যাকাতের হুকুম আহকাম

যাকাতের হুকুম আহকাম

যাকাতের আহকাম ও মাসায়িল

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের তৃতীয় হচ্ছে যাকাত। যাকাত আর্থিক ইবাদত সমূহের মধ্যে অন্যতম। প্রত্যেক ধনী মুসলমানের উপর যাকাত আদায় করা ফরয। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, 
خذ من اموالهم صدقة تطهرهم وتزكيهم بها وصل عليهم ان صلوتك سكن لهم.

অর্থ: “আপনি তাদের সম্পদ হতে ছদক্বা (যাকাত) গ্রহণ করবেন। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র ও ইছ্লাহ করবেন। আপনি তাদের জন্য দুআ করুন। নিশ্চয়ই আপনার দুআ তাদের জন্য পরম প্রশান্তির কারণ।” (সূরা তওবা-১০৩) 
যাকাত না দেয়ার পরিণতি
**********************
যাকাত আদায় না করার পরিণতি সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত উমর ইবনুল খত্ত্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, স্থলে এবং পানিতে যেখানেই কোন সম্পদ ধ্বংস হয়, তা হয় কেবল যাকাত আদায় না করার কারণে।” (তবারানী শরীফ) 
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি যাকাত প্রদান করেনা, তার নামায কবুল হয়না।” (বুখারী শরীফ) 


যাকাত এর সংজ্ঞা
***************

যাকাত শব্দটি আরবী। অর্থ পবিত্রতা বা বৃদ্ধি। শরীয়তের পরিভাষায় যাকাত হল কোন মুসলমান স্বাধীন বালেগ বালেগাহ-এর নিকট হাওয়ায়েজে আছলিয়াহ বা নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, মাল-সামানা, বাদ দিয়ে কর্জ ব্যতীত নিজ মালিকানাধীনে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্য যদি পূর্ণ এক বছর থাকে তবে শতকরা ২.৫ টাকা যাকাতের নিয়তে আল্লাহ পাকের   সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে শরীয়তের নির্দেশ মুতাবিক যাকাত গ্রহণের উপযোগী কোন মুসলমানের অধিকারে দিয়ে দেয়া

। 
এ স্থলে দাতা গ্রহিতা থেকে বিনিময়স্বরূপ কোন ফায়দা হাছিল করতে পারবে না। কোন সুবিধা হাছিল করলে বা হাছিলের আশা রাখলে তার যাকাত আদায় হবে না। 
এমনকি যাকাত গ্রহীতার থেকে একটা ধন্যবাদ পাওয়ার ও আশা না করা ৷

যাকাত এর নিছাব

************************


নিছাব বলা হয় শরীয়তের নির্ধারিত আর্থিক নিম্নতম সীমা বা পরিমাণকে অর্থাৎ কোন মুসলমান স্বাধীন বালেগ বালেগাহ-এর নিকট হাওয়ায়েজে আছলিয়াহ বা নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, মাল-সামানা, বাদ দিয়ে কর্জ ব্যতীত নিজ মালিকানাধীন সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্য পূর্ণ এক বছর থাকা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় একেই ‘নিছাব’ বলে। মালের প্রকৃত ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন মালের নিছাব বিভিন্ন। 

যাকাত ফরয হওয়ার শর্তাবলী

***************************


নিম্ন বর্ণিত দশ প্রকার গুণ সম্পন্ন লোকের উপর যাকাত ফরয- 
(১) মুসলমান হওয়া। 
(২) বালেগ হওয়া। 
(৩) জ্ঞানবান হওয়া। 
(৪) স্বাধীন হওয়া। 
(৫) নিছাব পরিমান মালের পূর্ণ মালিক হওয়া। 
(৬) যাকাতের মালের পূর্ণ মালিকানা থাকা। 
(৭) নিছাব কর্যমুক্ত হওয়া। 
(৮) নিছাব পরিমান মাল হাওয়ায়েজে আছলিয়ার অতিরিক্ত হওয়া। 
(৯) মাল বর্ধনশীল হওয়া। 
(১০) নিছাবের মালের বৎসর শেষ হওয়া। 

(দলীলসমূহ: (১) আলমগীরী, (২) আইনুল হিদায়া, (৩) বাহরুর রায়িক,
নিম্নলিখিত ৮টি খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা ফরয: 
**********************************************

পবিত্র কুরআন শরীফ-সুরা তাওবার ৬০নং আয়াতে বলেন,
  إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاِبْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
যাকাত হলো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত, এ সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস মুক্তির জন্যে, ঋণগ্রস্তদের জন্যে, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্যে। এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” 
(সূরা তওবা: আয়াত শরীফ: ৬০) 

অর্থাৎ 


১. ফকীর: ফকীর ওই ব্যক্তি যার নিকট খুবই সামান্য সহায় সম্বল আছে। 
২. মিসকীন: মিসকীন ওই ব্যক্তি যার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি এবং আত্মসম্মানের খাতিরে কারও কাছে হাত পাততে পারে না। 
৩. আমিল: যাকাত আদায় ও বিতরণের কর্মচারী। 
৪. মন জয় করার জন্য নও মুসলিম: অন্য ধর্ম ছাড়ার কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে। অভাবে তাদেরকে সাহায্য করে ইসলামের উপর সুদৃঢ় করা। 
৫. ঋণমুক্তির জন্য: জীবনের মৌলিক বা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য সঙ্গত কারণে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণ মুক্তির জন্য যাকাত প্রদান করা। 
৬. দাসমুক্তি: কৃতদাসের মুক্তির জন্য। 
৭. ফী সাবীলিল্লাহ বা জিহাদ: অর্থাৎ ইসলামকে বোল-বালা বা বিজয়ী করার লক্ষ্যে যারা কাফির বা বিধর্মীদের সাথে জিহাদে লিপ্ত সে সকল মুজাহিদদের প্রয়োজনে যাকাত দেয়া যাবে। 
৮. মুসাফির: মুসাফির অবস্থায় কোন ব্যক্তি বিশেষ কারণে অভাবগ্রস্ত হলে ওই ব্যক্তির বাড়িতে যতই ধন-সম্পদ থাকুক না কেন তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে। 

নিম্নলিখিত খাতে বা ব্যক্তিদের যাকাত দেয়া যাবেনা:

****************************************

    ১.কোন জনকল্যাণমূলক কাজ বা এরূপ ফান্ডে বা এরূপ প্রতিষ্ঠানে যাকাত ও ফিতরার টাকা কোনটিই দেয়া যাবে না। 
    ২. নিছাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না। 
   ৩. উলামায়ে মুতাক্বদ্দিমীন উনাদের মতে, কুরাঈশ গোত্রের বনু হাশিম-এর অন্তর্গত হযরত আব্বাস, হযরত জাফর, হযরত আকীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বংশধরদের জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে উলামায়ে মুতাআখখিরীনগণের মতে বৈধ।

    ৪. অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না। 

    ৫. যে সমস্ত মাদরাসায় ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহ বোডিং আছে সেখানে যাকাত দেয়া যাবে এবং যে সমস্ত মাদরাসায় লিল্লাহ বোডিং নেই সেখানে যাকাত দেয়া যাবে না। 

    ৬. দরিদ্র পিতা-মাতাকে, সন্তানকে, স্বামী বা স্ত্রীকে যাকাত দেয়া যাবে না। 

    ৭. প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা, লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্য যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে যাকাত দেয়া যাবে না। 

    ৮. উপার্জনে সক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে। 
৯. বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ কর্মচারী, কর্মচারীনী বা কাজের পুরুষ ও মহিলাদেরকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না। 
১০. কোন জনকল্যাণমূলক কাজ বা এরূপ ফান্ডে বা এরূপ প্রতিষ্ঠানে যাকাত ও ফিতরার টাকা কোনটিই দেয়া যাবে না। 

বিঃ দ্রঃ

*******


 যাকাত আদায় করার জন্য অবশ্যই নিয়ত করতে হবে। এটা ফরয ইবাদত, এর নিয়ত করাও ফরয। মুখে উচ্চারণ করা বা যাকাত গ্রহণকারীকে শুনিয়ে বলা প্রয়োজন নেই। তবে মনে মনে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে যে,‘আমি যাকাত আদায় করছি’ অন্যথায় যাকাত আদায় হবে না। তা সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে। 

 যাকাত এর গুরুত্ব ফুটিয়ে তোলার জন্য আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেছেন, 

তোমরা নিজেদের জন্য যা পছন্দ করবেনা অর্থাৎ যে দ্রব্য বা কাপড় অথবা ফসল, ফলাদি বা প্রাণী তা যাকাত দেয়ার জন্য নির্ধারিত করোনা। আল্লাহ পাক গণী এবং অভাবমুক্ত। 

    অর্থাৎ যাকাত যে মাল বা বস্তু দ্বারা আদায় করবে তা অবশ্যই স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যম-িত হতে হবে। তা সকলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হতে হবে। এক কথায় সর্বোত্তম বস্তু দ্বারা যাকাত প্রদান করতে হবে। 
অথচ বর্তমানে কাফির-মুশরিক, বে-দ্বীন, বদ-দ্বীনদের একটি হীন চক্রান্ত লক্ষ্য করা যায় যাকাতকে ঘিরে। তা হলো, দেখা যায় দেশের বিভিন্ন দোকান-পাটে, মার্কেটে সাইনবোর্ড, ব্যানারে বড় করে লিখা হয় ‘এখানে সুলভমূল্যে যাকাতের কাপড় পাওয়া যায়।’ নাঊযুবিল্লাহ!

হিংস্র জন্তুর চামড়ার বিছানায় বসা নিষেধ, কিন্তু কেন?


আরবি হাদিস
ﻭَﻋَﻦْ ﺃَﺑﻲ ﺍﻟﻤَﻠِﻴﺢِ، ﻋَﻦ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﺃﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ
ﻧَﻬَﻰ ﻋَﻦْ ﺟُﻠُﻮﺩِ ﺍﻟﺴِّﺒَﺎﻉِ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃَﺑُﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱُّ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲُّ
ﺑﺄﺳﺎﻧِﻴﺪ ﺻِﺤَﺎﺡٍ . ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻟﻠﺘﺮﻣﺬﻱ : ﻧَﻬَﻰ ﻋَﻦْ ﺟُﻠُﻮﺩِ
ﺍﻟﺴِّﺒَﺎﻉِ ﺃﻥْ ﺗُﻔْﺘَﺮَﺵَ .
বাংলা হাদিস
আবুল মালীহ রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয়
পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিংস্র জন্তুর
চামড়ার বিছানায় বসতে নিষেধ
করেছেন।
তিরমিযীর বর্ণনায় আছে, তিনি হিংস্র
জন্তুর চামড়া বিছাতে নিষেধ করেছেন।
[তিরমিযি ১৭৭১, নাসায়ি ৪২৫৩, আবু দাউদ
৪১৩২, আহমদ ২০১৮৩, ২০১৮৯, দারেমি ১৯৮৩]

স্বাস্থ্য পরিচর্যা সম্পর্কে ইসলামের দিক- নির্দেশনা


কোরান-সুন্নাহর আলোকে স্বাস্থ্য
সুরক্ষার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পেয়েছে।
সুস্থতাই সবার কাম্য। রাসুল (সা.)
হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘যে ঈমানদার
ব্যক্তির শারীরিক শক্তি আছে,
তিনি শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর নিকট প্রিয়। কারণ
ইবাদত করার জন্য শারীরিক
শক্তি প্রয়োজন। তার পথে সংগ্রাম করার
জন্য শক্তি প্রয়োজন। শারীরিক
শক্তি আল্লাহ তায়ালার অন্যতম শ্রেষ্ঠ
নেয়ামত। হাদিস শরিফে রাসুল (সা.)
পাঁচটি অমূল্য সম্পদ হারানোর
পূর্বে এগুলোর গুরুত্ব প্রদানের
কথা বলেছেন। এর অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য ও
সুস্থতা। স্বাস্থ্য ও
চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামে রয়েছে বিশদ
আলোচনা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগ
প্রতিরোধের বিষয়ে ইসলাম সর্বোচ্চ
গুরুত্ব দিয়েছে। সতর্কতা সত্ত্বেও
কোনো রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত
হয়ে গেলে এর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার
প্রতিও রয়েছে জোরালো তাগিদ।
স্বাস্থ্য রক্ষার পরপরই ইসলাম রোগ
প্রতিরোধের প্রতি জোর তাগিদ
দিয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ
করতে উৎসাহিত করেছে। আধুনিক
চিকিৎসা বিজ্ঞানের সে¬াগান হচ্ছে-
চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ উত্তম।
এজন্য আমরা দেখতে পাই, যে বিষয়গুলোর
কারণে মানুষের রোগ হয় ইসলাম আগেই
সেগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
রাসুল (সা.) রোগের প্রতিষেধক
হিসেবে মধুর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ
করেছেন। গবেষণা করে দেখা গেছে,
একমাত্র মধুর ব্যবহারেই হাজারো রকমের
কঠিন-জটিল রোগ থেকে অতি অল্প
সময়েই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।
মানবদেহের সুস্থতার জন্য যত প্রকার
ভিটামিন আবশ্যক তার শতকরা ৭৫ ভাগই মধুর
মধ্যে বিদ্যমান। চিকিৎসা শাস্ত্র মতে মধু
অপেক্ষা শক্তিশালী ভিটামিনযুক্ত পদার্থ
পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়নি। ইসলাম
মানবপ্রকৃতির সহায়ক ও উপযোগী একটি ধর্ম।
মানবজীবনের সামগ্রিক দিক পূর্ণাঙ্গ ও
যথাযথ আলোচিত হয়েছে ইসলামে।
মানুষের জীবনের সব প্রয়োজনের কথাই
উল্লেখ রয়েছে। একান্ত ব্যক্তিগত
বিষয়গুলো সম্পর্কেও ইসলামের সুস্পষ্ট
নির্দেশনা পাওয়া যায়। রাসুল (সা.)
বলেছেন, ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার
শরীরের হক আছে।’ স্বাস্থ্য
রক্ষা করা শরিয়াতের তাগিদ। এর যথেচ্ছ
ব্যবহার করা যাবে না। কোরান-সুন্নাহ
এবং ইসলামি শরিয়াত স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য
যেমন গুরুত্ব
দিয়েছে তেমনি তা কার্যকরের ফলপ্রসূ
উপায় বাতলে দিয়েছে। যেমন,
নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম করা, পরিমিত
আহার, সময়ানুগ খাবার গ্রহণ ইত্যাদি।
কাজেই স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সচেষ্ট
হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের ঈমান ও
বিশ্বাসের দাবি।
মাওলানা মিরাজ রহমান

সামর্থ থাকার পরও বিনয়ের সাথে মূল্যবান পোশাক পরিহার করার ফজিলত


আরবি হাদিস
ﻭَﻋَﻦْ ﻣُﻌَﺎﺫِ ﺑﻦِ ﺃَﻧَﺲٍ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﺃﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ، ﻗَﺎﻝَ : ‏«
ﻣَﻦْ ﺗَﺮَﻙَ ﺍﻟﻠِّﺒَﺎﺱَ ﺗَﻮَﺍﺿُﻌﺎً ﻟﻠﻪِ، ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﻘْﺪِﺭُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﺩَﻋَﺎﻩُ ﺍﻟﻠﻪُ ﻳَﻮﻡَ
ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﺅُﻭﺱِ ﺍﻟﺨَﻼﺋِﻖِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺨَﻴِّﺮَﻩُ ﻣِﻦْ ﺃﻱِّ ﺣُﻠَﻞِ
ﺍﻹﻳﻤَﺎﻥِ ﺷَﺎﺀَ ﻳَﻠْﺒَﺴُﻬَﺎ ‏». ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ، ﻭﻗﺎﻝ : ‏« ﺣﺪﻳﺚ
ﺣﺴﻦ »
বাংলা হাদিস
মুআয ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তি মূল্যবান পোশাক পরার
ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও
বিনয়বশতঃ তা পরিহার করল, আল্লাহ
কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষের
সাক্ষাতে তাকে ডেকে স্বাধীনতা
দেবেন, সে যেন ঈমানের (অর্থাৎ
ঈমানদারদের পোশাক) জোড়াসমূহের মধ্য
থেকে যে কোন
জোড়া বেছে নিয়ে পরিধান করে।
[তিরমিযি ২৪৮১, আহমদ ১৫২০৪]

শ্বশুড়-শ্বাশুড়িকে আব্বা- আম্মা বলা যাবে কিনা?


শ্বশুড়-শ্বাশুড়িকে আব্বা-
আম্মা বলা যাবে কি? যদি বলা যায়
তাহলে ওই হাদিসের ব্যাখ্যা কী হবে,
যে হাদিসে অন্যকে পিতা বলে সম্বোধন
করতে নিষেধ করা হয়েছে?
যে হাদিসে অন্যকে পিতা বলে সম্বোধন
করতে নিষেধ করা হয়েছে তার অর্থ
বংশপরিচয় প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আসল
পরিচয় গোপন রেখে নিজের পিতার নাম
উল্লেখ না করে, অন্যের নাম প্রকাশ করা।
যেমন-আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন
অথবা এমন কোনো দলিল বা স্থান
যেখানে কোনো ব্যক্তির
জন্মদাতা পিতার নাম প্রকাশ করা জরুরি হয়।
আর স্বামী বা স্ত্রীর পিতা-
মাতাকে সম্মানার্থে আব্বা-
আম্মা বলে সম্বোধন করার
দ্বারা বংশপরিচয় গোপন হয় না। তাই শ্বশুড়-
শ্বাশুড়িকে আব্বা-আম্মা বলা হাদিসের
নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়
এবং তা জায়েজ। মানে শ্বশুড়-
শ্বাশুড়িকে আব্বু-আম্মু বলে ডাকা যাবে।
[আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৫৪; সহীহ
বুখারী, হাদীস : ৬৭৬৬; ৬৭৬৮, ৪৩২৬,
৪৩২৭,৩৫০৮; উমদাতুল কারী ১৬/৭৯; সহীহ
মুসলিম, হাদীস : ১১২-১১৫; ইকমালুল মুলিম
১/৩১৯; তাফসীরে রূহুল মাআনী ৯/২১০;
তাফসীরে কুরতুবী ১২/৬৭; ফাতহুল মুলহিম
১/২৩৬; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯/৪৯-৫২;
মুসনাদে আহমদ ১/১৭৪, ৩/৮৯; ফয়যুল কাদীর
৬/৪৬; কেফায়াতুল মুফতী ৯/১১৮]

রেশম কাপড় পরিধান করলে কী হয়?


আরবি হাদিস
ﻭَﻋَﻨْﻪُ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ، ﻳَﻘُﻮﻝُ : ‏« ﺇﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻠْﺒَﺲُ
ﺍﻟﺤَﺮِﻳﺮَ ﻣَﻦْ ﻻَ ﺧَﻼَﻕَ ﻟَﻪُ ‏» . ﻣﺘﻔﻖٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ . ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ
ﻟﻠﺒﺨﺎﺭﻱ : ‏« ﻣَﻦْ ﻻَ ﺧَﻼَﻕَ ﻟَﻪُ ﻓﻲ ﺍﻵﺧِﺮَﺓِ » .
বাংলা হাদিস
উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে
শুনেছি, সে-ই রেশম পরিধান করে, যার
কোনই অংশ নেই।
বুখারির এক বর্ণনায় আছে, যার
আখেরাতে কোন অংশ নেই।
[বুখারি ৫৮২৮, ৫৮৩০, ৫৮৩৪, ৫৮৩৫, মুসলিম
২০৬৯, নাসায়ি ৫৩১২, ৫৩১৩, আবু দাউদ ৪০৪২,
ইবন মাজাহ ২৮১৯, ২৮২০, ৩৫৯৩, আহমদ ৯৩, ২৪৪,
৩০৩ , ৩২৩, ৩৫৮, ৩৬৭]

মায়ের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলামের দিক- নির্দেশনা ও ভূমিকা

প্রত্যেক  মানুষ
পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে ওঠার
পেছনে প্রধান ভূমিকা থাকে মায়ের।
প্রত্যেক মা যদি সহিষ্ণু, মমতাময়ী,
কল্যাণকামী না হতেন তবে মানবসভ্যতার
চাকা শ্লথ হয়ে যেত। জন্মেরর সূচনাপর্ব
থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত
প্রতিটি ধাপে মায়ের অবদান অতুলনীয়।
সন্তানের জন্ম ও বেড়ে ওঠার
পেছনে মা-বাবার উভয়ের হাত রয়েছে-
একথা অনস্বীকার্য।
তবে এটা সর্বজনস্বীকৃত যে,
এক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকাই প্রধান।
মা হচ্ছেন সন্তানের সুখ-দুঃখের অনন্ত
সঙ্গী। মা সন্তানের সুখে সুখী হন, আবার
সন্তানের দুঃখে দুঃখী হন। নিজের সমস্ত
স্বাদ-আহ্লাদ, আনন্দ-বেদনা বিলিয়ে দেন
সন্তানের সুখ-শান্তির জন্য। তার হৃদয়ের
প্রবহমান প্রতিটি রক্ত কণিকায়
রয়েছে সন্তানের জন্য ভালোবাসা।
মা তার
সন্তানকে তিলে তিলে গড়ে তোলেন।
পৃথিবীতে একমাত্র মায়ের
ভালোবাসা ও দানই নিঃস্বার্থ ও
বিনিময়হীন। ইসলাম মায়ের মর্যাদা ও
অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইসলাম
মাকে উচ্চাসনে স্থান দিয়েছে।
ইসলামের ঘোষণা হচ্ছে, ‘মায়ের পায়ের
নিচে সন্তানের বেহেশত।’ মায়ের
সেবা শুশ্রƒষার দ্বারা বেহেশতের
অধিকারী হওয়া যায়। বাবার তুলনায় ইসলাম
মায়ের অধিকার অধিক ঘোষণা করেছে।
এক সাহাবি হজরত রাসুলুল্লাহকে (সা.)
জিজ্ঞেস করলেন, আমার সুন্দর ব্যবহার
পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে?
আল্লাহর রাসুল (সা.)
স্পষ্টভাবে ঘোষণা করলেন, তোমার মা।
সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমার
মায়ের পরে আমি কার সঙ্গে সুন্দর আচরণ
করব? আল্লাহর নবী তাগিদ দেয়ার জন্য
বললেন, তোমার মায়ের পরেও তোমার
মায়ের অধিকার পালন করতে হবে। তার
সঙ্গে সুন্দর আচরণ তোমাকে করতে হবে।
এভাবে তিনবার আল্লাহর রাসুল (সা.)
মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করার
কথা বলেছেন। চতুর্থবার বলেছেন, অতঃপর
তুমি তোমার বাবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ
করবে।’
মায়ের সেবা করা জিহাদের চেয়েও
বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আল্লাহর রাসুল (সা.)
বলেছেন, ‘আল্লাহ ব্যতীত
যদি কাউকে সেজদা করার নির্দেশ হতো,
তবে সন্তানকে নির্দেশ দেয়া হতো তার
মাকে সেজদা করার জন্য।’ আপনি যত বড়
শিক্ষিতই হোন, যত প্রতিভাধরই হোন,
আপনার মা অশিক্ষিতা হলেও মায়ের
পায়ের নিচেই আপনার জান্নাত।
যে সন্তান মায়ের সান্নিধ্য গ্রহণ করার
পাশাপাশি মাকে সন্তুষ্ট
করতে পেরেছে তারাই সাফল্যের সন্ধান
পেয়েছে। সন্তানের কামিয়াবি নিহিত
আছে মায়ের দোয়ায়।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে ইরশাদ
করেছেন, ‘আর তোমার
পালনকর্তা (কতিপয়) সিদ্ধান্ত দিয়েছেন
(তা এই) যে, তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই
ইবাদত করবে এবং পিতা-মাতার
সঙ্গে সুব্যবহার করবে। যদি তাদের
মধ্যে একজন কিংবা দু’জনই তোমার
কাছে বৃদ্ধ বয়সে অবশ্যই পৌঁছে যায়,
তাহলে (তাদের
খিটখিটে ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে) তাদের
তুমি উহ্ শব্দও বলবে না এবং তাদের ধমকও
দেবে না। আর তাদের
সঙ্গে তুমি সম্মানজনক
কথা বলবে এবং তাদের জন্য দোয়ার মধ্য
থেকে নম্রতার বাহু ঝুঁকিয়ে দাও। আর
তাদের জন্য দোয়াস্বরূপ এ কথা বলবে,
হে আমার পালনকর্তা, তাদের দু’জনের ওপর
ঐরূপ দয়া কর, যেরূপ
তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন-পালন
করেছিলেন (সুরা বনি ইসরাইল, ২৩-২৪
আয়াত)।
ওই আয়াত দু’টিতে আল্লাহ
তায়ালা মানুষকে ৫টি নির্দেশ
দিয়েছেন। ১. তাঁর ইবাদতের পরেই পিতা-
মাতার সঙ্গে সুব্যবহার করা। ২. পিতা-
মাতাকে বৃদ্ধ বয়সে পেলে তাদের
খিটখিটে মেজাজের কারণে বিরক্ত
হয়ে তাদের ‘উহ্’ শব্দও না বলা। ৩. তাদের
ধমক না দেয়া। ৪. তাদের মানসম্মান
রেখে কথা বলা এবং শক্তির গরম
না দেখানো। ৫. তাদের প্রতি দয়া করার
জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
সন্তানের লালন-পালন ও উত্তম চরিত্র
গঠনে মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
তার কোলই সন্তানের প্রথম পাঠশালা।
মায়ের কাছ থেকেই সন্তান গ্রহণ
করে জীবনের প্রথম পাঠ। তার ভাষায়ই
ফোটে প্রথম কথা। মায়ের আচরণ থেকেই
সে শিখে জীবনযাপনের পথ ও পাথেয়।
শৈশব-কৈশোরে সন্তানের
মধ্যে যে স্বভাব-চরিত্র গড়ে ওঠে, তা-ই
তার জীবনের ভিত্তি এবং মৌলিক
দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করে।
সন্তানকে মায়ের কোলে থাকতেই সঠিক
শিক্ষা-দীক্ষায় গড়ে না তুললে, আদব-
কায়দা না শেখালে পরে কোনো ব্যবস্থাই
কাক্সিক্ষত ফলদায়ক হয় না। বিখ্যাত
সাহাবি ইবনে মাসউদ বলেন, একবার
আমি হজরত নবী করীমকে (সা.) জিজ্ঞেস
করলাম, কোন কাজটা আল্লাহর
কাছে সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন,
সঠিক সময়ে নামাজ পড়া। আমি বললাম,
তারপর? তিনি বললেন, পিতা-মাতার
সঙ্গে সদ্ব্যবহার। আমি বললাম, তারপর?
তিনি বললেন, আল্লাহর পথে সংগ্রাম
(বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)। সাহাবি আবু
উমামাহ (রা.) বলেন, একজন লোক বলল,
হে আল্লাহর রাসুল (সা.) সন্তানের ওপর
পিতা-মাতার অধিকার কী? তিনি (সা.)
বললেন, তারা দু’জন তোমার জান্নাত
অথবা তোমার জাহান্নাম (ইবনে মাজাহ,
মিশকাত)। আল্লাহ আমাদের
সবাইকে ইসলামের আদর্শ মোতাবেক
মায়ের মর্যাদা প্রদান করার তাওফিক দান
করুন। আমিন।

ভুলবশত দাঁড়িয়ে পানি পান করলে কী হয়?

আরবি হাদিস
ﻭَﻋَﻦ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳﺮَﺓَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ : ‏«
ﻻَ ﻳَﺸْﺮَﺑَﻦَّ ﺃﺣَﺪٌ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻗَﺎﺋِﻤﺎً، ﻓَﻤَﻦْ ﻧَﺴِﻲَ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﻘِﻲﺀ ‏». ﺭﻭﺍﻩ
ﻣﺴﻠﻢ
বাংলা হাদিস
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই
দাঁড়িয়ে পান না করে। আর যদি ভুলে যায়
(ভুলবশতঃ পান করে ফেলে),
তাহলে সে যেন বমি করে দেয়।
[মুসলিম ২০২৬, আহমদ ৮১৩৫]

বাান্দার ওপর আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের প্রভাব-চিহ্ন কী?


আরবি হাদিস
ﻋَﻦ ﻋَﻤﺮِﻭ ﺑﻦِ ﺷُﻌَﻴﺐٍ، ﻋَﻦ ﺃَﺑﻴﻪِ، ﻋَﻦ ﺟَﺪِّﻩِ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ،
ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ : ‏« ﺇﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺃﻥْ ﻳُﺮَﻯ ﺃﺛَﺮُ ﻧِﻌْﻤَﺘِﻪِ
ﻋَﻠَﻰ ﻋَﺒْﺪِﻩِ ‏» . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ، ﻭﻗﺎﻝ : ‏«ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ »
বাংলা হাদিস
আমর ইবনে শুআইব স্বীয় পিতা হতে,
তিনি স্বীয় দাদা হতে বর্ণনা করেছেন,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়
আল্লাহ পছন্দ করেন যে, তাঁর বান্দার উপর
তাঁর প্রদত্ত নেয়ামতের প্রভাব ও চিহ্ন
দেখা যাক।
[তিরমিযি ২৮১৯]

জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীন দেশে যাও- কথাটি কী সঠিক?


জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীন
দেশে যাও- মূল বাক্যটি আরবিতে বলা হয়
এবং এই আরবি বাক্যটি ব্যাপকভাবে হাদিস
হিসাবে প্রচলিত। প্রকৃত পক্ষে এটি হাদিস
নয় বরং পরবর্তীকালের কোনো মুসলিম
মণীষীর বাণী। তবে সন্দেহ নেই যে,
বক্তব্যটি সঠিক ও বাস্তবসম্মত। ইলমে দ্বীন
হাসিলের জন্য যত দূরের সফরই হোক,
তাওফিক হলে করা উচিত। ইলম
অন্বেষণে কখনো মেহনত-মুজাহাদকে ভয়
পাওয়া উচিত নয়। তদ্রূপ পার্থিব
জীবনে প্রয়োজনীয় শিল্প ও
বিদ্যা শিক্ষার জন্যও দূর দূরান্তে সফর
করা জায়েয; বরং তা একটি পর্যায় পর্যন্ত
কাম্যও বটে।
এই সকল কিছু স্বস্থানে বিদ্যমান
আছে এবং শরিয়তের বিভিন্ন দলিল
দ্বারা তা প্রমাণিত এবং ইলম বা জ্ঞান
অর্জন করার মানসিকতা বৃদ্ধি করার জন্য
উতসাহব্যঞ্জক এমন কথার গুরুত্বও রয়েছে।
কিন্তু আলোচ্য বাক্যটি হাদিস নয়। যদিও
তা হাদিস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে,
কিন্তু এই বাক্যটি হাদিস হিসেবে বর্ণনার
সনদে আবু আতিবা তরিফ ইবনে সুলায়মান
নামক একজন রাবি(বর্ণনাকারীর)নাম
আছে রয়েছে; হাদিস শাস্ত্রের
ইমামগণের দৃষ্টিতে যিনি মতারূক
(পরিত্যক্ত)। তাকে হাদিস জাল করার
অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সুতরাং হাদিস জাল করার
অভিযোগে অভিযুক্ত
কারো বর্ণনাকে হাদিস হিসেবে গ্রহণ
করার যৌক্তিকতা ইলমে হাদিস
শাস্ত্রে নেই।
আর রিহালাতু ফি তালাবিল ইলম নামক
একটি আরবি কিতাবের মাঝে এই
উক্তিটিকে হাদিস হিসেবে উপস্থাপণ
করার জন্য যে কয়টি সনদ ব্যবহার
করা হয়েছে তার সবকটি সনদই হাদিস
শাস্ত্রের বিচারে দূর্বল এবং এই গ্রন্থ
লেখক নিজেও বর্ণনার
শেষে এসে স্বীকার করেছেন
যে এটি একটি দূর্বল বর্ণনা।
শেষ কথা হলো-
ভালো যে কোনো কথাই ভালো, সত্য
যে কোনো কথাই সুন্দর। তাই বলে সব
ভালো এবং সত্য কথাকেই যে হাদিস
বা রাসুলের
কথা বলে চালিয়ে নিতে হবে, এমন কথার
স্বীকৃতি ইসলাম দেয়নি।
দেখুন- রিজাল ও রেওয়ায়েত-শাস্ত্রের
বিখ্যাত ইমাম আবু জাফর উকাইলি লেখেন-
(আরবী) -আয-যুআফাউল কাবীর,
উকাইলী ২/২৩০; কিতাবুল মাজরূহীন,
ইবনে হিব্বান ১/৩৮২; মিযানুল ইতিদাল
২/২৫৮; আলমুনতাখাব মিনাল ইলাল লিল-
খাল্লাল ইবনে কুদামাহ পৃ. ১২৯-১৩০;
আলমাকাসিদুল হাসানাহ, সাখাভী পৃ. ১২১

পেশাব লাগা জায়নামাজে নামাজ হবে কি?


মনে করুন, আপনার জায়নামাযের উপরের
অংশে এক কোণে বাচ্চার পেশাব
লেগে প্রায় অর্ধ হাত ছড়িয়ে গেছে।
নামাযের ওয়াক্ত হলে ওই জায়নামায
বিছিয়েই নামায আদায় করেন। যেহেতু
পেশাব এক কোণে ছিল তাই নামায পড়ার
সময় শরীর ও কাপড়ের কোনো অংশ নাপাক
স্থানটিতে পড়েনা। এভাবে নামায
কি আদায় হয়েছে?
বর্ণনা অনুযায়ী নামাযের
হালতে শরীরের কোনো অংশ যেহেতু
নাপাক জায়গায় লাগেনি তাই নামায
সহীহ হয়ে গেছে। অবশ্য এ ধরনের আংশিক
নাপাক জায়নামাযেও নামায পড়া ঠিক নয়।
কেননা আল্লাহ তাআলা পবিত্র,
তিনি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন।
[ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬১;
ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪১৮;শরহুল
মুনইয়াহ ২০০; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৩]

পুরুষের জন্য যে দুইটি বস্তুকে হারাম ঘোষণা করেছেন?


ﻭَﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪعنه، ﻗَﺎﻝَ : ﺭَﺃَﻳﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ ﺃﺧَﺬَ
ﺣَﺮِﻳﺮﺍً، ﻓَﺠَﻌَﻠَﻪُ ﻓِﻲ ﻳَﻤِﻴﻨﻪِ، ﻭَﺫَﻫَﺒَﺎً ﻓَﺠَﻌَﻠَﻪُ ﻓِﻲ ﺷِﻤَﺎﻟِﻪِ، ﺛُﻢَّ
ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺇﻥَّ ﻫَﺬَﻳْﻦِ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﻋَﻠَﻰ ﺫُﻛُﻮﺭِ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ‏». ﺭﻭﺍﻩ ﺃَﺑُﻮ ﺩﺍﻭﺩ
ﺑﺈﺳﻨﺎﺩٍ ﺻﺤﻴﺢٍ
বাংলা হাদিস
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি,
তিনি ডান হাতে রেশম ধরলেন এবং বাম
হাতে সোনা, অতঃপর বললেন, আমার
উম্মতের পুরুষদের জন্য এ দুটি বস্তু হারাম।
[আবু দাউদ ৪০৫৭, নাসায়ি ৫১৪৪, ইবন মাজাহ

নৈতিক গুণাবলি বিকাশের ক্ষেত্রে ইসলামের ভূমিকা কী?


মানুষের মধ্যে নৈতিক গুণাবলি বিকাশের
ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে মানবতার মুক্তির একমাত্র
পাথেয় পবিত্র ধর্ম
ইসলামে নৈতিকতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব
দেয়া হয়েছে। নৈতিকতার
সপক্ষে এবং এর
প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বর্ণনায় পবিত্র
কোরানে ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ মানুষের
এবং তার, যিনি তাকে সুঠাম করেছেন।
অতঃপর তাকে তার সৎকর্ম ও অসৎকর্মের
জ্ঞানদান করেছেন। সেই সফলকাম
হবে যে নিজকে পবিত্র করবে এবং সে-ই
ব্যর্থ হবে যে নিজকে কলুষাচ্ছন্ন
করবে।’ (সুরা শামস, আয়াত ৭-১০)।
পবিত্র কোরানে উত্তম নৈতিক
মূল্যবোধের সব মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলোক
একত্রে সন্নিবেশিত করে আল্লাহ
তায়ালা ঘোষণা করেন ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ
তায়ালা তোমাদের সুবিচার, কল্যাণ
কামনা ও আত্মীয়তার বন্ধনকে সুদৃঢ় করার
নির্দেশ দেন এবং অন্যায়-অশ্লীলতা, জুলুম
ও খোদাদ্রোহিতা থেকে বিরত থাকার
নির্দেশ দেন। আল্লাহ তোমাদের নসিহত
করেন এ জন্য যে,
যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ
করতে পার।’ (সুরা নাহল, আয়াত-৯০)
নবী করিম (সা.) ছিলেন উন্নত ও উত্তম
নৈতিকতার এক অনুপম আদর্শ। স্বয়ং আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন তাকে সার্টিফাই করেন
এভাবে ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান
চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম. আয়াত-৪)।
নবী করিম (সা.)-এর নৈতিকতার
উল্লেখযোগ্য মৌলিক গুণাবলি ছিল
ন্যায়বিচার, ইনসাফ, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়,
বিশ্বস্ততা, ওয়াদা পালন, সততা,
কর্তব্যবোধ, শালীনতা, বদান্যতা, সঠিক
পন্থা গ্রহণ, ন্যায়পরায়ণতা,
প্রয়োজনে প্রতিশোধ গ্রহণ, উদারতা,
মধ্যপন্থা প্রভৃতি। এ মহৎ কাজগুলো শুধু
নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেই
তিনি ক্ষান্ত হননি বরং নৈতিক মূল্যবোধ ও
নৈতিক আচরণগুলোর প্রতি যে উৎসাহ
এবং প্রেরণা দিয়েছেন তা সত্যিই অনন্য।
হাদিসে এসেছে, হজরত নাওয়াস
ইবনে সাময়ান বর্ণনা করেন,
‘একদা রাসুলকে (সা.) নেক ও বদ আমল
সম্পর্কে প্রশ্ন
করা হলে তদুত্তরে তিনি বলেন, নেক
আমল হচ্ছে উত্তম চরিত্র আর বদ আমল
হচ্ছে যে কাজ তোমার বিবেকের
কাছে সদ্বিগ্ন মনে হয়, আর তা লোকের
কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ুক এটা তুমি চাও
না।’ (মুসলিম, তিরমিজী)। অন্যত্র বর্ণিত
হচ্ছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন
‘কিয়ামতের দিন মমিনের নেকের
পাল্লা ভারি করার মতো উত্তম চরিত্রের
চেয়ে ভারি কোনো আমল নেই। আর
অবশ্যই আল্লাহ অশ্লীল ও অশ্রাব্য
গালিগালাজকারীর ওপর অসন্তুষ্ট।
(তিরমিজী ও ইবনে মাজাহ)।
সুতরাং কোরান ও হাদিসে নৈতিকতার
প্রতি যে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, উন্নত
নৈতিক গুণাবলি মেনে চলার যে ফজিলত
বর্ণনা করা হয়েছে তা কারো জানার
মধ্যে নয় বরং মানার মধ্যেই
রয়েছে যথার্থ সার্থকতা।
মাওলানা মিরাজ রহমান

নিজ ঘরের বাহিরে নারীদের দ্বীনি তালিম করা বৈধ কিনা?

একটি এলাকায় নারীদের তালিম করার
বর্নণা, ঠিক এমনটাই-
একটি আলাদা ঘরে পূর্ণ পর্দার
সাথে সপ্তাহে দুই দিন শুক্রবার ও সোমবার
বাদ যোহর দ্বীনি বিষয় ও
মাসআলা মাসায়েল আলোচনা করা হয়।
একজন মহিলা মজলিসটি পরিচালনা করেন।
এতে আশপাশের মহিলারাই অংশগ্রহণ
করেন। তবে পাঁচ-ছয় মাইল
দূরবর্তী এলাকার স্বল্প সংখ্যক মহিলাও
অভিভাবকের অনুমতিক্রমে মাহরাম
ছাড়া এসে থাকেন। পাঁচ-ছয় মাইল দূর
থেকে মাহরাম ছাড়া আসাকে কেন্দ্র
করে কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলেছে।
এখানে জানার বিষয় হলো তিনটি- ক)
পার্শ্ববর্তী ও পাঁচ-ছয় মাইল দূর
থেকে পর্দার সাথে মহিলাদের মাহরাম
ছাড়া আসাটা কেমন? খ)
পর্দা রক্ষা করে কোনো মহিলা নিজ
বাড়িতে তালীমের
ব্যবস্থা করতে পারবে কি না?
ক) মহিলাদের শিক্ষার ব্যবস্থা প্রধানত
নিজ ঘরেই হওয়া চাই। তারা মাহরাম পুরুষ
যথা বাপ, দাদা, আপন ভাই, চাচা, মামার
কাছে দ্বীন শিক্ষা করবে। হ্যাঁ,
মাহরামদের মধ্যে যোগ্য আলেম
না পাওয়া গেলে নিজ মহল্লার
কোনো দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত
দ্বীনদার মহিলার নিকট গিয়ে দ্বীন
শিক্ষা করবে। তবে শর্ত হল,
স্বামী বা অভিভাবকের
অনুমতি নিয়ে পূর্ণ শরয়ী পর্দার
সাথে আসা যাওয়া করবে এবং সন্ধ্যার
পূর্বেই ঘরে পৌঁছে যাবে। তাই
কোনো মহল্লায় মহিলারা কর্তৃক
আয়োজিত তালীমের মজলিসে অন্য
নারীরা আসতে পারেন। তবে পাঁচ-ছয়
মাইল দূর
থেকে এভাবে তালীমে আসা সমীচীন
নয়; তারা নিজেদের মহল্লায় তালীমের
ব্যবস্থা করবেন
এবং ঘরে বসে দ্বীনী কিতাবপত্র পাঠ
করবেন। [সূরা আহযাব : ৩৩; আহকামুল কুরআন,
জাসসাস ৩/৩৬০]
খ) প্রত্যেক নর-নারীর প্রয়োজনীয় দ্বীন
শিক্ষা করা ফরজ। আর পূর্ণ পর্দার
সাথে অভিজ্ঞ
শিক্ষিকা দ্বারা দ্বীনী শিক্ষার
ব্যবস্থা করা প্রশংসণীয় ও ছওয়াবের কাজ।
মহিলাদের জন্য দ্বীনী তালীমের
ব্যবস্থা করেছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
হাদীস শরীফে আছে, একদিন
মহিলা সাহাবীগণ নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কাছে আরয করলেন, পুরুষদের
কারণে আমরা আপনার
নিকটবর্তী হতে পারি না। তাই
আপনি আমাদের জন্য আলাদা একটি দিন
নির্ধারণ করুন। তিনি তাদের জন্য
বিশেষভাবে এক দিনের ওয়াদা করলেন
এবং বললেন, তোমরা অমুক দিন অমুকের
বাড়িতে একত্র হও। এরপর তিনি সেদিন
তাদের কাছে গিয়ে ওয়াজ করলেন।
[সহীহ বুখারী ১/২০; উমদাতুল কারী ২/১২৩ ]

নারীরা তাদের কাপড়ের নিম্নভাগ কীভাবে রাখবে?


আরবি  হাদীদ

ﻭَﻋَﻦْ ﺍﺑﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ : ‏« ﻣَﻦْ
ﺟَﺮَّ ﺛَﻮْﺑَﻪُ ﺧُﻴَﻼَﺀَ ﻟَﻢْ ﻳَﻨْﻈُﺮِ ﺍﻟﻠﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ‏». ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﺃُﻡُّ
ﺳَﻠَﻤَﺔَ : ﻓَﻜَﻴْﻒَ ﺗَﺼْﻨَﻊُ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀُ ﺑﺬُﻳُﻮﻟِﻬِﻦَّ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻳُﺮْﺧِﻴﻦَ ﺷِﺒْﺮﺍً
‏». ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﺇِﺫَﺍً ﺗَﻨْﻜَﺸِﻒُ ﺃﻗْﺪَﺍﻣُﻬُﻦَّ . ﻗَﺎﻝَ : ‏«ﻓَﻴُﺮﺧِﻴﻨَﻪُ ﺫِﺭَﺍﻋﺎً ﻻَ
ﻳَﺰِﺩْﻥَ ‏» ﺭﻭﺍﻩ ﺃَﺑُﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ، ﻭﻗﺎﻝ : ‏«ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ
ﺻﺤﻴﺢ»
বাংলা হাদিস
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
অহংকারবশতঃ যে ব্যক্তি গাঁটের
নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে (করুণার
দৃষ্টিতে) দেখবেন না। উম্মে সালামাহ
প্রশ্ন করলেন, তাহলে মহিলারা তাদের
কাপড়ের নিম্নপ্রান্তের
ব্যাপারে কী করবে? তিনি বললেন, আধ
হাত বেশী ঝুলাবে। উম্মে সালামাহ
বললেন, তাহলে তো তাদের পায়ের
পাতা খোলা যাবে! তিনি বললেন,
তাহলে এক হাত পর্যন্ত নীচে ঝুলাবে;
তার বেশী নয়।
[বুখারি ৩৪৮৫, ৩৬৬৫, ৫৭৮৩, ৫৭৮৪, ৫৭৯১,
মুসলিম ২০৮৫, ২০৮৬, তিরমিযি ১৭৩১,
নাসায়ি ৪৩২৬, ৪৩২৭, ৪৩২৮, ৫৩৩৫, ৫৩৩৬, আবু
দাউদ ৪০৮৫, ৪০৯৪, ইবন মাজাহ ৩৫৬৯, আহমদ
৪৪৭৫, ৪৫৫৩, ৪৮৬৯, ৪৯৯৪, ৫০১৮, ৫০৩০,৫০৩৫,
৫১৫১, ৫১৬৬, ৫২২৬, ৫৩০৫, ৫৩১৮, ৫৩২৮,
মুওয়াত্তা মালেক ১৬৯২, ১৬৯৮]

নারীদের চেহারা ঢাকার কথা কোরান- হাদিসে নেই, কথাটি কি সহিহ?

কিছু দিন আগে কোন এক দেশে আইন
করা হয় যে,
মহিলারা বোরকা পরতে পারবে,
তবে চেহারা ঢাকতে পারবে না।
তাদেরকে মুখমন্ডল খোলা রাখতে হবে।
এ বিষয়ে একজন বললেন, এতে শরীয়ত-
বিরোধী কিছু নেই। কারণ মহিলাদের
চেহারা ঢাকতে হবে এমন কথা কুরআন-
হাদীসে নেই। তাই চেহারার
পর্দা জরুরি নয়। তার এ কথা কতটুকু সত্য? ঐ
ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। পরপুরুষের
সামনে নারীকে তার
চেহারা ঢেকে রাখতে হবে। এটি কুরআন-
সুন্নাহর বিধান। উম্মাহাতুল মুমিনীন ও
অন্যান্য সাহাবিয়ার আমল দ্বারাও
তা প্রমাণিত। নিম্নে কয়েকটি দলীল
উল্লেখ করা হল। কুরআন মজীদে আল্লাহ
তাআলা ইরশাদ করেছেন, হে নবী!
আপনি বলুন, নিজের স্ত্রী-কন্যা ও
মুমিনদের স্ত্রীগণকে, তারা যেন
টেনে নেয় নিজেদের উপর তাদের
চাদরের কিছু অংশ। (সূরা আহযাব : ৫৯)
এ আয়াতের তাফসীরে হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে আববাস রা. বলেন, আল্লাহ
তাআলা মুমিনদের স্ত্রীগণকে আদেশ
করেছেন, তারা যখন
কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের
হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে চাদর
টেনে নিজেদের চেহারা ঢেকে নেয়।
এবং শুধু এক চোখ খোলা রাখে।
(তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৮২৪) ইমাম
জাসসাস রাহ. বলেন, এই
আয়াতে যুবতী নারীদেরকে পরপুরুষের
সামনে চেহারা ঢেকে রাখার আদেশ
করা হয়েছে। (আহকামুল কুরআন, জাসসাস
৩/৩৭২) আরো দেখুন :
তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৫৬; জামেউল
বয়ান, তবারী ১০/৩৩১; তাফসীরে রূহুল
মাআনী ২২/৮৮
আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. হজ্বের
সফরের বিবরণ দিয়ে বলেন, আমরা ইহরাম
অবস্থায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম।
আমাদের পাশ দিয়ে অনেক
কাফেলা অতিক্রম করত। তারা আমাদের
সামনে এলে নিজেদের চেহারার উপর
ওড়না ঝুলিয়ে দিতাম। তারা অতিক্রম
করে চলে যাওয়ার পর
ওড়না সরিয়ে ফেলতাম। (সুনানে আবু দাউদ
২/৪৫৭) আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. অন্য
এক সফরের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
অতপর সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল
আসসুলামী সকালে আমার
অবস্থানস্থলে পৌঁছল। সে একজন ঘুমন্ত
মানুষের আকৃতি দেখে আমার নিকট এল
এবং আমাকে চিনে ফেলল। কেননা,
পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার
আগে সে আমাকে দেখেছিল। তখন
সে জোরে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না
ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করল, যার
শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।
সাথে সাথে আমি ওড়না দ্বারা মুখমন্ডল
আবৃত করে ফেলি। (সহীহ বুখারী, হাদীস :
৪৮৫০)
হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন,
আমরা পর পুরুষের সামনে আমাদের
চেহারা ঢেকে রাখতাম।
(মুসতাদরাকে হাকীম ২/১০৪) আরো দেখুন :
তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৮০৪; আহকামুল
কুরআন, জাসসাস ৩/৩৬৯; সহীহ বুখারী,
হাদীস : ৩২৪, ৪৭৫৭, ১৮৩৮; ফাতহুল
বারী ২/৫০৫, ৮/৩৪৭; উমদাতুল কারী ৪/৩০৫;
মাআরিফুস সুনান ৬/৯৮; তাকমিলা ফাতহুল
মুলহিম ৪/২৬৮; মাজমুআতুল ফাতাওয়া,
ইবনে তাইমিয়া ২২/১০৯, ১১৪ মোটকথা,
কুরআন-হাদীসের ভাষ্য এটাই যে,
মহিলারা পরপুরুষের সামনে নিজেদের
মুখমন্ডল আবৃত রাখবে। এটা পর্দারই অংশ।
প্রকাশ থাকে যে,
কোনো কোনো দেশে নারীর মুখমন্ডল
খোলা রাখার যে আইন করা হয়েছে তা এ
কারণে করা হয়নি যে, ইসলামের
দৃষ্টিতে চেহারার পর্দা নেই। বরং এ
আইনের পিছনে ইসলামের প্রতি তাদের
অব্যাহত বিদ্বেষ এবং মুসলমানদের
কোনঠাসা করার প্রবণতাও কার্যকর। এ আইন
তাদেরই কথিত মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক
অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সম্পূর্ণ
বিরোধী। তাই এই আইন আন্তর্জাতিক
অঙ্গণেও ধিকৃত হয়েছে।

ঘুমানোর সময় এবং ঘুম থেকে উঠে কোন দোয়া পড়তেন রাসুল [সা.]?


ﻭَﻋَﻦْ ﺣُﺬَﻳْﻔَﺔَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒﻲُّ ﷺ ﺇِﺫَﺍ ﺃﺧَﺬَ
ﻣَﻀْﺠَﻌَﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﺗَﺤْﺖَ ﺧَﺪِّﻩِ، ﺛُﻢَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ‏« ﺍَﻟﻠﻬﻢ
ﺑِﺎﺳْﻤِﻚَ ﺃﻣُﻮﺕُ ﻭَﺃﺣْﻴَﺎ ‏» ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺍﺳْﺘَﻴْﻘَﻆَ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟﻠﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻱ
ﺃﺣْﻴَﺎﻧَﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﻣَﺎ ﺃﻣَﺎﺗَﻨَﺎ ﻭَﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨُﺸُﻮﺭُ ‏». ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ
বাংলা হাদিস
হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিতে যখন
শয্যাগ্রহণ করতেন, তখন তিনি গালের
নীচে হাত রেখে এই দো‘আ
পড়তেনঃ ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু অ
আহয়্যা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার
নামে মরি ও বাঁচি। আর যখন জাগতেন তখন
বলতেনঃ ‘আলহামদু লিল্লা-
হিল্লাযী আহয়্যা-না বা’দা মা আমা-
তানা অ ইলাইহিন নুশূর।’ অর্থাৎ সেই
আল্লাহর সমস্ত
প্রশংসা যিনি আমাদেরকে মৃত্যু (নিদ্রা)
দেওয়ার পর জীবিত করলেন এবং তাঁরই
দিকে আমাদের পুনর্জীবন।
[বুখারি ৬৩১২, ৬৩১৪, ৬৩২৪, ৭৩৯৪,
তিরমিযি ৩৪১৭, আবু দাউদ ৫০৪৯, ইবন মাজাহ
৩৮৮০, আহমদ ২২৭৩৩, ২২৭৬০, ২২৭৭৫, ২২৮৬০,
২২৮৮২, ২২৯৪৯, দারেমি ২৬৮৬]

ঘুমানোর আগে নিয়মিত যে সকল আমল করতেন রাসুল [সা.]


ﻋَﻦِ ﺍﻟﺒَﺮﺍﺀِ ﺑﻦِ ﻋَﺎﺯِﺏٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨﻬُﻤَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲ ﺭَﺳُﻮﻝُ
ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ : ‏« ﺇِﺫَﺍ ﺃﺗَﻴْﺖَ ﻣَﻀْﺠَﻌَﻚَ ﻓَﺘَﻮَﺿَّﺄ ﻭُﺿُﻮﺀَﻙَ ﻟِﻠْﺼَّﻼَﺓِ، ﺛُﻢَّ
ﺍﺿْﻄَﺠِﻊْ ﻋَﻠَﻰ ﺷِﻘِّﻚَ ﺍﻷَﻳْﻤَﻦِ، ﻭَﻗُﻞْ ... ‏» ﻭﺫَﻛَﺮَ ﻧَﺤْﻮَﻩُ، ﻭﻓﻴﻪ :
‏« ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻬُﻦَّ ﺁﺧِﺮَ ﻣَﺎ ﺗَﻘُﻮﻝُ ‏». ﻣﺘﻔﻖٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
বাংলা হাদিস
বারা ইবনে ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে বললেন, ‘‘তুমি যখন তোমার
বিছানায় (ঘুমাবার জন্য) আসবে, তখন
তুমি নামাযের ওযূর মত ওযূ কর। অতঃপর ডান
পার্শ্বে শুয়ে (পূর্বোক্ত) দো‘আ পাঠ
কর....।’’ অতঃপর বর্ণনাকারী ঐ
দো‘আটি উল্লেখ করলেন। আর এ বর্ণনায়
আছে যে, ‘‘ওই দোআগুলো হোক তোমার
সর্বশেষে কথা।’’
[বুখারি ২৪৭, ৬৩১১, ৬৩১৩, ৬৩২৫, ৭৪৮৮,
মুসলিম ২৭১০ ,তিরমিযি ২৩৯৪, ৩৫৭৪, আবু
দাউদ ৫০৪৬, ইবন মাজাহ ৩৮৭৬, আহমদ ১৮০৪৪,
১৮০৮৯, ১৮১১৪, ১৮১৪৩, ১৮১৭৭, ১৮২০৫,
দারেমি ২৬৮৩]

গায়রে মাহরাম নারী পুরুষের খাবারের অবশিষ্টাংশ খাওযা জায়েজ কিনা?

গায়রে মাহরাম মহিলার
ঝুটা খাওয়া পুরুষের জন্য জায়েজ কি না?
এর হুকুম কী? তদ্রূপ পুরুষের
ঝুটা গায়রে মাহরাম মহিলার খাওয়ার হুকুম
কী? গায়রে মাহরাম পুরুষ বা মহিলার ঝুটাও
পাক। তবে কেউ গায়রে মাহরামের
অবশিষ্ট খাবার বা পানীয় গ্রহণে স্বাদ
বা আকর্ষণ বোধ করলে তার জন্য মাকরূহ
হবে।
আর আকর্ষণ না হলে, স্বাদ নেওয়ার
উদ্দেশ্য না থাকলে মাকরূহ হবে না।
[ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮; আদ্দুররুল মুখতার
১/২২২; আলবাহরুর রায়েক ১/১২৬;
হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/১২১;
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩]

গরুর গোবর জমা করে সার হিসেবে বিক্রি করা কি বৈধ?


কোনো কোনো বাড়িতে একটি
নির্দিষ্ট স্থানে গরুর গোবর জমা করা হয়।
এভাবে বেশ কয়েক মাস জমা করার পর
তা নার্সারির কাছে উপযুক্ত
দামে বিক্রি করা হয়। এভাবে নাপাক বস্তু
বিক্রি করা জায়েয কি না? হ্যাঁ, গোবর
বিক্রি করা জায়েয।
কেননা, নাপাক হলেও তা ব্যবহারের
অনেকগুলো বৈধ ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন
সার হিসাবে, জ্বালানী কাজে ইত্যাদি।
[খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৫৩;
ফাতাওয়া খানিয়া ২/১৩৩; আলমুহীতুল
বুরহানী ৮/১০২; আলইনায়া ৮/৪৮৬; আলবাহরুর
রায়েক ৮/১৯৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৮৫;
হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৯৩]

কোন ধরনের শোয়াকে আল্লাহ মহান অপছন্দ করেন?


আরবি হাদীস
ﻭَﻋَﻦْ ﻳَﻌِﻴﺶَ ﺑﻦِ ﻃِﺨْﻔَﺔَ ﺍﻟﻐِﻔَﺎﺭِﻱِّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨﻬُﻤَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ
ﺃَﺑﻲ : ﺑَﻴﻨَﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﻣُﻀْﻄَﺠِﻊٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻄْﻨِﻲ ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺟُﻞٌ
ﻳُﺤَﺮِّﻛُﻨِﻲ ﺑِﺮِﺟﻠِﻪِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ‏« ﺇﻥَّ ﻫَﺬِﻩِ ﺿِﺠْﻌَﺔٌ ﻳُﺒْﻐِﻀُﻬَﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ‏» ،
ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻨﻈَﺮْﺕُ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃَﺑُﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩٍ
ﺻﺤﻴﺢ
বাংলা হাদিস
য়্যা‘ঈশ ইবনে ত্বিখফাহ্
গিফারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমার পিতা বলেন,
একদা আমি মসজিদে উপুড়
হয়ে শুয়ে ছিলাম, এমতাবস্থায় একটি লোক
আমাকে পা দিয়ে নড়িয়ে বলল, ‘‘এ ধরনের
শোয়াকে আল্লাহ অপছন্দ করেন।’’
তিনি বলেন, ‘আমি তাকিয়ে দেখলাম
তো তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন।’
[আবু দাউদ ৫০৪০, আহমদ ১৫১১৫, ১৫১১৭]

যে সকল বস্তুর ওপর বসতে নিষেধ করেছেন রাসুল [সা.]।



ﻋَﻦ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ : ‏« ﻻَ
ﺗَﺮْﻛَﺒُﻮﺍ ﺍﻟﺨَﺰَّ ﻭَﻻَ ﺍﻟﻨِّﻤَﺎﺭَ ‏». ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃَﺑُﻮ ﺩﺍﻭﺩ
ﻭﻏﻴﺮﻩ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺣﺴﻦ
বাংলা হাদিস
মুআবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
রেশমী কাপড় ও বাঘের চামড়ার উপর
(বাহনের পিঠে রেখে বা অন্যত্র
বিছিয়ে) বসো না।
[আবু দাউদ ৪১২৯, আহমদ ১৬৩৯৮]

যে সকল বস্তু নারীর জন্য বৈধ কিন্তু পুরুষের জন্য হারাম।

ﻭَﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻣُﻮﺳَﻰ ﺍﻷَﺷْﻌَﺮِﻱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ،
ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺣُﺮِّﻡَ ﻟِﺒَﺎﺱُ ﺍﻟﺤَﺮِﻳﺮِ ﻭَﺍﻟﺬَّﻫَﺐِ ﻋَﻠَﻰ ﺫُﻛُﻮﺭِ ﺃُﻣَّﺘِﻲ، ﻭَﺃُﺣِﻞَّ
ﻹﻧَﺎﺛِﻬِﻢْ ‏». ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ، ﻭﻗﺎﻝ : ‏« ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ »
বাংলা হাদিস
আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রেশমের
পোশাক ও স্বর্ণ আমার উম্মতের পুরুষদের
জন্য অবৈধ করা হয়েছে, আর মহিলাদের
জন্য বৈধ করা হয়েছে।
[তিরমিযি ১৭২০, নাসায়ি ৫১৪৮]

যে সকল পাত্রে খাদ্য গ্রহণে নিষেধ করেছেন রাসুলে করীম (সাঃ)


ﻭَﻋَﻦْ ﺣُﺬَﻳْﻔَﺔَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﻗَﺎﻝَ : ﻧَﻬَﺎﻧَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﷺ ﺃﻥْ ﻧَﺸْﺮَﺏَ
ﻓِﻲ ﺁﻧِﻴَﺔِ ﺍﻟﺬَّﻫَﺐِ ﻭَﺍﻟﻔِﻀَّﺔِ، ﻭﺃﻥْ ﻧَﺄْﻛُﻞَ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﻋَﻦْ ﻟُﺒْﺲ ﺍﻟﺤَﺮﻳﺮِ
ﻭَﺍﻟﺪِّﻳﺒَﺎﺝ، ﻭﺃﻥْ ﻧَﺠْﻠِﺲَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ
বাংলা হাদিস
হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোনা ও রূপার
পাত্রে পান বা আহার
করতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন
এবং চিকন ও মোটা রেশম পরিধান
করতে অথবা (বেড-কভার বা সীট-কভার
বানিয়ে) তার উপর বসতেও নিষেধ
করেছেন।
[বুখারি ৫৪২৬, ৫৬৩২, ৫৬৩৩, ৫৮৩১, ৫৮৩৭,
মুসলিম ২০৬৭, তিরমিযি ১৮৭৮,
নাসায়ি ৫৩০১, আবু দাউদ ৩৭২৩, ইবন মাজাহ
৩৪১৪, ৩৫৯০, আহমদ ২২৭৫৮, ২২৮০৩, ২২৮৪৮,
২২৮৫৫, ২২৮৬৫, ২২৮৯২, ২২৯২৭, ২২৯৫৪,
দারেমি ২১৩০]

যে কারণে রেশম কাপড় পরিধান করার অনুমতি দান করেছেন রাসুল [সা.]।


ﻋَﻦ ﺃَﻧَﺲٍ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﻗَﺎﻝَ : ﺭَﺧَّﺺَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ ﻟِﻠﺰُّﺑَﻴْﺮِ
ﻭﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺎﻥِ ﺑﻦِ ﻋَﻮْﻑٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨﻬُﻤَﺎ ﻓِﻲ ﻟُﺒْﺲ ﺍﻟﺤَﺮﻳﺮِ
ﻟِﺤَﻜَّﺔٍ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺑِﻬِﻤﺎ . ﻣﺘﻔﻖٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
বাংলা হাদিস
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর ও আব্দুর রহমান
ইবনে আওফ (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা)
কে তাদের গায়ে চুলকানি হবার দরুন
রেশমী কাপড় পরার অনুমতি দিয়েছিলেন।
[বুখারি ৫৮৩৯, ২৯১৯, ২৯২০, ২৯২২, ৫৮৩৯,
মুসলিম ২০৭৬, তিরমিযি ১৭২২,
নাসায়ি ৫৩১০, ৫৩১১, আবু দাউদ ৪০৫৬, ইবন
মাজাহ ৩৫৯২, আহমদ ১১৮২১, ১১৮৭৯, ১২৪৫২,
১২৫৮০, ১২৮৩৬, ১৩২২৮, ১৩২৭০, ১৩৪৭৩

কাপড়ে পেশাব জাতীয় নাপাকি লাগলে পবিত্র করার উপায় কি?

কাপড়ে পেশাব বা এ
জাতীয় কোনো তরল
নাপাকি লাগলে তিনবার
ভালোভাবে নিংড়িয়ে ধুতে হয়।
প্রবাহিত পানি যেমন নদী, বড় পুকুর
বা টেপের পানিতে ধুলেও কি তিনবার
নিংড়িয়ে ধুতে হবে? নাপাক কাপড়
যদি প্রবহমান পানি যেমন, নদী,
পুকুরে বা টেপের পানিতে এত
বেশি করে ধোয়া হয়, যাতে নাপাকি দূর
হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয়ে যায়
তাহলে তা পাক হয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে তিনবার
নিংড়িয়ে ধোয়া জরুরি নয়। কিন্তু
বালতি বা এ ধরনের ছোট
পাত্রে ধোয়া হলে তিনবার
ধুতে হবে এবং প্রতিবার ধোয়ার পর
উত্তমরূপে নিংড়িয়ে নিতে হবে। [রদ্দুল
মুহতার ১/৩৩৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৭;
শরহুল মুনইয়া ১৮৩]

কর্মতৎপর মানুষকে পছন্দ করে ইসলাম, অলসকে নয়!

আল্লাহর দান অসংখ্য নেয়ামতের
মধ্যে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো সময়।
কোরান ও হাদিসের বিভিন্ন স্থানে এই
নেয়ামতটির যথার্থ মূল্যায়নের
প্রতি বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে।
কোরানে একটি সুরাই নাজিল
করা হয়েছে ‘আসর’ বা সময় নামে। এ
থেকে সময়ের মূল্য ও মর্যাদা অনুধাবন
করা যায়। মানুষের পার্থিব জীবন
অতি ক্ষণস্থায়ী। এই স্বল্পকালীন
জীবনে পাথেয় সংগ্রহ করে নিতে হয়
অনন্ত অসীম পরকালের জীবনের জন্য।
এতে তার সবচেয়ে বড় মূলধন সময় ও স্বাস্থ্য।
প্রত্যেক মানুষকেই আল্লাহ তায়ালা এই
দুটি পুঁজি দান করেছেন। রাসুল (সা.) বলেন,
এমন দুটি নেয়ামত রয়েছে, যার সুফল
লাভে অধিকাংশ মানুষই ব্যর্থ হয়-সুস্থতা ও
অবসর। মানব সভ্যতার ইতিহাস
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যেসব
জাতি সময়ানুবর্তী, যারা অহেতুক সময় নষ্ট
করে না, জীবনের
প্রতিটি ক্ষণকে কাজে লাগায়,
তারা সমৃদ্ধি ও উন্নতি লাভ করবেই।
পক্ষান্তরে যে জাতি অচল, স্থবির,
গতিহীন, সে জাতির মোটেই কল্যাণ
সাধিত হয় না। অধঃপতন ও
নিুগামিতা সে জাতিকে পেয়ে বসে। এ
সত্য যেমন জাতির বেলায়,
তেমনি ব্যক্তির বেলায়ও। আলসেমি ও
অকর্মণ্যতায় আক্রান্ত হয়ে কেউ
কখনো উন্নতি লাভ করতে সক্ষম হয় না।
সময়ের গতি সামনের দিকে নয়,
বরং পেছনের দিকে।
আমরা পেছনে যে সময়টি রেখে আসি,
তা কতটুকু অর্থবহ হয়েছে, তা নির্ণয়
করতে হলে হিসাব
করে দেখতে হবে আমরা কী পরিমাণ সময়
ভালো কাজে ব্যয় করেছি। মুমিন বান্দার
জীবনে অনর্থক ব্যয় করার
মতো কোনো সময় নেই। মুসলমানের
জীবনের সৌন্দর্যই হলো অহেতুক কাজ
পরিহার করা।
মৃত্যুর পরের জবাবদিহিতা সম্পর্কে যেহেতু
কোনো মুসলমানের সন্দেহ নেই
সুতরাং পার্থিব জীবনের প্রতিক্ষণই
যাতে নেক কাজে ব্যয় হয় সে জন্য সচেষ্ট
থাকা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।
হাদিসে আছে, কেয়ামতের দিন
কোনো বান্দার দুই
পা সরতে পারবে না চারটি বিষয়ে
জিজ্ঞাসিত না হয়ে। তার জীবনকাল
সম্পর্কে, তা কীসে শেষ করেছে; তার
যৌবন সম্পর্কে যে, তা কীসে ক্ষয়
করেছে; তার সম্পদ সম্পর্কে যে,
কোথা থেকে তা অর্জন করেছে ও
কীসে তা ব্যয় করেছে এবং কী আমল
করেছে তার জানা অনুযায়ী।
মাওলানা মিরাজ রহমান

ইসলামের দৃষ্টিতে মরণোত্তর দেহদান।

পৃথিবীতে মানুষই সবচেয়ে মর্যাদাবান।

তারাভরা আকাশ, জোছনা ভরা রাত

বিছিয়ে রাখা বিস্তৃত সবুজ ভূমি সব

আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি। আল্লাহতায়ালার

সব সৃষ্টিই মানুষের কল্যাণে। মানুষের

প্রয়োজনে। মানবজাতিকে মর্যাদাবান

করার জন্য মহান প্রভু মানুষের অবয়ব ও

কাঠামোগত সৌন্দর্য, বিবেক-বুদ্ধি ও

জ্ঞান-গরিমায় উন্নতি দিয়েছেন।

দিয়েছেন ভাব-ভাষা ও শৈলীর শক্তি।

আল্লাহতায়ালা বলেন,

আমি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে সৃষ্টি করেছি।

(সূরা তিন ৪)।

মানুষের মন-মনন, চিন্তা-চেতনা ও

জ্ঞানের মর্যাদা প্রদানে কোরআন

বলেছে, আল্লাহতায়ালা মানুষকে এমন

জ্ঞান দান করেছেন যা সে জানত না।

(সূরা আলাক ৫)।

আল্লাহ আরও বলেছেন,

আমি আদমকে বস্তুজগতের সব জ্ঞান

শিক্ষা দিয়েছি। (সূরা বাকারা ৩৩)।

সমগ্র সৃষ্টির তুলনায় মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের

কথা কোরআন এভাবে উচ্চারণ করছে,

আমি তো মানুষকে মর্যাদা দান করেছি,

জলে ও স্থলে তাদের চলাচলের বাহন

দিয়েছি, তাদের উত্তম রিজিক দিয়েছি।

সৃষ্টির অনেকের ওপর আমি মানুষের

শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। (সূরা বনি ইসরাইল ৭০)।

পৃথিবীর ফুল ফল, বৃক্ষ-তরু-লতা, পাখ-

পাখালি সব আয়োজনই মানুষের জন্য।

মানুষের প্রয়োজনে সমগ্র সৃষ্টি নিবেদিত।

সেই মানুষের হাড়, মাংস বা অঙ্গ-

প্রত্যঙ্গের যথেচ্ছ ব্যবহার, মানব অঙ্গ

বেচাকেনা, আদান-প্রদান,

কাটাছেঁড়া করা আদৌ কি মানুষের

মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ?

নাকি চিরায়ত ধারায় মর্যাদাবান

জাতি মানব সভ্যতার প্রতি অভিশাপ?

কোরআনুল কারিমে মানব সৃষ্টির

ধারাবাহিকতার

কথা এভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহ

মানুষকে কেমন সাধারণ বস্তু

থেকে সৃষ্টি করেছেন। শুক্রবিন্দু থেকে,

তিনি সৃষ্টি করেন, পরে পরিমিত বিকাশ

করেন, পরে মায়ের গর্ভ

থেকে পৃথিবীতে আসার পথ সহজ

করে দেন, তারপর তাকে মৃত্যু দেন, অতঃপর

তাকে কবরে স্থান দেন।

(সূরা আবাসা-১৮-২১)।

মরণোত্তর মানুষের দেহদান, হাড়, মাংস,

চামড়া, চর্বির বাণিজ্যিক ব্যবহার, মানব

অঙ্গ বেচাকেনা, প্রয়োজন-

অপ্রয়োজনে গবেষণা ইত্যাদি মানুষের

জন্য আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদার

সঙ্গে কতটা যুতসই! মানব জন্ম, যাপিত জীবন

ও মরণোত্তর কবরের ধারণা, মানুষের

দৈহিক-মানসিক মর্যাদা রক্ষার

বিষয়টি কি কোরআনের ভাষ্য

থেকে আমাদের আলোড়িত করে না?

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মানুষ

আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি নৈপুণ্যের

অসাধারণ উপমা। মানুষ সৃষ্টির বিস্ময়।

মানুষের আত্মা, বলা-কওয়া, দেখা-

শোনা ও ভাব-অনুভাবের শক্তি আল্লাহর

বিশেষ করুণা। করুণানির্ভর এ জীবন আল্লাহ

প্রদত্ত মানুষের কাছে আমানত।

প্রতিটি মানুষের নিজের এই অঙ্গ বা দেহ

ব্যবহারের অনুমতি আছে বটে, তবে সে এ

দেহের মালিক নয়। সে এ দেহের মালিক

নয় বিধায় সে আত্মহত্যা করতে পারবে না।

পারবে না নিজেকে বিকিয়ে দিতে।

ধ্বংস করতে। কোনো মানুষের জন্য বৈধ নয়

অঙ্গহানি, অঙ্গদান কিংবা দেহদান।

আজকের উত্তর আধুনিক পৃথিবীর সব জ্ঞান-

বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির

বিপরীতে দাঁড়িয়ে কেউ যদি আবদার

করে বসে, দয়াময় প্রভুর এ সৃষ্টির

মতো মানুষের শরীরে বিদ্যমান একটু লোম

বানিয়ে দেখাও! আত্মা, চোখ, নাক, কান

সে তো দূরের কথা! হাত

উঁচিয়ে হ্যাঁ বলার

মতো কাউকে পাওয়া যাবে কি!

মৌলিক কথা হল, কোরআন-সুন্নাহর

আলোকে জীবিত কিংবা মৃত

কোনো মানুষের অঙ্গ বা দেহের

বেচাকেনা কোনোভাবেই বৈধ নয়।

মানব অঙ্গের বেচাকেনা যদি বৈধ না হয়

তাহলে দান করার কি অনুমতি আছে? তাও

নেই। কারণ দাতার জন্য জরুরি হল

নিজে বস্তুর মালিক হওয়া।

দেহটি আল্লাহতায়ালার পক্ষ

থেকে মানুষের কাছে আমানত। আমানত

সূত্রে পাওয়া বস্তুর ব্যবহার বৈধ,

বেচাকেনা কিংবা দান বৈধ নয়।

তবে অগ্রসর পৃথিবীতে আধুনিক

চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ

অনেক দূর এগিয়েছে। ইসলাম-মুসলমান এ

অগ্রসরতাকে সাধুবাদ জানাই। আধুনিক

চিকিৎসা বিজ্ঞানের সূত্র ধরেই রক্তদান,

চক্ষুদান, কিডনিদান বা দেহদানের

প্রাসঙ্গিকতা এসে যায়। আধুনিক

চিকিৎসার স্বার্থে মানুষের অঙ্গ ব্যবহার

বা প্রতিস্থাপনের বিষয়টি আলোচনায়

এসেছে।

সন্দেহ নেই ইসলাম সব সময় মানুষের

কল্যাণে কাজ করে। চিকিৎসার

সূত্রে মানব অঙ্গের

কোনো কোনো ব্যবহার একান্ত

প্রয়োজনে ফেকাহবিদরা অনুমতি

দিয়েছেন। অবশ্য অঙ্গ ব্যবহারের ধরন

অনেক রকম হতে পারে। যেমন- তরল অঙ্গ

বা জমাট। তরল বলতে মানবদেহে দুধ আর

রক্ত। বাকি পুরোটা জমাট। মা তার দুধ

নিজের বাচ্চাকে খাওয়ানো বা অন্যের

বাচ্চাকে খাওয়ানো বা চিকিৎসার

স্বার্থে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার

পুরোটাই বৈধ। দুধের বৈধতার আলোকেই

আলেমরা রক্তদানের

বিষয়টি অনুমতি দিয়েছেন। যুক্তিকতা হল-

দুধ ও রক্ত শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার

পর দ্রুতই অভাব পূরণের প্রাকৃতিক পদ্ধতি চালু

আছে।

জমাট অঙ্গ-প্রতঙ্গ যেমন- চক্ষু, কিডনি,

মাংস ইত্যাদির বেচাকেনা, দান

কোনোটাই বৈধ নয়। দেশের আইনবিদ,

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও বিষয়টি খুব সহজ

মনে করছেন না। সামাজিক শান্তি-

শৃংখলার স্বার্থে সরকারও যথেষ্ট সতর্কতার

সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করছে।

বাণিজ্যিক পৃথিবীতে যদি মানবদেহের

বেচাকেনা বৈধ হয়! তাহলে সামাজিক

শৃংখলা থা

ইসলাম শিশু শিক্ষার প্রতি যে কারনে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে!

শিশুদের ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত

করা হলে, একদিন তারাই এই

জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। শিশুদের

মন-মানসিকতায় ইসলামের প্রতি মহব্বত,

তৌহিদ, রেসালত, কিয়ামত, পরকাল,

ফেরেশতা, কবরের জগৎ, নবী-রসুল,

সাহাবাদের প্রতি মহব্বত এই সংক্রান্ত

যাবতীয় চেতনায় উজ্জীবিত

করে তোলাই মূলত ইসলামী শিক্ষা।

সর্বোপরি আরো একটি বিষয় গুরুত্ব

সহকারে শেখানো সেটা হলো ‘আদব’

বা ‘ভদ্রতা’। রসুল (সা.) বলেন

‘কোনো পিতা তার সন্তানকে এর

থেকে উত্তম উপঢৌকন প্রদান

করতে পারেন না, তিনি তাকে যে উত্তম

শিক্ষা প্রদান করেন।’ (তিরমিজী ) হজরত

ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন রসুল (সা.)

বলেন ‘শিশুর যখন কথা ফুটতে শুরু করবে তখন

সর্ব প্রথম

তাকে কলেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’

শেখাবে, আর মৃত্যুকালেও

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর তালকিন

দেবে। কেননা যার প্রথম বাক্য এবং শেষ

বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’

সে যদি হাজার বছরও

বেঁচে থাকে তাহলে তাকে কোনো

গোনাহ ও পাপের

ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না।’

হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত রসুল (সা.)

বলেছেন, তোমরা নিজ নিজ সন্তানদের

তিনটি স্বভাবের

অনুসারী করে গড়ে তোলো ১. তাদের

নবী (সা.)-এর

প্রতি ভালোবাসা শিক্ষা দাও। ২.

নবী (সা.)-এর বংশধরদের

প্রতি ভালোবাসা শিক্ষা দাও। ৩. তাদের

মধ্যে পবিত্র কোরান তেলাওয়াতের

অভ্যাস গড়ে তোলো। কেননা পবিত্র

কোরানের ধারক ও বাহকরাই সেদিন

আম্বিয়া কেরাম এবং সাধু সজ্জনদের

সঙ্গে আরশের ছায়ায় অবস্থান করবে,

যেদিন আরশের ছায়া ছাড়া আর

কোনো ছায়া থাকবে না। (তিবরানী)

শিশু শিক্ষার বিষয়টিকে ইসলাম বেশ

গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। তাই

একজন মুসলমান হিসেবে, ইসলামের একজন

অনুসারী হিসেবে নিজেদের শিশু

সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত

করে তোলার বিষয়টিকে গুরুত্ব প্রদান

করতে হবে আমাদের।

শিশুদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত

না করতে পারলে, একদিকে যেমন

সামাজিকভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন

হতে হবে তেমনি জবাবদিহিতার

কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে আল্লাহ মহানের

দরবারে। কারণ শিশু সন্তানদের সুশিক্ষায়

শিক্ষিত করে তোলাকে প্রত্যেক

অভিভাবকের জন্য আবশ্যক দায়িত্ব

হিসেবে ঘোষণা করেছে ইসলাম। আল্লাহ

আমাদের সবাইকে নিজ নিজ শিশু

সন্তানদের ইসলামী সুশিক্ষায় শিক্ষিত

করে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার

তওফিক দান করুন।

মাওলানা মিরাজ রহমান

আখেরাতে রেশমের কাপড় পরিধান করতে চাইলে কী করতে হয়?


ﻋَﻦ ﻋُﻤَﺮَ ﺑﻦِ ﺍﻟﺨَﻄَّﺎﺏِ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ

ﷺ : ‏« ﻻَ ﺗَﻠْﺒَﺴُﻮﺍ ﺍﻟﺤَﺮِﻳﺮَ ؛ ﻓَﺈﻥَّ ﻣَﻦْ ﻟَﺒِﺴَﻪُ ﻓﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﻠْﺒَﺴْﻪُ

ﻓﻲ ﺍﻵﺧِﺮَﺓِ ‏». ﻣﺘﻔﻖٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ

বাংলা হাদিস

উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু

হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

বলেছেন, তোমরা (পুরুষরা) রেশমের কাপড়

পরিধান করো না। কেননা,

যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমের কাপড়

পরিধান করবে,

সে আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে।

(অর্থাৎ সে জান্নাত হতে বঞ্চিত হবে।)

[বুখারি ৫৮২৮, ৫৮৩০, ৫৮৩৪, ৫৮৩৫, মুসলিম

২০৬৯, নাসায়ি ৫৩১২, ৫৩১৩, আবু দাউদ ৪০৪২,

ইবন মাজাহ ২৮১৯, ২৮২০, ৩৫৯৩, আহমদ ৯৩, ২৪৪,

৩০৩ , ৩২৩, ৩৫৮, ৩৬৭]

আখেরাতে যারা রেশম কাপড় থেকে বঞ্চিত হবে!


আরবি হাদিস

ﻭَﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲٍ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ : ‏« ﻣَﻦْ

ﻟَﺒِﺲَ ﺍﻟﺤَﺮِﻳﺮَ ﻓﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﻠْﺒَﺴْﻪُ ﻓﻲ ﺍﻵﺧِﺮَﺓِ ‏». ﻣﺘﻔﻖٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ

বাংলা হাদিস

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

বলেছেন, দুনিয়াতে যে রেশমী কাপড়

পরবে,

আখেরাতে সে তা পরতে পাবে না।

[বুখারি ৫৮৩২, মুসলিম ২০৭৩, ইবন মাজাহ

৩৫৮৮, আহমদ ১১৫৭৪, ১৩৫৮০]

অযথা মানুষকে কষ্ট দেওয়া কী জায়েজ?

সামাজিক জীবনে কোনো প্রতিবেশীর

অধিকার নষ্ট না করা,

তাকে যথাযথভাবে সম্মান দেয়া,

তাকে কষ্ট না দেয়া মানবজীবনের

গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। কারণ সমাজে একজন

মানুষ একাকী বসবাস করতে পারে না।

মানুষ মাত্রই পরস্পর পরস্পরের মুখাপেক্ষী।

তাই সামাজিক জীবনে প্রত্যেক

মানুষেরই রয়েছে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সুখে-দুঃখে একজন আরেকজনের

অংশীদার হওয়া, কেউ অসুস্থ হলে তার

দেখাশোনা করা যেমন ইমানি দায়িত্ব,

তেমনি তা মানবতার দাবিও বটে। তাই

প্রত্যেক মুসলমানের উচিত তার

প্রতিবেশীর হক আদায় করা।

প্রতিবেশীর হকের গুরুত্ব

সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে যে,

‘কোনো বান্দা যদি কোনো প্রতিবেশীর

হক নষ্ট করে, আল্লাহ তায়ালা ওই

ব্যক্তিকে ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করবেন

না যতক্ষণ না সে ক্ষমা করে।’ সুতরাং এর

দ্বারা বোঝা যায়, প্রতিবেশীর হক অত্যন্ত

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বস্তুত এ

হাদিসে বলা হয়েছে যে,

কোনো বান্দা যদি মুখের

ভাষা দিয়ে কাউকে কষ্ট দেয় এবং সে যত

বড় ব্যক্তিত্বই হোক না কেন, সে অধিক

পরিমাণে নফল ইবাদত করলেও

সে জাহান্নামি।

পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তি নফল ইবাদত কম

করল কিন্তু সে সমাজের

কোনো মানুষকে তার মুখের

কথা দ্বারা কষ্ট দেয়

না তবে সে জান্নাতবাসী। মানুষের

অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর মধ্যে জিহ্বা এমন

একটি অঙ্গ যা দ্বারা একজন মানুষ আরেকজন

মানুষের অনেক বড়

ক্ষতি করে ফেলতে পারে। মানুষের

কথাকে ধারালো তরবারির

সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।

ধারালো তরবারি যেমন

কোনো বস্তুকে কেটে ক্ষত-বিক্ষত

করে ফেলতে পারে,

তেমনিভাবে মুখের কথা একজন মানুষের

মনকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলতে পারে। এ

প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

‘যে ব্যক্তি আমাকে তার দুটি বস্তুর

ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারবে-

একটি লজ্জাস্থান, আরেকটি দুই চোয়ালের

মধ্যখানে অবস্থিত বস্তু অর্থাৎ জিহ্বা, তার

জান্নাতের ব্যাপারে আমি রাসুল (সা.)

জিম্মাদার হব।’ হাদিসের এই কথার

মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে পারি জিহ্বা

দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত সহজে শুকোয় না, এর প্রভাব

সুদূরপ্রসারী। তাই আমাদের সবার উচিত

জিহ্বাকে সংযত রাখা। সতর্কতার

সঙ্গে কথা বলা যাতে কোনো মানুষ কষ্ট

না পায়। অন্য আরেক হাদিসে, অধিক নফল

নামাজ, নফল রোজা ও দান-খয়রাতের জন্য

বিখ্যাত লোককেও শুধু

প্রতিবেশীকে জিহ্বা দ্বারা কষ্ট দেয়ার

কারণে তাকে জাহান্নামি বলা হয়েছে।

মাওলানা মিরাজ রহমান