মায়ের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলামের দিক- নির্দেশনা ও ভূমিকা

প্রত্যেক  মানুষ
পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে ওঠার
পেছনে প্রধান ভূমিকা থাকে মায়ের।
প্রত্যেক মা যদি সহিষ্ণু, মমতাময়ী,
কল্যাণকামী না হতেন তবে মানবসভ্যতার
চাকা শ্লথ হয়ে যেত। জন্মেরর সূচনাপর্ব
থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত
প্রতিটি ধাপে মায়ের অবদান অতুলনীয়।
সন্তানের জন্ম ও বেড়ে ওঠার
পেছনে মা-বাবার উভয়ের হাত রয়েছে-
একথা অনস্বীকার্য।
তবে এটা সর্বজনস্বীকৃত যে,
এক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকাই প্রধান।
মা হচ্ছেন সন্তানের সুখ-দুঃখের অনন্ত
সঙ্গী। মা সন্তানের সুখে সুখী হন, আবার
সন্তানের দুঃখে দুঃখী হন। নিজের সমস্ত
স্বাদ-আহ্লাদ, আনন্দ-বেদনা বিলিয়ে দেন
সন্তানের সুখ-শান্তির জন্য। তার হৃদয়ের
প্রবহমান প্রতিটি রক্ত কণিকায়
রয়েছে সন্তানের জন্য ভালোবাসা।
মা তার
সন্তানকে তিলে তিলে গড়ে তোলেন।
পৃথিবীতে একমাত্র মায়ের
ভালোবাসা ও দানই নিঃস্বার্থ ও
বিনিময়হীন। ইসলাম মায়ের মর্যাদা ও
অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইসলাম
মাকে উচ্চাসনে স্থান দিয়েছে।
ইসলামের ঘোষণা হচ্ছে, ‘মায়ের পায়ের
নিচে সন্তানের বেহেশত।’ মায়ের
সেবা শুশ্রƒষার দ্বারা বেহেশতের
অধিকারী হওয়া যায়। বাবার তুলনায় ইসলাম
মায়ের অধিকার অধিক ঘোষণা করেছে।
এক সাহাবি হজরত রাসুলুল্লাহকে (সা.)
জিজ্ঞেস করলেন, আমার সুন্দর ব্যবহার
পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে?
আল্লাহর রাসুল (সা.)
স্পষ্টভাবে ঘোষণা করলেন, তোমার মা।
সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমার
মায়ের পরে আমি কার সঙ্গে সুন্দর আচরণ
করব? আল্লাহর নবী তাগিদ দেয়ার জন্য
বললেন, তোমার মায়ের পরেও তোমার
মায়ের অধিকার পালন করতে হবে। তার
সঙ্গে সুন্দর আচরণ তোমাকে করতে হবে।
এভাবে তিনবার আল্লাহর রাসুল (সা.)
মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করার
কথা বলেছেন। চতুর্থবার বলেছেন, অতঃপর
তুমি তোমার বাবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ
করবে।’
মায়ের সেবা করা জিহাদের চেয়েও
বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আল্লাহর রাসুল (সা.)
বলেছেন, ‘আল্লাহ ব্যতীত
যদি কাউকে সেজদা করার নির্দেশ হতো,
তবে সন্তানকে নির্দেশ দেয়া হতো তার
মাকে সেজদা করার জন্য।’ আপনি যত বড়
শিক্ষিতই হোন, যত প্রতিভাধরই হোন,
আপনার মা অশিক্ষিতা হলেও মায়ের
পায়ের নিচেই আপনার জান্নাত।
যে সন্তান মায়ের সান্নিধ্য গ্রহণ করার
পাশাপাশি মাকে সন্তুষ্ট
করতে পেরেছে তারাই সাফল্যের সন্ধান
পেয়েছে। সন্তানের কামিয়াবি নিহিত
আছে মায়ের দোয়ায়।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে ইরশাদ
করেছেন, ‘আর তোমার
পালনকর্তা (কতিপয়) সিদ্ধান্ত দিয়েছেন
(তা এই) যে, তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই
ইবাদত করবে এবং পিতা-মাতার
সঙ্গে সুব্যবহার করবে। যদি তাদের
মধ্যে একজন কিংবা দু’জনই তোমার
কাছে বৃদ্ধ বয়সে অবশ্যই পৌঁছে যায়,
তাহলে (তাদের
খিটখিটে ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে) তাদের
তুমি উহ্ শব্দও বলবে না এবং তাদের ধমকও
দেবে না। আর তাদের
সঙ্গে তুমি সম্মানজনক
কথা বলবে এবং তাদের জন্য দোয়ার মধ্য
থেকে নম্রতার বাহু ঝুঁকিয়ে দাও। আর
তাদের জন্য দোয়াস্বরূপ এ কথা বলবে,
হে আমার পালনকর্তা, তাদের দু’জনের ওপর
ঐরূপ দয়া কর, যেরূপ
তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন-পালন
করেছিলেন (সুরা বনি ইসরাইল, ২৩-২৪
আয়াত)।
ওই আয়াত দু’টিতে আল্লাহ
তায়ালা মানুষকে ৫টি নির্দেশ
দিয়েছেন। ১. তাঁর ইবাদতের পরেই পিতা-
মাতার সঙ্গে সুব্যবহার করা। ২. পিতা-
মাতাকে বৃদ্ধ বয়সে পেলে তাদের
খিটখিটে মেজাজের কারণে বিরক্ত
হয়ে তাদের ‘উহ্’ শব্দও না বলা। ৩. তাদের
ধমক না দেয়া। ৪. তাদের মানসম্মান
রেখে কথা বলা এবং শক্তির গরম
না দেখানো। ৫. তাদের প্রতি দয়া করার
জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
সন্তানের লালন-পালন ও উত্তম চরিত্র
গঠনে মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
তার কোলই সন্তানের প্রথম পাঠশালা।
মায়ের কাছ থেকেই সন্তান গ্রহণ
করে জীবনের প্রথম পাঠ। তার ভাষায়ই
ফোটে প্রথম কথা। মায়ের আচরণ থেকেই
সে শিখে জীবনযাপনের পথ ও পাথেয়।
শৈশব-কৈশোরে সন্তানের
মধ্যে যে স্বভাব-চরিত্র গড়ে ওঠে, তা-ই
তার জীবনের ভিত্তি এবং মৌলিক
দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করে।
সন্তানকে মায়ের কোলে থাকতেই সঠিক
শিক্ষা-দীক্ষায় গড়ে না তুললে, আদব-
কায়দা না শেখালে পরে কোনো ব্যবস্থাই
কাক্সিক্ষত ফলদায়ক হয় না। বিখ্যাত
সাহাবি ইবনে মাসউদ বলেন, একবার
আমি হজরত নবী করীমকে (সা.) জিজ্ঞেস
করলাম, কোন কাজটা আল্লাহর
কাছে সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন,
সঠিক সময়ে নামাজ পড়া। আমি বললাম,
তারপর? তিনি বললেন, পিতা-মাতার
সঙ্গে সদ্ব্যবহার। আমি বললাম, তারপর?
তিনি বললেন, আল্লাহর পথে সংগ্রাম
(বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)। সাহাবি আবু
উমামাহ (রা.) বলেন, একজন লোক বলল,
হে আল্লাহর রাসুল (সা.) সন্তানের ওপর
পিতা-মাতার অধিকার কী? তিনি (সা.)
বললেন, তারা দু’জন তোমার জান্নাত
অথবা তোমার জাহান্নাম (ইবনে মাজাহ,
মিশকাত)। আল্লাহ আমাদের
সবাইকে ইসলামের আদর্শ মোতাবেক
মায়ের মর্যাদা প্রদান করার তাওফিক দান
করুন। আমিন।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »