স্বার্থপর মানুষও হয়ে যাবেন পরোপকারী!

এমন কথা শুনে যে কেও ভাবতে পারেন স্বার্থপর মানুষ আবার কীভাবে পরোপকারী হতে পারে? কিন্তু বিজ্ঞানের বদৌলতে এবার তাই হতে চলেছে। স্বার্থপর মানুষও হয়ে যাবেন রাতারাতি পরোপকারী!
আপনার খুব কাছের কাওকে মনে হতে পারে খুব স্বার্থপর? সে শুধুই নিজের কথা ভাবে, অন্যকাওকে নিয়ে কখনও কোনো চিন্তা-ভাবনা করে না। আপনি হয়তো এমন কথা ভাবেন যদি কোনো ওষুধ খাওয়ানো যেতো তাহলে আপনার সেই স্বার্থপর আপনজন হয়তো পরোপকারী হয়ে যাবে। তবে আপনি যেমনটি চাইছেন, এবার ঠিক তেমনভাবেই বদলে নিতে পারবেন আপনার স্বার্থপর নিকটজনকে! এমন একটি অসাধ্যকে সাধন করতে যাচ্ছেন নিউরো-সায়েন্সের সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, আমরা যেসব কাজ করি, তার লক্ষ্য কিংবা উদ্দেশ্যগুলোকে (মোটিভ) নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের মস্তিষ্কে পৃথক পৃথক এলাকা কিংবা ‘রিজিওন’ রয়েছে। আর কৃত্রিমভাবে সেই এলাকাগুলোর ওপর আমরা খবরদারিও করতে পারি। আমরা চাইলে, সেই এলাকাগুলো দিয়ে আমাদের ইচ্ছেমতো কাজ করিয়ে নিতে পারি। যার প্রকৃত অর্থ হলো, কেওই জীবনভর ‘স্বার্থপর’ কিংবা ‘নিঃস্বার্থ পরোপকারী’ হয়ে থাকতে পারেন না।
আপনি কী জানেন? আমার-আপনার এমন আচার-আচরণ কিংবা স্বভাবগুলোকে, চাইলেই কৃত্রিমভাবে পুরোপুরি বদলে দেওয়া যায়? যাতে একজন চরম ‘স্বার্থপর’ মানুষ অন্যের জন্য হয়ে ওঠতে পারেন দারুণ পরোপকারী! আবার উল্টোটাও সম্ভব!
‘দ্য ব্রেনস’ ফাংশনাল নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার রিভিলস্‌ হিউম্যান মোটিভস্‌’ শীর্ষক ওই গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স’-এর সাম্প্রতিক একটি সংখ্যায়। গবেষক দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো-সায়েন্টিস্ট এবং মনস্তত্ত্ববিদ গ্রিট হেন, আর্নেস্ট ফের ও ইওসুকে মোরিশিমা।
গবেষণাটির অভিনবত্ব সম্পর্কে সহযোগী গবেষক নেদারল্যান্ডসের রাবাউন্ড ইউনিভার্সিটি নিমেজেনের নিউরো-সায়েন্স বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ঊর্মিমালা মিশ্র বলেছেন, ‘দিনভর, মাসভর, বছরভর কিংবা জীবনভর আমরা যেসব কাজকর্ম করে থাকি, সে সবের ‘মোটিভ’গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের কোন এলাকা, তা কীভাবে করে, তা জানা গেলো, এই প্রথমবার। মাথায় রাখবেন, আমরা বেশির ভাগ কাজকর্মই করি আমাদের অজান্তেই। আমরা নিজেরাই আসলে জানি না, বা বুঝি না কাজটা কেনো করছি কিংবা কেনো করবো বলে ঠিক করেছি। যদিও শিশুরা এটা বেশি করে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রবণতা কিছুটা কমে যায়। বৃদ্ধাবস্থায় সেই প্রবণতা আবার বেড়ে যায়। ডায়নামিক কজাল মডেলিং (ডিসিএম) পদ্ধতিতে আমরা মস্তিষ্কের বিভিন্ন এলাকার কাজকর্মের পৃথক পৃথক ধরণ দেখতে পেয়েছি।’
আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের পিছনে যেসব ‘মোটিভ’গুলো থাকে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার এলাকাগুলোকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা তাতে দেখেছি, আমাদের ‘স্বার্থপরতা’ কিংবা ‘নিঃস্বার্থ পরোপকারে’র মতো প্রবণতাগুলো প্রকৃতপক্ষে একেবারেই আপেক্ষিক। কেও যেমন জীবনভর স্বার্থপর থাকেন না, ঠিক তেমনই কেও আবার সারাটা জীবন নিঃস্বার্থে পরোপকার করেন না। দেখা যায় তারা সময় সময় বদলে যান, নিজের অজান্তেই সেই পরিবর্তনটা আরও দ্রুত করে তোলা যায়। শুধু তাই নয়, সেই পরিবর্তনটাকে আরও ঘন ঘন করানো যায়।’ আর তাই কেও যদি আপনাকে ‘চরম স্বার্থপর’ বলে তাহলে এবার প্রতিবাদ করুন! অপরদিকে আমার-আপনার চারপাশে যেসব ‘নিঃস্বার্থ’ মানুষটার গুণগান গাওয়া চলছে, তা পুরোপুরি ঠিক হচ্ছে কি না, এবার একটু ভেবে দেখুন!
কোনো কোনো ‘বোধ’ কাজ করে, এক সহযোগী গবেষক, জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো-সায়েন্টিস্ট মেঘনা শ্রীবাস্তব ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি, আমাদের মস্তিষ্কের দু’টি এলাকা আমাদের কাজকর্মের দু’টি অন্যতম বা প্রধান ‘মোটিভ’কে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমরা অন্যের জন্য কাজ করি হয় সংবেদনশীলতা কিংবা ‘এমপ্যাথি’ হতে, না হলে তা করি ‘রেসিপ্রোসিটি’ হতে। ‘রেসিপ্রোসিটি’ খুব অদ্ভুত একটা জিনিস। এটি প্রকৃতপক্ষে দু’রকমের হয়। আমি আপনার উপকার করবো তবে তার বদলে আমি কী পাবো? এই যে হিসেব কষে কখনও কখনও আমরা কারও উপকার করে থাকি, সেটি এক রকমের ‘রেসিপ্রোসিটি’। এর আরেকটা ধরন রয়েছে। আর তা হলো, ‘উনি আমাকে ওই ভয়ঙ্কর বিপদের সময় এক কথায় অনেকগুলো টাকা কর্য দিয়ে খুব উপকার করেছিলেন। আজ তার ছেলের চাকরির জন্য আমার একটা সুপারিশ করা দরকার। এমনটি ভেবে উপকারটা করে বসলে, সেটাও হয়ে দাঁড়ায় ‘রেসিপ্রোসিটি’।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »