ খতম।
অনেকেই আবার প্রতিদিন এক পারা করে তিলাওয়াত করে রমাজান মাসে আল-কোরআন খতম ও তিলাওয়াত করে থাকেন। তাই নিম্নে কোরআনের প্রতিটি পারা ভাগ করে দেয়া হয়েছে-
পারা-১: সূরা ফাতিহা ১ থেকে সূরা বাকারাহ ১৪১।
পারা-২: সূরা বাকারাহ ১৪২ থেকে সূরা বাকারাহ ২৫২।
পারা-৩: সূরা বাকারাহ ২৫৩ থেকে সূরা আল ইমরান ৯২।
পারা-৪: সূরা আল ইমরান ৯৩ থেখে সূরা আন নিসা ২৩।
পারা-৫: সূরা আন নিসা ২৪ থেকে সূরা আন নিসা ১৪৭।
পারা-৬: সূরা আন নিসা ১৪৮ থেকে সূরা আল মায়েদা ৮১।
পারা-৭: সূরা আল মায়েদা ৮২ থেকে সূরা আল আনাম ১১০।
পারা-৮: সূরা আল আনাম ১১১ থেকে সূরা আল আরাফ ৮৭।
পারা-৯: সূরা আল আরাফ ৮৮ থেকে সূরা আল আনফাল ৪০।
পারা-১০: সূরা আল আনফাল ৪১ থেকে সূরা আত তাওবা ৯২।
পারা-১১: সূরা আত তাওবা ৯৩ থেকে সূরা আল হুদ ৫।
পারা-১২: সূরা আল হুদ ৬ থেকে সূরা ইউসুফ ৫২।
পারা-১৩: সূরা ইউসুফ ৫৩ থেকে সূরা ইব্রাহীম ৫২।
পারা-১৪: সূরা আল হিজর ১ থেকে সূরা আন নাহল ১২৮।
পারা-১৫: সূরা বানি ইসরাইল ১ থেকে সুরা আল কাহফ ৭৪।
পারা-১৬: সুরা আল কাহফ ৭৫ থেকে সূরা তাহা ১৩৫।
পারা-১৭: সূরা আল আনবিয়া ১ থেকে সূরা আল হাজ্জ ৭৮।
পারা-১৮: সুরা আল মুমিনুন ১ থেকে সূরা আলা ফুরকান ২০।
পারা-১৯: সূরা ফুরকান ২১ থেকে সূরা আন নামল ৫৫।
পারা-২০: সূরা আন নামল ৫৬ থেকে সূরা আল আঙ্কাবুত ৪৫।
পারা-২১: সূরা আল আঙ্কাবুত ৪৬ থেকে সূরা আল আযহাব ৩০।
পারা-২২: সূরা আল আযহাব ৩১ থেকে সূরা ইয়াসীন ২৭।
পারা-২৩: সূরা ইয়াসীন ২৮ থেকে সূরা আয যুমার ৩১।
পারা-২৪: সূরা আয যুমার ৩২ থেকে সূরা ফুসিলাত ৪৬।
পারা-২৫: সূরা ফুসিলাত ৪৭ থেকে সূরা আল জাথিয়া ৩৭।
পারা-২৬: সূরা আল আহকাফ ১ থেকে সূরা আয যারিয়াত ৩০।
পারা-২৭: সূরা আয যারিয়াত ৩০ থেকে সূরা আল হাদিদ ২৯।
পারা-২৮: সূরা আল মুজাদিলা ১ থেকে সূরা আত তাহ্রিম ১২।
পারা-২৯: সূরা আল মুল্ক ১ থেকে সূরা আল মুরসালাত ৫০।
পারা-৩০: সূরা আন নাবা ১ থেকে সূরা আন নাস ৬।
তারাবি নামাযের নিয়ত, দোওয়া ও মোনাজাত।

তারাবি নামাযের নিয়ত, দোওয়া ও মোনাজাত।


তারাবি নামাজ
এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবি নামাজ’ বলা হয়। আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা।
রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবি নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ও কোরআন শরিফ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবি নামাজের জন্য রাতের কোনো বিশেষ সময়কে নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তারাবি নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে।
তারাবি নামাজের নিয়ত
نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر.
(নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা, রকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’আলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।)
অর্থ: আমি ক্বিবলামুখি হয়ে দু’রাকাআত তারাবিহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাযের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।
তারাবি নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া
سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.
উচ্চারণ: সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানাযিল ইযযাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারূত। সুব্হানাল মালিকিল হায়্যিল্লাযি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।

তারাবীহ নামাযের রাকআত সংখ্যা কত?


তারাবীহ নামাযের রাকআত সংখ্যা

ভূমিকা: আল্লাহ তায়ালা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্‌র নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ্‌ ও তার রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর- যদি তোমরা আল্লাহ্‌ ও কেয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। (সূরা নিসাঃ ৫৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা সে সময় আমার সুন্নাত এবং খুলাফায়ে রাশেদার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা। (দেখুন: আবু দাউদ, অধ্যায়: কিতাবুস্‌ সুন্নাহ, তিরমিযী, অধ্যায়: কিতাবুল ইল্‌ম। ইমাম তিরমিযী বলেন: হাদীছটি হাসান সহীহ। মুসনাদে আহমাদ, (৪/১২৬), মাজমুওয়ায়ে ফাতাওয়া (১০/৩৫৪।)

কুরআনের উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছের অনুরূপ অর্থে আরও অনেক আয়াত ও সহীহ হাদীছ রয়েছে, যার তাৎপর্য হচ্ছে মুসলমানদের উপর আবশ্যক হচ্ছে তারা ফরজ, সুন্নাত ও নফলসহ সকল প্রকার এবাদত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশিত তরীকা অনুযায়ী সম্পাদন করবে এবং তাতে সকল প্রকার বিদআত থেকে বিরত থাকবে। রামাযান মাসে তারাবীর নামায একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত এবাদত। তাই আমাদেরকে এক্ষেত্রেও সুন্নাতের অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ করে তারাবীর নামাযের রাকআতের ক্ষেত্রে। আসুন আমরা সহীহ হাদীছের আলোকে তারাবীর নামাযের সঠিক রাকআত সংখ্যা জেনে নেই।

তারাবীহ নামাযের রাকআত সংখ্যা:

রামাযান মাসে কিয়ামুল লাইল তথা তারাবীহ নামাযের সঠিক রাকআত সংখ্যা হচ্ছে বিতরসহ ১১। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা রাতের নামায বা তারাবীর নামায এগার রাকআতের বেশী পড়তেন না। উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রা:) থেকে ১১ রাকআত পড়ার কথাই বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে। আর রাতের নামায যেহেতু রাসূল ঘরেই পড়তেন, তাই আয়েশা (রা:) এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জানতেন। তাঁকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন:

ما كان يزيد في رمضان ولا في غيره عن إحدى عشرة ركعة، يصلي أربعاً فلا تسأل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلي أربعاً فلا تسأل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلي ثلاثاً

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযান কিংবা অন্য মাসে রাতের নামায এগার রাকআতের বেশী পড়তেন না। তিনি প্রথমে (দু রাকায়াত দু রাকায়াত করে) চার রাকআত পড়তেন। তুমি তার দীর্ঘ কিয়াম ও সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। তিনি পুনরায় চার রাকআত (দুই রাকআত দুই রাকআত করে) পড়তেন। তুমি তার দীর্ঘ কিয়াম ও সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি ৩ রাকআত বিতর পড়তেন। (বুখারী ও মুসলিম)

সায়েব বিন ইয়াজিদ (রা:) বলেন: উমার বিন খাত্তাব (রা:) উবাই বিন কা’ব এবং তামীম দারীকে এগার রাকআত তারাবীর নামায পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। (দেখুন: মুআত্তা ইমাম মালিক)

এটিই আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীছের দাবী। এটিই ছিল অধিকাংশ সাহাবী,তাবেঈ এবং ইমামদের আমল। তারা এগার রাকআতের বেশী তারাবীর নামায পড়তেন না।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ:) তারাবীর নামাযের রাকআতের ব্যাপারে সকল মত এক স্থানে একত্রিত করেছেন।

১) তিন রাকতআত বিতরসহ ১১ রাকআত।

২) তিন রাকআত বিতরসহ ১৩ রাকআত

৩) তিন রাকআত বিতরসহ ২১ রাকআত

৪) তিন রাকআত বিতরসহ ২৩ রাকআত

৫) তিন রাকআত বিতরসহ ৩৯ রাকআত

৬) তিন রাকআত বিতরসহ ৪১ রাকআত

৭) তিন রাকআত বিতরসহ ৪৯ রাকআত

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী উপরের সবগুলো মত উল্লেখ করার পর বলেন: তবে তারাবীর নামাযের রাকআতের ব্যাপারে আয়েশা (রা:)এর হাদীছ ব্যতীত অন্য কোন হাদীছ সহীহ সনদে প্রমাণিত হয় নি। আর তা হচ্ছে তাঁর কথা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযান কিংবা অন্য মাসে রাতের নামায এগার রাকআতের বেশী পড়তেন না।

বাকী মতগুলোর খণ্ডন:

ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেন: আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ২০ রাকআত তারাবী পড়র হাদীছের সনদ দুর্বল এবং বুখারী ও মুসলিম শরীফে আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীছের রিরোধী। (দেখুন ফতহুল বারী ৬/২৯৫, হাদীছ নং- ১৮৭৪, মাকতাবা শামেলা)

আর বাকী বর্ণনাগুলো সাহাবী, তাবেয়ী এবং তাদের পরবর্তী যুগের আলেমগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে। তারা যদি কেরাআত দীর্ঘ করতেন তাহলে রাকআত সংখ্যা কম করতেন। আর সংক্ষিপ্ত কেরাআত পাঠ করলে রাকআত সংখ্যা বাড়াতেন।

সারসংক্ষেপ:

 সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও উত্তম হচ্ছে, কিরাআত দীর্ঘ করে বিতরসহ ১১ রাকআত তারাবীর নামায পড়া। তবে কতিপয় আলেম বলেছেনঃ তারাবীর নামায ১১ রাকআতের চেয়ে বেশী পড়ত
যোগ্য আলেম কে? কার কাছ থেকে ফতওয়া নিতে হবে? ফুটপাথের ফতওয়া নেয়া যাবে কিনা?

যোগ্য আলেম কে? কার কাছ থেকে ফতওয়া নিতে হবে? ফুটপাথের ফতওয়া নেয়া যাবে কিনা?

যারা দ্বীন শেখার প্রচন্ড তাগিদ ও উত্সাহ নিয়ে বিভিন্ন ইমাম, খতিব বা দেশীয় ভাষায় হুজুরদের পেছনে পেছনে ঘুরেছেন তারা হয়ত বুঝে থাকবেন, আমাদের দেশে দ্বীন শেখার সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে ভাল আলেম নির্বাচন।

কারন এই আলেমদের কথায় কেউ মাজারে সিজদা দিচ্ছে, কেউ বায়তুল মোকাররমে জুতা ছুড়াছুড়ি করছে, কেউ বা পীর সাহেবের নামে মুরগী জবাই করছে, কেউ চিল্লা দিয়ে জান্নাতের সার্টিফিকেট নিচ্ছে, কেউ ক্লিন সেভ করা যায়েজ মনে করছে, কেউ বা মিলাদ পড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায় করছে, কেউ বা জিহাদের ডাক না দেওয়া সকল আলেম কে জালেম/কাফের/গোমরাহ মনে করছে, কেউ বা ইসলামের মধ্যে হরতাল-গনতন্ত্র ইত্যাদী আবিস্কার করছে। এ অবস্হায় কোনদিকে যাব বা কার কথা মানব এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বড় কঠিন ব্যাপার। বিশেষ করে এ ধরনের প্রশ্ন তো থেকেই যায় যে, ‘আমার পছন্দের আলেম অন্যের পছন্দ নাও হতে পারে’। আর সমস্যাটা চুড়ায় পৌছে যখন মানুষ এ অবস্হান নেয় – “আমার হুজুর কি কম জানেন? উনি ভুল করলে আমিও করব“। অনেক হুজুর অবশ্য আর একটু এগিয়ে যেয়ে জান্নাতের ঠিকা নিয়ে নেন এবং বলে বসেন “ আমি জান্নাতে একা যাব না“।

এ সমস্যার একটা বড় কারন হলো ফুটপাথের ফতওয়া। আমরা ফুটপাথের খোলা খাবার বন্ধ করেছি, হাতুরে ডাক্তারের চিকিত্সা নেয়া বন্ধ করেছি, কিন্তু ফুটপাথের ফতওয়া নেওয়া বন্ধ করিনি। অনেক হ্মেত্রে যে হুজুর আমার মতের সপহ্মে রায় দিবেন তিনিই বড় হুজুর হয়ে যান। দ্বীনের সঠিক ঞ্জান না থাকায় তাদের কারও কাছে হুজুর বাছাই করার criteria হল বড় দাড়ি, কারও কাছে অন্ধ অনুসারির সংখ্যা, কারও কাছে কত বড় বা কয়তলা মসজিদের ইমাম/খতিব, অথবা কারও কাছে কে কত সুন্দর সুর করে ওয়াজ করতে পারল, অথবা কার নামে কত বেশি কেরামতির কল্পকাহিনী প্রচলিত আছে ইত্যাদী ইত্যাদী।

কিন্তু আসলে কি তাই? ইসলামে কি যেকোন হুজুর/ইমাম সাহেব/খতিব সাহেব/দায়ী/ অথবা ক্বারী সাহেবই ফতওয়া দিতে পারেন? আসুন মুজতাহীদ আলেমদের কাছ থেকে জেনে নেই ‘কোন আলেমের কাছ থেকে ফতওয়া নেয়া যাবে’ :

====================================
সকল প্রশংসা আল্লাহর.

‘আলেম (পণ্ডিত), ফকিহ এবং মুজতাহীদ শব্দগুলি মোটামুটি একই অর্থ বহন করে। এগুলো বলতে আসলে তাদেরকেই বুঝায় যারা শরীয়ার সিদ্ধান্ত বের করার জন্য প্রচেষ্টা করেন এবং যাদের দলিল থেকে শরীয়ার সিদ্ধান্ত আহরণ করার সহ্মমতা আছে।

এর মানে এই যে, তাকে ইজতিহাদ করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এই অপরিহার্য বিষয়গুলি পূরণ ছাড়া কাউকেই (‘আলেম, মুজতাহীদ বা ফকিহ) হিসাবে আখ্যায়িত করা উচিত হবে না।

পণ্ডিতদের ইজতিহাদের এই অপরিহার্য বিষয়গুলির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যাতে সবার জন্য দরজা খুলে না যায় এবং যে কেউ বৃদ্ধ অথবা অল্পবয়সী- আল্লাহর দেয়া বিধান নিয়ে এমন মন্তব্য করে না বসেন যার সম্পর্কে তার সম্মোক ঞ্জান নেই।

দুইটি রিপোর্ট থেকে যা আমরা বিষয়গুলি বুঝানোর চেষ্টা করব:

প্রথম রিপোর্ট :

প্রথম রিপোর্টটি আল শাওকানী (রহ)  থেকে বর্ণিত এবং তিনি যা বলেছেন তা পাঁচটা ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। মুজতাহিদের যোগ্যতার এই পাঁচ অপরিহার্য বিষয়গুলি হল:

(ক) কুরআন এবং সুন্নাহ সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান থাকতে হবে।

এটা বলতে আসলে এটা বুঝায় না যে, তার সকল সুন্নাহ কণ্ঠস্থ থাকতে হবে; বরং এই যোগ্যতা থাকা যথেষ্ট যে, তিনি সুন্নাহগুলিকে তাদের বইগুলিতে খুঁজে পেতে সহ্মম এবং সুন্নাহগুলির ভাষ্য এবং বিষয়বস্তুর সঙ্গে সুপরিচিত, বিশেষ করে প্রধানতম হাদীসের সংকলন সমুহ (সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনান আবু দাউদ, সুনান আল তিরমিজি, সুনান আল নাসায়ী এবং সুনান ইবনে মাজাহ) ইত্যাদি।
এছাড়াও তার, হাদীসের সহীহ যয়ীফের ঞ্জান থাকতে হবে।

(খ) ইজমার (ঐক্যমত্য) বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।

(গ) আরবি ভাষায় ভাল দখল থাকতে হবে।
এর মানে এটা নয় যে, আরবী মুখস্হ থাকলেই হবে। বরং তাকে আরবী ভাষা এবং তার গঠন বুঝতে পারার যোগ্যতা থাকতে হবে।

(ঘ) উসুলে ফীক (ইসলামী আইনশাস্ত্র এর মূলনীতি) ও কিয়াসের এর ঞ্জান থাকতে হবে, কারণ এগুলো হল শরীয়ী সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য ভিত্তি হবে।

(ঙ) মানসুখ সম্পর্কে ঞ্জান থাকতে হবে এবং কি কি বিষয় মানসুখ হয়েছে তা জানতে হবে।

দেখুন: Irshaad আল Fuhool, 2/297-303

২য় রিপোর্ট

দ্বিতীয় রিপোর্টটি শায়খ মুহাম্মদ ইবনে উসায়মিন (রহ: ) থেকে বর্ণিত হয়েছে:

তিনি মুজতাহীদের যোগ্যতা প্রসংগে আল শাওকানী (রহ: ) উল্লিখিত বিষয় থেকে বিশেষ কোন ভিন্ন মত পোষন না করে কয়েকটি বিষয় আরো স্পষ্ট করেছেন।

ইজতিহাদ করার জন্য কতগুলি শর্তের পুরন আবশ্যক, তা হল :

(ক) তার (মুজতাহীদ) শরীয়ার দলিল সম্পর্কে সম্মোক ঞ্জান থাকতে হবে, যা তার ইজতিহাদের জন্য আবশ্যক; যেমন কুরআনের আয়াত এবং হাদীস সমুহ, যেখানে বিষয়টি সম্পর্কে বলা হয়েছে।

(খ) হাদীসের সহীহ যয়ীফের পার্থক্য সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো (যেমন ইসনাদ এবং এ সম্পর্কীত বিষয় সমুহ) সম্পর্কে সম্মোক ঞ্জান থাকতে হবে।

(গ) মানসুখ (আল naasikh wa’l-mansookh) এবং ইজমা (ঐক্যমত্য) সম্পর্কে সম্মোক ঞ্জান থাকতে হবে। যাতে তিনি এমন কিছু বিষয়ে রায় প্রদান না করেন যা মানসুখ হয়ে গেছে অথবা যার বিপরীতে আলেমদের ইজমা রয়েছে।

(ঘ) ফতওয়াকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়াদী সম্পর্কে ঞ্জান থাকতে হবে (যেমন reports of specific meanings, reports that set limits, and so on), যাতে তিনি যেন এমন সিদ্ধান্ত প্রদান না করেন যা তার বিপরীত/ভিন্ন।

(ঙ) তার ঞ্জান থাকতে হবে -আরবি ভাষা এবং উসুলে ফিক এর উপর, বিশেষ করে যা মৌখিক/বর্ননাযুক্ত প্রমানাদির সাথে সংশ্লিষ্ট (যেমন কোনটা সাধারন হুকুম আর কোনটা আপেহ্মিক, কোনটা মৌলিক/শর্তহীন আর কোনটা শর্তযুক্ত, কোনটা সংহ্মিপ্ত বর্ননা এবং কোনটা বিস্তারিত এবং এ সম্পর্কীত অন্যান্ন বিষয়াদি); যাতে তার সিদ্ধান্ত সে অনুযায়ী হয়, যা দলিলের বর্ননায় বুঝানো হয়েছে।

(চ) দলিল থেকে সিদ্ধান্ত নিষ্পন্ন করার ক্ষমতা থাকতে হবে।

al-Usool fi ‘Ilm al-Usool, p. 85, 86; Sharh (commentary thereon), p. 584-590.

এটা নির্দিষ্ট করা উচিত যে বর্তমানে সুন্নাহর উল্লেখ করা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে, যার অন্যতম কারণ হল, সুন্নাহ ওপর লিখিত বই সমুহ।

যার মধ্যে উপরে বর্নিত যোগ্যতাগুলি বিদ্যমান তিনিই scholar বা ‘আলেম, যারা দলিল থেকে শরীয়ার সিদ্ধান্ত আহরণ এবং প্রদানের হ্মমতা রাখেন। এবং যাদের মধ্যে উপরে বর্নিত যোগ্যতাগুলি বিদ্যমান থাকবে না তাদের কে scholar বা ‘আলেম বা মুজতাহীদ বা ফকীহ বলা উচিত হবে না।

আরও বলে রাখা দরকার এই শব্দগুলি (‘আলেম, মুজতাহীদ এবং ফকিহ) প্রায়োগিক বিষয়ের পরিভাষাগত শব্দ, যেগুলো স্কলারদের মাধ্যমে এভাবেই নিরধারিত হয়ে আছে। সুতরাং এই শব্দগুলি যত্রতত্র ভাবে তাদের হ্মেত্রে ব্যাবহার করা উচিত নয়, যারা শুধুমাত্র অন্যের ফতওয়া পৌছে থাকে, অথবা স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যলয়ে ইসলামের কোন বিশেষ বিষয় পড়িয়ে থাকেন, অথবা যিনি শুধুমাত্র একজন দায়ী (দাওয়াতের কাজ করে থাকেন), অথবা যিনি শুধুমাত্র একজন ভাল ইসলমী বক্তা, অথবা যিনি শুধুমাত্র একজন ভাল ক্বারী। একজন মানুষ স্কলার না হয়েও একজন বড় দায়ী হতে পারেন (যার ডাকে হাজার হাহার মুসলিম দ্বীনে আসতে পারে), একজন বড় ইসলামী বক্তা হতে পারেন, বা একজন বড় ইসলামী নেতা হতে পারেন।

আল্লাহ আমাদের আরও জানা ও বোঝার তাওফীক দান করুন। আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

—সুত্রঃ  http://islamqa.com/en/ref/145071

এবং অত্যান্ত দুঃখের বিষয় এই যে আমাদের দেশে এই শ্রেনীর আলেম খুব কমই আছেন।

====================================================

কাজেই এটা আমাদের খুব ভাল করে বুঝতে হবে

১. শুধু বড় দাড়ি আর টুপি থাকলেই বড় আলেম হওয়া যায় না। অথবা অনেকবার চিল্লা দিলেই যোগ্য আলেম হওয়া যায় না।

২. শুধু মাদ্রাসা থেকে পাশ করে আসলেই তিনি ফতওয়া দিতে পারেন না।

৩. বড় মসজিদের ইমাম/খতিব সাহেব হলেই তিনি বড়/যোগ্য আলেম নাও হতে পারেন

৪. কোন হুজুরের বিশাল অনুসারি গোষ্ঠী থাকলেই তিনি বড় আলেম হয়ে যাবেন না

৫. শুধু দুই বছরের ইফতা কোর্স করে নামের আগে মুফতি লাগালেই যোগ্য আলেম হওয়া যায় না।

৫. আবার কোন সাধারন মানুষের মধ্যেই যদি উপরে বর্ণিত যোগ্যতাগুলি বিদ্যমান থাকে তাহলে তিনি যোগ্য আলেম হতে পারেন।
আসুন জেনে নেই ওয়াইস আল-কারণীর (ওয়াজকরনীর) আসল ঘটনা

আসুন জেনে নেই ওয়াইস আল-কারণীর (ওয়াজকরনীর) আসল ঘটনা


উসাইর ইবনে যাবের (রাঃ) বলেন, যখনই ইয়্যমেন থেকে কোন যুদ্ধের কাফেলা মদীনায় আগমণ করতেন, তখন উমার (রাঃ) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের মাঝে ওয়াইস বিন আমের আল-কারণী নামে কোন লোক আছে কি? কোন এক সময় ওয়াইস বিন আমের আগমণ করেছে জানতে পেরে উমার (রাঃ) তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি ওয়াইস বিন আমের? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি র্কান গোত্রের মুরাদ শাখার লোক? উত্তরে তিনি বললেন হ্যাঁ। তোমার শরীরে কি শ্বেত রোগ ছিল, যা থেকে তুমি সুস্থ হয়েছ, কিন্তু সামান্য স্থানে তার চি‎হ্ন রয়ে গেছে। তিনি বললেন হ্যাঁ। উমার (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মাতা জিবীত আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর উমার (রাঃ) বললেন, আমি রাসূল (সাঃ)কে বলতে শুনেছি, অদূর ভবিষ্যতে তোমাদের কাছে ওয়াইস বিন আমের নামে একজন লোক আগমণ করবে। তার ছিল শ্বেত রোগ। সামান্য স্থান ব্যতীত তাঁর শরীরের চামড়া ভাল হয়ে গেছে। সে তার মায়ের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছে। সে তাঁর মায়ের প্রতি খুবই সদাচরণকারী এবং আনুগত্যশীল। সম্ভবতঃ সে কারণেই সে আমার কাছে আসতে পারছে না। সে যদি আল্লাহর নামে কোন শপথ করে, আল্লাহ তা পূর্ণ করার ব্যবস্থা করে দেন। তুমি যদি তাকে পাও, তার কাছে তোমার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করার আবেদন করিও। সুতরাং তুমি আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। ওয়াইস আল-কারণী উমার (রাঃ)এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করল। অতঃপর উমার (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এখন কোথায় যাবে? সে বলল, কূফার দিকে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছি। উমার (রাঃ) বললেন, কূফার গভর্ণরের কাছে তোমার জন্য কিছু লিখে দিব কি? সে বলল, না কোন কিছু লিখার প্রয়োজন নেই। আমি দারিদ্র হালতে এবং ফকীর-মিসকীনদের সাথে বসবাস করা পছন্দ করি। পরবর্তী বছরে কূফার একজন লোক হজ্জ করতে আসল। উমার (রাঃ) তাকে ওয়াইস আল-কারণী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বললঃ আমি তাকে একটি পুরাতন ঘরের মধ্যে অসহায় অবস্থায় বসবাস করতে দেখে এসেছি। উমার (রাঃ) বললেনঃ আমি রাসূল (সাঃ)কে বলতে শুনেছি, অদূর বভিষ্যতে তোমাদের কাছে ওয়াইস বিন আমের নামে একজন লোক আগমণ করবে। তার শ্বেত রোগ ছিল। সামান্য স্থান ব্যতীত তাঁর শরীরের চামড়া ভাল হয়ে গেছে। সে তাঁর মাতার খেদমতে নিয়োজিত রয়েছে। সে তাঁর মায়ের প্রতি খুবই সদাচরণকারী এবং আনুগত্যশীল। সম্ভবতঃ সে কারণেই সে আমার কাছে আসতে পারছে না। সে যদি আল্লাহর নামে কোন শপথ করে, আল্লাহ তা পূর্ণ করার ব্যবস্থা করে দেন। তুমি যদি তাকে পাও, তার কাছে তোমার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করার আবেদন করিও। সুতরাং তুমিও তার কছে গিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করিও। কূফাবাসী লোকটি দেশে ফিরে গিয়ে ওয়াইস আল-কারণীর সাথে সাক্ষাৎ করে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন। প্রথমে সে এই বলে আবেদন প্রত্যাখ্যান করলো যে, তুমি হজ্জের সফর থেকে কেবল আগমণ করেছ। সুতরাং তুমিই আমার জন্য দু’আ কর। এ কথাটি সে কয়েকবার বলার পর জিজ্ঞাসা করল তুমি কি উমার (রাঃ)এর সাথে দেখা করেছ? কূফাবাসী বললঃ হ্যাঁ। অতঃপর ওয়াইস আল-কারণী তার জন্য দু’আ করল। মানুষের কাছে ওয়াইসের বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে গেলে সে অদৃশ্য হয়ে গেল। হাদীসের বর্ণনাকারী উসাইর ইবনে যাবের বলেন, আমি তাকে একটি চাদর দান করেছিলাম। যখনই মানুষ তাকে এই চাদরটি পরিহিত অবস্থায় দেখত, তারা বলতঃ ওয়াইস এই চাদরটি কোথায় পেল?
তথ্যসূত্রঃ
সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ফাযায়িলুস্ সাহাবা
এই ঘটনা থেকে আমরা যা শিখতে পেলামঃ
১) ওয়াইস আলকারনীরg  ৩২ দাঁত ভাঙ্গার প্রচলিম কিচ্ছা বানোয়াট।
২) আল্লাহর অলীগণ সরল সহজ জীবন যাপন করে থাকেন।
৩) তাঁরা নিজেদের কারামত মানুষের কাছে বলে বেড়ায় না বা মানুষ তা জানুক এটি পছন্দ করেন না।
৪) তাঁর পিতা-মাতার সেবায় যত্মশীল থাকেন।
৫) বিবিধ
ইমাম বুখারী (রহ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

ইমাম বুখারী (রহ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী


ভূমিকা: ইমাম বুখারী। কাল প্রবাহে একটি বিস্ময়ের নাম। স্মৃতির প্রখরতা, জ্ঞানের গভীরতা, চিন্তার বিশালতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, অটুট সততা আর বিশাল পর্বত সম হিম্মতের এক মূর্ত প্রতীক এই মহাপুরুষ। তিনি ইলমে হাদীসের এক বিজয়ী সম্রাট। তার সংকলিত হাদীসের মহামূল্যবান সংকলন সহীহুল বুখারী বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাব মহা গ্রন্থ আল কুরআনের পরেই যার অবস্থান। কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম উম্মাহ তার সাধনার কাছে ঋণী। আসুন, খুব সংক্ষেপে আমরা এই মনিষীকে জানার চেষ্টা করি:

নাম, জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ
তিনি হচ্ছেন সমকালীন মুহাদ্দিছদের ইমাম হাফেয আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরা বিন বারদিযবাহ আলজু’ফী। তাঁকে আমীরুল মুমিনীন ফীল হাদীছও বলা হয়। ১৯৪ হিঃ সালের ১৩ই শাওয়াল জুমআর রাত্রিতে তিনি বুখারায় জন্ম গ্রহণ করেন।
শৈশব কাল ও জ্ঞান অর্জনঃ
শিশুকালেই তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। পিতার মৃত্যুর পর মাতার তত্বাবধানে তিনি প্রতিপালিত হন। দশ বছর বয়সে উপনীত হয়ে তিনি জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্ত করেন। শৈশব কালে মক্তবে লেখাপড়া করার সময়ই আল্লাহ্ তাঁর অন্তরে হাদীছ মুখস্ত ও তা সংরক্ষণ করার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। ১৬ বছর বয়সেই হাদীছের প্রসিদ্ধ কিতাবগুলো পাঠ সমাপ্ত করেন। তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি ছোট থাকতেই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এতে তাঁর মাতা আল্লাহর কাছে খুব ক্রন্দন করলেন এবং স্বীয় সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত দেয়ার জন্য তাঁর কাছে অবিরাম দুআ করে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ এক দিন তাঁর মা স্বপ্নে দেখলেন যে আল্লাহর নবী ইবরাহীম (আঃ) তাঁকে লক্ষ্য করে বলছেনঃ ওহে! তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত চেয়ে আল্লাহর দরবারে তোমার ক্রন্দনের কারণে তিনি তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি প্রকৃত ঘটনা যাচাই করার জন্য স্বীয় সন্তানের কাছে গিয়ে দেখেন সত্যিই তাঁর সন্তান সম্পূর্ণ দৃষ্টি শক্তি ফেরত পেয়েছে।
ইমাম বুখারীর স্মরণ শক্তির প্রখরতাঃ
১৮ বছর বয়সে তিনি হজ্জ পালনের জন্য মক্কায় গমণ করেন। মক্কায় অবস্থান করে তিনি ইলমে হাদীছের চর্চা শুরু করেন। অতঃপর তিনি এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করেন এবং এক হাজারেরও অধিক সংখ্যক মুহাদ্দিছের নিকট তেকে হাদীছ সংগ্রহ করেন। জ্ঞান অর্জনের জন্য সারা রাত জেগে তিনি অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রম করতেন। তাঁর স্মৃতি শক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। বলা হয় যে তিনি সনদসহ ছয় লক্ষ হাদীছের হাফেয ছিলেন। আলেমগণ তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করেছেন, যে কোন কিতাবে একবার দৃষ্টি দিয়েই তিনি তা মুখস্ত করে নিতেন। তাঁর জীবনীতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি যখন বসরার মুহাদ্দিছদের হাদীছের ক্লাশে হাজীর হতেন তখন অন্যান্য ছাত্রগণ খাতা-কলম নিয়ে বসে উস্তাদের নিকট থেকে হাদীছ শুনতেন এবং প্রতিটি হাদীছই লিখে ফেলতেন। কিন্তু ইমাম বুখারী তা করতেন না। কয়েক দিন পর তাঁর সাথীগণ জিজ্ঞেস করলঃ আপনি শুধু আমাদের সাথে বসে থাকেন কেন? হাদীছগুলো না লেখার কারণই বা কি? এভাবে সময় নষ্ট করে লাভ কি? বন্ধুরা যখন পিড়াপিড়ি করতে থাকলো তখন ১৬ দিন পর তিনি বললেনঃ আপনারা আমার নিকট বারবার একই প্রশ্ন করছেন। আপনারা যে সমস্ত হাদীছ লিখেছেন তা আমাকে পড়ে শুনান। বন্ধুরা তা দেখানোর পর তিনি সমস্ত হাদীছ মুখস্ত শুনিয়ে দিলেন এবং আরও অতিরিক্ত পনের হাজার হাদীছ শুনালেন। অতঃপর তাঁর সাথীগণ তাদের কাছে রক্ষিত কিতাবের হাদীছগুলো ইমাম বুখারীর মুখস্ত কৃত হাদীছের সাথে মিলিয়ে ভুল-ভ্রান্তি ঠিক করে নিলেন। অতঃপর তিনি বন্ধুদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ এরপরও কি তোমরা বলবে যে, আমি এখানে অযথা সময় নষ্ট করছি? সে দিন থেকেই হাদীছ শাস্ত্রে তারা ইমাম বুখারীকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করলেন।
ইমাম বুখারী (রঃ) বলেনঃ আমার অন্তরে এক লক্ষ সহীহ হাদীছ ও দুই লক্ষ যঈফ হাদীছ মুখস্ত রয়েছে। সহীহ বুখারীর অন্যতম ভাষ্যকার কুস্তুলানীর বক্তব্য অনুযায়ী তিনি ছয় লক্ষ হাদীছের হাফেয ছিলেন। মুহাদ্দিছ ইবনে খুযায়মা (রঃ) বলেনঃ পৃথিবীতে ইমাম বুখারী অপেক্ষা অধিক অভিজ্ঞ এবং হাদীছের হাফেয আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি। কেউ কেউ বলেনঃ খোরাসানের যমীনে ইমাম বুখারীর মত আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি।
ইমাম বুখারীর বাল্যকালের একটি ঘটনা অত্যন্ত চমকপ্রদ। তখন তিনি দশ বছর বয়সের কিশোর। এ সময় তদানীন্তন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ ইমাম দাখিলীর ক্লাশে হাদীছের পাঠ গ্রহণ করছিলেন। মুহাদ্দিছ দাখিলী এই সনদে একটি হাদীছ উপস্থাপন করলেনঃ

سفيان عن أبي إبي الزبير عن إبراهيم

“সুফিয়ান বর্ণনা করেন আবুয্ যুবাইর হতে আর আবুয যুবাইর বর্ণনা করেন ইবরাহমী হতে।” বালক বুখারী প্রতিবাদ করে বললেনঃ আবুয যুবাইর ইবরাহীম হতে হাদীছ হাদীছটি বর্ণনা করেন নি। মুহাদ্দিছ দাখিলী তাঁকে ধমক দিয়ে বললেও তিনি প্রশান্ত চিত্তে বললেনঃ أبو الزبير عن إبراهيم নয়: বরং زبير بن عدي عن إبراهيم আপনি দয়া করে একবার আপনার পান্ডুলিপির পান্ডুলিপির সাথে মিলিয়ে দেখুন। অতিরিক্ত জোর দেয়ার কারণে উস্তাদের মনে সংশয় দেখা দিল। তিনি পান্ডুলিপি দেখে ইমাম বুখারীকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমার কথাই ঠিক। তখন মুহাদ্দিছ দাখিলী তার জন্য প্রাণ খুলে দুআ করলেন।
হাদীছ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশ ভ্রমণঃ
হাদীছ সংগ্রহের জন্য ইমাম বুখারী অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সে সময় যে সমস্ত দেশে বিজ্ঞ মুহাদ্দিছগণ বসবাস করতেন তার প্রায় সবগুলোতেই তিনি ভ্রমণ করেছেন এবং তাদের নিকট থেকে হাদীছ সংগ্রহ করেছেন। খোরাসানের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও তিনি যে সমস্ত দেশে ভ্রমণ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে মক্কা, মদীনা, ইরাক, হিজাজ, সিরিয়া, মিশর এবং আরও অনেক শহর।
বাগদাদে আগমণ ও তাঁর স্মরণ শক্তির পরীক্ষাঃ
তৎকালীন সমগ্র ইসলামী রাজ্যে যখন মুহাদ্দিছ হিসেবে ইমাম বুখারীর কথা ছড়িয়ে পড়ল তখন সেই যুগের বড় বড় মুহাদ্দিছগণ তাঁকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তিনি যখন বাগদাদে আগমণ করলেন তখন চারশত মুহাদ্দিছ একত্রিত হয়ে ১০০টি সহীহ হাদীছ নির্বাচন করে তার সনদ ও মতন পাল্টিয়ে দিয়ে ১০ ভাগে বিভক্ত করে দশজন মুহাদ্দিছের হাতে সোপর্দ করলেন। অতঃপর তাঁর জন্য হাদীছের মজলিস স্থাপন করা হলো। তিনি যখন আসন গ্রহণ করলেন তখন প্রথমে একজন মুহাদ্দিছ ১০টি হাদীছ নিয়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে একটি একটি করে সবগুলো হাদীছ পাঠ করে শেষ করলেন। প্রতিটি হাদীছ পড়া শেষ হলেই ইমাম বুখারী বলতেনঃ لاأعرفه অর্থাৎ এ ধরণের কোন হাদীছ আমার জানা নেই। এমনিভাবে ১০ জন বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ১০০টি হাদীছ তাঁর সামনে পাঠ করলেন। সকল হাদীছের ক্ষেত্রেই তিনি বার বার একই কথা বললেন। পরিশেষে তিনি সকলকে ডেকে উলটপালট কৃত হাদীছগুলোর প্রত্যেকটি হাদীছকে তার আসল সনদের দিকে ফিরিয়ে দিলেন এবং ঠিক করে দিলেন। হাদীছগুলোর সনদ থেকে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েনি এবং মতনসমূহ থেকে একটি শব্দও ছুটে যায় নি। এমনকি হাদীছগুলো সঠিকভাবে সাজানোতে মুহাদ্দিছগণ তাঁর কোন ভুল-ত্র“টি ধরতে পারেন নি। বলা হয় যে, সমরকন্দে যাওয়ার পরও তাঁকে একই নিয়মে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এতে সেই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ হিসেবে সকলেই তাঁকে স্বীকৃত প্রদান করলেন।
ইমাম বুখারীর উস্তাদ ও ছাত্রগণঃ
ইমাম বুখারী (রঃ) থেকে অসংখ্য মুহাদ্দিছ সহীহ বখারী বর্ণনা করেছেন। খতীব বাগদাদী (রঃ) বুখারীর অন্যতম রাবী ফিরাবরির বরাত দিয়ে বলেন যে, তার সাথে প্রায় সত্তর হাজার লোক ইমাম বুখারী থেকে সরাসরি সহীহ বুখারী পড়েছেন। তাদের মধ্যে আমি ছাড়া আর কেউ বর্তমানে জীবিত নেই। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিজী, ইমাম নাসাঈ। তিনি যাদের কাছে হাদীছ শুনেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ইসহাক বিন রাহওয়াই এবং আরও অনেকেই। তিনি আটবার বাগদাদে আগমণ করেছেন। প্রতিবারই তিনি আহমাদ বিন হাম্বালের সাথে দেখা করেছেন। প্রত্যেক সাক্ষাতের সময়ই ইমাম আহমাদ তাঁকে খোরাসান ছেড়ে দিয়ে বাগদাদে স্থায়ীভাবে বসবাস করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন।

সহীহ বুখারী সংকলনের কারণঃ
ইমাম বখারীর পূর্বে শুধু সহীহ হাদীছসমূহ একত্রিত করে কেউ কোন গ্রন্থ রচনা করেন নি। সহীহ বুখারী সংকলনের পূর্বে আলেমগণ সহীহ ও যঈফ হাদীছগুলোকে এক সাথেই লিখতেন। কিন্তু ইমাম বুখারীই সর্বপ্রথম যঈফ হাদীছ থেকে সহীহ হাদীছগুলোকে আলাদা করে লেখার কাজে অগ্রসর হন।
তিনি তাঁর বিশিষ্ট উস্তাদ ইসহাক বিন রাহওয়াই হতে এই মহৎ কাজের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তিনি স্বয়ং বর্ণনা করেন যে, এক দিন আমি ইসহাক ইবনে রাহওয়াইয়ের মসজিদে বসা ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি হাদীছের এমন একটি গ্রন্থ করতো, যাতে শুধু সহীহ হাদীছগুলোই স্থান পেতো তাহলে খুবই সুন্দর হতো। মজলিসে উপস্থিত সকলেই তাঁর কথা শুনলেও এ কাজে কেউ অগ্রসর হওয়ার সাহস পায় নি। ইসহাকের কথাগুলো ইমাম বুখারীর অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। তিনি সেই দিন হতেই এই মহান দায়িত্ব পালন করবেন বলে মনে মনে স্থির করলেন।
তাঁর জীবনীতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, তিনি একবার স্বপ্নে দেখলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র শরীরে মাছি বসছে। তিনি এতে কষ্ট পাচ্ছেন। আর ইমাম বুখারী হাতে পাখা নিয়ে তাঁর পবিত্র শরীর থেকে মাছিগুলো তাড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি এই স্বপ্নের কথা সেই যুগের একাধিক আলেমের কাছে প্রকাশ করলে সকলেই বললেন যে, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছের সাথে যে সমস্ত জাল ও বানোয়াট হাদীছ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে তা থেকে সহীহ হাদীছগুলো আলাদা করবে। আলেমদের ব্যাখা শুনে সহীহ হাদীছ সম্বলিত একটি কিতাব রচনার প্রতি তাঁর আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পায়।

সহীহ বুখারী রচনায় ইমাম বুখারীর শর্ত ও সতর্কতাঃ
ইমাম বুখারী তাঁর কিতাবে কেবল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীছগুলোই বর্ণনা করেছেন। কোন হাদীছকে সহীহ হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্য এবং তা সহীহ বুখারীতে লিপিদ্ধ করার জন্য যদিও তিনি সুস্পষ্ট করে কোন শর্তের কথা উল্লেখ না করলেও আলেমগণ তাঁর কাজের উপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত শর্তগুলো বের করেছেনঃ
১) হাদীছের রাবী তার উপরের রাবীর সমসাময়িক হতে হবে এবং উভয়ের মাঝে সাক্ষাত হওয়া প্রমাণিত হতে হবে। অর্থাৎ সাক্ষাৎ করা এবং হাদীছ শুনা প্রমাণিত হওয়া জরুরী। এই শর্তে তিনি অন্যান্য মুহদ্দিছদের খেলাফ করেছেন। এই ক্ষেত্রে ইমাম মুসলিমের মর্ত হচ্ছে উভয়ের মাঝে সাক্ষাৎ সম্ভব হলেই চলবে। জীবনে কমপক্ষে একবার সাক্ষাত হয়েছে বলে প্রমাণিত হওয়া এবং নির্দিষ্ট কোন হাদীছ শুনা জরুরী নয়।
২) রাবী ছিাকাহ তথা নির্ভরযোগ্য হতে হবে।
৩) ন্যায়পরায়ন তথা মানুষের সাথে কথা-বার্তায় ও লেনদেনে সত্যবাদী হতে হবে।
৪) রাবী পূর্ণ ম্মরণশক্তি সম্পন্ন হওয়া।
৫) হাদীছের সনদ মুত্তাসিল হওয়া। অর্থাৎ মাঝখান থেকে কোন রাবী বাদ না পড়া।
কোন হাদীছে উপরোক্ত শর্তগুলো পাওয়া গেলেই ইমাম বুখারী স্বীয় কিতাবে তা লিখে ফেলেন নি। বরং প্রতিটি হাদীছ লেখার আগে তিনি গোসল করে দুই রাকআত নামায পড়েছেন এবং ইস্তেখারা করেছেন। তাঁর অন্তরে যদি হাদীছটি সম্পর্কে কোন প্রকার সন্দেহ জাগতো তাহলে সে হাদীছটি শর্ত মোতাবেক সহীহ হওয়া সত্ত্বেও তিনি সহীহ বুখারীতে লিখতেন না। এইভাবে মসজিদে নববীতে বসে তিনি তা লেখা শুরু করেন এবং একটানা ১৬ বছর এই কাজে দিন রাত পরিশ্রম করেন। লেখা শেষ করেই তাড়াহুড়া করে তা মানুষের জন্য প্রকাশ করেন নি; বরং কয়েকবার তিনি তাতে পুনদৃষ্টি প্রদান করেছেন, ভুল-ত্রুটি সংশোধন করেছেন এবং পরিমার্জিত করেছেন। তিনবার তিনি তা লিপিবদ্ধ করেন। সর্বশেষ লিখিত কপিটিই বর্তমানে মুসলিম জাতির নিকট অমূল্য রত্ম হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। ইমাম বুখারীর উস্তাদ ও বন্ধুগণের নিকট কিতাবটি পেশ করলে তাদের সকলেই তা পছন্দ করেছেন। যারা এই কিতাবটির প্রশংসা করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আহমাদ বিন হাম্বাল, আলী ইবনুল মাদীনী, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন এবং আরও অনেকেই। তারা সকলেই এর সকল হাদীছকে সহীহ বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের পরে এই উম্মাত আল্লাহ্ তাআলার কিতাবের পরই এটিকে সর্বাধিক সহীহ বলে কবুল করে নিয়েছে।

ইমাম বুখারীর দানশীলতা ও উদারতাঃ
ইমাম বুখারী প্রচুর ধনসম্পদের মালিক ছিলেন। মুহাম্মাদ বিন আবু হাতিম বলেনঃ ইমাম বুখারীর এক খন্ড যমীন ছিল। এ থেকে তিনি প্রতি বছর সাত লক্ষ দিরহাম ভাড়া পেতেন। এই বিশাল অর্থ থেকে তিনি খুব সামান্যই নিজের ব্যক্তিগত কাজে খরচ করতেন। তিনি খুব সীমিত খাদ্য গ্রহণ করতেন। বেশীর ভাগ সময়েই খাদ্য হিসেবে শসা, তরমুজ ও সবজি গ্রহণ করতেন। সামান্য খরচের পর যে বিশাল অর্থ অবশিষ্ট থাকতো তার সম্পূর্ণটাই তিনি ইলম অর্জনের পথে খরচ করতেন এবং অভাবীদের অভাব পূরণে ব্যয় করতেন। তিনি সব সময় দিনার ও দিরহামের থলে সাথে রাখতেন। মুহাদ্দিছদের মধ্যে যারা অভাবী ছিলেন তাদেরকেও তিনি প্রচুর পরিমাণ দান করতেন।
তাঁর জীবনীর সাথে সম্পৃক্ত একটি স্মরণীয় ঘটনাঃ
তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি একবার একটি থলের ভিতর একহাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে হাদীছ অন্বেষণের সফরে বের হলেন। সফর অবস্থায় কোন এক চোর এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো দেখে ফেলে এবং তা চুরি করার জন্য ইমাম বুখারীর পিছনে লাগে। কিন্তু চোর তা চুরি করার সকল প্রকার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যর্থ হয়। পথিমধ্যে ইমাম বুখারী পানি পথে ভ্রমণের জন্য জাহাজে আরোহন করলে চোরও তাঁর সাথে যাত্রা শুরু করে। সেখানেও সে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরিশেষে চোর মুদ্রাগুলো চুরি করার নতুন এক কৌশল অবলম্বন করে। সে এই বলে চিৎকার করতে থাকে যে, এই জাহাজে উঠার পর আমার একহাজার স্বর্ণমুদ্রা চুরি হয়ে গেছে। মুদ্রাগুলো একটি থলের ভিতর ছিল। সে থলেটির ধরণও বর্ণনা করল, যা সে ইতিপূর্বে ইমামের কাছে দেখেছিল। চিৎকার ও কান্নাকাটির মাধ্যমে চোরটি জাহাজের মাঝি-মাল্লাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
মাঝি-মাল্লাগণ এক এক করে সকল যাত্রীর পকেট ও শরীর চেক করা শুরু করল। এই দৃশ্য দেখে ইমাম বুখারী চিন্তা ও হতাশায় পড়ে গেলেন। চোরের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তিনি ভাবলেন এখন যদি আমাকে তল্লাশি করা হয় তাহলে তো আমার কাছে একহাজার স্বর্ণমুদ্র পাওয়া যাবে আর আমিই চোর হিসাবে সাব্যস্ত হবো। আমি অভিযোগ অস্বীকার করলেও আমার কথায় কেউ কর্ণপাত করবে না। আর আমি যদি আজ চোর হিসেবে ধরা পড়ি তাহলে সারা দুনিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়বে যে, মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা চুরি করেছে। আমার সারা জীবনের সাধনা ব্যর্থ হবে। আমি যে সমস্ত সহীহ হাদীছ সংগ্রহ করেছি, তাও লোকেরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং পবিত্র ইলমে হাদীছের অবমাননা হবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি এক হাজার স্বর্ণমুদ্রার মায়া ত্যাগ করে রাসূলের হাদীছে মর্যাদ অক্ষুন্ন রাখার সিদ্বান্ত গ্রহণ করলেন।
তাই তল্লাশ কারীগণ তাঁর শরীরে তল্লাশি চালানোর আগেই অতি গোপনে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রাসহ থলেটি পানিতে ফেলে দিলেন। এরপর সকলের মাল-পত্র ও শরীর তল্লাশির এক পর্যায়ে ইমাম বুখারীর শরীরও তল্লাশি করা হলো। জাহাজের কারও কাছে কোন থলের ভিতর এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেল না।
পরিশেষে জাহাজের লোকেরা চোরকেই মিথ্যাবাদী হিসেবে সাব্যস্ত করে সকলকে হয়রানি করার শাস্তি প্রদান করলো এবং আল্লাহ্ তাআলা তাকেই অপদস্ত করলেন। পরে চোর তাঁর সাথে একান্তে মিলিত হয়ে বললঃ জনাব আপনার সাথের এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা আপনি কোথায় রেখেছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ তোমার চক্রান্ত বুঝতে পেরে আমি তা পানিতে ফেলে দিয়েছি।আল্লাহ্ তাআলা ইমাম বুখারী এবং তাঁর সংগ্রহীত সহীহ হাদীছের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখলেন।
আলেমদের মূল্যায়নে সহীহ বুখারীঃ
সংক্ষিপ্তভাবে কিতাবটি সহীহ বুখারী হিসোবে প্রসিদ্ধতা অর্জন করলেও এর পূর্ণ নাম হচ্ছে الجامع الصحيح المسند من أمور رسول الله صلى الله عليه وسلم وسننه وأيامه আল জামেউস সহীহহুল মুসনাদু মিন উমরি রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহি ওয়া আইয়ামিহি। তবে কারও মতে দীর্ঘ নামটির মধ্যে শব্দের তারতম্য রয়েছে। এই কিতাবে তিনিই সর্বপ্রথম হাদীছসমূহকে আধুনিক পদ্ধতিতে সুবিন্যাস্ত করেন। কিতাবটি রচনার জন্য তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় গমণ করেন। মসজিদে নববীতে বসে একটানা ১৬ বছর কঠোর পরিশ্রম এবং ঐকান্তিক সাধনার ফলশ্র“তিতে সম্পাদিত এই গ্রন্থটি সর্বযুগের সকল আলেমের নিকট সমাদৃত হয়। সমকালীন মুহাদ্দিছ ও হাদীছ বিশেষজ্ঞ পন্ডিতমন্ডলী এই মহাগ্রন্থের চুলচেরা বিশ্লেষণ, বিচার-বিবেচনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আলোচনা-সমালোচনা এবং পর্যালোচনা করেছেন। সমগ্র উম্মত সর্বসম্মতভাবে এই গ্রন্থটিকে أصح الكتاب بعد كتاب الله আল্লাহর কিতাবের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও নির্ভুল বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। উপরে বলা হয়েছে যে, প্রায় নব্বই হাজার লোক ইমাম বুখারীর নিকট হতে এই কিতাবটির পুনরাবৃত্তি শ্রবণ করেছেন। বর্তমান মুসলিম জাহানের এমন কোন স্থান ও ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে না যেখানে এই কিতাবটি শিক্ষা দান করা হয় না। ইসলামী শিক্ষার শিক্ষার্থীগণ এই গ্রন্থটি অধ্যয়ন ও পাঠ দানের যোগ্যতা অর্জন করার মাধ্যমেই বড় আলেম রূপে স্বীকৃত হয়ে থাকেন।
এ যাবৎ সহীহ বুখারীর যতগুলো ব্যাখ্যা গ্রন্থ বের হয়েছে হাদীছের অন্য কোন কিতাবের এত বেশী সংখ্যক ব্যাখ্যা বের হয় নি। এই ব্যাখ্যা গ্রন্থগুলোর মধ্যে আল্লামা হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী কর্তৃক রচিত ফতহুল বারী সর্বশ্রেষ্ট স্থান দখল করে আছে। কেউ কেউ সহীহ বুখারীর উপর লিখিত ব্যাখ্যা গ্রন্থ শতাধিক বলে মন্তব্য করেছেন।
ইমাম বুখারীর শেষ জীবন ও কঠিন পরীক্ষাঃ
ইমাম বুখারীর শেষ জীবন খুব সুখ-শান্তিতে অতিবাহিত হয় নি। বুখারার তৎকালীন আমীরের সাথে তাঁর মতবিরোধ হয়েছিল। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এই যে, যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ হিসাবে যখন ইমাম বুখারীর সুনাম ও সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল তখন বুখারার আমীর স্বীয় সন্তানদেরকে সহীহ বুখারী পড়ানোর জন্য ইমামের কাছে প্রস্তাব করলো। আমীর আরও প্রস্তাব করলো যে, তার সন্তানদের পড়ানোর জন্য ইমাম বুখারীকে রাজ দরবারে আসতে হবে। কারণ সাধারণ জনগণের সাথে মসজিদে বসে আমীরের ছেলেদের পক্ষে সহীহ বুখারী পড়া সম্ভব নয়।
ইমাম বুখারী তাঁর মসজিদ ও সাধারণ লোকদেরকে ছেড়ে দিয়ে রাজ দরবারে গিয়ে আলাদাভাবে আমীরের ছেলেদেরকে বুখারী পড়ানোতে ইলমে হাদীছের জন্য বিরাট অবমাননাকর ভেবে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি পরিস্কার জানিয়ে দিলেন যে, আমি কখনও হাদীছের ইলমকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারবো না এবং এই মহান রত্মকে আমীর-উমারাদের দারস্থ করতে পারবো না। আমীর যদি সত্যিকার অর্থে ইলমে হাদীছের প্রতি অনুরাগী হন, তাহলে তিনি যেন তাঁর সন্তানদেরসহ আমার বাড়িতে ও মসজিদে উপস্থিত হন।
এতে আমীর ইমামের প্রতি রাগান্বিত হয়ে তাঁকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করলেন এবং ইমামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার জন্য দুনিয়া পূজারী কিছু আলেম ঠিক করলেন। আমীরের আদেশ এবং ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে তিনি জন্মভূমি বুখারা ত্যাগ করে নিশাপুরে চলে যান। নিশাপুরেও অনুরূপ দুঃখজনক ঘটনা ঘটলে পরিশেষে সমরকন্দের খরতঙ্গ নামক স্থানে চলে যান। বুখারা থেকে বের হওয়ার সময় ইমাম আল্লাহর কাছে এই দুআ করেন যে, হে আল্লাহ্! সে আমাকে যেভাবে অপমান করে বের করে দিলো তুমিও তাকে অনুরূপ লাঞ্চিত করো। মাত্র এক মাস পার হওয়ার পূর্বেই খুরাসানের আমীর খালেদ বিন আহমাদের বিরুদ্ধে জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাকে ক্ষমতা ছাড়া করলো। পরবর্তীতে বাগদাদের জেলে থাকা অবস্থায় সে মৃত্যু বরণ করে। শুধু তাই নয় যারাই ইমাম বুখারীর বিরুদ্ধে তার সহযোগীতা করেছে তারাই পরবর্তীতে লাঞ্চিত হয়েছে।

ইমাম বুখারী সম্পর্কে আলেমদের কিছু অভিমতঃ
১) ইমাম ফাল্লাস (রঃ) বলেনঃ যে হাদীছ সম্পর্কে ইমাম বুখারী জানেন না, সেটি হাদীছ নয়।
২) ইমাম আবু নুআইম আহমাদ বিন হাম্মাদ (রঃ) বলেনঃ ইমাম বুখারী হচ্ছেন এই উম্মতের ফকীহ। ইয়াকুব বিন ইবরাহীমও অনুরূপ বলেছেন।
৩) কোন কোন বিদ্যান ফিকহ ও হাদীছ শাস্ত্রে ইমাম বুখারীকে আহমাদ বিন হাম্বাল এবং ইসহাক বিন রাহওয়াইয়ের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন।
৪) কুতাইবা বলেনঃ পৃতিবীর পূর্ব ও পশ্চিম হতে আমার নিকট অনেক লোক এসেছে। কিন্তু মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী যতবার এসেছে আর কেউ এত বেশীবার আগমণ করে নি।
৫) ইমাম আবু হাতিম রাযী বলেনঃ যে সমস্ত মুহাদ্দিছ বাগদাদে আগমণ করেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক জ্ঞানী হলেন ইমাম বুখারী।
৬) ইমাম তিরমিজী (উরঃ) বলেনঃ হাদীছের ইল্লত, ইতহিাস এবং সনদ সম্পর্কে বুখারীর চেয়ে অধিক জ্ঞানী ইরাক এবং খোরাসানের যমীনে আর কাউকে দেখি নি।
৭) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) বলেনঃ খোরাসানের যমীনে ইমাম বুখারীর অনুরূপ আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি।
৮) ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী (রঃ) বলেনঃ ইমাম বুখারীর সমকক্ষ আর কেউ ছিল না।
৯) মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন নুমাইর ও আবু বকর ইবনে আবী শায়বা বলেনঃ তাঁর মত আর কাউকে দেখি নি।
১০) আলী বিন হাজার বলেনঃ তাঁর মত আর কেউ আছে বলে আমার জানা নেই।
তাঁর এবাদত-বন্দেী ও পরহেজগারীতার কিছু বিবরণঃ
হাদীছ চর্চায় সদা ব্যস্ত থাকলেও এবাদত বন্দেগীতে তিনি মোটেও পিছিয়ে ছিলেন না। তাঁর জীবনীতে উল্লেখিত হয়েছে যে, তিনি প্রতি বছর রামাযান মাসের প্রতিি দিনের বেলায় একবার কুরআন খতম করতেন। আবার তারাবীর নামাযের পর প্রতি তিন রাত্রিতে একবার খতম করতেন। মুহাম্মদ বিন আবু হাতিম আল ওয়াররাক বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত মোতাবেক তিনি শেষ রাতে তের রাকআত তাহাজ্জুদ নামায পড়তেন। তিনি আরও বলেন যে, আমি তাঁর সাথে থাকা সত্বেও আমাকে কখনই জাগাতেন না। আমি বলতামঃ আপনি আমাকে ঘুম থেকে কখনই না জগ্রত করার কারণ কি? উত্তরে ইমাম বুখারী বলতেনঃ তুমি যুবক লোক। আমি তোমার ঘুমকে নষ্ট করতে চাই না।

সহীহ বুখারী ছাড়াও ইমাম বুখারীর আরও কয়েকটি কিতাবঃ
সহীহ আলবুখারী ছাড়াও তিনি আরও কয়েকটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে রয়েছেঃ
১) আল আদাবুল মুফরাদ। (বাংলায় অনুবাদ হয়েছে)
২) তারীখুল কাবীর। এতে তিনি হাদীছের রাবীদের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
৩) তারীখুস সাগীর। এতে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীসহ বেশ কিছু রাবীর জীবনী উল্লেখ করেছেন।
৪) খালকু আফআলিল ইবাদ। এতে তিনি মুতাজেলাদের একটি ভ্রান্ত মতবাদের প্রতিবাদ করেছেন।
৫) রাফউল ইয়াদাইন ফিস্ সালাত।
৬) জুযউল কিরাআত খালফাল ইমাম।
৭) কিতাবুয যুআ-ফাউস সাগীর।
৮) কিতাবুল কুনা (মুহাদ্দিছদের উপনাম সম্পর্কে)
৯) আত্ তাওয়ারীখ ওয়াল আনসাব
১০) কিতাবুত তাওহীদ
১১) আখবারুস সিফাত। এ ছাড়াও আরও তাঁর অনেক গ্রন্থ রয়েছে গেছে।
ইমাম বুখারীর মৃত্যুঃ
ইমাম বুখারী শেষ বয়সে অনুরূপ ফিতনা ও অবাঞ্চিত ঘটনাবলীতে পার্থিব জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। এক দিন তিনি তাহাজ্জুদের নামাযের আল্লাহর নিকট এ বলে আবেদন জানান যে, “হে আল্লাহ্! এ সুবিশাল পৃথিবী আমার জন্য একান্তই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। অতএব আপনি আমাকে আপনার নিকট তুলে নিন। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দা ইমাম বুখারীর ব্যাথা ভারাক্রান্ত হৃদয়ের সবিনয় নিবেদন কবুল করলেন। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ইলমে হাদীছের এই খাদেম দুনিয়া থেকে চির বিদায় গ্রহণ করেন। সমরকন্দের খরতঙ্গ জনপদেই ৬২ বছর বয়সে হিজরী ২৫৬ সালের ঈদুল ফিতরের রাত্রিতে তিনি ইন্তেকাল করেন। ঈদের দিন যোহরের নামাযের পর তাঁর জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর অসীয়ত মোতাবেক তিনটি সাদা কাপড় দিয়ে তাঁকে কাফনে জড়ানো হয়। এতে কোর্তা ও পাগড়ি ছিল না।
তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দাফন করার পর তাঁর কবর থেকে মিসকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুঘ্রাণ বের হতে থাকে। বেশ কিছু দিন এই অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। লোকেরা তাঁর কবর থেকে মাটি নেওয়া শুরু করে দেয়। অতঃপর বিষয়টি নিয়ে মানুষ ফিতনায় পড়ার আশঙ্কায় প্রাচীর দিয়ে মজবুতভাবে কবরটি ঢেকে দেয়া হয়।
আল্লাহর কাছে দুআ করি তিনি যেন এই মহান ব্যক্তিকে জান্নাতের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় দান করেন। আমীন।
তথ্যসূত্রঃ
১) আলবেদায়া ওয়ান নেহায়া
২) আল ওয়াফী ফিল ওয়াফিয়াত
৩) সিয়ারু আলামিন্ নুবালা





সাঁতাড়ুর কানে পানি যাওয়া

সাঁতাড়ুর কানে পানি যাওয়া


লক্ষণ ও উপসর্গ

১. কানে ব্যথা এবং থ্যালথ্যালে অনুভব, বিশেষত মাথা এদিক ওদিক ঘোরাবার সময় এবং কানের লতি টানার সময়।
২. কানের ভেতর অস্বস্তিকর বদ্ধতার অনুভব এবং চুলকানি।
৩. কান থেকে তরল, বাজে গন্ধযুক্ত হলুদ পদার্থের নি:স্বরণ|
৪. কানের ফুটোর কাছে নষ্ট ত্বক|
৫. শ্রবণক্ষমতার সাময়িক হন্সাস, কিংবা ভাঙ্গা ভাঙ্গা শ্রবণানুভব।
 কী করা উচিত
এই সমস্যা প্রায়ই আপনা থেকেই সেরে যায়। যদি সেটা নাও হয়, তবুও চিকিৎসা করলে দ্রুত এই সমস্যা সেরে ওঠে এবং সাধারণত দুই চারদিনের মধ্যেই এটা ঠিক হয়ে যায়। সেরে ওঠাকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে আপনি নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারেন:
১. আক্রান্ত কানটিকে শুষ্ক রাখার চেষ্টা করুন। গোসলের সময় এবং চুল ধোয়ার সময় আপনার কানকে পানি থেকে ঢেকে রাখুন। সাঁতাড় থেকে বিরত থাকুন।
২. ডিসপেন্সারি থেকে এন্টিসেপটিক এয়ারড্রপ কিনে ব্যবহার করতে পারেন। আপনার কানে এই ড্রপ প্রবেশ করিয়ে কয়েক মিনিট ওভাবে থাকুন, এবং তারপর মাথা ঝুকিয়ে সেটাকে বেরিয়ে যেতে দিন|
৩. ব্যথা নিরোধে একটুকরো উষä কাপড় কানে জড়িয়ে ধরে রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে ডিসপেন্সারির কম্পাউন্ডারের কাছ থেকে এ্যাসপিরিণ বা এসিটামিনোফেন ওষুধ সেবন করলেও লাভবান হতে পারবেন। (তবে ১২ বছর বয়সের নিচে কোন শিশুর যদি চিকেন পক্স, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কিংবা অন্যান্য কোন রোগ রয়েছে, এবং সেটা ভাইরাস বাহিত বলে আপনি মনে করেন সেক্ষেত্রে তাকে কোনভাবেই এ্যাসপিরিন দেবেন না।)কখন ডাক্তার দেখাবেন

১. যদি চার-পাঁচ দিনেরও বেশি সময় যাবৎ নিজস্ব যত্ন এবং চিকিৎসা স্বত্তেও লক্ষণগুলো বজায় থাকে সেক্ষেত্রে, যদিও সচরাচর ঘটে না, কিন্তু এই ক্ষত সংক্রামিত হতে পারে।
২. যদি লক্ষণগুলো দেখা যায়, এবং অতীতে কখনও আপনার কানের পর্দায় আঘাত লেগে থাকে, বা ক্ষত থেকে থাকে, কিংবা কানে যদি অতিতে সার্জারি করা হয়ে থাকে।
৩. প্রায়ই যদি আপনার কানে পানি ঢোকার এই সমস্যা ঘটে, কিংবা ইতিমধ্যেই কানে ঘা সংক্রান্ত কোন রোগ আপনার হয়ে থাকে।
৪. যদি আপনার ডায়াবেটিকস হয়ে থাকে, কিংবা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে থাকে।

কিভাবে প্রতিরোধ করবেন

১. আপনার কানদুটোতে যেন পানি জমতে না পারে সেদিকে যত্ন নিন। সাঁতাড় কাটার সময় এয়ারপ্লাগ পড়ে নিন। এবং সাঁতাড় কাটা শেশ হলে সেটা খুলে ফেলতে ভুলবেন না। স্নানের সময়ও শাওয়ার ক্যাপ পড়ে নিতে পারেন। আপনার কানের চারপাশ এবং ভেতরটা শুকনো নরম কাপড় দিয়ে শুষ্ক করে তুলুন, এবং সমস্যা হলে বাফারড এ্যালকোহল এয়ারড্রপ প্রয়োগ করে কানের ভেতর জমে থাকা অবশিষ্ট পানিটুকুও বাস্পায়িত করুন। এই ওষুধ ডিসপেন্সারিতে পাওয়া যায়।
২. সাতাঁর কাটার আগে আপনার কানে ল্যানোলিন এয়ারড্রপ প্রয়োগ করুন যাতে করে কানে পানি ঢুকে পড়তে না পারে। মাথা ঝুকিয়ে কানের তলদেশ পর্যন্ত এই ড্রপটিকে যেতে দিন, এবং তারপর আবার অন্যদিকে মাথা ঝুকিয়ে পানি সহ তরলটিকে বেড়িয়ে যেতে দিন।
৩. এই রোগের লক্ষণগুলো অপসারিত হবার অর্থাৎ রোগ সারার তিন সপ্তাহের মধ্যে আপনার কানে যেন পূনরায় পানি ঢুকতে না পারে সেদিকে যত্নবান হন, এর ফলে সমস্যাটা দ্বিতীয়বার ঘটা থেকে রেহাই পাবেন।
৪. এই রোগে আক্রান্ত হবার প্রবণতা আপনার মধ্যে থাকলে, কিংবা কানে পানি ঢুকে যাবার সমস্যা যদি আপনার প্রায়শই ঘটে সেক্ষেত্রে এন্টিসেপটিক এয়ারড্রপ ব্যবহার করুন।
৫. কানের ময়লা পরিস্কার করার সময় সাবধান থাকবেন। এমন কোন বস্তু দিয়ে কান পরিস্কার করবেন না, যেটা কানের নলকে ক্ষতিগ্রþহ করতে পারে।
বিতৃষন্নাবোধ এবং বমি

বিতৃষন্নাবোধ এবং বমি


লক্ষণ ও উপসর্গ

বিতৃষন্নাবোধ এবং বমি সাধারণত নিম্নোক্ত সমস্যাগুলোর সাথে একসাথে উদিত হয়:
১. উদরে বা তলপেটে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হওয়া|
২. ডায়রিয়া|
৩. জ্বর, ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং অবসাদ|
৪. মাথা ব্যথা|
৫. খাবারের প্রতি অভক্তি|

কী করা উচিত
যদি আপনার মনে হয় যে আপনি তীব্রভাবে বিষাক্ত খাবার (ফুড পয়জনিং) কিংবা রাসায়নিক দ্রব্যের (কেমিকাল পয়জনিং) বিষাক্ততায় আক্রান্ত হয়েছেন:
১. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞরা আপনার লক্ষণ দেখে এবং আপনাকে পরীক্ষা করে বলতে পারবে যে কোথা থেকে বা কিভাবে আপনার এই সমস্যা হয়েছে এবং আপনার কি কোন চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কি না।
২. যদি কেবল সাধারণ বমি হওয়া কিংবা ডায়রিয়ায় আপনি আক্রান্ত হন:
১. ডায়রিয়া কিংবা বিতৃষäাবোধের লক্ষণগুলো ধরা পড়ার পর অন্তত ২৪ ঘন্টায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডায়রিয়া বা বিতৃষন্নাবোধ দূর করার কোন ওষুধ নিজে নিজে কিনে খাবেন না। বমি এবং ডায়রিয়া হলো শরীরের নিজস্ব পদ্ধতি, যে পদ্ধতি দিয়ে শরীর অভ্যন্তরিন দাহজনক পদার্থগুলো নির্গত করে দেয়। (তবে শিশুদের জন্যে ওষুধের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যকিয়, কেননা তারা দ্রুত পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হয়)।
২. একবার যদি তরল আপনার পাকস্থলিতে সয়ে যেতে শুরু করে, তাহলে স্বচ্ছ ধরনের তরলগুলো পরবর্তী ১২ ঘন্টা যাবৎ পান করতে থাকুন। এরপর, পরবর্তী একদিন সাধারণ খাবার যেমন ভাত, পোড়ানো বা সিদ্ধ আলু, কিংবা সাধারণ স্যুপ ইত্যাদি আহার করুন - অবশ্য যদি আপনার পাকস্থলি সেগুলো সহ্য করে নিতে পারে।
৩. যতদিন এই রোগের লক্ষণগুলো দূর না হচ্ছে ততদিন প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিন। কেননা, বার বার বমি করার কারণে আপনার শরীর প্রচুর পরিমাণ তরল হারাবে। এক্ষেত্রে পানি শূন্যতা একটা মারাত্মক ঝুঁকি হতে পারে, বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে। এ সংক্রান্ত লক্ষণগুলো হলো, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, লালা ঘন ও আঠালো হয়ে ওঠা, মাথা ঘোরা কিংবা দুর্বলতা এবং অবসাদগ্রস্ততা, গাঢ় হলুদ পস্রাব, এবং মাঝে মধ্যে তীব্র পিপাসা।
৪. যদি আপনি পানীয় পান করে সেটা শরীরে ধরে রাখতে না পারেন এবং তীব্র পানি শূন্যতায় আক্রান্ত হন সেক্ষেত্রে আপনাকে হয়তো দ্রুত ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হবে এবং শিরার অভ্যন্তরে বিকল্প তরলের সরবরাহ (ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড রিপ্লেসমেন্ট) করতে হবে।


কখন ডাক্তার দেখাবেন
১. যদি বমি এবং উদর বা তলপেটের ব্যথার সাথে আপনি দৃষ্টির অস্পষ্টতা, পেশিতে দুর্বলতা, কথা বলতে সমস্যা হওয়া, কিংবা গিলতে সমস্যা হওয়া, কিংবা পেশির অক্রিয়তা ইত্যাদি লক্ষণেও আক্রান্ত হন। এই লক্ষণগুলো হয়তো বটুলিজম বা জীবননাশী বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হবার লক্ষণ। যদিও বটুলিজমে সাধারণত মানুষ আক্রান্ত হয় না, কিন্তু এটা ব্যাকটেরিয়া বাহিত খাদ্যের বিষক্রিয়া থেকে ঘটতে পারে, এবং এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।
২. যদি আপনার মধ্যে খাদ্যের রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হবার লক্ষণ দেখা যায়: বমি হওয়া, ডায়রিয়া হওয়া, ঘাম হওয়া, মাথা ঘোরা, দুই চোখ জলময় হয়ে থাকা, প্রচুর পরিমাণ লালা আসা, মানসিক বিভ্রান্তি এবং পাকþহলিতে পীড়া হওয়া - ইত্যাদি লক্ষণগুলো যদি খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে শুরু হয়। এই সমস্যার সূচণা প্রায়শই হয় পেসটিসাইড বা পোকামাকড়ের বিষ গলাধকরণের ফলে কিংবা নষ্ট বা টিনজাত এবং সময়োত্তীর্ণ খাবার আহারের ফলে, এবং এটা জীবননাশীও হয়ে উঠতে পারে।
৩. আপনার বমিতে যদি রক্ত থাকে কিংবা অন্যকিছু থাকে যেটা দেখতে গ্রাউন্ড কফি বা কফির পাতার গুড়ার মতো দেখা যায়।
৪. যদি আপনার মলের সাথে রক্ত নির্গত হয়, কিংবা মল যদি আলকাতরার মতো কালো দেখায়, সেক্ষেত্রে এটা ইন্টারনাল ব্লিডিং বা দেহাভ্যন্তরীন রক্তপাতের লক্ষণ।
৫. যদি আপনার শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে, যদি তলপেট বা উদর ফেঁপে বা ফুলে ওঠে, কিংবা মলদ্বার বা মলনালীতে কোন সমস্যা দেখা যায়; সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো কোন উদর সম্বন্ধীয় মারাত্মক সমস্যার শিকার হয়েছেন।
৬. যদি পানি শূন্যতায় আক্রান্ত হবার লক্ষণগুলো আপনার মধ্যে দেখা যায় যেমন, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, লালা ঘন ও আঠালো হয়ে ওঠা, মাথা ঘোরা কিংবা দুর্বলতা এবং অবসাদগ্রস্ততা, গাঢ় হলুদ পস্রাব, এবং মাঝে মধ্যে তীব্র পিপাসা। ছোট শিশুদের জন্যে পানি শূন্যতা অত্যন্ত মারাত্মক একটি সমস্যা।
৭. চিকিৎসার পরও যদি লক্ষণগুলো আপনার মধ্যে আবারও দেখা যায়, সেক্ষেত্রে হয়তো এই সমস্যাগুলোর মূলে অন্য কোন কারণ রয়েছে যেমন মলাদ্বারে কোন জীবাণুর আক্রমান বা ইনটেস্টিনাল প্যারাসাইট।
৮. যদি আপনার বমি এবং ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করে এবং দুই বা তিনদিনেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়।
৯. আপনার যদি ১০১ কিংবা তারও বেশি জ্বর থাকে।


কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
পাকস্থলীতে ভাইরাসবাহিত সমস্যা দ্বারা সৃষ্ট ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু থেকে রক্ষা পেতে:
১. আপনার হাত দুটো একটু পর পর ধুয়ে ফেলুন।
২. আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সবল রাখতে যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম নিন, ব্যায়াম করুন এবং স্বাþহকর খাবার আহার করুন
স্কোটর বা অন্ত্রবৃদ্ধি বা হার্নিয়া

স্কোটর বা অন্ত্রবৃদ্ধি বা হার্নিয়া


লক্ষণ ও উপসর্গ
১. উদরে চাপ বা অস্বস্তিকর অনুভূতি হওয়া, মাঝে মধ্যে এই চাপ বোধের সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যও দেখা যায়।
২. কোনকিছু উত্তোলন করার সময় কিংবা নিচের দিকে ঝুঁকবার সময় উদরে কিংবা যৌনাঙ্গ বা নিম্নাঙ্গে অস্বস্তি বোধ হওয়া।
৩. উদর কিংবা যৌনাঙ্গের ত্বকের নিচে স্পষ্টভাবে লক্ষণীয় কোন বিষফোঁড় বা ফুলে ওঠা। শোয়া অবþহানে এই ফুলে ওঠার বিষয়টি হয়তো দেখা যাবে না। এবং এই স্থানটা স্পর্শকাতর হতে পারে, ধরলে ব্যথা করতে পারে।
৪. যখন হার্নিয়া তীব্র আকার নেয় তখন উদরে ব্যথা হয়, বিতৃষনাবোধ জন্ম নেয় এবং বমি হয়।
৫. দীর্ঘস্থায়ী বুক জ্বলা-পোড়া, ঢেকুর তোলা কিংবা খাবার খেয়ে সেটা বমি করে ফেলে দেয়া। এটা গার্জিটেশন বা উদগিরণের লক্ষণ হতে পারে। এগুলো অবশ্য হায়াতাল হার্নিয়ারও লক্ষণ হতে পারে, যেটা সাধারণত পাকস্থলীর কিছুটা অংশ কিংবা খাদ্যনালী ক্ষয় হয়ে সংকুচিত হলে দেখা দেয়।

কী করা উচিত
১. যদি আপনার মনে হয় যে আপনি হার্নিয়ায় আক্রান্ত সেক্ষেত্রে একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। কখনও কখনও হার্নিয়া হলে জরুরী চিকিৎসা নেবার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
২. শরীরে যেন চাপ না পড়ে সেদিকে যত্নশীল হোন এবং কোন ভারী বস্তু উত্তোলন করা থেকে বিরত থাকুন।


কখন ডাক্তার দেখাবেন
১. যদি আপনি জানেন যে আপনি হার্নিয়ায় আক্রান্ত, এবং আপনি বিতৃষäাগ্রস্ত, বমি হচ্ছে, কিংবা মলত্যাগ হচ্ছে না কিংবা বায়ু ত্যাগেও সমস্যা হচ্ছে। এগুলো হয়তো বাধাপ্রাপ্ত বা রক্ত চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হার্নিয়ার লক্ষণ।
২. যদি আপনার মনে হয় যে আপনার হার্নিয়া হয়েছে।

কিভাবে প্রতিরোধ করবেন
১. মল ত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করবেন না। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা পেতে এবং মলদ্বারের পেশির শক্তি বাড়াবাড় লক্ষ্যে প্রোটিণয্ক্তু খাদ্য খাবার অভ্যাস করুন।
২. যদি আপনার ওজন শরীরের তুলনায় বেশি হয় সেক্ষেত্রে, উদরের পেশিগুলোর উপর থেকে অতিরিক্ত চাপ অপসারণের লক্ষ্যে কিছু ওজন কমাবার চেষ্টা করুন।
৩. ভারী বস্তু উত্তোলন থেকে বিরত থাকুন।
৪. ধুমপান করবেন না। যদি করেন, তবে বর্জন করুন। শ্বাসনালীতে প্রদাহের দরুন সৃষ্ট দীর্ঘþহায়ী কাশিও আপনাকে হার্নিয়ায় আক্রান্ত করতে পারে এবং কখনও কখনও একবার সেরে ওঠার পর আবার হার্নিয়ার জন্ম দিতে পারে।
৫ নিয়মিত ব্যয়াম করুন যাতে করে আপনার উদরের পেশিগুলো আরও শক্তিশালি হয় এবং সক্রিয় হয়ে ওঠে।
Signs and Symptoms

1. A heavy feeling in the abdomen, sometimes accompanied by on going constipation.

2. Discomfort in the abdomen or groin when lifting or bending over.

3. An obvious swelling or bulge beneath the skin in the abdomen or groin. It may disappear when you lie down, and it may be tender.

4. In severe cases pain in the abdomen, nausea, and vomiting.

5. Chronic heartburn, belching, or regurgitation. These could be a signal of gurgitation. These could signal a hiatal hernia, which occurs when part of the stomach or lower esophagus squeezes into the chest cavity.



What to do now

1. Call a doctor if you suspect you have a hernia. Sometimes hernias require urgent medical care.

2. Avoid staining or heavy lifting.



When to call a doctor

1. If you know you have a hernia, and you are nauseated and vomiting, or unable to have a bowel movement or pass gas. These symptoms could indicate an obstructed or strangulated hernia.

2. If you suspect you have hernia.



How to prevent it

1. Don’t strain when having a bowel movement Practice good nutrition, both to avoid constipation and to enhance muscle strength.

2. If you are overweight, try to lose some weight to ease the pressure on your abdominal muscles.

3. Avoid lifting heavy objects.

4. Don’t smoke. If you do, quit. Chronic coughing from bronchial irritation makes a hernia more likely and also can make one recur.

5. Do regular, gentle exercises to tone and strengthen your abdominal muscles.
ফ্যাট কমানোর ৮ উপায়

ফ্যাট কমানোর ৮ উপায়


ফ্যাট কমানোর ৮ উপায়


শহুরে জীবনে স্থূলতা ক্রমে প্রকট সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। প্রতিদিন আমাদের দেহ যে পরিমাণ ক্যালরি পোড়ায় এর চেয়ে বেশি ক্যালরি খরচের আর কোনো উপায় আছে কি? হ্যাঁ এবং না-এক্সপার্টদের মন্তব্য। দৃশ্যত খাঁটি বিষয়টি হলো বাড়তি ক্যালরি পোড়ানোর এক নাম্বার (এবং আদি ও অকৃত্রিম) উপায় হলো আরো বেশি করে কাজ, হাঁটাচলা করা।

ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনায় ইন্টারডিসিপ্লিনারি ওবেসিটি প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ব্যারি এম পপকিন বলেন, আমরা দেখেছি বেশি বেশি নড়াচড়া ছাড়া ক্যালরি খরচ বা বিপাক ক্রিয়া বাড়ানোর কোনো রাস্তা নেই।

যদিও গবেষণায় দেখা যায়, দেহের ক্যালরি খরচের মাত্রা বেড়ে যায় এমন কিছু উপায় আছে। এখানে তেমনি কয়েকটি উপায় দেয়া হলো যেগুলো ব্যবহার করে ক্যালরি পুড়িয়ে স্থূলতার বিরুদ্ধে আপনার যাত্রা অব্যাহত রাখতে পারেন।

এক্সারসাইজের মাধ্যমে ক্যালরি পোড়ানো
এটা খুব সাধারণ ধারণা, যত বেশি এক্সারসাইজ করবেন ক্যালরি খরচ হবে তত বেশি। বস্তুত এক্সপার্টদের মতে, প্রতিদিন সময় নিয়ে হাঁটলে সেটাও ক্যালরি পোড়ানোর একটি বড় হাতিয়ার হতে পারে। আর এক্সারসাইজের ব্যাপারে কথা হলো, ধীরে ধীরে এর সময় বাড়াতে হবে।

শক্তি বাড়ানোর এক্সারসাইজ করে পেশি তৈরি করুন
আপনি যখন এক্সারসাইজ করেন তখন পেশির ব্যবহার হয়। এর ফলে পেশির দৃঢ়তা বাড়ে। আর এমনকি যদি আপনি বিশ্রাম নেন তখনো পেশির কোষগুলো যতটা ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে দেহের চর্বি ততটা পারে না। বিশ্রামে থাকা অবস্থায় ১০ পাউন্ডের পেশি ৫০ ক্যালরি খরচ করে, যেখানে সমপরিমাণ ফ্যাট মাত্র ২০ ক্যালরি খরচ করে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহের শক্তি বাড়ানোর বিভিন্ন এক্সারসাইজ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ এ সময় মানুষের বিপাক ক্রিয়া গতি হারায়। এ অবস্থাকে প্রতিহত করতে সপ্তাহে অন্তত কয়েকবার শক্তি বাড়ানোর এক্সারসাইজ করুন। থাই, তলপেট, বুক ও বাহুর পেশিগুলো দেহের সবচেয়ে বড় পেশি, এ কারণে এগুলো বেশি ক্যালরি পোড়াতে পারে।

ক্যাফেইনসমৃদ্ধ গ্রিন বা ব্ল্যাক টি পান করুন
ক্যাফেইন এক ধরনের উদ্দীপক আর উদ্দীপনা দেহে বাড়তি ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে। এটা আপনার দেহে কর্ম উদ্দীপনা তৈরি করে আর তার ফলে আপনি বাড়তি নড়াচড়া করেন। এছাড়া ক্যাফেইন দেহের বিপাকীয় পরিবর্তন ঘটায়, যা আপনার বাড়তি ক্যালরি ধ্বংস করে।

খাবার সঙ্গে চা পান করা চর্বির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আরেক উপায়। চায়ের নির্যাস খাবার সময় দেহের কার্বোহাইড্রেড গ্রহণকে প্রতিহত করে-এমনটাই জানা গেছে সেপ্টেম্বর ২০০৬-এ প্রকাশিত আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন থেকে।

অল্প খান, ঘন ঘন খান
দিনে যে কয়বারই আপনি খাবার খান আপনার গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল প্রক্রিয়া চালু হয়। বস্তুত এটা হলো খাবার হজম হওয়া এবং এর পুষ্টি দেহে ছড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। মানুষের হজম মেশিনটি চালু হতে ক্যালরি খরচ হয় আর এ জন্যই আপনাকে বলা হচ্ছে প্রতিবার অল্প করে দিনে বেশ কয়েকবার খাওয়া-দাওয়া করুন। এতে বাড়তি কিছু ক্যালরি খরচ করতে পারবেন আপনি নিঃসন্দেহে।

সকালের নাশতা এড়াবেন না
ব্রেকফাস্ট সময়মতো করতে হবে। আমেরিকান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনের একটি জার্নালে সম্প্রতি বলা হয়েছে, দেহের ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে ব্রেকফাস্ট এড়ানোর সম্পর্ক আছে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেক গবেষণায় এমনটাই দেখা গেছে, যারা সকালের নাশতা করেন না, দিনে অতিরিক্ত খেয়ে তারা দেহে বাড়তি ক্যালরি যোগ করেন। তাছাড়া কেবল স্থূলতা এড়াতেই নয়, আদর্শ লাইফস্টাইলের জন্যও এ অভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়া প্রয়োজন।

অল্প ফ্যাটসমৃদ্ধ ডেয়ারি প্রোডাক্ট খান
স্বল্প ননিযুক্ত খাবারে যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম আছে তা ক্যালরি খরচে ভূমিকা না রাখলেও এর মাধ্যমে দেহে চর্বি জমতে পারে না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যালসিয়ামে ভরপুর লো-ফ্যাটসমৃদ্ধ ডেয়ারি প্রোডাক্টের সঙ্গে পেটের চর্বির একটা যোগাযোগ আছে।

দিনে দুই লিটার পানি পান করুন
সারা দিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করবেন। এর ফলে আপনার বাড়তি ১০০ ক্যালরি খরচ হবে। জার্মানির এক ছোট গবেষণায় এমনটাই দেখা গেছে, জানালেন পোপ।

ভাবছেন, মাত্র ১০০ ক্যালরি? কিন্তু এ অভ্যাস গড়ে উঠলে সপ্তাহে ৭০০ এবং মাসে আপনার ২,৮০০ ক্যালরি পুড়বে। পাশাপাশি এটা আপনার হজম প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে এবং কিডনিও ভালো রাখবে। বাড়তি লাভ আরো আছে অনেক সময় তেষ্টা পাওয়াকে আমরা ক্ষুধার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলি। পানি পর্যাপ্ত খেলে এ বিভ্রান্তি ঘটার সম্ভাবনাও কমে যাবে।

এলোমেলোভাবে নড়াচড়া করুন
যে কোনো ধরনের দৈহিক নড়াচড়ার জন্যই এনার্জি দরকার। আর এলোমেলোভাবে হাঁটাটাও নিশ্চয়ই নড়াচড়ার মধ্যে পড়ে। ইংরেজিতে একে বলে ফিজেটিং। স্পেশালিস্টের বক্তব্য-পুরনো গবেষণায় দেখা গেছে, বাড়তি ক্যালরি খরচ হতে পারে ফিজেটিংয়ের মাধ্যমে। আরেক গবেষণায় দেখা যায়, নিয়ম করে নড়াচড়ার চেয়ে এলোমেলো নড়াচড়ার মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় কে শুকনো আর কে মোটা।