হত্যাকাণ্ডকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না সরকার: উদীচী


সারা দেশে উগ্রপন্থিদের হামলায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় এক প্রতিবাদী সমাবেশ থেকে হত্যাকাণ্ডগুলোকে সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না বলে অভিযোগ করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে ‘আর নয় মৃত্যুর মিছিল/ হত্যা-ধর্ষণ-জঙ্গিবাদের মুলোৎপাটন কর’ স্লোগানে ওই প্রতিবাদী সভা হয়।

ধর্মপ্রচারক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও মুক্তমনা ব্লগারসহ বিভিন্নজনকে একের পর এক হত্যার কয়েকটি ঘটনাকে সরকারের মন্ত্রীরা ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে উদীচী নেতাদের ভাষ্য, ‘হত্যাকাণ্ডগুলো কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন হতে পারে না, সবই পরিকল্পিত।’

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বদিউর রহমান বলেন, “বারবার এ হত্যাকাণ্ডগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে সরকার দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না।”

এসব হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও আক্রমনের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই সংস্কৃতিকর্মী।


উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ শাখার সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান বলেন, “একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে খুনিরা তাদের মহাপরিকল্পনা, নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। সরকার কোনোভাবেই এসবের দায় এড়াতে পারে না।”

দেশব্যাপী চলা এসব হত্যাকাণ্ডের কয়েকটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ ঘটনা বলে মন্তব্য করায় সমাবেশ থেকে তার নিন্দা জানায় উদীচী।

উগ্রপন্থিদের হাতে একের পর এক ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ মধ্যে গত মাসে বান্দরবানের বৌদ্ধ ভিক্ষু মং শৈ উর হত্যাকাণ্ডকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ মন্তব্য করে এর সঙ্গে ‘জঙ্গি’ হামলার মিল দেখছেন না বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, “একের পর এক হত্যাকাণ্ড সরকারের যেন গা সওয়া হয়ে গেছে।

“আমরা সত্যি আর হত্যা-ধর্ষণের রাজত্বে বসবাস করতে চাই না। আমরা নিরাপত্তা চাই, কিন্তু সরকার তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।”

সম্প্রতি চট্টগ্রামে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও এখন নিরাপদ নয় বলে সতর্ক করেন ক্ষুব্ধ এই সংস্কৃতিকর্মী।

উদীচীর এই কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চসহ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর ও বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন সংহতি প্রকাশ করে।

‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ মৌলবাদকে ক্রমশ উসকে দিচ্ছে অভিযোগ এনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন প্রিন্স বলেন, “সরকার মৌলবাদকে পুঁজি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না, কোন আগুন নিয়ে তারা খেলছে।”


ভিন্নমত চর্চাকারী, বা ভিন্ন ধর্ম পালনকারীদের ওপর আক্রমনের ঘটনায় সংক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় উদীচীর সহ সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম বলেন, “কে কখন কোথায় কিভাবে খুন হবে, আমরা তা কেউ জানি না। এ অবস্থায় সরকার কোনোভাবেই মুখ লুকিয়ে রাখতে পারে না।”

ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনামলে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও’ এখন আর তা নেই বলে মন্তব্য করেন সংস্কৃতিকর্মী নিমাই গাঙ্গুলী।

“জঙ্গিরা এখন সরকারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে। আজকে কোনো মন্ত্রী যদি সেক্যুলারিজম নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন, তবে কালই তার লাশ পড়ে যাবে। এভাবে তো চলতে পারে না।”

জঙ্গি ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জঙ্গিদের ব্যাপারে সরকারের কাছে তথ্য আছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাবে না।

“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, দেশের মানুষ শান্তিতে আছে। সরকার যখন সবকিছু জানে, তবে চাপাতির আঘাতে একের পর এক মৃত্যু কেন? আজ আস্তিক-নাস্তিক কেউ রেহাই পাচ্ছে না।”

বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াদ বলেন, “আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রায়ই লাগামহীন বক্তব্য দিয়ে দায় এড়াতে চান। দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় বিপন্ন, এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

“একের পর এক টার্গেট কিলিং তাদের কাছে কোনো বিষয়ই নয়।”

সমাবেশে অন্যদের মধ্য সংস্কৃতিকর্মী অলোক বসু, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বক্তব্য রাখেন,

সমাবেশের শুরুতে ‘লালমনিরহাট থেকে কাপাসিয়া’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী ঝর্ণা সরকার; গণসংগীত পরিবেশন করেন সুরাইয়া পারভীন।
সুত্রঃ বিডি নিউজ


ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক,শেয়ার ও কমেন্ট করে পাশে থাকুন। ঘুরে আসতে পারেন। www.facebook.fom/sobkichu24 www.free.facebook.com/sobkichu24

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »