১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৮ কোটি আওয়ামীলীগ

লেখাটা শুরু করার আগে শিরোনাম নিয়ে ভাবছিলাম – ভাবছিলাম বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে যখন লিখবো তখন শিরোনাম দিই " বাংলাদেশের রাজনীতির প্যারাডাইম শিফট" – কিন্তু ছোট ভাই এর সাথে কথা বলার সময় ওর মুখে শুনলাম – ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৮ কোটি আওয়ামীলীগ হয়ে গেছে – শুনে বেশ মজা লাগলো – তাই শিরোনামটা এই ভাবেই দিলাম। 
আসলে কিছু দিন ধরে পর্যবেক্ষন করে এইটা্ই মনে হচ্ছে – বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ ছাড়া আর কোন দলই তেমন জনসমর্থন পাচ্ছে না। বিশেষ  করে আমেরিকান এক সংস্থার জরিপ রিপোর্টে বলা হচ্ছে আওয়ামীলীগ আগে চেয়ে বেশী জনসমর্থন ভোগ করছে। আসলে মানুষ ঝামেলা পছন্দ করে না – কারন কাজ মানেই টাকা – টাকার স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশের মানুষ। অন্যদিকে দেখছি – ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা ব্যাপক ভাবে বিজয়ী হচ্ছে – বিএনপির দলী প্রার্থীর চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বেশী জিতেছে – কিন্তু তাদের সর্বমোট সংখ্যা অনেক কম। এই প্রেক্ষিতেই ছোটভাইএর মন্তব্য – বাংলাদেশে এখন মানুষের চেয়ে আওয়ামীলীগ বেশী – ব্যাঙ্গত্ব এই উক্তির আড়ালে লুকিয়ে আছে আরেক চিত্র। আমার গ্রামের বাড়ীর এলাকা ছিলো দীর্ঘদিনের বিএনপির ঘাটি – সেখানে আওয়ামীলীগ কোন ভাবেই সুবিধা করতে পারতো না। কিন্তু এবারই প্রথম বিএনপির এক ধনাঢ্য নেতা দল বদল করে আওয়ামীলীগে যোগ দিলেও নৌকা প্রতীক পায়নি – সেই স্থানীয় আওয়ামীলীগ আর বিএনপির একটা অংশের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছে – মুল লড়াইটা হচ্ছে আওয়ামীলীগ বনাম আওয়ামীলীগ – বিএনপি দৃশ্যপটের আড়ালে চলে গেছে। এইটাই আসলে বাংলাদেশের চলমান হালচাল। বিএনপি – জামাত থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান ঠেকাতে  প্রধানমন্ত্রীকে পর্যণ্ত মুখ খুলতে হয়েছে। 
আসলে হচ্ছেটা কি – গত কয়েক মাস আগে ইসলামী ঐক্যজোটের বিশদল ত্যাগের পর থেকে সরকারের সুর বদলে গেছে – প্রধানমন্ত্রী সুষ্পষ্ট ঘোষনা দিয়ে নাস্তিকতার নামে ইসলাম বিরোধী লেখালেখির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ফলাফল হিসাবে দেখছি বাম-নাস্তিকগ্রুপ প্রচন্ড ক্ষেপে আছে – বিশেষ করে যারা এতোদিন যুদ্ধাপরধী বিচারের দাবীর আড়ালে ইসলাম বিরোধী প্রপাগান্ডা চালাতো – তারা এক কথায় এতিম হয়ে গেছে। অনেক নাস্তিক দেশ ত্যাগ করছে – অনেকে লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সরকারের সুষ্পষ্ট এই অবস্থানের প্রভাব পড়েছে পুরো রাজনীতিতেই। 
অন্যদিকে দেখছি – হেফাযতের নেতারা সুর নরম করে কথা বলছে – সরকারের কাজের প্রশংসা করছে। বিএনপি এতোদিন যাদের নেচারাল সাপোর্ট পেতো – তারা বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সরকারের – মানে আওয়ামীলীগের দিকে ঝুঁকছে। এইটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাট একটা পরিবর্তন বটে। বামরা এতোদিন আওয়ামীলীগের ন্যাচারাল এলাই হিসাবে ভুমিকা রেখে আসছিলো – তারা এখন প্রকাশ্যে আওয়ামী বিরোধী ভুমিকায় আর এতোদিন যারা আওয়ামীলীগের রিরোধীতা করতো তারা নানান ভাবে আওয়ামীলীগের মিত্রে পরিনত হচ্ছে। 
এই অবস্থায় সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্থ দল হলো বিএনপি – যার প্রভাব আমরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলে দেখছি। যদিও এই ক্ষেত্রে নির্বাচনে কারচূপীর অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন – কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে স্থানীয় নেতাদের শক্তিই বেশী ভুমিকা রাখে – সেখানে স্থানীয় নেতারা সরকারমুখী হয়ে পড়ায় বিএনপি অনেক জায়গায় প্রার্থী দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে এই দুরবস্থার মাঝেও বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন বাণিজ্যের খবরটা বেশ কৌতুহলপ্রদ বটে। 
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নীতিহীনতা আর সুবিধাবাদে এই চিত্রটা আর আড়ালে থাকলো না। রাজনৈতিকদলগুলো গনতন্ত্রহীনতা এবং আভ্যন্তরীন গনতন্ত্রচর্চাকে বাদ দিয়ে এককেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহন তৃণমুলকে কেন্দ্র থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। অন্যদিকে বিএনপির ভুল এবং আত্নঘাতি রাজনীতি – বিশেষ করে জামায়াতের এজেন্ডার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে আন্দোলনের নামে জনবিচ্ছিন্ন কর্মসূচীতে ্ধারাবাহিক ব্যর্থতা দলের কর্মীদের হতাশ করে ফেলেছে – ফলে ওরা দ্রুত ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার লক্ষ্যে সরকারী দলের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। 
রাজনৈতিক দলগুলো সমর্থন  ক্ষনস্থায়ী বিষয় – নীতী-আদর্শহীন রাজনৈতিক কর্মীরা সময় সুযোগ বুঝে আবারো দল বদলাবে সন্দেহ নেই – সেখানে সুবিধা সেখানেই জিন্দাবাদ। তবে বর্তমান রাজনৈতিক যে পরিবর্তনটা একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে – তা হলো ধর্মভিত্তিক ইস্যুগুলোতে এবার আওয়ামীলীগ অনেকবেশী সুবিধা পেয়ে যাবার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। একদিএক ভু-রাজনৈতিক পরিবর্তন – বিশেষ করে সৌদি-বলয়ের ব্রাদারহুডের বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থানের প্রভাবপড়েছে বাংলাদেশের জামায়াতের রাজনীতিতে – প্রকৃতপক্ষে জামায়াত অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে – ফলে ধর্ম বিষয়ক ইস্যুতে আওয়ামীলীগের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিহীন হয়ে পড়ায় ইসলামী ঐক্যজোটের মতো দলগুলো বিকল্প সন্ধান করছে এবং ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগের সাথে সখ্যতার বিষয়টি দৃশ্যমান হচ্ছে। এতে বিএনপির নেতৃত্বের দূর্বলতা এবং অপরানীতির যেমন ভূমিকা আছে – তেমনি আওয়ামীলীগের সুচতুর রাজনৈতিক কৌশলগুলোও কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। ফলাফল – মুসলিম লীগ থেকে বের হয়ে আওয়ামীমীল যে একটা ধর্মনিপপেক্ষ (অনেকের ভাষায় ধর্মহীন) চেহারা তৈরী হয়েছিলো – তা বদলে যাচ্ছে এবং মুসলিমলীগে উত্তরসুরী বিএনপি তাদের ন্যাচারাল এলাই হারাচ্ছে। অবশ্য এই পোলারাইজেশন বিষয়টা সম্পর্কে সম্পূর্ন নিশ্চিত হওয়ার জন্যে আগামী সংসদ নির্বাচন পর্যণ্ত অপেক্ষা করতে হবে। 
তবে একটা বিষয় পরিষ্কার – দীর্ঘদিনে পর্যবেক্ষন থেকে বলা যায় আওয়ামীলীগে ঐতিহাসিক মিত্র সিবিপি এখন আওয়ামীলীগ থেকে হাজার ্মাইল দুরে অবস্থান করছে – বিশেষ করে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীতে "বিসমিল্লাহ" এবং ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম হিসাবে বহাল রাখার জন্যে শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তের পর বামদলগুলো যারা প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন রাষ্ট্র চায় তারা আওয়ামীলীগের মিত্রশক্তি হিসাবে ইস্তফা দিয়েছে এবং সে জায়গা আসন পেয়েছে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক কয়েকটি গোষ্ঠী এবং দল। তাদের পরামর্শ এবং প্রভাবে আওয়ামীলীগ ইসলামপন্থী দলগুলোর সাথে দুরত্ব কমিয়ে আনার প্রেক্ষিতে আজকের এই রাজনৈতিক পোলারাইজেন।এই পোলারাইজেনশন বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে কতটা ভুমিকা রাখবে – তা সময়ের উপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কারন ইসলাম এবং আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে যে মৌলিকদন্দ্ব আছে – সেইগুলো কিভাবে মোকাবেলা করা হয় – তার উপরই এই সমঝোতার বিষয়ের সাফল্য নির্ভর করছে। তবে এক সময় না এক সময় এই দ্বন্ধ সামনে আসবেই – তখন আবার নতুন করে অস্থিরতা আর পোলারাইজেন হবে।  
ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক,শেয়ার ও কমেন্ট করে পাশে থাকুন। ঘুরে আসতে পারেন। www.facebook.fom/sobkichu24 www.free.facebook.com/sobkichu24

Share this

Related Posts

Latest
Previous
Next Post »

2 comments

comments
November 23, 2019 at 1:04 AM delete

Hi greetings!
Thanks for sharing this informative post.
Daily Bangladesh is an online news portal.To get regular updates visit https://www.daily-bangladesh.com/
Thank you.

Reply
avatar
April 12, 2020 at 8:51 AM delete

বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ালো ভারত আরো জানতে

https://www.gazipurkotha.com/বাংলাদেশের-পাশে-এসে-দাঁড়ালো-ভারত/21430

Reply
avatar