ইসলামের দৃষ্টিতে মরণোত্তর দেহদান।

পৃথিবীতে মানুষই সবচেয়ে মর্যাদাবান।

তারাভরা আকাশ, জোছনা ভরা রাত

বিছিয়ে রাখা বিস্তৃত সবুজ ভূমি সব

আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি। আল্লাহতায়ালার

সব সৃষ্টিই মানুষের কল্যাণে। মানুষের

প্রয়োজনে। মানবজাতিকে মর্যাদাবান

করার জন্য মহান প্রভু মানুষের অবয়ব ও

কাঠামোগত সৌন্দর্য, বিবেক-বুদ্ধি ও

জ্ঞান-গরিমায় উন্নতি দিয়েছেন।

দিয়েছেন ভাব-ভাষা ও শৈলীর শক্তি।

আল্লাহতায়ালা বলেন,

আমি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে সৃষ্টি করেছি।

(সূরা তিন ৪)।

মানুষের মন-মনন, চিন্তা-চেতনা ও

জ্ঞানের মর্যাদা প্রদানে কোরআন

বলেছে, আল্লাহতায়ালা মানুষকে এমন

জ্ঞান দান করেছেন যা সে জানত না।

(সূরা আলাক ৫)।

আল্লাহ আরও বলেছেন,

আমি আদমকে বস্তুজগতের সব জ্ঞান

শিক্ষা দিয়েছি। (সূরা বাকারা ৩৩)।

সমগ্র সৃষ্টির তুলনায় মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের

কথা কোরআন এভাবে উচ্চারণ করছে,

আমি তো মানুষকে মর্যাদা দান করেছি,

জলে ও স্থলে তাদের চলাচলের বাহন

দিয়েছি, তাদের উত্তম রিজিক দিয়েছি।

সৃষ্টির অনেকের ওপর আমি মানুষের

শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। (সূরা বনি ইসরাইল ৭০)।

পৃথিবীর ফুল ফল, বৃক্ষ-তরু-লতা, পাখ-

পাখালি সব আয়োজনই মানুষের জন্য।

মানুষের প্রয়োজনে সমগ্র সৃষ্টি নিবেদিত।

সেই মানুষের হাড়, মাংস বা অঙ্গ-

প্রত্যঙ্গের যথেচ্ছ ব্যবহার, মানব অঙ্গ

বেচাকেনা, আদান-প্রদান,

কাটাছেঁড়া করা আদৌ কি মানুষের

মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ?

নাকি চিরায়ত ধারায় মর্যাদাবান

জাতি মানব সভ্যতার প্রতি অভিশাপ?

কোরআনুল কারিমে মানব সৃষ্টির

ধারাবাহিকতার

কথা এভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহ

মানুষকে কেমন সাধারণ বস্তু

থেকে সৃষ্টি করেছেন। শুক্রবিন্দু থেকে,

তিনি সৃষ্টি করেন, পরে পরিমিত বিকাশ

করেন, পরে মায়ের গর্ভ

থেকে পৃথিবীতে আসার পথ সহজ

করে দেন, তারপর তাকে মৃত্যু দেন, অতঃপর

তাকে কবরে স্থান দেন।

(সূরা আবাসা-১৮-২১)।

মরণোত্তর মানুষের দেহদান, হাড়, মাংস,

চামড়া, চর্বির বাণিজ্যিক ব্যবহার, মানব

অঙ্গ বেচাকেনা, প্রয়োজন-

অপ্রয়োজনে গবেষণা ইত্যাদি মানুষের

জন্য আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদার

সঙ্গে কতটা যুতসই! মানব জন্ম, যাপিত জীবন

ও মরণোত্তর কবরের ধারণা, মানুষের

দৈহিক-মানসিক মর্যাদা রক্ষার

বিষয়টি কি কোরআনের ভাষ্য

থেকে আমাদের আলোড়িত করে না?

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মানুষ

আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি নৈপুণ্যের

অসাধারণ উপমা। মানুষ সৃষ্টির বিস্ময়।

মানুষের আত্মা, বলা-কওয়া, দেখা-

শোনা ও ভাব-অনুভাবের শক্তি আল্লাহর

বিশেষ করুণা। করুণানির্ভর এ জীবন আল্লাহ

প্রদত্ত মানুষের কাছে আমানত।

প্রতিটি মানুষের নিজের এই অঙ্গ বা দেহ

ব্যবহারের অনুমতি আছে বটে, তবে সে এ

দেহের মালিক নয়। সে এ দেহের মালিক

নয় বিধায় সে আত্মহত্যা করতে পারবে না।

পারবে না নিজেকে বিকিয়ে দিতে।

ধ্বংস করতে। কোনো মানুষের জন্য বৈধ নয়

অঙ্গহানি, অঙ্গদান কিংবা দেহদান।

আজকের উত্তর আধুনিক পৃথিবীর সব জ্ঞান-

বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির

বিপরীতে দাঁড়িয়ে কেউ যদি আবদার

করে বসে, দয়াময় প্রভুর এ সৃষ্টির

মতো মানুষের শরীরে বিদ্যমান একটু লোম

বানিয়ে দেখাও! আত্মা, চোখ, নাক, কান

সে তো দূরের কথা! হাত

উঁচিয়ে হ্যাঁ বলার

মতো কাউকে পাওয়া যাবে কি!

মৌলিক কথা হল, কোরআন-সুন্নাহর

আলোকে জীবিত কিংবা মৃত

কোনো মানুষের অঙ্গ বা দেহের

বেচাকেনা কোনোভাবেই বৈধ নয়।

মানব অঙ্গের বেচাকেনা যদি বৈধ না হয়

তাহলে দান করার কি অনুমতি আছে? তাও

নেই। কারণ দাতার জন্য জরুরি হল

নিজে বস্তুর মালিক হওয়া।

দেহটি আল্লাহতায়ালার পক্ষ

থেকে মানুষের কাছে আমানত। আমানত

সূত্রে পাওয়া বস্তুর ব্যবহার বৈধ,

বেচাকেনা কিংবা দান বৈধ নয়।

তবে অগ্রসর পৃথিবীতে আধুনিক

চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ

অনেক দূর এগিয়েছে। ইসলাম-মুসলমান এ

অগ্রসরতাকে সাধুবাদ জানাই। আধুনিক

চিকিৎসা বিজ্ঞানের সূত্র ধরেই রক্তদান,

চক্ষুদান, কিডনিদান বা দেহদানের

প্রাসঙ্গিকতা এসে যায়। আধুনিক

চিকিৎসার স্বার্থে মানুষের অঙ্গ ব্যবহার

বা প্রতিস্থাপনের বিষয়টি আলোচনায়

এসেছে।

সন্দেহ নেই ইসলাম সব সময় মানুষের

কল্যাণে কাজ করে। চিকিৎসার

সূত্রে মানব অঙ্গের

কোনো কোনো ব্যবহার একান্ত

প্রয়োজনে ফেকাহবিদরা অনুমতি

দিয়েছেন। অবশ্য অঙ্গ ব্যবহারের ধরন

অনেক রকম হতে পারে। যেমন- তরল অঙ্গ

বা জমাট। তরল বলতে মানবদেহে দুধ আর

রক্ত। বাকি পুরোটা জমাট। মা তার দুধ

নিজের বাচ্চাকে খাওয়ানো বা অন্যের

বাচ্চাকে খাওয়ানো বা চিকিৎসার

স্বার্থে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার

পুরোটাই বৈধ। দুধের বৈধতার আলোকেই

আলেমরা রক্তদানের

বিষয়টি অনুমতি দিয়েছেন। যুক্তিকতা হল-

দুধ ও রক্ত শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার

পর দ্রুতই অভাব পূরণের প্রাকৃতিক পদ্ধতি চালু

আছে।

জমাট অঙ্গ-প্রতঙ্গ যেমন- চক্ষু, কিডনি,

মাংস ইত্যাদির বেচাকেনা, দান

কোনোটাই বৈধ নয়। দেশের আইনবিদ,

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও বিষয়টি খুব সহজ

মনে করছেন না। সামাজিক শান্তি-

শৃংখলার স্বার্থে সরকারও যথেষ্ট সতর্কতার

সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করছে।

বাণিজ্যিক পৃথিবীতে যদি মানবদেহের

বেচাকেনা বৈধ হয়! তাহলে সামাজিক

শৃংখলা থা

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »