নতুন প্রযুক্তির ভবিষ্যত টেলিভিশন

টেলিভিশন
প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গুলো যুগের সাথে তাল মিলিয়ে টেলিভিশনে যোগ করে চলেছেন একের পর এক নিত্য নতুন সব ফিচার সমূহ। এই চেষ্টার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করা, যেন তারা সেই নতুন সকল ফিচার গুলোতে মুগ্ধ হয়ে একটি টিভি কেনেন। এর ফলেই ত্রিমাত্রিক টেলিভিশন (3D), 4K টেলিভিশন এবং কার্ভড (বাঁকানো) টেলিভিশনের পর আসতে চলেছে আরও এক নতুন প্রযুক্তি, নামঃ কোয়ান্টাম ডট!

যদিও এই ‘কোয়ান্টাম ডট’ টেকনোলজিকে সম্পুর্ন ভাবে নতুন বলা যায়না তবুও নির্মাতারা আশা করছেন যে এই টেলিভিশন ব্যবহারকারীদের মন খুব সহজেই জয় করে নিতে সক্ষম হবে এবং খুব শীঘ্রই হয়তো আপনি টেলিভিশনে নতুন এই প্রযুক্তির টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন।
LED , Plasma এবং OLED টেলিভিশন সম্পর্কে কিছু কথা ----------
কোয়ান্টাম ডট নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে এলইডি, প্লাজমা এবং ওএলইডি প্রযুক্তি গুলো নিয়ে অল্প কিছু কথা বলা যাক। তাহলে হয়তো, সেগুলোর সাথে কোয়ান্টাম ডটে’র পার্থক্য আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।
কোয়ান্টাম ডট নামের এই প্রযুক্তি মূলত এলইডি টেলিভিশনের একটি ত্রুটিপুর্ন দিক সম্পর্কে আলোকপাত করে। অনেক ব্যবহারকারীরা আছেন যারা প্লাজমা এবং ওএলইডি ডিসপ্লে (অর্গানিক এলইডি) ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। এবং এই জনপ্রিয়তার পেছনে মূলত কাজ করে এসকল ডিসপ্লে ইউনিটের পিওর ব্লাক কালার এবং অন্যান্য রিচ কালার।
বাজারে যে সকল এলইডি টেলিভিশন সমূহ পাওয়া যায় সেগুলো মূলত এলসিডি টেলিভিশনই যাতে শুধুমাত্র এলইডি ব্যাকলাইটিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক বছর আগেও এলসিডি টেলিভিশনে ফ্লুরোসেন্ট টিউব (CCFL) ব্যবহার করা হত যা সাদা রঙের আলো উৎপন্ন করতো। এবং সেই সাদা রঙই টেলিভিশনের ডিসপ্লের পিক্সেলের মধ্যে দিয়ে যাবার সময় প্রয়োজন মত যে কোন রঙে পরিবর্তিত হত। অন্যদিকে, এলইডি টেলিভিশনে ব্যবহার করা হয় এলইডি ব্যাক লাইটিং প্রযুক্তি যা তুলনামূলক ভাবে পরিমাণে কম শক্তি অপচয় করে এবং কম তাপমাত্রা উৎপন্ন করে। শুধু তাই নয়, এলইডি ব্যাক লাইটিং ব্যবহারের ফলে টেলিভিশনে জায়গাও কম লাগে এবং একারণেই বর্তমানের আধুনিক টেলিভিশন সমূহ এতটা বেশি স্লিম এবং পাওয়ার এফিসিয়েন্ট হয়ে থাকে।


এলসিডি’র তুলনায় এলইডি’র সুবিধা বেশি হলেও এটিও কিন্তু ত্রুটিমুক্ত নয়। একটু আগেও বলেছি যে এলইডি টেলিভিশনে ব্যবহার করা হয় এলইডি ব্যাক লাইটিং যা ব্যাক লাইটিং-এর জন্য নীল আলো উৎপন্ন করে। এবং এরপর সেই নীল আলোই টেলিভিশনের ডিসপ্লে ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে যাবার সময় প্রয়োজন মাফিক রঙে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। কিন্তু, এলসিডি প্রযুক্তির সাদা রঙের পরিবর্তে এলইডি’র এই নীল রঙ কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করে। সাদা রঙের পরিবর্তে নীল এই রঙের জন্য ডিসপ্লে ইউনিটের কালো অংশ গুলোতে যতটুকু কালো রঙের প্রয়োজন তার থেকে প্রদর্শিত কালো রঙ গুলো কিছুটা উজ্জ্বল হয়ে থাকে এবং অন্যান্য রঙ গুলোও কিছুটা কম ভাইব্র্যান্ট হয়ে থাকে। এবং এই সমস্যার সমাধান করতেই পরবর্তি সময়ে নির্মাতারা ঠিক করেন যে কালো অংশ গুলোতে ব্যাক লাইটিং এর পরিমাণ কিছুটা ডিম করে দেয়া হবে। আপনি এলইডি টিভির বিজ্ঞাপনের স্পেসিফিকেশন লক্ষ্য করলেই ‘Local dimming’ ফিচারটি দেখতে পারবেন। এই ফিচারটির ফলে পিক্সেল গুলো নির্ভুল ভাবে ঠিক ততটাই কালো রঙ প্রদর্শন করতে পারবে যতটুকু দরকার।
সমস্যার নতুন সমাধান - কোয়ান্টাম ডট ---------------


‘কোয়ান্টাম ডট’স হচ্ছে মূলত লাইট-এমিটিং ন্যানো ক্রিস্টাল যা এক প্রকারের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘকে শোষণ (absorb) করে তা কনভার্ট করতে পারে। এটি মূলত ১৯৮২ সালের দিকে বেল ল্যাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল।


কোয়ান্টাম ডট’স হচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্রিস্টাল যা এলইডি টেলিভিশনের ব্যাকলাইট স্তরের উপরে যোগ করা যায় অথবা আলাদা একটি স্বতন্ত্র ডিসপ্লে হিসেবেও তৈরি করা যায়। আর সেই নীলাভ আলো যা এলইডি টেলিভিশনের ব্যাক লাইটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপন্ন হয় তা পিক্সেলের মধ্যে দিয়ে বা ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে যাবার পর ক্রিস্টালে যখন পৌছবে তখন সেই ক্রিস্টাল গুলো এই নীল আলোকে ভেঙ্গে আরও শক্তিশালী সাদা রঙের আলো উৎপন্ন করবে যার মধ্যে স্পেকট্রামের সকল রঙ বিদ্যমান থাকবে। এবং এই আলোই শেষ স্তরে এসে চমৎকার পিকচার কোয়ালিটি তৈরি করতে সক্ষম হবে যা হবে আগের চাইতে অনেক বেশি ভাইব্র্যান্ট। আপনি কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তি সহ তৈরি একটি এলইডি টেলিভিশনের পিকচার কোয়ালিটি একটি প্লাজমা বা ওএলইডি টেলিভিশনের পিকচার কোয়ালিটির সাথে তুলনা করে দেখতে পারেন। অনেকটা একই।
Plasma অথবা OLED: কেন নয় --------------


হোম থিয়েটার প্রেমিদের কাছে প্লাজমা টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা হয়তো সবচাইতে বেশি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আর প্লাজমা টেলিভিশন তৈরি করছেন না। এর পেছনে আসলে বেশ কিছু কারণ আছে, তবে মূল কারণ গুলো হচ্ছেঃ প্লাজমা টেলিভিশন আকৃতিতে কিছুটা বেঢপ, অনেক ভারী এবং অবশ্যই এটি অনেক বেশি ইলেক্ট্রিসিটি ব

অভিশপ্ত আয়না


অভিশপ্ত আয়না (ভৌতিক গল্প)




আয়নাটির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুপ্তি। চমৎকার ডিম্বাকৃতি আয়না, চারপাশে লাল আর কালোর অদ্ভূত নকশা করা বর্ডার। কিন্তু সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে আয়নার উপরে বসানো ময়ূর দুটি। ময়ূর দুটির লেজ আয়নার দুই পাশে ঝুলে রয়েছে। চোখ গুলিতে কি পাথর বসানো কে জানে, লাল রঙ এর চোখগুলো আলো না পড়লেও যেন ঝিকমিক করছে। প্রথম দৃষ্টিতেই আয়নাটির প্রেমে পড়ে গেলো সে। এরপর পুরো ঘরে এক চক্কর দিয়ে আবার সেই আয়নার সামনেই এসে দাঁড়িয়েছে। মনের কল্পনায় দেখছে, আয়নাটিকে তার রুমের ওয়ার্ডরোবের পাশের দেয়ালে কি চমৎকারই না দেখাচ্ছে। আয়নার দাম যে তার নাগালের বাইরে হবে, সে নিয়ে সুপ্তির মনে কোন সন্দেহ নেই। তার স্কলারশিপের


টাকা বেশীর ভাগই সে মনের আনন্দে উড়িয়েছে। সেটা নিয়ে এখন তার অনেক মন খারাপ হলো।
সে এসেছে তার মায়ের সাথে পুরান ঢাকার গলির মাঝে তস্য গলির তিনতলা এক বাড়ীতে। বাড়ীটি এত পুরনো যে যে কোন সময়ে ঝুর ঝুর করে ভেঙে পড়বে। সেই কোন আমলের জমিদার বাড়ি, বয়স প্রায় ৩০০ বছর।অনেক বছর বাড়িটি বন্ধ থাকার পর কে বা কারা যেন পেপারে বিজ্ঞাপন দিয়েছে যে অ্যান্টিক পুরনো আসবাবপত্র বিক্রি হবে। তার মার সখ অ্যান্টিক শো পিসের, একারনেই শুক্রবারের সকালে আরাম ছেড়ে তারা এখন এই পুরনো বাড়ীর বৈঠক খানায় দাঁড়ানো। সুপ্তি পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে, তৃতীয় বর্ষে। শুক্রবারে তাকে বেলা ১২টার আগে বিছানা থেকে তোলা কষ্টসাধ্য নয়, একেবার দুঃসাধ্য কাজ। আজকে সেই কাজটি তার আম্মু, নাসরিন বেগম ওরফে নাসু, করতে সক্ষম হয়ে আব্বুর কাছ থেকে বাজীর ৩০০০ টাকা আদায় করেছে। সেই টাকা নিয়েই নাসরিন ঢু মারতে এসেছে এই পোড়ো বাড়িতে। তার আম্মুর ইতোমধ্যে একটা পানের বাটা আর একটি ফুলদানি খুবই পছন্দ হয়েছে। এখন সে দরদাম করতে ব্যস্ত সাদা চুলের বুড়োর সাথে। সেই এই বাড়িটি দেখাশোনা করে। বাড়িটির বর্তমান মালিক জন্মের পর থেকেই আমেরিকা। একবারো দেশে আসেনি। এখন সে চায় সব কিছু বিক্রি করে দেশের সাথে সম্পর্ক একেবারেই মিটিয়ে দিতে।
এক ফাঁকে সুপ্তি বাড়ির নীচতলা পুরোটাই ঘুরে এসেছে। সবকিছুরই ঝুরঝুরে দশা। দোতলার একটি ঘর কোনমতে আস্ত আছে, যেটিতে বুড়ো চৌকিদার থাকে। তিনতলায় কেউ ওঠে না প্রায় ১০০ বছর হয়ে গেছে নাকি। নীচ তলার রুমগুলি এখনো কিছুটা আস্ত আছে বটে, কিন্তু ভ্যাপসা গন্ধ আর প্রচন্ড ধূলা। এক কালের রঙিন কাঁচ গুলো অবহেলা আর পরিচ্ছন্নতার অভাবে ধূলি ধূসরিত। ঘুরতে ঘুরতে একটা বন্ধ দরজার সামনে এসে পড়ে সুপ্তি। বিশাল কাঠের দরজা, অতীতে হয়ত চমৎকার কাঠের কাজ করা ছিল; এখন তার উপরে কয়েক পরত ধূলার আস্তরন। সুপ্তি টানাটানি করতেই ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে খুলে গেলো। রুমটি বেশী বড় নয়, মাঝারি আকৃতির। ভিতরে ঢুকে সুপ্তি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। চারপাশে বিশাল বিশাল সব আলমারি, আর তাতে না হলেও হাজার দশেক বই হবে। এ বাড়ির লাইব্রেরী বোধ হয়। মাকড়সার জাল সরিয়ে সরিয়ে ঢুকতে হয়, অবস্থা এতই করুণ। ঝটপট শব্দ হচ্ছে, তার মানে ইঁদুরের সাম্রাজ্য।সাথে চামচিকাও অবশ্যই আছে। ঘরের কোনে একটা লাঠি পেয়ে সেটা নিয়েই সুপ্তি এগুতে থাকে জাল সরিয়ে।একটা আলমারি টানাটানি করে খুলতে ব্যর্থ হয়। সব মনে হয় তালা দেয়া। ঘরের এক কোনে একটা টেবিল আর ইজি চেয়ার। চেয়ারের কোন দশা নেই, কি করে এখনো দাঁড়িয়ে আছে তা এক বিস্ময়। টেবিলের উপরে এখনো কিছু বই ইতঃস্তত পড়ে আছে। শত বছর আগে এই টেবিলে বসেই কেউ লিখতো, বই গুলি পড়তো – ভাবতেই সুপ্তির গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। সবকিছুর উপর শত বছরের ধূলা। সুপ্তি ভাবলো তার মা এই রুমে এলেই সর্বনাশ। মার প্রবল ডাস্ট এলার্জি। বাসার সব ধূলা ঝাড়াঝাড়ি সুপ্তি আর তার বাবাকেই করতে হয়। সুপ্তি টেবিলের রাখা বইগুলোর উপর থেকে হাত দিয়েই ধূলা সরাতে থাকে। কালো মলাটের একটি মোটা বই, প্রথম পাতা খুলতেই ঝুর ঝুর করে সব খসে পড়লো। পাতা নেই বললেই চলে, যা আছে সব ইঁদুর আর পিঁপড়া মিলে ভোগে লাগিয়েছে। কিসের বই বোঝার কোন উপায় নেই। বইটির পাশে ছোট একটি ডায়েরী। সুপ্তি অবাক হয়ে দেখলো সবকিছুর ধূলার সাম্রাজ্যে ঢাকা হলেও ডায়েরীটি যথেষ্টই পরিস্কার। কেউ যেন নিয়মিত এর ধূলা ঝাড়ে। পাশেই কালির দোয়াত, তার মাঝে পাখির পালকের কলম। ধূলায় রঙ অস্পস্ট। সুপ্তি ডায়েরীটি তুলে নিল।
“এখানে কি চাই?” – গম্ভীর রাগী গলায় কেউ একজন প্রশ্ন করলো।
সুপ্তি ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে হাত থেকে ডায়েরী ফেলে দিলো। আতংকে তার গলা রুদ্ধ হয়ে গেলো, কোনমতে পিছনে ফিরে দেখলো বুড়ো চৌকিদার কোন ফাঁকে চলে এসেছে। এত তন্ময় হয়ে সুপ্তি সব দেখছিলো যে সে বুঝতেই পারেনি অন্য কেউ ঘরে প্রবেশ করেছে। তোতলাতে তোতলাতে সুপ্তি বললো,
“এই তো, এমনি। এমনি আমি সব ঘুরে দেখছিলাম”।
বুড়ো চৌকিদারের চোখ রাগে ধক ধক করে জ্বলছে। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“কখনো এমন কোথাও যেতে হয় না যেখানে তুমি অবাঞ্চিত। এমন কোন কিছু স্পর্শ করতে হয় না যা তোমার নয়। তোমার কৌতুহল তোমাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, সে সম্পর্কে তোমার কোনধারনা নেই”।
সুপ্তির কাঁপুনি বেড়ে গেলো। আজকাল সে অনেক সাইকো থ্রীলারের ছবি দেখে তার বন্ধু চৈতীর পাল্লায় পড়ে। এই লোকটিও সাইকো নয় তো?
“আমি…… আমি দুঃখিত। বুঝতে পারিনি”। কাঁপা কন্ঠে কথা গুলো বলেই লোকটির পাশ দিয়ে দৌড় দিলো সুপ্তি। দরজা দিয়ে বের হতে হতে সে শুনতে পেলো লোকটি কারন ছাড়াই হাসছে।
বাইরে বৈঠক খানায় এসে দেখলো তার মা চার পাঁচটি প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে। যেতেই সুপ্তি ধমক খেলো।
“অ্যাই পাজি মেয়ে, কোথায় ছিলি তুই? জানিস আমি কতক্ষন ধরে খুঁজছি। বাসায় যেতে হবে না? রান্না কি ভূতে করে দিয়ে যাবে?”
সুপ্তি কথার উত্তর না দিয়ে দৌড়ে দরজা দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলো। রাস্তায় লোকজনের মাঝে না গেলে তার কাঁপুনি কমবে না। অদ্ভুত কিছু একটা আছে এই বাড়ীতে। এক মূহুর্ত সে এখানে থাকবে না।
বুড়ো চৌকিদার ততক্ষণে ফিরে এসেছে। সুপ্তির মা তার দিকে তাকিয়ে লজ্জিত ভাবে বললেন,
“মেয়েটা আমার বড় পাগলী হয়েছে। তাহলে আজ আসি?”
“জ্বী জ্বী। তবে কি আমি চায়ের সেটটি আপনার জন্য রাখবো? একেবারে খাঁটি পুরনো জিনিস কিন্তু, ১৫০ বছরের কম বয়স না”।
সুপ্তির মা দুঃখের সাথে মাথা নাড়লেন, “যে দাম বলছেন, তাতে কোন ভাবেই সম্ভব না”।
“আরেকটু না হয় কমালাম, আপনি এত জিনিস নিলেন”।
সুপ্তির মা কিছুক্ষন ভেবে বললেন, “আপনি দিন ১৫ যদি রাখতে পারেন তবে ভালো হয়, এর পর আমি এসে নিয়ে যাবো”।
“ভালো খদ্দের না পেলে রাখবো। আপনি খবর নিয়েন”।
প্রথম দুই তিন দিন সুপ্তির রাতে একা ঘুমুতে একটু ভয় ভয় করছিলো; কিন্তু তার ছোট বোন হচ্ছে পাজির পা ঝাড়া। কি ভেবে যে আব্বু তার নাম সুকন্যা রেখেছে সে আল্লাহ মালুম। একবার যদি শোনে যে সুপ্তির রাতে ঘুমুতে ভয় করছে, ফোন করে করে সবার কাছে খবর পৌঁছে দেবে। তাই সে যে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাচ্ছে, তা কাউকে জানতে দিলো না। দিন তিনেক পরেই সব আগের মত। অ্যাসাইনমেন্ট আর পরীক্ষার ধাক্কায় সুপ্তির জীবন চলতে লাগলো আগের ধারায়।
২৪শে এপ্রিল সুপ্তির জন্মদিন। ২৩শে এপ্রিল রাতে সে খুবই আনন্দ নিয়ে জেগে থাকে। প্রতিবারই জন্মদিনে রাত ১২টা এক মিনিটে সে বেশ কিছু উপহার পায়। তার মাঝে কিছু উপহার গৎবাঁধা। তার ভালো মানুষ বাবা একটা খামে শুভ জন্মদিন লিখে কিছু টাকা দেবে, যেটাতে সে বন্ধুদের খাওয়ায়। তার পাজি বোন একটা কার্ডে হ্যাপী বার্থডে লিখেই খালাস। ছোট খালা উপহার আগেই পাঠিয়ে রাখে। প্রতি বছরই সে একটা করে জামা পায়। পাশের বাসার নীনা আন্টির কেক পুরো বিল্ডিং এ হিট। নীনা আন্টি একটা কেক বানিয়ে আনে। গত বছর নীনা আন্টির ৪ বছরের ছেলে কৌশিক একটা ললিপপ দিয়েছিল। যেটা দেয়ার আগে আবার সে খানিকক্ষন খেয়েছে। এবছর কি করবে কে জানে! তবে তার আম্মুর দেয়া উপহার সবসময়ই ব্যতিক্রম। কোনবারের সাথে কোন বারের টা মিল থাকে না। এই তো দুই বছর আগে সে পেয়েছিলো রবীন্দ্র রচনাবলীর সেট, গত বছর আম্মু তার জন্য কিনে এনেছিল মুক্তার চমৎকার একটা সেট। পার্টিতে সে প্রায়ই সেটা পড়ে। এবছর কি পাবে তা নিয়ে সে খুবই উত্তেজিত। শুয়ে শুয়ে সে ঘুমের ভান করতে লাগলো। ১২টা ১ বাজার সাথে সাথে সবাই হ্যাপী বার্থডে টু সুপ্তি বলতে বলতে রুমে ঢুকে পড়লো। সুপ্তি ভান করলো যে সে একেবারে আকাশ থেকে পড়েছে। ডাইনিং রুমের টেবিলের উপরে নীনা এক্সআন্টির কেক রাখা। চারপাশে মোমবাতি সাজানো।মোবাইলে টানা ভাইব্রেশন হচ্ছে, মেসেজ আসার জন্য। আনন্দে সুপ্তির চোখে জল এলো। কেক কাটা পর্ব শেষ করেই সবাই ঘুমানোর জন্য দে ছুট। আম্মু এসে সুপ্তির কপালে চুমু দিয়ে তার উপহারটি বিছানায় রেখে গেলো। সবাই চলে গেলে পরে গভীর রাতে সুপ্তি তার উপহারগুলো খুলতে বসলো। তার বোনের কার্ডটির মাঝে এবার বান্দরের ছবি। দাঁত বের করে বান্দরটি হ্যাপী বার্থডে জানাচ্ছে।সুখের বিষয় এবার কৌশিক কোন উপহার ছাড়াই এসেছে। ছোট খালার জামাটিও মন্দ না। আব্বুর দেয়া টাকা গুলি ব্যাগে ভরে সুপ্তি আগ্রহ ভরে আম্মুর দেয়া উপহার খুললো।



উপহার খুলে সুপ্তি খানিকক্ষন হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। এরপর আবার নতুন করে চোখে জল আসা শুরু হলো। যে আয়নাটি দেখে সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো ওই পোড়ো বাড়িতে, আয়নাটি তার আম্মু তার জন্য নিয়ে এসেছে। মা দের চোখে কি কিছুই এড়ায় না? সুপ্তি উঠে তার ওয়ার্ডরোবের পাশের দেয়াল থেকে ক্যালেন্ডারটি সরিয়ে আয়নাটা লাগায়। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সে আবার মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ে। চারপাশের বর্ডারে কি সূক্ষ্ণ কারুকাজ। কাঠের মাঝে লাল আর কালো রঙ করা। উপরের ময়ূরের লেজ দুইটি কি দিয়ে বানানো যে এত বছর পরেও এতটুকু রঙ নষ্ট হয়নি? আর চোখ গুলি কি রুবী? সুপ্তির চেহারা তার নিজের কাছে বিশেষ সুবিধার কখনোই মনে হয় না। কিন্তু এখন সে নিজেকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো। আয়নায় কি সুন্দরই না তাকে লাগছে। একটা লাল টিপ এনে কপালে পড়লো। রূপকথার রাজকন্যা যেন। আনন্দ দিয়ে সুপ্তি ঘুমাতে গেলো। কিন্তু ঘুম কেন যেন খুব ছাড়া ছাড়া হলো। শেষ রাতের দিকে তার ঘুমের মাঝেই মনে হতে লাগলো কেউ তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সংগ্রহিত:

তুতেন খামেনের মৃত্যু রহস্য

প্রাচীন
মিশরের সবচেয়ে বিখ্যাত ফেরাউন তুতেনখামেন ছিলেন অজাচারের ফসল। অর্থাৎ তারা বাবা-মা ছিলেন আপন ভাই-বোন। আর মাত্র ১৯ বছর বয়সে তার মৃত্যুর প্রধান কারণ এই রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার নামে অজাচার।

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা তুতেনখামেনের মমি এবং ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বিচার করে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।



এই বালক রাজার অকালমৃত্যু নিয়ে এ যাবৎকালে নানা তত্ত্ব, গল্প তৈরি হয়েছে। তবে সম্প্রতি নির্মিত একটি তথ্যচিত্রে বিতর্কটির একটি জবাব দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তুতেনখামেনের অল্প বয়সে মৃত্যুর কারণটিও সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

প্রথমে তুতেনখামেনের মমির ওপর নির্ভর করে দুই হাজার কম্পিটারাইজড সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। এতে তার বৈজ্ঞানিকভাবে নিখুঁত একটি পূর্ণাঙ্গ অবয়ব পাওয়া গেছে।

এরপর মমি থেকে সংগৃহিত ডিএনএ টেস্ট করে তার বাবা-মাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। অবশ্য এতে যা পাওয়া গেছে তা তার দাদা-দাদী বা নানা-নানীর বৈশিষ্ট্যও হতে পারে।

তবে তৎকালীন মিশরীয় বিশ্বাস ও সংস্কার বিবেচনা করলে তুতেনখামেন যে আপন ভাই-বোনের যৌন সম্পর্কের ফসল তা অনেকখানি নিশ্চিত হওয়া যায়।

মিশরীয়দের বিশ্বাস রক্তের সম্পর্কীয় আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হলে রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষিত হয়। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বিবেচনায় আসলে ঘটে উল্টোটা। পরবর্তী প্রজন্মের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না।

মমি স্ক্যান ও সিটি স্ক্যানের ফলে তুতেনখামেনের যে পূর্ণাঙ্গ অবয়ব পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, এই বালক রাজার শরীরের গঠন ছিল উঁচু মাড়ি, রমনীয় নিতম্ব এবং ভাঁজ হয়ে যাওয়া পা।

এছাড়া তার অস্বাভাবিক বড় স্তন সে তার বাবা এবং চাচাদের কাছ থেকে পেয়েছে বলেই ধারণা করা হয়। অর্থাৎ এই শারীরিক কাঠামোর অসঙ্গতি নিয়ে জন্ম নেয়ার বালক রাজা তুতেনখামেন অকালে মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ মিশরীয়দের রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার সংস্কার।

এর আগে বিশ্বাস করা হতো, রাজা তুতেনখামেন একটি রথ দুর্ঘটনায় নিহত হন অথবা তাকে খুন করা হয়। তবে গবেষকরা এই ধারণাকে উড়িয়ে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, তুতেনখামেন ১৩৩৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মাত্র ১০ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহন করে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মাত্র নয় বছর তৎকালীন মিশর শাসন করে সে।

বংশগতি বিদ্যায় এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের মধ্যে যৌন সম্পর্কের ফলে সৃষ্ট সন্তান নানা শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্ম নিতে পারে। এখানে বাবা-মার প্রচ্ছন্ন নেতিবাচক বৈশিষ্টগুলো সন্তানের মধ্যে প্রকট হতে পারে।

সুত্র ঃ বিশ্বের-সেরা-সত্যি-ভূতের-গল্প-ও-ইতিহাস

১৩ টি ডিম পাড়ে যে মুরগী


June 9th, 2015

সূত্র-somoyerkonthosor.com



হবিগঞ্জ: একদিনে মুরগিটি ডিম পেড়েছে ১৩টি। এমন কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলে কিন্তু ঘটনা সত্যি। মুরগিটি দেখতে মোরগের মত হলেও আসলে এটি মুরগি।


শারীরিক অবয়বে মুরগিটি সাধারণ হলেও একদিনে পর পর ১৩টি ডিম পেড়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এমন অবাস্তব ঘটনা ঘটেছে হবিগঞ্জে।



আলোড়ন সৃষ্টিকারী মুরগিটির মালিক হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামের সৈয়দ মাইনুল হক আরিফ। তার বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদুল হক।

মুরগি মালিক আরিফ জানান, গত বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মুরগিটি প্রতিদিন তিনটি করে ডিম দিতে থাকে। প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকার পর চলতি বছর ৫ জানুয়ারি থেকে পুনরায় একাধিক ডিম পাড়া শুরু করে। বুধবার সর্বোচ্চ ১৩টি ডিম পেড়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

এমবিএ করা আরিফ জানান, নেদারল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণীবিদ্যায় পিএইচডি করছেন তার নিকটাত্মীয় সৈয়দ সায়েম উদ্দিন। মুরগিটির ছবি ও বৃত্তান্ত জানিয়ে তাকে ই-মেইল করেন তিনি।

জবাবে সায়েম উদ্দিন তাকে জানিয়েছেন, মুরগিটির জেনেটিক কোনো সমস্যা থাকতে পারে। যে কারণে ডিম ধরে রাখতে পারছে না। যেকোনো সময় মুরগিটি মারা যেতে পারেন বলে জানান তিনি।



আরিফ জানিয়েছেন, তার পোলট্রি ফার্মের জন্য গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় অলিপুরের সিপি হ্যাচারি থেকে একদিন বয়সী ব্রাউন লেয়ার প্রজাতির দুই হাজার মুরগির বাচ্চা কেনা হয়। পাঁচ মাস বয়সে ডিম পাড়ার কথা থাকলেও মুরগিগুলো ছয় মাস বয়সে ডিম দিতে শুরু করে।

তিনি জানান, একদিন তিনি লক্ষ্য করলেন, তার খামারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা একটি মুরগি ঠিক মোরগের মতো আচরণ করছে। মাথার ঝুঁটিও মোরগের মতো। পরে মুরগিটি তিনি অন্য খাঁচায় আলাদা করে রাখেন।

গত বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মুরগিটি প্রতিদিন তিনটি করে ডিম দিতে থাকে। প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে পুনরায় একাধিক ডিম দিতে শুরু করে। মুরগিটি বুধবার সর্বোচ্চ ১৩টি ডিম পেড়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মুরগিটির ওজন ৩ কেজি ৭শ’ গ্রাম বলে জানান তিনি।

আরিফ জানান, প্রথমে আমি নিজেও বিশ্বাস করেনি। একদিন ভোরে নিজেই দূর থেকে লক্ষ্য করছিলাম, কিছুক্ষণ পর পর মুরগিটির ডিম পাড়ার দৃশ্য। এ ঘটনা স্থানীয় মসজিদের ইমামসহ কয়েকজনকে দেখিয়েছি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, প্রাণীদেহে যে গ্র্যাল্ড থাকে তা থেকে অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ হওয়ায় প্রজনন ইন্দ্রিয়ের কার্যক্রমতা বেড়ে যায়। এ কারণেই হয়তো মুরগিটি মাত্রাতিরিক্ত ডিম দিচ্ছে।

তিনি জানান, খামারি মালিক যদি মুরগিটি পরীক্ষার জন্য দেন তাহলে গবেষণাগারে পাঠিয়ে এর কারণ জানা যাবে। সরকারিভাবে বা কোনো প্রাণী গবেষক মুরগিটির ওপর গবেষণা করতে চাইলে তাতে আপত্তি নেই আরিফের।

সুন্দরবনের ভিতর প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন

যুগ প্রবাহে , কালের গর্ভে বিলীন হয় অনেক সভ্যতা । বদলে যায় সম্পূর্ণ প্রকৃতির চেহারা । ভাঙা গড়ার খেলা বোধহয় প্রকৃতিতে এমনভাবে চলে ।



সুন্দরবন বরাবরই রহস্যময়।আর রহস্যের আড়ালেই এবার সুন্দরবনের ভিতরে মিলেছে প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের খোজ।




ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার রায়দিঘির কঙ্কনদিঘিতে মিলল ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকের বৌদ্ধ বিহারের নিদর্শন | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সহযোগিতায় শুরু হয়েছে খননকার্য |
খননে সাহায্য করছে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ও রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। গতবছর ঢিবিরবাড়িতে খননে মিলেছিল ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকের বৌদ্বদের ধনদেবতা জম্ভলের পোড়া মূর্তি সহ গণমূর্তি, শামুকের চিহ্নযুক্ত ইট, পোড়া মাটির প্রদীপ, লোহার টুকরো, পাথরের নকশা ও পাথরে পায়ের ছাপ। এবারের খননে মিলেছে শামুকের খোল, নানান আকৃতির ইট, লোহার টুকরো, হাড়ের টুকরো, প্রচুর পোড়া কাঠ, একাধিক ধূসর ও কালো রঙের মাটির পাত্র ও খ্রিষ্টজন্মের কয়েকশো বছরের পুরনো লাল-কালো রঙের মাটির পাত্র। এ ছাড়া ষষ্ঠ-সপ্তম ও অষ্টম-নবম শতকের ইটের তৈরি বিশাল মেঝে।
এই নিদর্শন দেখে মনে হয়, সেই সময় এখানে মানুষের বসবাস ছিল।গবেষকদের অনুমান, এই অঞ্চলে বৌদ্ধ বিহারের অবস্থান ছিল এবং এখানে প্রাচীন কালে মানুষের বসতি ছিল |২০০ বছর পূর্বে সুন্দরবনের প্রকৃত আয়তন ছিলো প্রায় ১৬,৭০০ বর্গ কিলোমিটার যা কমে এখন ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে এই সুন্দরবনের ৬,০১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশ সীমানায় ।

মৎস কন্যা রহস্য

মৎস কন্যা রহস্য

রূপকথার চরিত্র মৎসকন্যা বাস্তবে আছে কিনা সে অনুসন্ধানে নেমেছে জনপ্রয় অনুসন্ধানী চানল অ্যানিমাল প্লানেট ।

গভীর সমুদ্রে ভেসে চলেছে জাহাজ। পাড়ি দিতে হবে অনন্ত পথ। হঠাৎ জলের মধ্যে থেকে শোনা গেলো মধুর কণ্ঠের সুললিত আকুল করা সুর। বিমোহিত হলেন নাবিক সুরের মূর্ছনায়। লাফ দিলেন অতল জলে গানের সুরে আবেশিত হয়ে। কিন্তু কোথায় সে সুরের উৎস? অর্ধেক মানবী আর অর্ধেক মাছরূপী মৎস্যকন্যা, মৎস্যকুমারী বা মারমেইডের মায়াজালে জড়িয়ে ততক্ষণে নাবিক হারিয়েছেন সব দিশা।



যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা নামে পরিচিত, মারমেইড, মৎস্যকন্যা, মৎস্যকুমারী, জলপরী বা সেলকাই। বিশ্ব পুরাণ, কিংবদন্তি, কল্পবিশ্বাস বা ঐন্দ্রজালিক জগতের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে এর অস্তিত্ব। কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে এর রহস্য থেকে গেছে রহস্য হিসেবেই। তবে থেমে নেই সত্যানুসন্ধান।

সম্প্রতি ‘অ্যানিমেল প্ল্যানেট’ নামে একটি টিভি শোতে ‘মারমেইড: নতুন প্রমাণ’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পর আবার আলোচনায় এসেছে মারমেইড বা মৎস্যকুমারী। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট একটি খবরও প্রকাশ করেছে অনুষ্ঠানটির নতুন আবিষ্কার নিয়ে। এটি ২০১২ সালে একই টিভি শোতে প্রচারিত ‘মারমেইড: দেহ পাওয়া গেছে’ অনুষ্ঠানের ফলোআপ।

তার মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে, অ্যানিমেল প্লানেট বিষয়টি নিয়ে হাল ছাড়েনি বা ছাড়ছে না। রহস্যের পর রহস্য খুঁজছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, এ টেলিভিশন শো শুধু মানুষকে বিনোদিত করেনি, মারমেইড বা মৎস্যকন্যা বাস্তবে ছিল বা রয়েছে দাবি করে তাদের ওয়েবসাইটের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে:

মারমেইড বা মৎস্যকন্যা সমুদ্রচারী মায়াবী প্রাণী। এরা অর্ধেক মানবী, অর্ধেক মাছ। আবহমান কাল ধরে এরা সমুদ্রে কাল্পনিকরূপে ছিল এবং এখনো রয়েছে। এগুলো নিয়ে রয়েছে নানা ঐন্দ্রজালিক রহস্য। সামুদ্রিক নানা অভিযাত্রায় রয়েছে এর নানাবিধ অস্তিত্বের প্রমাণ।

প্রাচীন গ্রিসের মহাকবি হোমারের বিখ্যাত মহাকাব্য ‘ওডেসি’তেও উল্লেখ রয়েছে মারমেইডের। প্রাচীন পূর্বাঞ্চলীয় মহাসাগরে মারমেইড শক্তিশালী সমুদ্রের ভয়ানক ড্রাগনের স্ত্রী ছিল। শুধু তাই নয়, তারা ছিল স্থলভাগের সম্রাট ও তাদের স্বামীদের মধ্যেকার বিশ্বস্ত বার্তাবাহক। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা মারমেইডকে বলে ইয়াকিয়কস। তারা এর নামে গানও করতো।

মারমেইড সংক্রান্ত বিশ্বাস মানব ইতিহাসের প্রায় শুরু থেকেই ছিল প্রমাণ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে অ্যানিমেল প্লানেট।

এই রহস্যময়ী অর্ধনারীর অবয়ব চিত্রের প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায় প্রস্তরযুগের গুহাচিত্রে। সেটা প্রায় ৩০ হাজার বছর আগের কথা। মানুষ সেসময় মাটিতে ফসল ফলাতে শিখেছে, সমুদ্রপথে ভাসানো শুরু করেছে জাহাজ।

মৎস্যকন্যাকে অর্ধমানব, চিমেরাস বা কাল্পনিক জীব, বনদেবতা, সেনচারস প্রভৃতি নামে ডাকা হয়। পুরাণে আবার উড়ন্ত মারমেইড বা মৎস্যকন্যারও উল্লেখ রয়েছে।

অ্যানিমেল প্লানেট এসব অস্তিত্ব খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেও মারমেইড কি আসলে বাস্তবে রয়েছে? রয়েছে কি কোনো বাস্তব প্রমাণ? ঐতিহাসিক, দার্শনিক, এবং নৃতত্ত্ববিদদের একটি বড় প্রশ্ন এটি।

মৎস্যকন্যা নিয়ে সিনেমা, কাব্য, গল্প, রূপকথা কম হয়নি। নানা জন নানা রূপে উপস্থাপন করেছেন মারমেইডকে।

আর ডিজনির বিখ্যাত সৃষ্টি লিটল মারমেইড এরিয়েল ও রাজকুমার এরিকের অসাধারণ গল্পের কথা কে না জানে।

স্কটিশ, আইসল্যান্ডিক এবং আইরিশ লোককাহিনীর মৎস্যকন্যার নাম আবার সেলকাই। সেলকাইয়ের গল্পটিও কিছুটা ব্যতিক্রমী। কিন্তু গল্পের কাহিনীবিন্যাস প্রায় মৎস্যকন্যার মতোই। প্রচলিত এ লোককথা নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। নাম `দ্য সিক্রেট অব রোয়ান ইনিশ`।

অ্যানিমেল প্লানেট কি ভবিষ্যতে দিতে পারবে আবার নতুন কোনো প্রমাণ?

ততদিন থাকতে হবে অপেক্ষাতে ।

সূত্র - animal planet

অনলাইন পত্রিকা

আশ্চর্য্য সেই ঝুলন্ত বাগান

আসলে আমাদের পৃথিবীটাই পরতে পরতে লুকানো একটা রহস্য ভান্ডার । বর্তমানে বাস্তবে নেই এর অস্তিত । তবে এটা এখনো দখল করে রয়েছে প্রাচীন সপ্তাশ্চার্য ও মিথ এর পাতায় ।

আসুন জানি সেই প্রাচীন আশ্চর্য সম্বন্ধে ।


1) ঝুলন্ত উদ্যানের কোন অস্তিত্ব নেই কিন্তু এটি পৃথিবীর প্রধান সপ্তাশ্চার্যের একটি।

2) ব্যবিলনের শুন্যদ্যানের আজ পর্যন্ত কোন অস্তিত্ত্ব পাওয়া যায়নি কিন্তু এটি থাকার কিছু পৌরানিক প্রমান পাওয়া যায়।


3) বিভিন্ন রোমক এবং গ্রিক সাহিত্যিকগণ বাগান সম্পর্কে প্রচুর লেখা লিখেছেন। এবং ইহা কে, কেন, কার জন্য, আকৃতি এবং কোথায় তৈরি করা হয়েছিলো এসব তথ্যও তাদের লিখা হতেই জানা যায়।

4) তবে রাজা ২য় নেবুচাঁদনেজার তার স্ত্রীকে খুশী করতে এটি তৈরি করেন এ সম্পর্কে সবচাইতে বেশি ইতিহাসবীদ ও কবি সাহিত্যিক একমত হয়েছেন।

5) রাজা ২য় নেবুচাঁদনেজার খ্রিস্টপুর্ব ৬০সালে (সময়কাল ৪৩ বছর) এটি তৈরি করেন।

6) ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত বাগান ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে নির্মিত হয়।

7) জানা যায় প্রায় ৪০০০ শ্রমিক রাতদিন পরিশ্রম করে তৈরি করেছিল এই বাগান। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত ছিল ১০৫০ জন মালী।

8) ৫ থেকে ৬ হাজার প্রকার যুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল এই ঝুলন্ত বাগানে।

9) বাগানে প্রতিদিন ৮২,০০০ গ্যলন পানি প্রয়োজন ছিল যা একটি পাইপের সাহায্যে জলাশয় হতে তোলা হতো।

10) ৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পার্শ্ববর্তী পারস্য রাজ্যের সাথে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এই সুন্দর উদ্যানটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়।

ইতিহাস থেকে জানা যায় , সম্রাট নেবুচাডনেজার ছিলেন বিলাস প্রবন এবং অনেক সৌখিন । তার রানীর জন্য এটি তৈরি করেছিলেন বলে মনে করা হয় । ব্যাবিলন বা বর্তমান ইরাক মরুভূমি , আর তার রানীর জন্মস্থান ছিলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক দেশে । ফলে তিনি এটি রানীর পরিবেশের উপযুক্ত স্থান তৈরি করতে এটি নির্মান করেন বলে মনে করা হয় ।

ঈশ্বরদীর রেল জংশনের রহস্য গল্প

ঈশ্বরদীর সাথে রাজশাহীর যোগাযোগ পাকা পোক্ত করতে ইংরেজ সরকার রেল লাইনের কাজ দ্রুত করছিল। এই কাজের সমস্ত দায়িত্ব পেয়েছিল জোনাথন হার্ট নামে এক খিট খিটে ইংরেজ বুড়ো।

রেল লাইন তৌরীর কাজ শুরু হবার কয়েকদিনের মাথায় একটা অঘটন ঘটে গেল। গুদাম ঘর থেকে একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেল। স্বভাবতই এর সমস্ত দায়ভার গিয়ে পরল দাড়োয়ান নিপিন মন্ডলের উপর। কিন্তু বেচারা নিপিন একেবারেই সাদাসিধা লোক। তবে পাহাড়া দেবার সময় তার ঘুমানোর বদ অভ্যাস আছে। তাই সে এই অভিযোগ জোড় গলায় অস্বীকার করতে পারলনা।



২১ শে জানুয়ারী, ১৯৩৮।

বাইরে প্রচণ্ড শীত পরেছে। রেল লাইনের লোহা আর ইস্পাত এই ঠান্ডাকে যেন আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। নিপিন মন্ডল ঘুম ঘুম চোখে চেয়ে চেয়ে বাইরে দেখছে। কিন্তু কুয়াশার কারণে কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা। তার মনে হচ্ছে চাদড়টা কে আরেকটু জড়িয়ে চেয়ারে গা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু বুড়ো ইংরেজের ভয়ে তাও সম্ভব না। ভিটে মাটি নেই, এখান থেকে চাকুরী চলে গেলে কি করে খাবে সে? মিছে অপবাদে এমনিতেই তার চাকুরীর অবস্থা টলমলে। এভাবে নানা কথা ভাবতে ভাবতে চিন্তায় নিপিনের চোখ থেকে ঘুম ছুটে গেল।

বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে গেল। নিপিনের আলসে চোখদুটি ঘুমিয়ে পড়তে প্রস্তুত, ঠিক সেই সময়েই খুব কাছ থেকেই শব্দ পেল নিপিন। ঘুম কাতুরে চোখদুটি চারদিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগল। হাড়িকেনের আলোয় বাইরে আবছা যা দেখা যাচ্ছে তাতে সব কিছুকেই নিপিনের কাছে ভূত বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু সে জীবন্ত কিছুর পায়ের আওয়াজ পেয়েছে। বাতাস নেই কোন কিছু নড়বার সুযোগ নেই।

নিপিন শব্দের উৎসের দিকে চেয়ে থাকল। কিন্তু ঠিক বিপরীত দিক থেকে সে আবার আওয়াজ পেল, এবার সে নড়ে চড়ে বসল। পেছনে ফিরে চাইল। দেখল কালো মত কিছু একটা সরে গেল, কিন্তু কী তা বুঝলো না। বেশ কিছুক্ষণ সে সেই দিকে চেয়ে থাকল, এক সময় সে আন্দাজ করতে পারল, আসলে তার সামনে কোন কিছুর অস্তিত্ত নেই, তার কানের পাশে সে ঠান্ডা কোন কিছুর অস্তিত্ত পেল। ঝট করে ঘুরল, ঘুরেই দেখে কালো পোষাক পরা কোন কিছু তার সামনে দাঁড়িয়ে। মূহুর্তের মধ্যেই হাড়িকেনটি ধপ করে নিভে গেল। নিপিন শুধু দেখতে পেল তার চোখের সামনে কেউ তার পাঁচ আঙ্গুল মেলে ধরে আছে। সে চিৎকার করতে গিয়েও করতে পারছেননা।

২২শে জানুয়ারী, ১৯৩৮।

সন্ধ্যে পর্যন্ত যেখানে চুরির মামলায় সকলেই ব্যস্ত ছিল আজ সেখানে নিপিন নিপিন করে সবাই ব্যস্ত। ওর পরিবারের লোকেরা কেউ ওর কোন লাশেরও গন্ধ পাচ্ছেনা। স্টেশন মাস্টার রুস্তম বেপারী রাত ২টা বাজেও নিপিনকে দেখেছে চেয়ারের উপর বসে থাকতে। তারপরে আর কেউ দেখেনি তাকে।

সারাদিন অপেক্ষার পর বুড়ো জোনাথন হার্ট এল। এসেই রুস্তমের দিকে আড় চোখে বারবার চাইতে লাগল। কিন্তু লাশ না পাওয়া যাওয়ায় কাউকেই খুনের দায়ে দোষারোপ করতে পারবেনা কেউ। নিপিন আদৈ মরেছে কিনা তাও কেউ জানেনা। জোনাথন হার্টের ভাব ভঙ্গিতে রুস্তম বুঝে গেছে কোন মতে যদি নিপিনের লাশ পাওয়া যায় তাহলে খুনের দায়ে এই ইংরেজ তাকে ফাসিয়ে দিবে। তাই যেভাবেই হোক, নিপিনকে খুজে বের করতে হবে।
এদিকে রাত বাড়ার আগেই বুড়ো ইংরেজ গুদামঘর ও এর আশে পাশে পাহাড়া বসিয়ে দিল।

২৫শে জানুয়ারী, ১৯৩৮।
 তিন দিনের মাথায় নিপিনের গল্প বলা সকলে বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ এবার কাহিনীর মোড় নিয়েছে অন্য দিকে। গত দুই দিন থেকেই রাতের বেলায় গ্রামের অনেকেই দেখেছে কেউ হাড়িকেন হাতে করে ঠিক নিপিনের মত করেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। নিপিনদের সমাজ থেকে বলা হচ্ছে এটা নিপিনের অতৃপ্ত আত্মা। অন্যরা তা শুনে দিনের বেলায় মুচকি হেসে রাতে খুব তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করছে।

এইদিকে রুস্তমের কারো কথায় কান দেবার সময় নেই। আজই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশ এসেছিল। তারা তাকেই সন্ধেহ করছে। সে জন্য যেভাবেই হোক নিপিনকে জীবিত কিংবা মৃত পেতে হবে। জীবিত পেলে বুড়োকে এক হাত নেয়া যাবে আর মৃত পেলে লাশ গুম করতে হবে।

রাত ২টা

বাইরে কেউ ফুপিয়ে কাঁদছে। ভূতুরে মেয়ে কান্না নয় সেটা। গম্ভীর গলার নাকি সুর। রুস্তমের সমস্ত শরীরের লোম দাঁড়িয়ে তার ভয়ের জানান দিচ্ছে। সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে কেউ কাঁদছে। কিন্তু কে কাঁদছে তা বের হয়ে দেখার সাহস হচ্ছেনা। ভয় কাটাতেই রুস্তম হাড়িকেনের আলো বাড়াতে টেবিলের উপরে হাত দিল। অসাবধানতা বশত টেবিলের উপরে তালার চাবির উপরে হাত পরল। সেটি রাতের নিস্তব্ধতাকে কাটিয়ে ঝনঝন আওয়াজ করে মাটিতে আছড়ে পরল। সাথে সাথেই বাইরের কান্নার আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল।

কারো ধুপ করে মাটিতে পরে যাবার আওয়াজ আসল। রুস্তম কি করবে ভেবে পাচ্ছিলনা। কিছুক্ষন সময় নিয়ে সে সিদ্ধান্ত নিল বাইরে বের হবে। হাড়িকেনের আলো বাড়িয়ে দিয়ে সে বাইরে বের হয়ে এল। বাইরে শুধু কুয়াশা দেখতে পেল। কেউ নেই। ভয় পেল এই ভেবে কে এতক্ষণ কাঁদছিল? নিপিনের আত্মা! কিছুক্ষণ পরেই রুস্তম কারো হেঁটে যাবার আওয়াজ পেল। স্বভাবতই হাড়িকেনটা সে আওয়াজের দিকে ধরল।

আবছা আলোয় চাদড় পরিহিত অবস্থায় কাউকে সে দেখল। মনে পরে গেল গ্রামবাসীর কথা। আবার ভাবল সে কেন তার কোন ক্ষতি করছেনা? এই সাহস নিয়েই চাদড় পরা লন্ঠন ধারির পিছু নিল। বাইরে ফাঁকা জায়গায় এসে সেতিকে দেখে তার নিপিনই মনে হল।

কারন চাদর আর হাড়িকেন দুটিকেই তার নিপিনের মনে হল। পাচ বছর ধরে এক সাথে আছে তারা। রুস্তম সাহস করে ডাকল, ‘এ্যাই নিপিন’। কিন্তু সেটা পিছনে ফিরে তাকালো না। আগের গতিতেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এদিকে রুস্তম এই লণ্ঠনধারীর পেছনে আসতে আসতে গোরস্থান পর্যন্ত চলে এসেছে। কিন্তু সেটা আর থামছে না। এবার রুস্তম পুরো ভয় পেয়ে গেল। ওটার সাথে গোরস্থানের ভেতরে ঢুকবার সাহস পেলনা। ঠায় দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ কী করবে তা ভাবল। তারপর স্টেশনে ফিরে আসতে লাগল।

ষ্টেশনের খুব কাছা কাছি আসার পর রুস্তম বুঝতে পারল কেউ তার পিছু নিয়েছে। তাই সে একটি রেলগাড়ির বগির আড়াল হল। আরো কাছাকাছি কারো আওয়াজ পাওয়াতে সে ভয় পেয়ে বগির ভেতরেই ঢুকে গেল। ভেতরে আসতেই দম বন্ধ হবার যোগাড়। সে হাড়িকেন উচিয়ে চারদিকে তাকাতেই নিপিনের চাদড়টি দেখতে পেল। সামনে এক কদম আগাতেই পিচ্ছিল কোন কিছু উপরে পা পড়তেই ধরাম করে নরম কিছুর উপর গিয়ে পড়ল রুস্তম। তার শরীরের নিচে নরম কি আছে তা দেখতে যেয়েই দেখল তার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সাদা চেহারার প্রায় রক্তিম লাল দুটি চোখ যেন ঠিকরে বেরুচ্ছে। আর সেটির হাত তার ঘাড়ের উপরে।

২৬শে জানুয়ারী, ১৯৩৮।

রাত পার হয়ে সকাল হল। রুস্তম অবচেতন ভাবে সেই পরিত্যক্ত ট্রেনের বগিতেই পরে রইল। যখন চেতন পেল নিজেকে একটি মরা লাশের উপর আবিষ্কার করল। মাথার উপরে এমন আঘাতের পর বেঁচে আছে তাতেই সে আশ্চর্য, তার উপর প্রায় পচে যাওয়া জোনাথন হার্টের সহকারী রর্বাট ইউলিয়াম এর মরা লাশ কোথা থেকে এল তারই কোন হদিস পেলনা। এই ঘরটাই বা কেন এত সাজানো গোছানো? মনে হয় কেউ এর মধ্যে নিয়মিত বসবাস করত। একেতো নিপিনকে হত্যার দায়ে তাকে সন্দেহ করছে বুড়ো, তার উপরে এমন মরা লাশের পাশে তাকে কেউ দেখলে নিশ্চিত ফাঁসির দড়িতে ঝোলাবে তাকে। তাই সে খুব সতর্কতার সাথে বগি থেকে নেমে এল।
বাইরে কে বা কারা পুলিশের সাথে কথা বলছে। রুস্তম বের হয়ে আসতেই চার পাঁচজন পুলিশ তার সামনে এসে দাঁড়াল। তারমানে এগুলো সাজানো নাটক, রাতে তাকে ফাসাবার জন্যই ধাওয়া করা হয়েছিল যাতে কোনমতে তাকে এখানে ঢুকিয়ে পুলিশের কাছে চাক্ষুষ প্রমাণ করা যায়। বুড়ো ইংরেজ সাথেই ছিল, তাকে দেখা মাত্রই খেকিয়ে উঠল, “দিস ইজ দ্যা বাস্টার্ড কিলার, এরেস্ট হিম”। যথারীতি ধরা খেল রুস্তম ।

২৭ সে জানুয়ারী, ১৯৩৮।

গত কালকের পুলিশি রিমান্ডের পর রুস্তম গত পরশু রাতে কি কি করেছিল সব পুলিশকে বলল, তাতেই আজ রুস্তম হিরো বনে গেল আর শয়তান ইংরেজ বুড়ো হল খুনের আসামী। কারণ রুস্তমের বর্ণনা মতে পুলিশ সে স্থানে আসল ঠিক যেখান থেকে সেদিন মাঝ রাতে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল রুস্তম। পুলিশ সেখানকার মাটি আলগা পেল। মাটি খুরে এক হাত যাবার পরেই দেখা গেল মাটির তলায় জোনাথন হার্টের মাঝবয়সী স্ত্রীর লাশ।

ঘটনার আরো বেশি তদন্ত করতে বুড়োর বাড়ির কাজের মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল। তাতে সে বলল যে বেশ কয়েকদিন ধরেই তাদের দুই জনের বনিবনা হচ্ছিলনা। ইংরেজী না বুঝায় আসলে কি নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল তা সে বলতে পারেনা। রবার্টের কথা জিজ্ঞেস করাতে মেয়েটি বলল যে, বাড়িতে সাহেব না থাকলে প্রায়ই জোনাথন হার্টের স্ত্রী রবার্টের সাথে বাইরে বের হয়ে যেত।

পুলিশ এবার রবার্টের মূল হত্যাকারী কে তা বুঝতে পারল। পরিত্যক্ত ট্রেন বগির ভেতরের বিভিন্ন আলামতে এটাই প্রমাণিত হল যে, রবার্টের সাথে ইংরেজ বুড়োর স্ত্রীর পরিণয় চলছিল। এটা স্বামী হিসেবে জোনাথন মানতে পারেনি। তাই প্রথমে স্ত্রীকে বাধা দিয়ে এর কোন সুফল না পাওয়ায় তাকে হত্যা করে রুস্তমের ঘরের কোণায় তাকে পুতে রেখেছিল, কারণ ঘরের পেছনে খুব কম মানুষের আসা যাওয়া ছিল। নিপিনের ব্যাপারেও পুলিশ জানতে পাড়ল যে, রবার্টকে হত্যা ও স্ত্রী কবর দেবার কাজে নিপিনের সাহায্য নিয়েছিল বুড়ো। তাকে লাশ পাহারায়ও কাজে লাগিয়েছিল। আর সেদিন রুস্তম যে কান্নার আওয়াজ পেয়েছিল তা জোনাথনের। বুড়ো বয়সে স্ত্রী হত্যা করে একাকী হয়ে যাওয়ায় সে তার কবরের পাশে বসে বিলাপ করছিল। খুত খুতে স্বভাবের হওয়ায় নিপিনকেও সে মেরে ফেলে যাতে এর কোন প্রমাণ না থাকে। কিন্তু নিপিনের লাশ রবার্টের সাথেই ছিল। সেটা পাওয়া গেলনা। পাওয়া গেল শুধু হাড়িকেন ও চাদর।



রাত ২টা

বেকসুর খালাস পেয়েছে রুস্তম। কিন্তু চিন্তা হচ্ছে নিপিনের লাশটি নিয়ে। জোনাথনের গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেটে আসার প্রশ্নই আসেনা। কারণ তার বাড়ি ষ্টেশনের পেছনেই। তাহলে নিপিনের মত করে চাদর আর হাড়িকেনের সাথে কে হেটে গিয়েছিল সেদিন? গ্রামের কেউ কেউ তা দেখেছিলও। নানা কথা চিন্তা করতে করতে রুস্তম ঘরের মেঝেতে হাত দিল, তারপর কেমন যেন সব চিন্তা দূর হয়ে গেল এই ভেবে, মেঝের তলায় যে ট্রান্সমিটারটা চুরি করে পুতে রাখা হয়েছে তার ভাগ সে একাই নিচ্ছে।
রুস্তমের চিন্তায় ছেদ পরল। বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এত রাতে বাইরে আবার কে আসবে সে ভেবে পেলনা। পাহারাদারদের অনুপস্থিতিতে চুরি করার পাঁয়তারা করছেনাতো কেউ! রুস্তম উৎসাহ নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গুদাম ঘরের দিকে হাঁটা দিল। কিছুদূর যাবার পর থমকে দাঁড়াল। কে যেন নিপিনের চেয়ারটাতে বসে আছে। পাশেই হাড়িকেনের আলো নিভু নিভু হয়ে জ্বলছে।

জোনাথনতো পুলিশকে বলেছিল নিপিনকে সে মেরে ফেলেছে। তবে এটা কে? রুস্তম ভেবে পেলনা। এই শীতের রাতেও সে ঘামতে লাগল। কোন কথারও জবাব দিচ্ছেনা সেই ছায়ামূর্তি। রুস্তম নিজেও তার ঘর থেকে একশো ফুট দূরে দাঁড়িয়ে। এখন তার মনে হচ্ছে দৌড় দিয়ে তার ঘরে চলে যায়, কিন্তু তার পা চলছেনা, যেন পাথর হয়ে গেছে। কোন রকমে শরীরটাকে অচল পায়ের সাহায্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগল।

কিছুদুর যেয়েই একবার পেছন ফিরে চাইল। তারপর যা দেখল তাতে রুস্তমের পুরো শরীরটাই পাথর হয়ে গেল। এখন যে শুধু ফাঁকা চেয়ারটাই পরে আছে। হাড়িকেন শুদ্ধ সেই ছায়া মূর্তি গায়েব। রুস্তমের শরীর ব্যাস্ত না হতে পাড়লেও চোখদুটি ঠিকই সেই ছায়ামূর্তিটিকে খুজতে লাগল। কিন্তু সেটি কোথাও নেই।

রুস্তম গাঢ় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকল। তার হাড়িকেনটাও নিভে গেছে তেলের অভাবে। আর কয়েক সেকেন্ড আগে থেকেই সে তার পেছনে কারো উপস্থিতি সে টের পাচ্ছে।
সুত্রঃ সময়ের কন্ঠ্যস্যার।

মাথাবিহীন মুরগী


এটা আসলেই অবিশ্বাস্য । আজগুবি , মিথ্যা , বানোয়াট , উদ্ভট বলে, উড়িয়েও দিতে পারেন। তা হলেও এটাই সত্যি, একশভাগ সত্যি । মার্কিন মুরগি ‘মাথা’ ছাড়াই বেঁচেছিল আঠারো মাস! নাম তার মাইক। ভাবছেন কি জন্মগত ত্রুটি? না, তা নয় কখনোই। বলতেই যদি হয় কিছু, সেটা ‘অঘটন’ই।





মিচিগানের ওই অদ্ভুতুড়ে মুরগি ‘মাইক’-এর মালিকের নাম লয়েড ওলসেন। ঘটনা কিন্তু, ভারতের স্বাধীনতারও দু-বছরের আগের। ১৯৪৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ছিল দিনটা। ডিনারে খাবেন বলেই লয়েড তার পোষ্য মাইকের মুন্ডু শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কিন্তু, খেয়াল করেন মাইক মরেনি। দ্রুত রক্ত জমাট বেঁধে, তার রক্তক্ষরণের পথ বন্ধ করে দেয়।

শুধু তাই নয়, মস্তিষ্ক বিচ্ছিন্ন হলেও তার শরীরের নার্ভাস সিস্টেমেও এর কোনও প্রভাব পড়েনি। দু-এক ঘণ্টা বা দু-একদিন নয়, এ ভাবেই সেই মিচিগান মুরগি বেচে ছিল আঠারোটা মাস। পরবর্তীতে যার ব্যাখ্যা খুঁজের পাননি লয়েড। শুধু খেয়াল করেছিলেন, মাথা কাটা গেলেও ঘাড়ের একটি শিরা আশ্চর্যজনক ভাবে রক্ষে পেয়ে গিয়েছিল।




মায়া হয় মালিকের। ভবিষ্যতে আর মারার চেষ্টা করেননি পোষ্যকে।

কিন্তু, কেন এমন হল? নিজের সেই কৌতূহল মেটাতেই মাইককে তিনি নিয়ে যান সল্ট লেকের উটাহ ইউনিভার্সিটিতে, গবেষণার জন্য। সঙ্গের ছবিটি সেই ইউনিভার্সিটিতেই তোলা। ছবিটি সেই সময় সমস্ত নামী দৈনিক ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। শুধু ছবি প্রকাশই নয়, মাইক যত দিন বেঁচেছিল, তার মালিক প্রতিমাসে পেয়েছন ৪,৫০০ মার্কিন ডলার।

মাথাহীন মাইকের সেই মনোবলের কথা মনে রেখে মিচিগানে আজও মধ্য মে’তে পালিত হয়, মাইক, দ্য হেডলেস চিকেন’।




 সূত্র----

https://en.wikipedia.org/wiki/Mike_the_Headless_Chicken

জীবন্ত পাথর


Racetrack Playa যায়গাটি একটি রহস্যময় যায়গা । এটি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে অবস্থিত ।সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যায়গাটির উচ্চতা ৩৬০৮ (১১০৩ মিটার) ফুট । পুরো যায়গাটির আয়তন লম্বায় ২.৮ মাইল(৪.৫ কি.মি) এবং চওড়ায় ১.৩ মাইল(২.১ কি.মি )

 

।এলাকাটিকে বলা যেতে পারে জনমানবহীন এক বৈচিত্রময় জায়গা। সচরাচর অন্য প্রানীও দেখা যায় না এখানে। সাধারনত মরু বা পাহাড়ী এলাকায় এখানে সেখানে ছোট বড় পাথর খন্ড দেখা যায় । আর পাথর তো জড় বস্তু , সেটা যেখানে পড়ে থাকবে বছরের পর বছর সেখানে পড়ে থাকবে ।কিন্তু কথা হচ্ছে  এই উপত্যকার রহস্যময় পাথরগুলি কোন এক অজানা কারনে তার স্হান পরিবর্তন করে বয়ে চলে। ধারনা করা হচ্ছে, পাথরগুলি প্রতি ২-৩ বছর পর পর অগ্রসর হয় রহস্য আরও ঘনিভূত হওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে,
• বিস্তৃত এলাকা জনমানবহীন।
• এখানে বন্যা হয় না।
• এখানে এতো গতিবেগে বাতাস প্রবাহিত হয় না যে ভারি এই পাথরগুলির স্হান পরিবর্তনে সহায়ক হবে।



এই ঘটনার কারন হিসেবে কিছু গবেষকদের মতে, মাটি যখন কর্দমাক্ত থাকে এবং বরফ পড়ে পিচ্ছিল হয় তখন বাতাসের ধাক্কায় পাথরগুলি স্হান পরিবর্তন করতে পারে। শেষ পর্যন্ত এই যুক্তিও গ্রহনযোগ্যতা পাইনি। কারন পাথরগুলি স্হান পরিবর্তন করে গ্রীষ্মকালে যখন মাটি একেবারে শুকনো থাকে এবং বরফও পড়ে না। তাছাড়া পাথরগুলি একই রাস্তায় চলে না। প্রতিটি পাথরের চলার পথ সম্পূর্ন ভিন্ন বা আলাদা।

সেচ্ছা আত্বহত্যাকারী প্রানীর চলে আসা মিথ


ইদুর প্রজাতির একটি  আশ্চর্য প্রাণী  লেমিং ,  যারা  দলবেঁধে আত্মহত্যা করে  ৷ কারণ এরা নিজ থেকে বা 

বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে আত্মহত্যা করে৷ ইঁদুর প্রজাতির এই প্রাণী যখন দলবেঁধে যখন আত্মহত্যা করতে যায়,তখন পৃথিবীরকোনো শক্তি এদের আটকে রাখতে পারে না।এদের আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়,যখনই লেমিং জগতে হঠাৎ করে খাবারের অভাব দেখা দেয় বা বসবাসের জায়গা পছন্দ হয়না বা জনসংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়, তখন নিজেদের



অবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে এরা
 দলবেঁধে আত্মহত্যা করে ৷ দল বেঁধে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে লেমিং আত্মহত্যার সময় কিন্তু সব লেমিংরাই মরতে যায় না ৷ কেবল যে পরিমাণে আত্মহত্যা করলে বাসস্থানের অভাব দূর হবে বা খাবারের ঘাটতি পড়বে না, কেবল সেই পরিমাণ লেমিং আত্মহত্যা করতে যায়৷ কারা আত্মহত্যা করবে সে বিষয়টিও তারা সুন্দরভাবে সিদ্ধান্ত নেয়৷ প্রথমে মরতে রাজি হয় বুড়োরা ৷ স্ত্রী-পুরুষ সব বুড়োকেই প্রয়োজনে মরতে যেতে হবে৷ এটা যেন ওদের নিয়ম ৷ তারপরও যদি অধিকসংখ্যক লেমিং মরার প্রয়োজন হলে অপেক্ষাকৃত বয়সীদের হিসেব করা হয় । প্রথমে পুরুষদের এবং পরে নারীদের৷ কারণ একটি স্ত্রী লেমিং অনেকদিন পর্যন্ত বাচ্চা দিতে সক্ষম ৷

তবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই আত্বহত্যাকারী প্রানীর মিথটি সম্বন্ধে অন্য যুক্তি ও আছে । মূলত দলবেধে পাহাড়ের উপর থেকে এদের যখন এক অভিযাত্রী প্রথম ঝাপ দিতে দেখেছিলেন , তখন থেকে প্রচলন হয় এরা সেচ্ছা আত্বহত্যা করে । কিন্তু বৈজ্ঞানিক অন্য এক গবেষনায় দেখা যায় মূলত এদের প্রজনন বা সন্তান জন্মদান ক্ষমতা বেশি । সে কারনে এদের জনসংখ্যা ও বৃদ্ধি হয় দ্রুত । এদের তখন খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য অনত্র নতুন আশ্রয়ের জন্য ছুটতে হয় । এরা তখন দলবেধে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে থাকে । ছুটতে ছুটতে পাহাড় এর কিনারে এসে নদীতে না পড়া পর্য্যন্ত হুশ থাকেনা । তবে নদীতে পড়লেও এরা সাতরে অন্য কিনারে এসে ওঠে ঠিকই । ঠিক এই অবস্থাকে সম্ভবত অভিযাত্রী আত্বহত্যা ভেবে ভূল করেছিলেন ।

মূলত দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আত্বহত্যাকারী ইদুরের চলে আসা মিথের কারন এটি ।

সূত্র --

https://en.wikipedia.org/wiki/Lemming

একই দিনে বেশ কবার ঋতু বদলকারী দ্বীপ


 দ্বীপটির নাম অ্যাজোর। এটি পর্তুগালের কাছে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত।সকালে কনকনে ঠান্ডা, দুপুরে বৃষ্টি, বিকেলে রোদ, রাতে আবারো ঠান্ডা এমন আবহাওয়া কি কল্পনা করা যায়! শুনলে অবাক হবেন পর্তুগালে এমন  এই দ্বীপটি রয়েছে যেখানে ক্ষণে ক্ষণে বদলায় ঋতু ।






ওই দ্বীপের আরেকটি বিষয় হলো এখানে জ্বালানি ছাড়াই রান্না করা যায়। মাটিতে পাত্র বসিয়ে দেয়া হলেই আপনা আপনি রান্না হয়ে যায়। কোন আগুনের দরকার হয় না।



এ দ্বীপে শীতকালে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি আর গরমকালে ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এ দ্বীপে সকাল থেকে রাতের মধ্যে চারবার ঋতু বদল হয়। এখানকার লোকেরা পাত্রে উপকরণ নিয়ে মাটি খুঁড়ে বসিয়ে দিলেই রান্না হয়ে যায়।



অবাক হচ্ছেন নিশ্চই। চলুন ওই দ্বীপের রহস্যটা বের করে দেই। আসল কারণটা হলো, এ দ্বীপটি একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির ওপর অবস্থিত। ফলে মাটির নিচের উত্তাপেই রান্না হয়ে যায়। অাবার চারবার ঋতু পরিবর্তনের কারণও ওই আগ্নেয়গিরি।



সূত্র https://en.wikipedia.org/wiki/Azores

অাশ্চর্য্য যত তথ্য ০১


বিচিত্র আমাদের এই পৃথিবীর কিছু গুরুত্বপূর্ন আশ্চর্য্য কিছু তথ্য জেনে নিন , যে গুলো সত্যিই আপনাকে বিস্মিত করবে --


**সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি....

সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় ভারতের মেঘালয় রাজ্যে৷ সেখানকার মাওসিনরাম গ্রামকে বিশ্বের সবচেয়ে আর্দ্র স্থান বলে বিবেচনা করা হয়৷ গড়ে প্রতিবছর সেখানকার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ১১.৮৬ মিটার বা ৩৯ ফুট৷ যেখানে লন্ডনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ৬৫ সেন্টিমিটার৷

**সবচেয়ে গরম কোথায়?

১৯৯৩ সালের ১০ জুলাই থেকে রেকর্ডটা যুক্তরাষ্ট্রের ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের দখলে৷ সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের এই জায়গাটিতে সর্বোচ তাপমাত্রা ছিল ৫৬ দশমিক ৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ ঝলমলে সূর্য দেখতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদেরও প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছিল সেদিন৷




**সবচেয়ে উঁচু এভারেস্ট


নেপালের হিমালয় পর্বতমালার মাউন্ট এভারেস্ট যে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ এটা প্রায় সবাই-ই জানেন৷ ২৯ হাজার ২৯ ফুট বা ৮ হাজার ৮শ ৪৮ মিটার উঁচু এভারেস্টও গত ২৫শে এপ্রিলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল৷ অন্তত ১৮ জন পর্বতারোহী মারা যায় সেদিন৷

**সবচেয়ে নীচু...

প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরের ‘চ্যালেঞ্জার ডিপ’-এ সাবমেরিন ছাড়া যাওয়া যায়না৷ হলিউডের পরিচালক জেমস ক্যামেরন তাই সাবমেরিন ভাড়া করেই গিয়েছিলেন সেখানে৷ সাগর গভীরের ওই জায়গায় ১১ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে একটা পাহাড়৷ পাহাড়ের তলদেশই বিশ্বের সবচেয়ে নীচু স্থান৷

**কোনোদিন বৃষ্টি হয়নি!

চিলির আটাকামা মরু অঞ্চলটা ভীষণ অদ্ভুত৷ অনেক আবহাওয়াবিদের মতে, ওই জায়গাটি সবচেয়ে সেরা মরুভূমি৷ আটাকামায় এমন জায়গাও আছে যেখানে কোনোদিন এক ফোঁটা বৃষ্টিও পড়েনি৷ ওই ভূখণ্ডে মানুষের পদচারণা শুরুর পর থেকে তো নয়ই৷



**সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা কোথায়? 

অ্যান্টার্কটিকায়৷ অ্যান্টার্কটিকার পাহাড় অঞ্চলে শীতের সময় তাপমাত্রা হিমাংকের নীচে ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামে৷ এত শীত আর কোথাও নেই৷

**সবচেয়ে জনবহুল

কোন শহরে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করে, অর্থাৎ বিশ্বের কোন শহরটি সবচেয়ে জনবহুল? উত্তর- চীনের সাংহাই৷ ২ কোটি ২৪ লাখ মানুষের বাস সেখানে৷



** অস্ট্রেলিয়া মহাদেশই হলো একমাত্র মহাদেশ যেখানে কোনো জীবিত আগ্নেয়গিরি নেই!! 

 ** প্রতি মিনিটে পুরো বিশ্বে ৬০০০ বা তার অধিকবার বজ্রপাত হয়!!

  ** আফ্রিকা মহাদেশে অন্য যেকোনো প্রাণীর আক্রমনের চেয়ে জলহস্তীর আক্রমনে বছরে বেশি মানুষ মারা যায়!!

  ** আপনি জানেন কি, ফ্রেন্চ ফ্রাইের আসল জন্মস্থান ফ্রান্সে নয়,  আসল জন্মস্থান বেলজিয়ামে !!

  ** কোথাও ভ্রমন করার সময় মানুষ কোন জিনিসটা নিতে সবচেয়ে বেশি ভুলে যায় জানেন কি ? টুথব্রাশ !!


  **     আপনি জানেন কি, মেয়েদের হার্ট(Heart) ছেলেদের হার্টের চেয়ে দ্রুত স্পন্দিত হয়??
  **শুধু হৃৎপিণ্ডই নয়, মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এমনকি চোখের পাতাও দ্রুত ফেলে!! (প্রায় দিগুন দ্রুত)

  **আপনি জানেন কি, প্রাচীনকালে মিশরে মমি পুড়িয়ে আগুন তৈরি করা হতো?? কারণ, সেখানে কাঠের সল্পতা ছিলো, কিন্তু মমির কোনও সল্পতা ছিলো না!!


  
** অ্যান্টার্কটিকাতে সবচেয়ে মোটা (প্রস্থে) বরফের টুকরাটি কতো মোটা জানেন?? ৩ মাইল!!



  ** যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তারা কি জানেন যে ,পাখিদের খাদ্য গেলার জন্য অভিকর্ষজ বলের প্রয়োজন হয়?? অর্থাৎ, কোনো পাখিকে যদি চাঁদে নিয়ে খাবার খেতে দেয়া হয় তবে সেটি খাবার গিলতে পারবে না!!

 ** আপনি জানেন কি, অাগষ্ট মাসে জন্মহার অন্য সব মাসের চেয়ে বেশি?? অর্থাৎ, বিশ্বে অাগষ্ট মাসেই সবচেয়ে বেশি জন্মদিন পালন করা হয়!!

  ** যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো খাবার আপনার মুখের লালার সাথে না মিশে আপনি ততক্ষণ সেই খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে পারেন না!!



** আপনি জানেন কি, ইংরেজি বর্ণমালায় সর্বাধিক ব্যাবহার করা বর্ণ হলো "E" এবং সবচেয়ে কম ব্যাবহার করা বর্ণ হলো "Q"??

** ফ্যাশন সচেতন মহিলারা এটা জানেন কি, অধিকাংশ লিপস্টিক তৈরিতে মাছের আঁশ ব্যাবহার করা হয়??

ভারতের দশ ভৌতিক যায়গা


ভারতের বাছাই দশ ভৌতিক জায়গা

-----------------------------------

ভৌতিক জায়গা হিসেবে ভারতে এক নম্বর

 জায়গায় আছে রাজস্থানের ভানগড় কেল্লা |

 সেখানে নাকি রানি রূপমতীর প্রেতাত্মা

 সবাইকে ভয় দেখায় | তাই সূর্যাস্তের পরে

সেখানে প্রবেশ নিষেধ | কিন্তু সব প্রচার

 ভানগড় কেড়ে নিলে চলবে কী করে ? অন্য জায়গার ভূতরা কি

ঘাসে মুখ দিয়ে চলে | ভারতে আরও ভৌতিক

জায়গা আছে | তাই‚ এই লেখায় ভানগড় বাদে ভারতের অন্য


 ভৌতিক জায়গা নিয়ে বলা হল |



 ব্রিজ রাজ ভবন:
রাজস্থানের কোটায় এই ব্রিজরাজ ভবন ১৭৮ বছরের পুরনো |

 কোটার রাজ পরিবারের এই বাসস্থান ১৯৮০-তে রূপান্তরিত হয়

 হেরিটেজ হোটেলে | ব্রিটিশ আমলে এখানে থাকতেন সাহেবরা |
 
 সেরকমই একজন ছিলেন ব্রিটিশ কর্মচারী মেজর বার্টন | সিপাই

 বিদ্রোহের সময় দুই ছেলে -সহ তাঁর হত্যা হয় এই প্রাসাদে | শোনা

 যায়‚ এখনও তাঁর পুরনো বাড়ির মায়া কাটিয়ে উঠতে পারেননি

বার্টন সাহেব | তবে তিনি কারওর ক্ষতি করেন না | এখানকার

অধিবাসীদের মতে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ঘটনার পর

থেকে এই যায়গাটি ভৌতিক হবার শুরু ।

 http://seeksghosts.blogspot.com.tr/2014/04/haunted-brij-raj-bhavan-palace.html

ডাউ হিল:




কার্সিয়াং-এর এই মনোরম জায়গার ভূতের বদনাম আছে | বোর্ডিং

স্কুলের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানে পাহাড়ের আঁকে বাঁকে পাক


 খায় রহস্য | ঘন জঙ্গলে ঢাকা এই পাহাড়ে অনেক মৃত্যু হয়েছে |

 পথের এধারে ওধারে পড়ে থাকে হাড়গোড় | স্থানীয় কাঠুরেরা

বলেন‚ বনের মধ্যে সন্ধেবেলা স্কন্ধকাটা একটা ছায়া নিজের থেকেই

আসে আবার চলে যায় | পর্যটকদের আনাগোনা দিন দিন এখানে

বেড়ে চলেছে এর রহস্যময় কাহিনীর কারন থেকে । দার্জিলিং থেকে

৩০ কি.মি দুরত্বে যায়গাটি অবস্থিত ।


 http://www.indiatvnews.com/news/india/dow-hill-of-kurseong-one-of-india-s-most-haunted-places-20062.html

ফিরোজ শাহ কোটলা :

ফিরোজ শাহ তুঘলকের সাধের কেল্লা এখন ভূতুড়ে জায়গা | এখানে

ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মৌর্য সাম্রাজ্যের বেশ কিছু নিদর্শনও |

বেলেপাথরের তৈরি এই সৌধে এখন সেভাবে পা পড়ে না

পর্যটকদের | বেশ কিছু আত্মহত্যার ঘটনাও এখানে ঘটেছে | বলা

হয়‚ এখানে ঘুরে বেড়ায় অশরীরী আত্মা এবং জিন | সত্যাসত্য

জানা

না গেলেও এর চারপাশের সব বিল্ডিং-এর মুখ কিন্তু অন্যদিকে |

ফিরোজ শাহ কোটলার দিকে নয় |

শনিওয়ারওয়াড়া ফোর্ট :


 ১৭৪৬ সালে তৈরি এই পুণের দুর্গ ছিল পেশবাদের অধীন | ১৮১৮

সালে ব্রিটিশদের কাছে আত্ম সমর্পণ করে মারাঠা পেশবারা | কথিত‚
 এই দুর্গে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল ১৩ বছরের এক

রাজকুমারকে | তার আত্মা ঘুরে বেড়ায় এখানে | মাঝরাতে শোনা

যায় তার আর্ত চিৎকার | উপদ্রব বাড়ে পূর্ণিমা রাতে |

 মালচা মহল :

দিল্লিতে বুদ্ধ জয়ন্তী পার্কের পাশে আছে এই কেল্লা | বানিয়েছিলেন

ফিরোজ শাহ তুঘলক | চতুর্দশ শতকে‚ শিকার করার সময় থাকার

জায়গা হিসেবে | বহু পরে‚ ১৯৮৫ সালে এই কেল্লা দেওয়া হয়

বেগম ওয়ালায়াৎ মহলকে | তিনি ছিলেন অযোধ্যার নবাব ওয়াজেদ

আলি শাহ্-এর বংশধর | তিনি বহু তদ্বির করে ভারত সরকারের

কাছ থেকে এই সম্পত্তি পেয়েছিলেন থাকার জায়গা হিসেবে | সঙ্গে

ছিলেন যুবরাজ রিয়াজ এবং রাজকন্যা সাকিনা |

১৯৯৩ সালে বেগম হিরের গুঁড়ো খেয়ে আত্মহত্যা করেন | ১০ দিন



ধরে তাঁর দেহ পড়েছিল লেখার টেবিলের উপর | এই দশ দিন ধরে

মায়ের মৃতদেহর সঙ্গে একই ঘরে থাকত দুই সন্তান | পরে তাঁর

সমাধি খুঁড়ে দেহ পুড়িয়ে দিতে বাধ্য হয় দুই সন্তান | কারণ ওই

সমাধিতে সম্পত্তির জন্য লেগেই থাকত চোরের উপদ্রব | দেশের

ভৌতিক জায়গার মধ্যে অন্যতম এই মালচা মহল |

রামোজি ফিল্ম সিটি :

হায়দ্রাবাদের এই শ্যুটিং তথা পর্যটন কেন্দ্র নাকি তৈরি হয়েছে এক

যুদ্ধক্ষেত্রের উপর | এই স্থানে সুদূর ইতিহাসে প্রাণ হারিয়েছেন বহু

মানুষ | শোনা যায়‚ প্রায়ই ভৌতিক আধিভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়

এখানে | এবং‚ ভূত বাবাজির টার্গেট হন মেয়েরা | ছেলেরা নন |


অগ্রসেন বা উগ্রসেন কি বাওলি:
মধ্য দিল্লির কনট প্লেসের আধুনিকতার মধ্যে ঘুমিয়ে আছে এক

টুকরো অতীত | মহাভারতের সমসাময়িক কোনও এক খ্রিস্টাব্দে

 তৈরি করেছিলেন মহারাজা অগ্রসেন বা উগ্রসেন | এটা স্টেপ

ওয়েল‚ বা ধাপ কুয়ো | ক্ষরার হাত থেকে বাঁচার উদ্যোগ | শোনা

যায়‚ কালো জলে ভর্তি এই কুয়ো নাকি মানুষকে ডাকত | জলের

 দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আত্মহত্যা করত অসংখ্য সম্মোহিত

 মানুষ | তাদের আত্মাই নাকি ঘুরে বেড়ায় এখানে‚ পি কে-র থাকার

 জায়গায় |

দুমাজ বিচ:


গুজরাতে আরবসাগরে কোলে এই বিচ ভর্তি কালো বালিতে |

 কোনও এক সময়ে এটা ছিল শ্মশান | এখনও নাকি এখানে শোনা

যায় আধিভৌতিক কান্না আর চিৎকার |


https://en.wikipedia.org/wiki/Dumas_Beach


জি পি ব্লক:

উত্তরপ্রদেশের মীরাটে এই ব্লকে দাঁড়িয়ে আছে তিন তিনটে বহুতল |
কিন্তু পরিত্যক্ত | ভৌতিক বদনাম ছড়িয়ে যাওয়ায় কেউ থাকে না

কয়েক দশক ধরে | শোনা যায়‚ মাঝে মাঝে এখানে কয়েকজন

ছায়াশরীরকে মোমবাতির আলোয় মদ্যপান করতে দেখা যায় |


১৩ নম্বর টানেল:

শিমলা শহরের ভৌতিক জায়গা | পাহাড়ের কোলে এই সুড়ঙ্গে ঘুরে


বেড়ায় কর্নেল বারোগ | ছিলেন ব্রিটিশ আমলে রেলওয়ের

ইঞ্জিনিয়ার
 
 |  তবে কর্নেল নাকি খুব ভাল মানুষ | কাউকে বড় একটা বিরক্ত


করেন না |

নারী পুরুষের সম্পর্কের মাঝে কি শুধুই বন্ধুত্ব রক্ষা করা সম্ভব ?


নারী-পুরুষের মাঝে ‘কেবল বন্ধুত্ব’ আসলেই  অসম্ভব!!!!! ★

‘বন্ধুত্ব’- এই অতি পরিচিত শব্দটির সঠিক সংজ্ঞা কি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব? সম্ভবত না।


কারণ এই শব্দটির নেটওয়ার্ক একটি চার অক্ষরের শব্দ ‘ভালবাসা’-কে অতিক্রম করে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই সে মানে না কোনো ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ কিংবা বয়সের পার্থক্য। আর ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসের মতো সামাজিক যোগাযোগ সাইটের কল্যাণে এখন এই বন্ধুত্ব হয়ে গেছে বিশ্বজনীন।
তবু অনেকের মনের মাঝে একটি প্রশ্ন ঠিকই ঘুরপাক খায়
। বিপরীত লিঙ্গের দু’জন মানুষের মাঝে ‘কেবল বন্ধুত্ব’ নামক সম্পর্ক কি আসলেই থাকা সম্ভব? এই প্রশ্নে আমরা সবাই আসলে দুই দলে ভাগ হয়ে যাই। কেউ বলে, “হ্যা, সম্ভব”। কারণ আমরা দেখছি, দু’জন নারী-পুরুষ(যাদের মাঝে বন্ধুত্ব আছে) একসাথে খাচ্ছে, অফিসে কাজ করছে, কখনো বা ঘুরতেও যাচ্ছে- তবে কেবলই বন্ধু হিসেবে। নিজেদের বন্ধুত্বের সীমানা তখন কেউই অতিক্রম করছে না।
আবার কেউ কেউ জানায় তীব্র প্রতিবাদ। তারা তখন দু’জন ক্লাসমেটের মাঝে সম্পর্ক বা এরকম আরো নানা উদাহরণ টেনে এনে বলে- “না, এটা সম্ভব না”।
আচ্ছা, আমরা তো আমাদের নিজেদের মনের কথা বললাম এই বন্ধুত্ব নিয়ে। কিন্তু বিজ্ঞান কি বলে বিপরীত লিঙ্গের সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারে? চলুন জেনে নেয়া যাক সে সম্পর্কে। পুরো লেখাটা পড়লে যেমন জানতে পারবেন নানা মজার তথ্য, তেমনি আপনার বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুটির প্রতি একটু রাগ হওয়াও অস্বাভাবিক হবে না!
তো এই ‘কেবল বন্ধুত্ব’ নামক টপিক, যা কি না এতদিন কেবল রূপালি পর্দাকে মাতিয়ে এসেছে, তাকে এবার বিজ্ঞানীরা নিয়ে এলেন সায়েন্স ল্যাবে। এজন্য তারা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলের ৮৮ জোড়া বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুকে নিয়ে একটি জরিপ চালালেন। তবে জরিপটি চালানোর সময় সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিলো যাতে এক বন্ধুর মতামত আরেক বন্ধু জানতে না পারে সেজন্য।
তারা প্রত্যেক জোড়া বন্ধুকে প্রথমে আলাদা করলেন। এরপর একজনের হাতে ধরিয়ে দিলেন কিছু প্রশ্ন যেখানে অপর বন্ধুটি সম্পর্কে তার নানা রকম অনুভূতির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিলো। ৮৮ জোড়া বন্ধুর জন্য ছিলো এই একই ব্যবস্থা।
আর এই জরিপের ফলাফল যা ছিলো তাকে এক বাক্যে বলা যায়- ‘এটা কিছু হলো?’ টাইপের!!!
বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুর প্রতি নারী, পুরুষ দুই দলের দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো অনেকটাই আলাদা।
নারীদের তুলনায় পুরুষেরা তাদের বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট ছিলেন।
একইভাবে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মাঝে আরেকটি ধারণার প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেছে। আর তা হলো- “আমার বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুটিও হয়তো আমাকে পছন্দ করে” টাইপের চিন্তাভাবনা, যা ছিলো পুরোই ভুল। প্রকৃতপক্ষে নিজেদের যেকোনো ধরণের রোম্যান্টিক অনুভূতিকেই পুরুষেরা ‘উভমুখী বিক্রিয়া’ বলে ধরে নিয়েছিলেন।

এবার আসা যাক নারীদের কথায়। নারীরা কিন্তু তাদের বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুটিকে শুধুই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাই ছেলে-বন্ধুদের(BOYFRIEND না কিন্তু :P) প্রতি তাদের আলাদা কোনো আকর্ষণের ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়নি। যা ছিলো, তা কেবলই ‘বন্ধুসুলভ আকর্ষণ’!
তারা এটাও মনে করেছেন যে, তাদের বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুরাও এই সম্পর্কটিকে তাদের মতোই ‘কেবল বন্ধুত্ব’ হিসেবে গ্রহণ করেছেন!

ফলে দেখা গেলো, নারী-পুরুষ দুই প্রজাতিই বন্ধু সম্পর্কে তাদের ভুল ধারণাটি দিনে দিনে বাড়িয়েই চলেছে।
এমনকি ‘In a relationship’- টাইপের মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব পাতানোতেও দুই প্রজাতির মাঝে বেশ ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। পুরুষরা তাদের বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুর সাথে(যিনি কি না In a relationship স্ট্যাটাসের অন্তর্গত) সব কিছু জেনেও একটি ‘রোম্যান্টিক ডেটিং’-এ বের হবার ব্যাপারে ছিলেন একেবারেই পজিটিভ!
তবে নারীরা এ ব্যাপারে ছিলেন বেশ সেনসিটিভ এবং তাই তাদের বেশিভাগের উত্তরই ছিলো নেগেটিভ...
এতকিছু নিয়ে গবেষণা করার পর গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে, বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে ‘কেবল বন্ধুত্ব’ নামক সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখা একজন নারীর তুলনায় একজন পুরুষের জন্য বেশ কষ্টকরই!

আর তাই তারা পুরুষদের জন্য এ সম্পর্কটিকে ‘Just Friendship’ না বলে বললেন ‘Partial Friendship’ :-D।
তাহলে কি নারী-পুরুষের মাঝে বন্ধুত্ত্বের সম্পর্ক সম্ভব নয়? গবেষকরা তখন মুচকি হেসে জানালেন- “আপনি যদি একজন নারী হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু আপনি যদি পুরুষ হন, তাহলে আপনার জন্য অনেকসময় এটা বেশ জটিলই হয়ে যাবে...”
“অর্ধেক বন্ধু তুমি, অর্ধেক Better half”!!!
আইনস্টাইন-- সর্বকালের সেরা পদার্থ বিজ্ঞানী।

আইনস্টাইন-- সর্বকালের সেরা পদার্থ বিজ্ঞানী।


তার জন্ম স্থান জার্মানিতে। সেখানকার একটি ছোট শহর উলমে এক ইহুদি পরিবারে মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের জন্ম (১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ)।

পিতা পেশায় ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। তাই মাঝে মাঝেই ছেলেকে নানা ধরণের খেলনা এনে দিতে পারতেন। শিশু আইনস্টাইনের বিচিত্র চরিত্রকে সেই দিন উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি তার অভিভাবক, তার শিক্ষকদের। তার স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে মাঝে মাঝেই অভিযোগ আসত, পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া ছেলে, অমনোযোগী, আনমনা ইত্যাদি। এতে করে বেস বিরক্ত হতেন তিনি। ক্লাসের কেউ তার সঙ্গী ছিল না। সকলের শেষে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতেন এবং কিছু না কিছু ভাবতে থাকতেন।

তার একমাত্র সঙ্গী ছিল তার মা। তিনি ভালো বেহালা বাজাতে পারতেন। আইনস্টাইন তার কাছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের নানা সুর শুনতেন। এই বেহালা ছিল আইনস্টাইনের আজীবন কালের সাথী। বাবাকে খুব বেশি একটা কাছে পেতেন না আইনস্টাইন। নিজের কারখানা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। আনন্দেই কাটছিল তার জীবন।

সেই আনন্দে ভরা দিনগুলোর মাঝে হঠাৎ কালো দিন ঘনিয়ে এল। তাই সেই শৈশবেই আইনস্টাইন প্রথম অনুভব করলেন জীবনের তিক্ত স্বাদ। তারা ছিলেন ইহুদি। কিন্তু স্কুলে ক্যাথলিক ধর্মের নিয়মকানুন মেনে চলতে হতো।

স্কুলের সমস্ত পরিবেশটাই বিষাদ হয়ে গিয়েছিল তার কাছে। দর্শনের বই তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করত। পনেরো বছর বয়সের মধ্যে তিনি কান্ট, স্পিনোজা, ইউক্লিড, নিউটনের রচনা পড়ে শেষ করে ফেললেন। বিজ্ঞান, দর্শনের সাথে পড়তেন গ্যেটে, শিলার, শেক্সপিয়ারের বই সমূহ। অবসর সময়ে বেহালায় বিটোফোন, মোতসার্টের সুর তুলতেন। এরাই ছিল তার সঙ্গী বন্ধু, তাঁর জগৎ। এভাবেই তিনি সময় কাটাতেন।

এই সময় বাবার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিল। তিনি স্থির করলেন মিউনিখ ছেড়ে মিলানে চলে যাবেন। তাতে যদি ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। সকলে মিউনিখ ত্যাগ করল, শুধু সেখানে একা রয়ে গেলেন আইনস্টাইন।

সুইজারল্যান্ডের একটি পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি হলেন। প্রথমবার তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় পরীক্ষায় পাস করলেন। বাড়ির আর্থিক অবস্থা ক্রমশই খারাপ হয়ে আসছে। আইনস্টাইন অনুভব করলেন সংসারের দায়-দায়িত্ব তাকে গ্রহণ করতেই হবে। শিক্ষকতার বৃত্তি গ্রহণ করার জন্য তিনি পদার্থবিদ্যা ও গণিত নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে শিক্ষকতার জন্য বিভিন্ন স্কুলে দরখাস্ত করতে আরম্ভ করলেন। অনেকের চেয়েই শিক্ষাগত যোগ্যতা তার বেশি ছিল কিন্তু কোথাও চাকরি পেলেন না। কারণ তার অপরাধ তিনি ইহুদি।

নিরুপায় আইনস্টাইন খরচ চালানোর প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়াতে আরম্ভ করলেন। এই সময় আইনস্টাইন তার স্কুলের সহপাঠিনী মিলেভা মারেককে বিয়ে করলেন। তখন তার বয়স মাত্র ২২ বছর। মিলেভা শুধু আইনস্টাইনের স্ত্রী ছিলেন না, প্রকৃত অর্থেই তার জীবনসঙ্গী ছিলেন।





আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন শিক্ষকতার কাজ পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। একটি অফিসে ক্লার্কের চাকরি নিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের খাতার পাতায় সমাধান করতেন অঙ্কের জটিল তত্ত্ব। স্বপ্ন দেখতেন প্রকৃতির দুর্জ্ঞেয় রহস্য ভেদ করার। তার এই গোপন সাধনার কথা শুধু মিলেভাকে বলেছিলেন, ‘আমি এই বিশ্বপ্রকৃতির স্থান ও সময় নিয়ে গবেষণা করছি।’

আইনস্টাইনের এই গবেষণায় ছিল না কোনো ল্যাবরেটরি, ছিল না কোনো যন্ত্রপাতি। তার একমাত্র অবলম্বন ছিল খাতা-কলম আর তার অসাধারণ চিন্তাশক্তি। অবশেষে শেষ হলো তার গবেষণা। তখন তার বয়স মাত্র ২৬ বছর। একদিন ত্রিশ পাতার একটি প্রবন্ধ নিয়ে হাজির হলেন বার্লিনের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক পত্রিকা Annalen der physik-এর অফিসে।

এই পত্রিকায় ১৯০১ থেকে ১৯০৭ পর্যন্ত আইনস্টাইন পাঁচটি রচনা প্রকাশ করলেন। এসব রচনায় প্রচলিত বিষয়কে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে আইনস্টাইনের নাম বিজ্ঞানী মহলে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কোনো সুরাহা হলো না। নিতান্ত বাধ্য হয়ে বাড়িতে ছাত্র পড়ানোর কাজ নিলেন।

একদিকে অফিসের কাজ, মিলেভার স্নেহভরা ভালোবাসা, অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা অবশেষে ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হলো তার চারটি রচনা-প্রথমটি আলোর গঠন ও শক্তি সম্পর্কে। দ্বিতীয়টি অ্যাটমের আকৃতি-প্রকৃতি। তৃতীয়টি ব্রাউনিয়াম মুভমেন্টের ক্রমবিকাশের তত্ত্ব। চতুর্থটি তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। যা বিজ্ঞানের জগতে এক নতুন দিগন্ত উদ্ভাসিত করল। এই আপেক্ষিকতা বলতে বোঝায় কোনো বস্তুর সঙ্গে সম্বন্ধ বা অন্য কিছুর তুলনা। আইনস্টাইন বললেন আমরা যখন কোনো সময় বা স্থান পরিমাপ করি তখন আমাদের অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনা করতে হবে। তিনি বলেছেন আলোক বিশ্বজগৎ, কাল এবং মাত্রা আপেক্ষিক।

আমাদের মহাবিশ্বে একটি মাত্র গতি আছে যা আপেক্ষিক নয়, অন্য কোনো গতির সঙ্গেও এর তুলনা হয় না-এই গতি হচ্ছে আলোকের গতি। এই গতি কখনোই পরিবর্তন হয় না। এই সময় জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হলো আইনস্টাইনকে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেয়ার জন্য। ১৯০৭ সালে তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হলেন। এরই সাথে পেটেন্ট অফিসের চাকরিও করেন।

বিজ্ঞান জগতে ক্রমশই আইনস্টাইনের নাম ছড়িয়ে পড়ছিল। বিজ্ঞানী কেলভিনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। এখানে তাকে অনারারি ডক্টরেট উপাধি দেয়া হলো। এরপর তার ডাক এল জার্মানির সলসবার্গ কনফারেন্স থেকে। এখানে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের সামনে তার প্রবন্ধ পড়লেন আইনস্টাইন। তিনি বললেন, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অগ্রগতির পরবর্তী পর্যায়ে আমরা এমন কোনো এক তত্ত্ব পাব যা আলোর কণাতত্ত্ব এবং তরঙ্গ তত্ত্বকে সময়ের বাঁধনে বাঁধতে পারবে।

আইনস্টাইনের এই উক্তির জবাবে বিজ্ঞানী প্লাঙ্ক বললেন, আইনস্টাইন যা চিন্তা করছেন সেই পর্যায়ে চিন্তা করার সময় এখনো আসেনি। এর উত্তরে আইনস্টাইন তার বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের ঊ=সপ২ উৎপত্তিটি আলোচনা করে বোঝালেন তিনি যা প্রমাণ করতে চাইছেন তা কতখানি সত্য।

১৯০৮ সালে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার পদ সৃষ্টি করা হলো। রাজনৈতিক মহলের চাপে এই পদে মনোনীত করা হলো আইনস্টাইনের সহপাঠী ফ্রেডরিখ এডলারকে। ফ্রেডরিক নতুন পদে যোগ দিয়েই জানতে পারলেন এই পদের জন্য আইনস্টাইনের পরিবর্তে তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি কর্তৃপক্ষকে জানালেন এই পদের জন্য আইনস্টাইনের চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আর কেউ নেই। তার তুলনায় আমার জ্ঞান নেহাতই নগণ্য।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও উপলব্ধি করতে পারলেন ফ্রেডরিখের কথার গুরুত্ব। অবশেষে ১৯০৯ সালে আইনস্টাইন তার পেটেন্ট অফিসের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে পুরোপুরি শিক্ষকতা পেশা গ্রহণ করলেন। জুরিখে এসে বাসা ভাড়া করলেন।

আইনস্টাইন আর কেরানি নন, প্রফেসর। কিন্তু মাইনে আগে পেতেন ৪৫০০ ফ্রাঙ্ক, এখনো তাই। তবে লেকচার ফি বাবদ সামান্য কিছু বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার সুযোগে বহু মানুষের সাথে, গুণী বিজ্ঞানীদের সাথে পরিচয় হয়। এমন সময় ডাক এল জার্মানির প্রাগ থেকে। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে তাকে নিয়োগপত্র দেয়া হলো। মাইনে আগের চেয়ে বেশি। তাছাড়া প্রাগে গবেষণার জন্য পাবেন বিশাল লাইব্রেরি। ১৯১১ সালে সপরিবারে প্রাগে এলেন আইনস্টাইন। কয়েক মাস আগে তার দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম হয়েছে।

অবশেষে দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত জুরিখের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক এল আইনস্টাইনের। ১৯১২ সালে প্রাগ ত্যাগ করে এলেন জুরিখে। এখানে তখন ছুটি কাটাতে এসেছিলেন মাদাম কুরি, সঙ্গে দুই কন্যা। দুই বিজ্ঞানীর মধ্যে গড়ে উঠল মধুর বন্ধুত্ব। পাহাড়ি পথ ধরে যেতে যেতে মাদাম কুরি ব্যাখ্যা করেন তেজস্ক্রিয়তা আর আইনস্টাইন বলেন তার আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। একদিন নিজের তত্ত্বের কথা বলতে বলতে এত তন্ময় হয়ে পড়েছিলেন পথের ধারে গর্তের মধ্যে গড়িয়ে পড়লেন আইনস্টাইন। তাই দেখে মেরি কুরির দুই মেয়ে হাসিতে ফেটে পড়ল। গর্ত থেকে উঠে তাদের সঙ্গে আইনস্টাইনও হাসিতে যোগ দিলেন।

সেই সময় জার্মানিতে কাইজারের পৃষ্ঠপোষকতায় বার্লিন শহরে গড়ে উঠেছে কাইজার তিলহেলম ইনস্টিটিউট। বিজ্ঞানের এতবড় গবেষণাগার পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এখানে যোগ দিয়েছেন প্লাঙ্ক, নার্নস্ট, হারের আরো সব বিখ্যাত বিজ্ঞানী। কিন্তু আইনস্টাইন না থাকলে যে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে সবকিছু। তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো।

বার্লিনে এলেন আইনস্টাইন। সবকিছু দেখে মুগ্ধ হলেন তিনি। শুধু গবেষণাগার নয়, বহু বিজ্ঞানীকেও কাছে পাওয়া যাবে। একসাথে কাজ করা যাবে। তাকে মাইনে দেয়া হলো বর্তমান মাইনের দ্বিগুণ।

১৯১৪ সালে বার্লিনে এলেন আইনস্টাইন। যখন আইনস্টাইন বার্লিন ছেড়েছিলেন তখন তিনি পনেরো বছরের কিশোর। দীর্ঘ কুড়ি বছর পর ফিরে এলেন নিজের শহরে। চেনাজানা পরিচিত মানুষদের সাথে দেখা হলো। সবচেয়ে ভালো লাগল দূরসম্পর্কিত বোন কাছে ফিরে এসেছে। এলসার সান্নিধ্য বরাবরই মুগ্ধ করত আইনস্টাইনকে। অল্পদিনেই অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।

ছেলেবেলা থেকেই যেখানে সেখানে অঙ্ক করার অভ্যাস ছিল আইনস্টাইনের। কখনো ঘরের মেঝেতে, কখনো টেবিলের ওপর। টেবিল ভর্তি হয়ে গেলে মাটিতে বসে চেয়ারের উপরেই অঙ্ক কষে চলেছেন।

গবেষণায় যতই মনোযোগী হয়ে উঠেছিলেন আইনস্টাইন, সংসারের প্রতি ততই উদাসীন হয়ে পড়ছিলেন। স্ত্রী মিলেভার সাথে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ক্রমশই সন্দেহবাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলেন মিলেভা। দুই ছেলেকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে চলে গেলেন। কয়েক মাস কেটে গেল আর ফিরলেন না মিলেভা।

এদিকে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলো। বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই জড়িয়ে পড়লেন যুদ্ধে। আইনস্টাইন এই যুদ্ধের বীভৎসতা দেখে ব্যথিত হলেন। এরই সাথে সংসারের একাকিত্ব, স্ত্রী-পুত্রকে হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন আইনস্টাইন।

এই সময় অসুস্থ আইনস্টাইনের পাশে এসে দাঁড়ালেন এলসা। এলসার অক্লান্ত সেবা-যত্নে ক্রমশই সুস্থ হয়ে উঠলেন আইনস্টাইন। তিনি স্থির করলেন মিলেভার সাথে আর সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব নয়। অবশেষে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেল। আইনস্টাইন এলসাকে বিয়ে করলেন। এদিকে যুদ্ধ শেষ হলো। কাইজারের পতন ঘটল। প্রতিষ্ঠা হলো নতুন জার্মান রিপাবলিকের। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব তখনো প্রমাণিত হয়নি। এগিয়ে এলেন ইংরেজ বিজ্ঞানীরা। সূর্যগ্রহণের একাধিক ছবি তোলা হলো। সেই ছবি পরীক্ষা করে দেখা গেল আলো বাঁকে।

বিজ্ঞানীরা উত্তেজনায় ফেটে পড়লেন। মানুষ তার জ্ঞানের সীমানাকে অতিক্রম করতে চলেছে। অবশেষে ৬ নভেম্বর ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটিতে ঘোষণা করা হলো সেই যুগান্তকারী আবিষ্কার, আলো বেঁকে যায়। এই বাঁকের নিয়ম নিউটনের তত্ত্বে নেই। আলোর বাঁকের মাপ আছে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের সূত্রে।

পরিহাসপ্রিয় আইনস্টাইন তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়ে কৌতুক করে বললেন, আমার আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার জার্মানি বলবে আমি জার্মান আর ফরাসিরা বলবে আমি বিশ্বনাগরিক। কিন্তু যদি আমার তত্ত্ব মিথ্যা হতো তাহলে ফরাসিরা বলত আমি জার্মান আর জার্মানরা বলত আমি ইহুদি।

একদিন এক তরুণ সাংবাদিক বললেন, আপনি সংক্ষেপে বলুন আপেক্ষিক তত্ত্বটা কী?
আইনস্টাইন কৌতুক করে বললেন, যখন একজন লোক কোনো সুন্দরীর সঙ্গে এক ঘণ্টা গল্প করে তখন তার মনে হয় যে যেন এক মিনিট বসে আছে। কিন্তু যখন তাকে কোনো গরম উনানের ধারে এক মিনিট দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় তার মনে হয় সে যেন এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে। এই হচ্ছে আপেক্ষিক তত্ত্ব।

আপেক্ষিক তত্ত্বে জটিলতার দুর্বোধ্যতার কারণে মুখরোচক কিছু কাহিনী ছড়িয়ে পড়ল। একদিন এক সুন্দরী তরুণী তার প্রেমিকের সাথে চার্চের ফাদারের পরিচয় করিয়ে দিল। পরদিন যখন মেয়েটি ফাদারের কাছে গিয়েছে ফাদার তাকে কাছে ডেকে বললেন, তোমার প্রেমিককে আমার সব দিক থেকেই ভালো লেগেছে শুধু একটি বিষয় ছাড়া।

মেয়েটি কৌতুহলে জিজ্ঞাসা করল, কোন বিষয়? ফাদার বললেন তার কোনো রসবোধ নেই। আমি তাকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের কথা জিজ্ঞাসা করেছি আর সে আমাকে তাই বোঝাতে আরম্ভ করল। হাসিতে ফেটে পড়ল মেয়েটি।

আমেরিকার এক বিখ্যাত সুরকার জর্জ তার এক বন্ধুকে বললেন, একজন মানুষ কুড়ি বছর ধরে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করলেন, আর ভাবলে অবাক হতে হয় সেই চিন্তাটুকুকে প্রকাশ করলেন মাত্র তিন পাতায়। বন্ধুটি জবাব দিল নিশ্চয়ই খুব ছোট অক্ষরে ছাপা হয়েছিল।

আইনস্টাইন আমেরিকায় গিয়েছেন, সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরল। একজন জিজ্ঞেস করল, আপনি কি এক কথায় আপেক্ষিক তত্ত্বের ব্যাখ্যা করতে পারেন? আইনস্টাইন জবাব দিলেন, না।
আজকাল মেয়েরা কেন আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে এত আলোচনা করছে? আইনস্টাইন হাসতে হাসতে বললেন, মেয়েরা সব সময়ই নতুন কিছু পছন্দ করে-এই বছরের নতুন জিনিস হলো আপেক্ষিক তত্ত্ব।

অবশেষে এল সাধক বিজ্ঞানীর জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার। কিছুদিন ধরেই নোবেল কমিটি আইনস্টাইনকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার কথা চিন্তা করছিল। কিন্তু সংশয় দেখা গেল স্বয়ং নোবেলের ঘোষণার মধ্যে। তিনি বলে গিয়েছিলেন পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পাবেন আবিষ্কারক আর সেই আবিষ্কার যেন মানুষের কল্যাণে লাগে। আইনস্টাইনের বেলায় বিতর্ক দেখা দিল তার আপেক্ষিক তত্ত্ব যুগান্তকারী হলেও প্রত্যক্ষভাবে তা মানুষের কোনো কাজে লাগবে না।

তখন তার ফটো ইলেকট্রিক অ্যাফেক্ট বা আলোক তড়িৎ ফলকে সরাসরি আবিষ্কার হিসেবে বলা সম্ভব এবং এর প্রত্যক্ষ ব্যবহারও হচ্ছে তাই ঘোষণা করা হলো Service to the theory of Physics, especially for the Law of the Photo Electric Effect. আইনস্টাইন তার প্রথমা স্ত্রী মিলেভার সাথে বিবাহবিচ্ছেদের শর্ত অনুসারে নোবেল পুরস্কারের পুরো টাকাটা তাকে পাঠিয়ে দেন।

আমেরিকায় বক্তৃতা দেয়ার জন্য বারবার ডাক আসছিল। অবশেষে ১৯৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন, সেখানে অভূতপূর্ব সম্মান পেলেন। শুধু আমেরিকা নয়, যখন যে দেশেই যান সেখানেই পান সম্মান আর ভালোবাসা।

এদিকে স্বদেশ জার্মানি ক্রমশই আইনস্টাইনের কাছে পরবাস হয়ে উঠেছিল। একদিকে তার সাফল্য স্বীকৃতিকে কিছু বিজ্ঞানী ঈর্ষার দৃষ্টিতে দেখতে থাকে, অন্যদিকে হিটলারের আবির্ভাবে দেশজুড়ে এক জাতীয়তাবাদের নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে একদল মানুষ। ইহুদিরা ক্রমশই ঘৃণিত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে। আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন জার্মানিতে থাকা তার পক্ষে মোটেই নিরাপদ নয়। কিন্তু কোথায় যাবেন? আহ্বান আসে নানা দেশ থেকে। অবশেষে স্থির করলেন আমেরিকার প্রিন্সটানে যাবেন।

জার্মানি থেকে ইহুদি বিতাড়ন শুরু হয়ে যায়। আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন এবার তারও যাওয়ার পালা। প্রথমে গেলেন ইংল্যান্ডে। সেখান থেকে ১৯৩৪ সালের ৭ জুলাই রওনা হলেন আমেরিকায়। তখন তার বয়স পঞ্চান্ন বছর।

প্রিন্সটনের কর্তৃপক্ষ আইনস্টাইনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। গুপ্তঘাতকের দল যে সাগর পেরিয়ে আমেরিকায় এসে পৌঁছবে না তাই বা কে বলতে পারে। তাই তাকে গোপন জায়গায় রাখা হলো। সেই বাড়ির ঠিকানা কাউকে জানানো হলো না। এভাবে থাকতে তার আর ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে ল্যাবরেটরি থেকে এসে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। একদিন সন্ধ্যাবেলায় প্রিন্সটনের ডিরেকটরের বাড়িতে ফোন এল দয়া করে যদি আইনস্টাইনের বাড়ির নম্বরটা জানান। আইনস্টাইনের বাড়ির নম্বর কাউকে জানানো হবে না বলে ফোনটা নামিয়ে রাখলেন ডিরেকটার।

খানিক পরে আবার ফোন বেজে উঠল। আমি আইনস্টাইন বলছি, বাড়ির নম্বর আর রাস্তা দুটোই ভুলে গিয়েছি। যদি দয়া করে বলে দেন। এ এক বিচিত্র ঘটনা, যে মানুষটি নিজের ঘরের ঠিকানা মনে রাখতে পারেন না, তিনি বিশ্বপ্রকৃতির রহস্যের ঠিকানা খুঁজে বের করেন।

প্রকৃতপক্ষে জীবনের উত্তরপর্বে এসে আইনস্টাইন হয়ে উঠেছিলেন গৃহ সন্ন্যাসী। বড়দের চেয়ে শিশুরাই তার প্রিয়। তাদের মধ্যে গেলে সবকিছু ভুলে যান। শিশুদের কাছে কল্পনার ক্রিসমাস বুড়ো। পরনে কোট নেই, টাই নেই, জ্যাকেট নেই। ঢলঢলে প্যান্ট আর গলা আঁটা সোয়েটার, মাথায় বড় বড় চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, ঝ্যাটা গোঁফ। দাড়ি কামাতে অর্ধেক দিন ভুলে যান। যখন মনে পড়ে গায়ে মাখা সাবানটা গালে ঘষে দাড়ি কেটে নেন। কেউ জিজ্ঞেস করলে কী ব্যাপার গায়ে মাখা সাবান দিয়ে দাড়ি কাটা, আইনস্টাইন জবাব দিতেন, দুরকম সাবান ব্যবহার করে কী লাভ?

শুধু নির্যাতিত ইহুদিদের সপক্ষে নয়, তিনি ক্রমশই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন সমগ্র মানবজাতির ভবিষ্যতের কথা ভেবে। যুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করছে, দলমত নির্বিশেষে তিনি তাদের সমর্থন করলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন একদিন মানুষ এই ধ্বংসের উন্মাদনা ভুলে এক হবেই। আর একত্বতার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পাবে তার ধর্মকে।

আইনস্টাইনের কাছে এই ধর্মীয় চেতনা প্রচলিত কোনো সীমার মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। তিনি বিশ্বাস করতেন ধর্ম মানবতারই এক মূর্ত প্রকাশ। বিজ্ঞান আর ধর্মে কোনো প্রভেদ নেই, প্রভেদ শুধু দৃষ্টিভঙ্গিতে। বিজ্ঞান শুধু ‘কি’ তার উত্তর দিতে পারে ‘কেন’ বা ‘কী হওয়া উচিত’ সে উত্তর দেয়ার ক্ষমতা নেই। অপরদিকে ধর্ম শুধু মানুষের কাজ আর চিন্তার মূল্যায়ন করতে পারে মাত্র। সে হয়তো মানব জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ বলে দেয় বিজ্ঞান।…তাই ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু আর বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ।

মানবতাবাদী আইনস্টাইন একদিকে শান্তির জন্য সংগ্রাম করছিলেন, অন্যদিকে প্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটনে একের পর এক তত্ত্ব আবিষ্কার করছিলেন। এই সময় তিনি প্রধানত অভিকর্ষ ও বিদ্যুৎ চৌম্বকক্ষেত্রের মিলন সাধনের প্রচেষ্টায় অতিবাহিত করেন। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিকাশের পথে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল কিন্তু এই তত্ত্বের সম্ভাব্যতাভিত্তিক চরিত্রে তার সম্পূর্ণ আস্থা ছিল না।




১৯৩৬ সালে হঠাৎ স্ত্রী এলসা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সুদীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এলসা ছিলেন আইনস্টাইনের যোগ্য সহধর্মিণী, তার সুখ-দুঃখের সঙ্গী। আইনস্টাইন সব বুঝতে পারেন কিন্তু অসহায়ের মতো তিনি শুধু চেয়ে থাকেন। অবশেষে ১৯৩৬ সালে চিরদিনের মতো প্রিয়তম আইনস্টাইনকে ছেড়ে চলে গেলেন এলসা। এই মানসিক আঘাতে সাময়িকভাবে ভেঙে পড়লেন আইনস্টাইন।

এই সময় পারমাণবিক শক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। এই শক্তির ভয়াবহতা সকলেই উপলব্ধি করতে পারছিলেন। পরীক্ষায় জানা গেল পারমাণবিক শক্তি সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক ধাতু হলো ইউরেনিয়াম। আর এই ইউরেনিয়াম তখন একমাত্র পাওয়া যায় কঙ্গো উপত্যকায়। কঙ্গো, বেলজিয়ামের অধিকারভুক্ত। বিজ্ঞানী মহল আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ল যদি জার্মানদের হাতে এই ইউরেনিয়াম পড়ে তাহলে তারা পরমাণু বোমা বানাতে মুহূর্ত মাত্র বিলম্ব করবে না। গোপনে সংবাদ পাওয়া যায় জার্মান বিজ্ঞানীরা নাকি জোর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

আইনস্টাইন উপলব্ধি করলেন তার সমীকরণ প্রমাণিত হতে চলছে। সামান্য ভরের রূপান্তরের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে অপরিমেয় শক্তি। আইনস্টাইন লিখেছেন, ‘আমার জীবনকালে এই শক্তি পাওয়া যাবে ভাবতে পারিনি’।

এদিকে জার্মান বাহিনী দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করলেন যুদ্ধ জয় করতে গেলে অ্যাটম বোমা তৈরি করা দরকার এবং তা জার্মানির আগেই তৈরি করতে হবে। সকলে সমবেতভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে আবেদন জানাল। যদিও এই আবেদনপত্রে সই করেছিলেন আইনস্টাইন, আমেরিকায় পরমাণু বোমা তৈরির ব্যাপারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই তিনি জড়িত ছিলেন না।

শেষ দিকে তিনি চেয়েছিলেন এই গবেষণা বন্ধ হোক। তিনি বিজ্ঞানী মাক্স বোর্নকে বলেন, পরমাণু বোমা তৈরির জন্য আবেদনপত্রে আমার সই করাটাই: সবচেয়ে বড় ভুল। জাপানে অ্যাটম বোমা ফেলার পর তার বিধ্বংসী রূপ দেখে বিচলিত আইনস্টাইন লিখেছেন,

পারমাণবিক শক্তি মানব জীবনে খুব তাড়াতাড়ি আশীর্বাদ হয়ে দেখা যাবে-সে রকম মনে হয় না। এই শক্তি মানবজাতির প্রকৃতই ভয়ের কারণ-হয়তো পরোক্ষভাবে তা ভালোই করবে। ভয় পেয়ে মানবজাতি তাদের পারস্পরিক সম্বন্ধের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা চালু করবে। ভয় ছাড়া মানুষ বোধহয় কখনোই শান্তির পথে অগ্রসর হতে পারবে না।

১৯৫০ সালে প্রকাশিত হলো তার নতুন তত্ত্ব A generalised theory of Gravitation। মহাকর্ষের সর্বজনীন তত্ত্ব। এত জটিল সেই তত্ত্ব, খুব কম সংখ্যক মানুষই তা উপলব্ধি করতে পারলেন।

যখন বিজ্ঞানীরা তাকে তার এই নতুন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে বললেন তিনি সকৌতুক বললেন, কুড়ি বছর পর এর আলোচনা করা যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে উঠেছে নতুন ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হলো নতুন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য।

আইনস্টাইন জানালেন প্রকৃতির তত্ত্ব কিছু বুঝলেও মানুষ রাজনীতির কিছুই বোঝেন না। তাছাড়া রাষ্ট্রপতির পদ শুধু শোভাবর্ধনের জন্য। শোভা হলেও তার বিবেক যা মানতে পারবে না তাকে তিনি কখনোই সমর্থন করতে পারবেন না।

জীবন শেষ হয়ে আসছিল, এই সময়ে ইংরেজ মনীষী বার্ট্রান্ড রাসেলের অনুরোধে বিশ্ব শান্তির জন্য খসড়া লিখতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু শেষ করতে পারলেন না। ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল তার জীবন শেষ হলো। তার ইচ্ছা অনুসারে মৃতদেহটা পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হলো। শোনা যায় পরীক্ষার জন্য তার ব্রেইন কোনো গবেষণাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সে সম্বন্ধে কেউই আর কোনো কথা প্রকাশ করেনি।







বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এর জীবনীঃ

অনেক তো কথা হল, চলুন জানি তার জীবনী সম্পর্কে।

০১ জীবনবৃত্তান্ত

আইনস্টাইনের জীবনবৃত্তান্ত বহুল প্রচারিত। আইনস্টাইনই একমাত্র বিজ্ঞানী যাঁর এক বা একাধিক জীবনী পৃথিবীর প্রায় সবগুলো ভাষাতেই প্রকাশিত হয়েছে। (আইনস্টাইনের একটি বাংলা জীবনী মুক্তমনায় আছে এখানে)। তবে তাঁর প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক জীবনবৃত্তান্ত রচিত হয়েছিল ১৮৯৬ সালে তাঁর সতের বছর বয়সে তাঁর নিজের হাতেই। আইনস্টাইন তখন সুইজারল্যান্ডের আরাউ অঞ্চলের আগাউ স্কুল থেকে ফেডারেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা তার জীবনবৃত্তান্ত ছিল এরকম :

১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ উল্‌ম শহরে আমার জন্ম। এক বছর বয়সে আমি মিউনিখে আসি। ১৮৯৪-৯৫ সালের শীতকাল পর্যন্ত আমি মিউনিখেই ছিলাম। সেখানেই আমার ইলিমেন্টারি স্কুল, তারপর লুটপোল্ড সেকেন্ডারি স্কুলে ক্লাস সেভেনে উঠেছিলাম, কিন্তু শেষ করা হয়নি। তার আগেই আমি মিলানে চলে গিয়েছিলাম এবং সেখানেই ছিলাম গত বছরের শরৎকাল পর্যন্ত। নিজে নিজেই পড়াশোনা করেছি মিলানে। তারপর গত বছর শরৎকাল শেষে আমি আরাউ এর ক্যান্টোনাল স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেছি। করছি। বর্তমানে আমি গ্রাজুয়েশান পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে ফেডারেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করা।

অনেক বছর পর ১৯৩২ সালে আইনস্টাইন আরেকবার নিজের হাতে লিখেছিলেন নিজের জীবনবৃত্তান্ত। তখন তিনি অনেক খ্যাতিমান। দশ বছর হয়ে গেছে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞান-জগতে তাঁর নাম-ডাক। ১৮৫টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এসময় গ্যোয়েটে’র মৃত্যু শতবার্ষিকী উপলক্ষে জার্মান একাডেমি অব সায়েন্টিস্ট আইনস্টাইনকে একাডেমির মেম্বারশিপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইনস্টাইনও সম্মত হয়েছেন। কিন্তু সম্মত হয়েই পড়লেন বিপদে। একাডেমির চেয়ারম্যান ইয়া লম্বা এক ফরম ধরিয়ে দিলেন আইনস্টাইনকে। প্রায় পুরো জীবনবৃত্তান্ত লিখতে হলো ওই ফরম পূরণ করতে গিয়ে। ধৈর্য সহকারে আইনস্টাইন লিখলেন সব – জন্ম, স্কুল, প্যাটেন্ট অফিসের টেকনিক্যাল কাজ, উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা, প্রফেশনাল সোসাইটির মেম্বারশিপ সব লিখলেন। কিন্তু নোবেল পুরষ্কার পাবার কথা উল্লেখ করেন নি কোথাও। তবে কি নোবেল পুরষ্কারের গুরুত্ব তাঁর কাছে খুব একটা ছিল না? নাকি তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন নোবেল প্রাপ্তির কথা? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা যায় নি কখনো।


০২ জীবনের লক্ষ্য

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, জীবনের লক্ষ্য ইত্যাদি বিষয়ে আমরা অনেকেই রচনা লিখেছি স্কুলে। আইনস্টাইনকেও লিখতে হয়েছিল। সেই ষোল বছর বয়সেই আইনস্টাইন জীবনের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছিলেন এভাবেঃ

যদি স্কুল গ্রাজুয়েশান পরীক্ষা পাশ করতে পারি, জুরিখের ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হবো। সেখানে চার বছর পড়াশোনা করবো গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে। ভবিষ্যতে আমি নিজেকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের তত্ত্বীয় শাখার অধ্যাপক হিসেবে দেখতে চাই। তার পেছনে অবশ্য কারণ আছে। প্রধান কারণ হলো তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান ও গাণিতিক ভাবনাগুলো অনেক বেশি স্বাধীনভাবে করা যায়। তার পরের কারণ হলো ব্যবহারিক বিজ্ঞানে আমার দক্ষতার অভাব। সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক পেশায় এক ধরণের স্বাধীনতা আছে যা আমাকে ভীষণভাবে আগ্রহী করে তুলেছে সে পেশার প্রতি।

কিন্তু অনেক বছর অনেক কষ্টের পরে আইনস্টাইন যখন প্রফেসর হলেন দেখলেন যেরকম স্বাধীনতা তিনি আশা করেছিলেন সেরকম স্বাধীনতা নেই সেখানে। একাডেমিক জগতেও আছে পদোন্নতির ইঁদুর-দৌড়, ‘পাবলিশ অর পেরিশ’ এর খড়গ। ১৯২৭ সালে বার্লিন ইউনিভার্সিটিতে ম্যাক্স প্ল্যাংকের প্রফেসর পদ খালি হলে সেই পদ লাভের জন্য প্রফেসরদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তখন আইনস্টাইন তাঁর বন্ধু পল ইরেনফেস্টকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিলেন : – আমি ভাই ওসবে নেই। বড় বড় মস্তিষ্কের প্রতিযোগিতায় যাবার আর কোন ইচ্ছেই আমার নেই। এরকম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ আমার কাছে অর্থ বা ক্ষমতা লাভের জন্য যুদ্ধ করার মতই হীন মনে হয়। প্যাটেন্ট অফিসে কাজ করার সময় পদোন্নতির জন্য দু’বার দরখাস্ত করেছিলেন আইনস্টাইন। একবারও সফল হননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর আর কখনো পদোন্নতির জন্য আবেদন করেন নি কোথাও। গবেষণা-পত্র প্রকাশের প্রচলিত পদ্ধতিও পছন্দ করেন নি তিনি। আমেরিকায় যাবার পর ফিজিক্যাল রিভিউতে একটা পেপার পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন রিভিউয়াররা তাঁকে পরামর্শ দিচ্ছেন কোন্‌ প্রসঙ্গ কীভাবে লেখা উচিত – আইনস্টাইন বিরক্ত হলেন। তিনি আর কখনো কোন গবেষণা-পত্র প্রকাশ করেন নি ফিজিক্যাল রিভিউ।


০৩ প্রথম সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি
১৯০৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব জেনেভা’র ৩৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একশ জন উদীয়মান প্রতিভাকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আইনস্টাইনের নামও সেই একশ’ জনের তালিকায় ছিল। আইনস্টাইন এসবের কিছুই জানতেন না। তাঁর প্রধান আবিষ্কারের পেপারগুলো যদিও প্রকাশিত হয়েছে ১৯০৫ সালে কিন্তু তখনো ওগুলো তেমন আলোড়ন তৈরি করে নি। আইনস্টাইন তখনো প্যাটেন্ট অফিসেই কাজ করছেন। এসময় একটা বড় খামে অনেক কাগজ-পত্র এসে পৌঁছালো তাঁর অফিসে। আইনস্টাইন খাম খুলে দেখেন বেশ সুদৃশ্য টাইপে ছাপানো বেশ কিছু কাগজপত্র। তাঁর মনে হলো ল্যাটিন ভাষায় লেখা কোন বিজ্ঞাপন। অপ্রয়োজনীয় মনে করে তিনি না পড়েই কাগজ-পত্র সহ খামটি ফেলে দিলেন বাতিল কাগজের স্তুপে। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আইনস্টাইনের কাছ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে আইনস্টাইনের বন্ধু লুসিয়েন কাফানের সাথে যোগাযোগ করলো। লুসিয়েন জরুরি ভিত্তিতে আইনস্টাইনকে ডেকে নিয়ে গেলেন জেনেভায় নির্দিষ্ট দিনে, কিন্তু ইউনিভার্সিটির ডিগ্রির ব্যাপারে কিছুই জানাননি। জেনেভায় গিয়ে আইনস্টাইন দেখলেন জুরিখ ইউনিভার্সিটির অনেক প্রফেসর সেখানে উপস্থিত। জানা গেলো জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের সম্মান-সূচক ডিগ্রি দিচ্ছেন। আইনস্টাইনও যে ডিগ্রি পাচ্ছেন তা তাঁরা জানেন, কিন্তু আইনস্টাইন নিজে তা জানেন না। যখন জানলেন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কারণ সমাবর্তনের একাডেমিক শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক পোশাক তার নেই। তিনি ভাবলেন কেটে পড়বেন, ডিগ্রি নেবেন না। কিন্তু তাঁর বন্ধু ও প্রফেসররা তা হতে দিলেন না। আইনস্টাইন শোভাযাত্রায় অংশ নিলেন তাঁর আটপৌরে কুচকানো কোট আর খড়ের টুপি পরে। পুরো সমাবর্তনে আইনস্টাইনই ছিলেন একমাত্র অনানুষ্ঠানিক। আরো মজার বিষয় হলো – আইনস্টাইনের এই প্রথম সম্মান-সূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদে তাঁর নামের বানান ছিল ভুল। প্যাঁচানো অক্ষরের ফরাসি ভাষায় তাঁর নাম লেখা ছিল ‘আলবার্ট টাইনস্টাইন’।

আইনস্টাইন জীবনে অসংখ্য সম্মাননা, পুরষ্কার, সনদ-পত্র পেয়েছেন। কিন্তু একটি মাত্র সনদ ছাড়া আর কোন সনদই তিনি বাঁধিয়ে রাখেন নি বা প্রদর্শন করেন নি। সবগুলো সম্মাননা সনদই তিনি ফেলে রাখতেন ঘরের এক কোণে, অনেকটা লুকিয়ে। নোবেল পুরষ্কারের সনদও লুকিয়ে ছিল সেই নিভৃত কোণে। যে সনদটি তিনি তাঁর অফিসের দেয়ালে বাঁধিয়ে রেখেছিলেন তা ছিলো ১৯৩৬ সালে বার্ন সায়েন্টিফিক সোসাইটি যে ডিপ্লোমা সনদটি তাঁকে পাঠিয়েছিল। এই সনদটি পেয়ে তিনি এত খুশি হয়েছিলেন যে তাঁর উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল বার্ন সায়েন্টিফিক সোসাইটিকে লেখা তাঁর ধন্যবাদ পত্রে ঃ “বার্ন সায়েন্টিফিক সোসাইটি যে আমাকে মনে রেখেছে তার জন্য আমি যে কী পরিমাণ খুশি হয়েছি তা বোঝানোর ভাষা আমার নেই। এই সনদটি মনে হচ্ছে আমার অনেক দিন আগে ফেলে আসা যৌবনের স্মৃতি। মনে হচ্ছে আমি যেন ফিরে যাচ্ছি আমার যৌবনের সেইসব বিকেলগুলোতে”। আইনস্টাইন তখন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কিন্তু মন যে পড়ে আছে ইউরোপে যেখানে তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা, সংগ্রাম, সাফল্য।


০৪ বিজ্ঞান ঈশ্বরের দান!

যে কোন বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে ঈশ্বর-বিশ্বাসীরা শুরুতে ‘ঈশ্বর-বিরোধী’ কাজকর্ম বলে অপপ্রচার চালিয়ে বাধাগ্রস্ত করে তুলতে সচেষ্ট হয়। তাতে ব্যর্থ হবার পর উল্টোগীত গাইতে শুরু করে এই বলে যে এসব আবিষ্কারের কথা ধর্ম-গ্রন্থগুলোতে কত আগে থেকেই গ্রন্থিত হয়ে আছে। এসব আবিষ্কার তো ওখান থেকেই টুকলিফাই করা। আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটি নিয়ে এরকম কচলানো শুরু হয়েছিল আইনস্টাইনের জীবদ্দশাতেই। আইনস্টাইন প্রিন্সটনের এডভান্সড রিসার্চ সেন্টারে অধিষ্ঠিত হবার পর মিডিয়ার কল্যাণে দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন সবার কাছে। প্রতিদিন শত শত চিঠি আসতে থাকে তাঁর কাছে। কত রকম আলোচনা, সমালোচনা, আবদার, প্রশ্ন, অনুরোধ, ভালোবাসা, ঘৃণা সেসব প্রশ্ন জুড়ে। আমেরিকান ইহুদিরা প্রচারে লেগে গেলেন যে আইনস্টাইন তাঁদেরই লোক। আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটির ওপর যে তাঁদের ধর্মের বিরাট প্রভাব আছে তা ব্যাখ্যা করার জন্য রাবাইরা উঠেপড়ে লাগলেন। শিকাগোর এক রাবাই “দি রিলিজিয়াস ইমপ্লিক্যাশান্‌স অব দি থিওরি অব রিলেটিভিটি” শিরোনামে এক লেকচার তৈরি করে ফেললেন। তাতে আইনস্টাইনের স্বীকৃতি লাভ করার জন্য এই রাবাই আইনস্টাইনকে চিঠি লিখে জানালেন তাঁর লেকচারের বিষয়ে। ধর্মের
স্বার্থে বিজ্ঞানের অপব্যাখ্যায় আইনস্টাইন ভীষণ বিরক্ত হতেন। ১৯৩৯ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি রাবাইকে চিঠি লিখে জানালেন “আমি বিশ্বাস করি না যে আমার আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মূল ধারণার কোন অংশই ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে দাবি করা যায়। কারণ ধর্মের ধারণা বিজ্ঞানের ধারণা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যৌক্তিক পৃথিবীতে শুধুমাত্র সাধারণ যুক্তির ধাপগুলো সম্পন্ন করেই এক কাজের সাথে অন্য কাজের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়, তাতে ধর্মকে টেনে আনার দরকার হয় না”।


০৫ ভাগ্যবান আইনস্টাইনই

আইনস্টাইনের ৫০তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে কার্ড পাঠিয়েছেন সিগমন্ড ফ্রয়েড। কার্ডে ফ্রয়েড আইনস্টাইনকে সম্বোধন করেছেন ‘ইউ লাকি ওয়ান’ বলে। আইনস্টাইন বুঝতে পারছিলেন না ফ্রয়েডের মত খ্যাতিমান মানুষ কেন তাঁকে ভাগ্যবান বলে মনে করবেন? ফ্রয়েডকে চিঠি লিখলেন আইনস্টাইন – “মহোদয়, আমাকে মনে রাখার জন্য ধন্যবাদ। আপনি আমার ভাগ্যের উপর এত জোর দিচ্ছেন কেন? আপনি যেখান এত মানুষের মনের খবর জানতে পারেন, সমগ্র মানবজাতি যেখানে আপনাকে মনে রাখছে – সেখানে আপনার তুলনায় আমি কীভাবে ভাগ্যবান হই”? উত্তরে ফ্রয়েড লিখলেন – “পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কে যাদের গভীর ধারণা নেই তারা কখনো সাহস পাবে না তোমার কাজের সমালোচনা করার, অথচ আমাকে দেখো – মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে যারা কিছুই জানে না তারাও আমার কাজের বড় সমালোচক। এক্ষেত্রে তুমি ভাগ্যবান নও”?

“আলবার্ট আইনস্টাইন” এর জীবনের কিছু মজার ঘটনাঃ-

আইনস্টাইন সাহেবের লাইফে অনেক মজার মজার ঘটনা আছে। যদিও ব্যাক্তি আইনস্টাইন কে আমার যতটা না কঠীন মনে হত আমার কাছে, কয়দিন ধরে উনার উপর গবেষনা করে অনেক সহজ লোক মনে হচ্ছে। যদিও ব্যাক্তি অনির্ণেয় উনার বিশ্বখ্যাত আপেক্ষিক তত্ত্বের ক টা ও বুঝতে পারি নি। কিন্তু আজ উনার জীবনের কিছু মজার ঘটনা আপনাদের কে জানাব।

১. আইনস্টাইন বিশ্বখ্যাত তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য। কিন্তু কে কী ভাবত তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে? জার্মান বা ফরাসীরা? ১৯৩০-এর দশকে সরবোনে (Sorbonne) বক্তৃতা দেওয়ার সময় এ বিষয়ে বলেন, ‘যদি আমার আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্য প্রমাণিত হয়, তবে জার্মানি আমাকে জার্মান হিসেবে দাবি করবে। আর ফ্রান্স বলবে যে আমি পুরো বিশ্বের নাগরিক। কিন্তু যদি তত্ত্বটা ভুল প্রমাণিত হয়, তবে ফ্রান্স বলবে, আমি একজন জার্মান এবং জার্মানি বলবে আমি হলাম ইহুদি।’


২. ১৯২১ সালে ফিলিস্তিন ভ্রমণে বেরিয়েছেন আইনস্টাইন। সেখানে ‘যুব সংঘ’ নামের এক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন ২২ বছর বয়সী এক তরুণী। সমাজের নানা বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন আইনস্টাইন। একবার আইনস্টাইন তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, এখানে নারী-পুরুষে সম্পর্ক কেমন?’ এ প্রশ্নশুনে ওই তরুণী লজ্জায় পড়ে গেলেন। তিনি বললেন, ‘দেখুন অধ্যাপক, এখানে কিন্তু একজন পুরুষের একটিই স্ত্রী।’ একটু হেসে তাঁর হাতখানা ধরে আইনস্টাইন বললেন, ‘না, না। আমার প্রশ্নটা ওভাবে নিয়ো না। আমরা পদার্থবিজ্ঞানীরা “সম্পর্ক” কথাটা দিয়ে সহজ কিছুকে বোঝাই। আমি আসলে জানতে চেয়েছি, এখানে কতজন নারী আর কতজন পুরুষ মানুষ।’


৩. মানুষ মাত্রই কি ভুল হয়? নিজের ভুলভ্রান্তি নিয়ে কী ভাবতেন আইনস্টাইন? ১৯৩৫ সালে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য আপনার কী কী দরকার?’ আইনস্টাইন বললেন, ‘একটা ডেস্ক, কিছু কাগজ আর একটা পেনসিল। সঙ্গে দরকার বড় একটা ডাস্টবিন, যেখানে আমার সব ভুল করা বা ভুলে ভরা কাগজগুলো ফেলব!’


৪. আইনস্টাইনকে প্রাচীন গণিতের ইতিহাসবিদ অটো নিউগেব্যুর বলেছেন, ‘কিংবদন্তি’। কিন্তু এই কিংবদন্তি মানুষটি তুলনামূলক দেরিতে কথা বলতে শেখেন। ফলে তাঁর মা-বাবা খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তো, একদিন রাতে খাবার টেবিলে সবাই আছেন। আইনস্টাইনও। হঠাৎ তিনি চিত্কার করে বললেন, ‘এই স্যুপটা খুবই গরম।’ উহ্, হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন মা-বাবা। ছেলের মুখে প্রথম বুলি শুনে তাঁরা আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এর আগে কেন তুমি কোনো কথা বলোনি?’ জবাবে আইনস্টাইন বললেন, ‘কারণ, এর আগে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল!’


৫. অনেকের কাছে অঙ্কের সমার্থক শব্দ আতঙ্ক। তো, একবার ১৫ বছর বয়সী এক তরুণী আইনস্টাইনের কাছে সাহায্য চাইল। গণিতের ওপর বাড়ির কাজ বা হোম ওয়ার্ক সে সঠিকভাবে করতে পারছিল না। তরুণীর কাছে অঙ্ক এমনিতেই আতঙ্কের নাম। আইনস্টাইন ওই তরুণীকে বলেছিলেন,‘গণিতের সমস্যা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করো না। তোমার কাছে গণিত যতটা কঠিন, আমার কাছে গণিত তার চেয়েও কঠিন।’


৬. একবার এক ছাত্র আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করল, ‘গত বছর পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন পড়েছিল, এবারের পরীক্ষায়ও ঠিকঠিক ওই সব প্রশ্নই পড়েছে।’ ‘ঠিক বলেছ।’ আইনস্টাইন বললেন, ‘কিন্তু এ বছরের উত্তরগুলো আগেরবারের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা!’


৭. একবার এক অনুষ্ঠানে আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনি একটু সহজ করে আপনার তত্ত্বটা আমাদের বোঝাবেন?’ আইনস্টাইন তখন এই গল্পটা শোনালেন। আমি একবার বন্ধুর সঙ্গে হাঁটছিলাম। বন্ধুটি ছিল অন্ধ। আমি বললাম, দুধ পানকরতে ইচ্ছা করছে। ‘দুধ?’ বন্ধুটি বলল, ‘পান করা বুঝি, কিন্তু দুধ কী জিনিস?’ ‘একটা সাদা তরল পদার্থ।’ বললাম আমি। ‘তরল আমি বুঝি, কিন্তু সাদা জিনিসটা কী?’ ‘বকের পালকের রং।’ ‘পালক আমি বুঝি, কিন্তু বক কী?’ ‘ঘাড় কুঁজো বা বাঁকানো ঘাড়ের এক পাখি।’ ‘ঘাড় সে তো বুঝি। কিন্তু এই কুঁজো কথাটার মানে কী?’ এরপর আর ধৈর্য থাকে, বলুন! আমি তার হাতটা ধরে এক ঝটকায় টানটান করলাম। বললাম, ‘এটা এখন একদম সোজা, তাই না। তারপর ধরো, কনুই বরাবর এটা ভেঙে দিলাম। এবার তোমার হাতটা যেমন আছে সেটাকেই কুঁজো বা বাঁকানো বলে, বুঝলে?’ ‘আহ্!’ অন্ধ বন্ধু বলল, ‘এবার বুঝেছি, দুধ বলতে তুমি কী বুঝিয়েছ।’

৮. এক সহকর্মী আইনস্টাইনের কাছে একবার তাঁর টেলিফোন নম্বরটা চাইলেন। তখন আইনস্টাইন একটা টেলিফোন বই খুঁজেবের করলেন এবং সে বইতে তাঁর নম্বরটা খুঁজতে লাগলেন। তখন সহকর্মীটি বললেন,‘কী ব্যাপার, নিজের টেলিফোন নম্বরটাও মনে নেই আপনার?’ আইনস্টাইন বললেন, ‘না। তার দরকারই বা কী? যেটা আপনি বইতে পাবেন, সে তথ্যটা মুখস্থ করে মস্তিষ্ক খরচ করবেন কেন?’


৯. ১৯৩১ সালে চার্লি চাপলিন আমন্ত্রণ জানালেন আইনস্টাইনকে। তখন সিটি লাইটস সিনেমার স্কিনিং চলছিল চাপলিনের। তো যখন চাপলিন ও আইনস্টাইনশহরের পথ ধরে যাচ্ছিলেন, অনেক মানুষ ভিড় জমায়। চাপলিন আইনস্টাইনকে বললেন,‘সবাই আমাকে সহজেই বোঝে। এজন্যই আমার যত জনপ্রিয়তা। তা আপনাকে মানুষ এত পছন্দ করে কেন, বলতে পারেন?’ ‘আসলে’, আইনস্টাইন বলছেন, ‘কেউ আমাকে সহজে বুঝতেই পারে না বলে আমাকে এত বেশি পছন্দ করে!’


১০. স্বামী সম্পর্কে কেমন ধারণা ছিল আইনস্টাইনের স্ত্রীর? তাঁর স্ত্রীকেএকবার জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব কি বুঝতে পারেন?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘না, কিন্তু আমার স্বামীকে বুঝি। আমি জানি, তাঁকে বিশ্বাস করা যায়।


১১. বিখ্যাত ভাষ্কর জেকব এপস্টিন একবার আইনস্টাইনের একটি আবক্ষ মূর্তি খোদাই করছিলেন। আইনস্টাইন নিজেই মডেল হয়ে ধৈর্য ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে শিল্পীকে সাহায্য করতেন। সে সময় একদিন তিনি জেকবকে বলেন,’’ প্রায় শ’খানেক বিজ্ঞানী বই লিখে আমার আপেক্ষিকতা তত্ত্বটি ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। আমার থিওরী যদি ভুল হয়, তবে এতজনের দরকারটা কী? একজন বললেই যথেষ্ট।


১২. একবার বেলজিয়ামের রাণী আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানালেন তাঁর দেশ সফরের। নির্দিষ্ট দিনে আইনস্টাইনকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাবার জন্য রেল স্টেশনে হাজির হল গাড়ির বহর। কিন্তু কোথায় কী? রেল স্টেশনে আইনস্টাইনকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। ফিরে চলল গাড়্রির বহর রাজপ্রাসাদের দিকে। কিছুক্ষণ পর সাদাসিধে পোশাকে বেহালা বাজাতে বাজাতে রাজপ্রাসাদে হাজির হলেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। রাণী ব্যাপারটাতে লজ্জিত হলেন। সাথে সাথে ক্ষমা প্রার্থণা করে জানালেন যে, বিজ্ঞানীকে নিয়ে আসার জন্য গাড়ি বহর রেল স্টেশনে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে ফিরে এসেছে। আইনস্টাইন বললেন,’’আমি ইচ্ছে করেই গাড়ি বহরকে এড়িয়ে গেছি। আর পায়ে হেঁটে বেহালা বাজাতে বাজাতে এসেছি। যদি আপনার ঐ রাজকীয় গাড়িতে আসতাম, তবে কি এভাবে বেহালা বাজাতে পারতাম? সাধারণ মানুষের মত শহরটাকে দেখে নিতে পারতাম?’’ এমনই সহজ সরল আর সাধারণ ছিলেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। এত বড় বিজ্ঞানী অথচ মনে এতটুকু অহংকার ছিল না।


১৩. আইনস্টাইন যে কত সহজ সরল ছিলেন তা বোঝা যায় তাঁর আরেকটি মজার ঘটনায়। আপেক্ষিকতা তত্ব আবিষ্কার করে তিনি তখন বিখ্যাত ও বিতর্কিত। সত্যি কথা বলতে কি, বিজ্ঞানী-অবিজ্ঞানী কারোর মগজের এন্টেনাই ব্যাপারটা ক্যাচ করতে পারছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা সেমিনারে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর উদ্ভাবিত তত্ত্বটি বোঝাতে লেকচার দিতে যেতেন। প্রায় সব সেমিনারে তিনি একই ধরনের আলোচনা করতেন। একবার এমনি এক সেমিনারে তিনি আমন্ত্রিত হয়েছেন, লেকচার দেবার জন্য। পথিমধ্যে তাঁর ড্রাইভার করে বসল এক আজব আবদার।বলল, ‘’স্যার, আপনার লেকচারগুলু শুনতে শুনতে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। আজ একদিনের জন্য আমি আইনস্টাইন সেজে সেমিনারে বক্তব্য চাই।‘’ মজার মানুষ আইনস্টাইনেরও কথাটা খুব মনে ধরল। তিনি এক কথায় রাজি। দেখাই যাক না, ব্যাপারটা কী হয়? তো, ড্রাইভার আইনস্টাইন সেজে অনুষ্ঠানে গেল বক্তব্য দিতে আর স্বয়ং আইনস্টাইন দর্শক সারিতে বসে রইলেন আইনস্টাইনেরই ড্রাইভার হয়ে। তখন তো আর মিডিয়ার এত দৌরাত্ন্য ছিল না। তাই ব্যপারটা কেউ বুঝতে পারল না। আইনস্টাইনরূপী ড্রাইভার মঞ্চে বক্তব্য রাখল এবং চমৎকার বক্তব্য রাখল।দর্শক সারিতে বসে মুগ্ধ আইনস্টাইন বার বার হাত তালি দিতে লাগলেন।অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত একজন আইনস্টাইনের ড্রাইভারের কাছে যেয়ে বললেন, ‘’ আপনার বক্তব্যটি আমার খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু কি জানেন, আমি এই অমুক অমুক বিষয়গুলু একদম বুঝতে পারিনি। আপনি কি অনুগ্রহ করে আমাকে বিষয়গুলু বুঝিয়ে দেবেন?’’ আইনস্টাইনের ড্রাইভার বিন্দু মাত্র না ঘাবড়ে উত্তর দিল,’’ওহ! এই ব্যাপার? এই ব্যাপারটা তো আমার ড্রাইভারই বুঝিয়ে দিতে পারবে। চলুন তার কাছেই যাই।


১৪. একবার আইনস্টাইনকে সফলতা লাভের একটি গাণিতিক ফর্মুলা দিতে বলা হল। তিনি বলেছিলেন,’’ X+Y+Z=A, যেখানে X=কাজ, Y=খেলাধুলা আর A=সফলতা।‘’ ‘’আর মানে Z কী?’’ আবারও জিজ্ঞেস করা হল তাঁকে। ‘’তোমার মুখ বন্ধ রাখা‘’, আইনস্টাইনের উত্তর।


১৫. আইনস্টাইন তাঁর জটিল আপেক্ষিকতার তত্ত্বের একটি সহজ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ঠিক এইভাবে,’’যখন তুমি একজন সুন্দরী মহিলার পাশে বসে থাকো তখন দু’ঘণ্টাকে মনে হয় দু’ মিনিট; আর যখন তুমি দু’ মিনিট গরম চুলার পাহশে বসে থাকো তখন দু’মিনিটকে মনে হয় দু ঘণ্টা। এটাই হল আপেক্ষিকতাব আর রেডিও সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘’তুমি টেলিগ্রাফের তার দেখেছ। মনে করো, এটা লম্বা, অনেক লম্বা একটা বিড়াল।তুমি নিউইয়র্কে বসে এর লেজে টান দেবে, ওদিকে লস এঞ্জেলেসে এর মাথা মিউ মিউ করে উঠবে।ব্যাপারটা বুঝতে পারছ? বেতার ঠিক এভাবেই কাজ করে। তুমি এদিকে ইশারা দাও, ওদিকে সাড়া পড়ে। পার্থক্য হল এই বেতারের ক্ষেত্রে বিড়াল বলে কিছু উপস্থিত নেই।


১৬. এত সুন্দর ব্যাখ্যা যিনি দিতে পারেন, তিনি কিন্তু অনেক সময় জীবনের সহজ ব্যাপারগুলো বুঝতে পারতেন না। একবার আইনস্টাইন বাড়ি বানালেন। একদিন তিনি বাড়িটা কেমন হল তা দেখতে গেলেন। ঘুরে ঘুরে সব দেখে তিনি জানতে চাইলেন, তাঁর ছোট্ট বিড়ালছানাটি ঘরে ঢুকবে কি করে? তার জন্য তো কোন আলাদা ছোট দরজা বানানো হয় নি। আসলে যাঁরা অনেক বড় মানুষ, তাঁরা সব সময় বড় বড় চিন্তায় মগ্ন থাকেন তো, তাই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো তাঁরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনও এই ছোট্ট ব্যাপারটা কিছুতেই বুঝতে পারলেন না।অবশেষে তাঁকে খুশি করার জন্য বড় দরজার পাশে আরেকটি ছোট দরজা তৈরি করে দেওয়া হল, যেন তাঁর আদরের বেড়ালছানাটি নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত বেড়ালছানাটি কোন দরজা ব্যবহার করত তা আইনস্টাইনই ভাল বলতে পারবেন।


১৭. গুজব আছে, সুন্দরী অভিনেত্রী মেরিলিন মনেরো আইনস্টাইনের প্রতি দুর্বল ছিলেন। তাই একদিন মনেরো আইনস্টাইনকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এইভাবে, ‘’চলুন না, আমরা বিয়ে করে ফেলি? তাহলে আমাদের সন্তানেরা হবে সৌন্দর্য ও জ্ঞানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। ওরা দেখতে আমার মত আর বুদ্ধিতে আপনার মত।‘’ আইনস্টাইন তৎক্ষণাৎ বললেন, ‘’আর যদি উল্টোটা হয়? দেখতে আমার মত আর বুদ্ধিতে আপনার মত?‘’ এর উত্তরে মনেরো কী বলেছিলেন তা অবশ্য আমি অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারিনি।



১৮. তিন হাজার শব্দের মধ্যে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব যে সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবে, তার জন্য মোটা অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করে সায়েন্টিফিক আমেরিকান। ‘বন্ধুদের মধ্যে কেবল আমিই অংশ নিইনি। আমার বিশ্বাস হয়নি তিন হাজার শব্দে এটা ভালো বোঝাতে পারতাম আমি’−মন্তব্য করেন আইনস্টাইন।


১৯. কাজে যাওয়ার আগে প্রায়ই ভালো পোশাক পরে যাওয়ার আইনস্টাইনকে অনুরোধ-উপরোধ করতেন তাঁর স্ত্রী। বেশির ভাগ সময়ই তিনি জবাব দিতেন, ‘আমি কেন এটা করব? সেখানে সবাই আমাকে চেনে।’ তারপর আইনস্টাইনের প্রথম বড় ধরনের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় যখন ঘনিয়ে এল, তখন আবার তাঁকে একটু ভালো কাপড়চোপড় পরে সেখানে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন তাঁর স্ত্রী। এবার তিনি জবাব দিলেন, ‘কেন আমি এটা করব? সেখানে কেউই তো আমাকে চেনে না।’


২০. ১৯৩৫ সালে প্রিন্সটনে পৌঁছানোর পর গবেষণার জন্য তাঁর কী কী প্রয়োজন হবে জিজ্ঞেস করা হলে আইনস্টাইন জানালেন, ‘একটি ডেস্ক, কিছু প্যাড, একটা পেন্সিল আর সব শেষে আমার ভুলগুলো ফেলার জন্য বিশাল একটা ময়লার ঝুড়ি।


২১. মাউন্ট উইলসন মানমন্দির পরিদর্শনে গেছেন আইনস্টাইনের স্ত্রী। সেখানকার বিশাল অপটিক্যাল টেলিস্কোপটি ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম। এক জ্যোতির্বিদ তাঁকে জানালেন, এসব স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতির প্রধান কাজ মহাবিশ্বের বিস্তার, আকৃতি নির্ণয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন, ‘ও! আমার স্বামী তো পুরোনো একটা খামের পেছনেই এটা করে।



২২. অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথিদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার চমৎকার এক বুদ্ধি বের করেন আইনস্টাইন। বাড়িতে কেউ আসার কিছু সময় পরই এক বাটি স্যুপ নিয়ে কামরায় ঢোকে এক গৃহপরিচারক। যদি তিনি এটা গ্রহণ করেন, তবে অতিথি ধরে নেন তিনি এখন খাবেন এবং মানে মানে কেটে পড়াই তাঁর জন্য শ্রেয়। অন্যদিকে আইনস্টাইনের যদি কথা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হয়, তবে স্যুপটা এক পাশে সরিয়ে দেন, যেন-বা এটা এখানে ছিলই না।


২৩. ১৯৩০ সালে আমেরিকার উদ্দেশে বার্লিন ত্যাগ করেন আইনস্টাইন। বার্লিন রেলস্টেশনে পৌঁছেই স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলেন তিনি। যা হোক, একসময় খুঁজে পেলেন তাঁকে। তারপরই টিকিট জোড়া হারিয়ে বসলেন। শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেল তাও, আর এভাবেই শুরু হলো তাঁর দ্বিতীয় আমেরিকা যাত্রা।


২৪. মাউন্ট উইলসন মানমন্দির পরিদর্শনে গেছেন আইনস্টাইনের স্ত্রী। সেখানকার বিশাল অপটিক্যাল টেলিস্কোপটি ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম। এক জ্যোতির্বিদ তাঁকে জানালেন, এসব স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতির প্রধান কাজ মহাবিশ্বের বিস্তার, আকৃতি নির্ণয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন, ‘ও! আমার স্বামী তো পুরোনো একটা খামের পেছনেই এটা করে।


২৫. ভবিষ্যতে কী আছে? আলবার্ট আইনস্টাইনের কাছে একবার জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে নিরাসক্ত ভঙ্গিতে আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি কখনোই চিন্তা করি না। কারণ, এটা এমনিতেও তাড়াতাড়িই আসে।


২৬. বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মেধাবীদের অন্যতম আলবার্ট আইনস্টাইন। আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (The Theory of Relativity) আবিষ্কারের জন্য তিনি আমাদের কাছে সর্বাধিক পরিচিত। মজার ব্যাপার তিনি কিন্তু তাঁর এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার পাননি। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে হাতে গোণা কয়েকজন মাত্র বিজ্ঞানী তাঁর এই তত্ত্বটি বুঝতে পারেন। কেউ যদি এই আপেক্ষিকতার তত্ত্বটি পড়ে বলে, ‘’বুঝেছি’’ তাহলে নাকি বুঝতে হবে যে, সে কিছুই বুঝেনি। তত্ত্বটি এত গোলমেলে যে, এটি না বোঝাই স্বাভাবিক, বুঝতে পারাটাই যেন অস্বাভাবিক। আর তাই হয়ত রয়েল সুইডিশ একাডেমির জুরিবোর্ড আইন্সটাইনের তত্ত্বটির নিগূঢ় অর্থটি বুঝাতে পারেনি। তাই সে বছর নোবেল পুরষ্কার আইনস্টাইনের কপালে না জুটলেও ১৯২১ সালে আলোক তড়িৎ ক্রিয়া (Photo Electric Effect) ব্যাখ্যা করে, তিনি পেলেন পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার।


২৭. এক পার্টিতে আইনস্টাইনকে চিনতে না পেরে এক তরুণী প্রশ্ন করলেন, আপনি কি করেন?
আইনস্টাইন উত্তর দিলেন, আমি পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র।
তরুণী অবাক হয়ে বললেন, আপনি এখনও ছাত্র! আর আমি গত বছর পাশ করেছি..


২৮. আইনস্টাইন এর মেয়ের বিয়ে। সবাই চার্চে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে উনি উনার মেয়েকে বললেন তুমি চার্চের দিকে যাও আমি ল্যাবে আমার কলমটা রেখে আসতাছি। মেয়ে অনেক বারন করা সত্বেও উনি গেলেন, ৩০ মিনিটের কথা বলে উনি যখন না এলেন তখন সবাই মিলে উনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন। ৭ দিন পর উনার মেয়ে যখন বাসায় এসে মাকে জিজ্ঞাস করলো বাবা কোথায় তখন তার মা বলল ওই যে গেল আর আসে নাই। তখন উনি আইনস্টাইন এর খোজে ল্যাবে গেল। ল্যাবে গিয়ে দেখল যে তার বাবা একটা কলম নিয়ে বোর্ড এর সামনে গিয়ে কি জানি চিন্তা করছিল। মেয়ে বাবা কে বলল বাবা কি কর। তখন উনি বলল যে মা তুমি চার্চে যাও আমি এই কাজ টা ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ করে আসছি।


২৯. আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মত রহস্যময়তার মধ্যেই মৃত্যু ঘটে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের। তাঁর মৃত্যুর সময় তিনি তাঁর মাতৃভাষা জার্মানে কিছু একটা বলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।তখন তাঁর পাশে থাকা আমেরিকান নার্স কথাটির বিন্দু বিসর্গও বুঝতে পারেনি। মৃত্যুর আগে শেষ কী কথা তিনি বলে গেছেন, তা আমাদের জানা হবে না আর কোন দিন।আইনস্টাইন সাহেবের লাইফে অনেক মজার মজার ঘটনা আছে। যদিও ব্যাক্তি আইনস্টাইন কে আমার যতটা না কঠীন মনে হত আমার কাছে, কয়দিন ধরে উনার উপর গবেষনা করে অনেক সহজ লোক মনে হচ্ছে। যদিও ব্যাক্তি অনির্ণেয় উনার বিশ্বখ্যাত আপেক্ষিক তত্ত্বের ক টা ও বুঝতে পারি নি। কিন্তু আজ উনার জীবনের কিছু মজার ঘটনা আপনাদের কে জানাব।

আলবার্ট আইনস্টাইনের বেহালা

একটি টেবিল, একটি চেয়ার, এক পাত্র ফল আর একটি বেহালা—একজন মানুষকে সুখী হতে আর কী চাই?’
—আলবার্ট আইনস্টাইন

১৯৫২ সালে ইসরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্ট ওয়াইজম্যানের মৃত্যুর পর বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনকে অনুরোধ করা হলো ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য। তিনি সবিনয়ে প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দিলেন। তখন তাঁর বয়স ৭৩ বছর। তিনি আনুষ্ঠানিক প্রত্যাখ্যানপত্রে লিখলেন, ‘যথাযথভাবে মানুষের সঙ্গে মেলামেশার স্বাভাবিক প্রবণতা ও অভিজ্ঞতার অভাব আমার রয়েছে, তা ছাড়া আমি বৃদ্ধও হয়ে যাচ্ছি।’

একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব আইনস্টাইনের পক্ষেই ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তিনি যা কখনো ফিরিয়ে দেননি, তা হচ্ছে বেহালা বাজানোর প্রস্তাব। তিনি টানা ৭০ বছর বেহালা বাজিয়ে গেছেন।

আইনস্টাইনের নিজের কথা, ‘আমি খুব সুখী। কারণ, কারও কাছে আমার কিছু চাওয়ার নেই। আমার টাকার প্রয়োজন নেই। পদক, খেতাব, উপাধি—আমার কাছে এসবের কোনো মানেই নেই। আমি প্রশংসার জন্যও লালায়িত নই। আমার নিজের কাজ ছাড়া একটি মাত্র বিষয় আমাকে আনন্দ দেয়, তা হচ্ছে আমার বেহালা।’

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ১৯৩০-এর গ্রীষ্মের অপরাহে যখন আইনস্টাইনের দেখা, তখন তাঁদের আলাপের প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল সংগীতের কথা। রবীন্দ্রনাথ বললেন, পিয়ানো তাঁকে হতবাক করে আর বেহালা তাঁকে দেয় তৃপ্তি।

আইনস্টাইন বললেন, ব্যক্তির অনুভূতির সঠিক বিকাশ তখনই সম্ভব, যখন সংগীতের সমৃদ্ধ শৈল্পিক ঐতিহ্য মানুষের মনকে চালিয়ে নিয়ে যায়।

আইনস্টাইনের মা পলিন আইনস্টাইন (১৮৫৮-১৯২০) ছিলেন সুশিক্ষিত পিয়ানোবাদক, তিনি চেয়েছেন ছেলেও সংগীত ভালোবাসুক। ছয় বছর বয়সে তিনি ছেলের হাতে বেহালা তুলে দিলেন। কিন্তু তখন বালকের বেহালা ভালো লাগেনি। তখন তাঁর পছন্দ কার্ড দিয়ে ঘর বানানো, জিগসো সমাধান। ১৩ বছর বয়সে যখন তিনি মোৎজার্ট শুনলেন, তাঁর ঘটল ভিন্ন এক উত্তরণ। তিনি আবার বেহালা হাতে নিলেন। হাত থেকে তা আর নামাননি। তিনি নিজের জন্য বেহালা বাজিয়েছেন, বাজিয়েছেন শ্রোতাদের জন্যও।

তাঁর খালাতো বোন ও দ্বিতীয় স্ত্রী এলমা লিখেছেন, ‘আলবার্ট যখন বেহালায় মোৎজার্টের সুর তুলেছে নিপুণ হাতে, আমি তখন ছোট্ট বালিকা, তার প্রেমে পড়ে যাই।’ …আলবার্ট পিয়ানোও বাজাতেন। তিনি যখন বিজ্ঞানের তত্ত্বের কথা ভাবতেন, সংগীত তাঁকে সাহায্য করত। পড়ার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে কিছুক্ষণ সুর তুলতেন, চিন্তাকে সমন্বিত করে আবার পড়ার ঘরে ফিরে যেতেন।

আইনস্টাইন ১৭তম জন্মদিনে সংগীত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষক মন্তব্য করেন, ‘আইনস্টাইন নামের একজন ছাত্র একাই সংগীতের প্রতি তার গভীর মমত্ব দেখিয়ে বিটোফেনের সোনাটা বাজিয়ে শুনিয়েছে।’ বার্লিন-জীবনে বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা তিনি সমানতালে চালিয়ে গেছেন। কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক ম্যাক্স প্লাঙ্কের সঙ্গে বেহালা বাজিয়েছেন, ওঠাবসা করেছেন সংগীতগুরু ফ্রিৎজ ক্রিসলার আর আর্তুর শনাবেলের সঙ্গে।

১৯২১-এ যখন আইনস্টাইন প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে এলেন, সংবাদপত্রের প্রতিবেদকেরা দেখতে পেলেন তাঁদের সামনে আলুথালু চুলের একজন দয়ালু মানুষ, পুরোনো দিনের পোশাক, বেহালার বাক্সটি হাতে; সফরে বের হওয়া পেশাদার শিল্পীরা যেমন করে পৃথিবীকে দেখেন, তিনিও তেমনি পৃথিবীকে দেখছেন।

বিটোফেন শেষ পর্যন্ত আইনস্টাইনকে বেশি টানেনি। তিনি আমৃত্যু মোৎজার্ট-মুগ্ধ ছিলেন, তাঁর প্রিয় অন্য সুরস্রষ্টাদের মধ্যে ছিলেন বাখ, শুবার্ট, ভিভালদি ও কোরেল্লি।

১৯২৯-এ আইনস্টাইন যখন বেলজিয়াম সফরে এলেন, রানি এলিজাবেথ (সাবেক প্রিন্সেস এলিজাবেথ অব বাভারিয়া) তাঁর সঙ্গে বেহালা বাজানোর জন্য বিজ্ঞানীকে রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন। রানির বেহালাবাদনের সুখ্যাতি ছিল। তিনি নেদারল্যান্ডসে অক্সফোর্ডে বেহালা বাজিয়েছেন। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শরণার্থী সহায়তা তহবিল গড়তে গ্যাবি ক্যাসাডেসাসের সঙ্গে যুগলবন্দী বাজিয়েছেন।

-

১৯৫৫-এর ১৮ এপ্রিল আইনস্টাইনের মৃত্যু হয়। ১৭ ডিসেম্বর ১৯৫৫ প্রিন্সটন সিম্ফনি আইনস্টাইন স্মারক সংগীত বাদনের আয়োজন করে।

আইনস্টাইন বিভিন্ন ধরনের বেহালা বাজিয়েছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে একসময় দেখলেন সহজভাবে বাঁ হাত আর তুলতে পারছেন না, তিনি বেহালা রেখে দিলেন।