অযথা মানুষকে কষ্ট দেওয়া কী জায়েজ?
সামাজিক জীবনে কোনো প্রতিবেশীর
অধিকার নষ্ট না করা,
তাকে যথাযথভাবে সম্মান দেয়া,
তাকে কষ্ট না দেয়া মানবজীবনের
গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। কারণ সমাজে একজন
মানুষ একাকী বসবাস করতে পারে না।
মানুষ মাত্রই পরস্পর পরস্পরের মুখাপেক্ষী।
তাই সামাজিক জীবনে প্রত্যেক
মানুষেরই রয়েছে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য।
সুখে-দুঃখে একজন আরেকজনের
অংশীদার হওয়া, কেউ অসুস্থ হলে তার
দেখাশোনা করা যেমন ইমানি দায়িত্ব,
তেমনি তা মানবতার দাবিও বটে। তাই
প্রত্যেক মুসলমানের উচিত তার
প্রতিবেশীর হক আদায় করা।
প্রতিবেশীর হকের গুরুত্ব
সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে যে,
‘কোনো বান্দা যদি কোনো প্রতিবেশীর
হক নষ্ট করে, আল্লাহ তায়ালা ওই
ব্যক্তিকে ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করবেন
না যতক্ষণ না সে ক্ষমা করে।’ সুতরাং এর
দ্বারা বোঝা যায়, প্রতিবেশীর হক অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বস্তুত এ
হাদিসে বলা হয়েছে যে,
কোনো বান্দা যদি মুখের
ভাষা দিয়ে কাউকে কষ্ট দেয় এবং সে যত
বড় ব্যক্তিত্বই হোক না কেন, সে অধিক
পরিমাণে নফল ইবাদত করলেও
সে জাহান্নামি।
পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তি নফল ইবাদত কম
করল কিন্তু সে সমাজের
কোনো মানুষকে তার মুখের
কথা দ্বারা কষ্ট দেয়
না তবে সে জান্নাতবাসী। মানুষের
অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর মধ্যে জিহ্বা এমন
একটি অঙ্গ যা দ্বারা একজন মানুষ আরেকজন
মানুষের অনেক বড়
ক্ষতি করে ফেলতে পারে। মানুষের
কথাকে ধারালো তরবারির
সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।
ধারালো তরবারি যেমন
কোনো বস্তুকে কেটে ক্ষত-বিক্ষত
করে ফেলতে পারে,
তেমনিভাবে মুখের কথা একজন মানুষের
মনকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলতে পারে। এ
প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি আমাকে তার দুটি বস্তুর
ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারবে-
একটি লজ্জাস্থান, আরেকটি দুই চোয়ালের
মধ্যখানে অবস্থিত বস্তু অর্থাৎ জিহ্বা, তার
জান্নাতের ব্যাপারে আমি রাসুল (সা.)
জিম্মাদার হব।’ হাদিসের এই কথার
মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে পারি জিহ্বা
দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত সহজে শুকোয় না, এর প্রভাব
সুদূরপ্রসারী। তাই আমাদের সবার উচিত
জিহ্বাকে সংযত রাখা। সতর্কতার
সঙ্গে কথা বলা যাতে কোনো মানুষ কষ্ট
না পায়। অন্য আরেক হাদিসে, অধিক নফল
নামাজ, নফল রোজা ও দান-খয়রাতের জন্য
বিখ্যাত লোককেও শুধু
প্রতিবেশীকে জিহ্বা দ্বারা কষ্ট দেয়ার
কারণে তাকে জাহান্নামি বলা হয়েছে।
মাওলানা মিরাজ রহমান
Share this