বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের (সজীব ওয়াজেদ জয়) একটি অ্যাকাউন্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকা জমা আছে। এই টাকা কোথা থেকে গেছে? এই টাকার উৎস কী? বাংলাদেশের মানুষ তা জানতে চায়।’
শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জোট শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জাতীয় কনভেনশনে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ আজ ভালো নেই। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। অথচ তাদের উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সীমিত আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎখাতে দুর্নীতি ও লুটপাটের অবাধ লাইসেন্স দেয়া হলো। তারপরও ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন আজ অতিষ্ঠ। আজ যে সীমাহীন নির্যাতন ও লুটপাট চলছে বাংলাদেশের মানুষ এর আগে তা কখনো দেখেনি।’
তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে এক মামলার রায় নিয়ে এখন আমাদের দেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কী সে মামলা? এফবিআইয়ের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা) একজন এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিল। সেই মামলার নথিতেই আছে, প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একটি অ্যাকাউন্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ তিনশো মিলিয়ন ডলার জমা আছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ওই অ্যাকাউন্টে এই টাকা কোথা থেকে গেছে? এই টাকার উৎস কী? এভাবে তাদের আরো কতো টাকা আছে, বাংলাদেশের মানুষ তা জানতে চায়?’
এ প্রসঙ্গে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, এই টাকা বাংলাদেশের জনগণের। এভাবে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। এ টাকা ফিরিয়ে আনা দরকার। কিন্তু এ টাকার ব্যাপারে সরকার নীরব।’
খালেদা জিয়া দাবি করে বলেন, ‘তারা এই টাকার কথা ধামাচাপা দিতে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। এছাড়া কারারুদ্ধ (ভারপ্রাপ্ত) সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও এই মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা নাকি প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন!’
তিনি দাবি করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়েই এ ধরনের অভিযোগকে নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে মিথ্যা প্রচারণা, অত্যাচার ও নানা ইস্যু সৃষ্টি করে তারা তাদের অপরাধগুলো ঢেকে রাখতে চায়।জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়। এভাবে দেশ চলতে পারে না।’
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীনদের কোনো গণভিত্তি নেই। জনগণের মধ্যে তাদের কোনো সমর্থন নেই। তাই তারা অন্যের শক্তির ওপর ভর করে দেশের মানুষকে পদানত করে রাখতে চায়। কিন্তু এভাবে বেশিদিন চলা যায় না। আমি মনে করি, বর্তমান শাসকেরাও এইভাবে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশের মানুষের ওপর নির্ভর করুন। দেশের অভ্যন্তরে যে সঙ্কট সৃষ্টি করেছেন তা দেশের ভেতরেই আলাপ-আলোচনার পথে নিরসন করুন। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। আর সময় ক্ষেপণের চেষ্টা করবেন না।’
এদিকে খালেদা জিয়া বিকেল ৪টা ৩৪ মিনিটে কনভেনশনস্থলে এসে উপস্থিত হলে মুহুর্মুহু করতালি ও স্লোগানে স্লোগানে তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান নেতাকর্মীরা। ২০ দলীয় জোটনেত্রীও হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। এর আগে, বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে রওয়ানা হন খালেদা জিয়া।
জাগপার প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় এতে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, ঢাবির শিক্ষক অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, কলামিস্ট সঞ্জীব চৌধুরী, জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপিকা রেহেনা প্রধান, সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
এতে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বাংলাদেশ জাতীয় দল চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ।
২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুব হোসেন প্রমুখ।
সুত্রঃ বাংলামেইল