হজ আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়

লাব্বায়িক, আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক!... উপস্থিত, হে আল্লাহ আমি উপস্থিত- এমন আবেগঘন উচ্চারণেই একজন হজ পালনকারী তার রবের সমীপে নিজেকে নিবেদন করেন। এ অনাবিল আত্মসমর্পণের প্রতিউত্তরে আল্লাহও তাঁর নৈকট্যের দরোজা বান্দার জন্য অবারিত করে দেন। এ ইবাদাত পালনে দৈহিক ও আর্থিক সক্ষমতার শর্ত থাকার কারণে, এর বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা অন্যান্য ইবাদাতের চেয়ে ব্যতিক্রম। জান্নাতই এর একমাত্র বিনিময়।
হজ সর্বোত্তম আমলগুলোর একটি : রাসুল (সা.) হজকে সর্বোত্তম আমলগুলোর তালিকায় স্থান দিয়েছেন; যা প্রমাণ করে যে, হজ কোনো সাধারণ ইবাদাত নয়। হাদিসের ভাষায়- 'রাসুল (সা.) কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ঈমান। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কোনটি? রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহর পথে জেহাদ। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, অতঃপর? জবাবে তিনি বললেন, মাবরুর হজ (যে হজ আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়)।' (বোখারি : ১৫১৯)।
হজ অতীতের পাপরাশি মুছে দেয় : মানুষ নিষ্পাপ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও নানা পারিপার্শ্বিকতার কারণে তার আমলনামা কদর্যতায় ছেয়ে যায়। তবে পরম ক্ষমাশীল আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন সৎকর্মের মাধ্যমে পাপমোচনের ব্যবস্থাও রেখেছেন। হজ তেমনই একটি ইবাদাত, যা মানুষকে নিষ্কলুষ ও পবিত্র হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করে। রাসুল (সা.) বলেন- 'কারও ইসলাম গ্রহণই তার অতীতের পাপগুলো মুছে দেয়। তেমনি হিজরতও (হিজরতকারীর) অতীতের পাপগুলো মুছে দেয় এবং হজও (হজ আদায়কারীর) অতীতের পাপগুলো মুছে দেয়।' (মুসলিম : ৩৩৬)। এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, অন্যায়-অশ্লীলতা ও পাপাচার থেকে মুক্ত থাকা। অর্থাৎ, হজের কার্যাবলি যথাযথভাবে সম্পন্ন করা। হাদিসে নববির বাণী- 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করল এবং অশ্লীলতা ও পাপাচার থেকে বিরত থাকল; সে সেদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে এলো, যে দিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছেন।' (বোখারি : ১৫২১)।
হজ জেহাদের সমতুল্য : জেহাদ নিঃসন্দেহে গুরুত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে দ্বীন ইসলামের একটি উচ্চমার্গীয় বিধান। আর হজও এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, ক্ষেত্রবিশেষে তাকে জেহাদের সমমর্যাদা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও দুর্বলদের জন্য হজ হচ্ছে সর্বোত্তম জেহাদ। হাদিসের ভাষ্য- 'বৃদ্ধ, শিশু, দুর্বল ও নারীদের জেহাদ হচ্ছে- হজ ও ওমরা।' (নাসায়ি : ২৬২৬)।
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এভাবে- 'আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা দেখছি জেহাদ হচ্ছে সর্বোত্তম আমল; সুতরাং আমরা কি জেহাদে অংশগ্রহণ করব না? রাসুল (সা.) বললেন, না! বরং (তোমাদের জন্য) সর্বোত্তম জেহাদ হচ্ছে মাবরুর হজ।' (মুসলিম : ১৫২০)।
হজযাত্রীরা আল্লাহর প্রতিনিধি : যারা আল্লাহপ্রেমের উচ্ছলতায় পৃথিবীর দিক-দিগন্ত থেকে ছুটে যায় কাবার আঙিনায়; আল্লাহ তাদের তাঁর প্রতিনিধির মর্যাদা দান করেছেন। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- 'হজ ও ওমরার যাত্রীরা হচ্ছে আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা যদি আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহ তাদের ডাকে সাড়া দেন। তারা যদি ক্ষমা চায়, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।' (ইবনু মাজাহ : ২৮৯২)।
হজ দারিদ্র্যবিমোচন করে : হজের সঙ্গে আর্থিক কোরবানির বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ ইবাদত ব্যয়সাপেক্ষ বলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে তা মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা হ্রাস পাওয়ার কারণ মনে হতে পারে। কিন্তু রাসুল (সা.) বলেছেন এর সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। যার মর্মার্থ হচ্ছে, হজ করলে মানুষ দরিদ্র তো হয়ই না, বরং অভাব-অনটন থাকলেও তা দূর হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! হাদিসের সাক্ষ্য- 'তোমরা পরপর হজ ও ওমরা আদায় করো। কেননা, তা দারিদ্র্য ও পাপকে সেভাবে দূরীভূত করে- যেভাবে কামারের হাপর লোহা, স্বর্ণ ও রুপার ময়লাকে পরিচ্ছন্ন করে। আর মাবরুর হজের পুরস্কার তো জান্নাত ছাড়া কিছু নয়।' (নাসায়ি : ২৬৩১)।
হজের পুরস্কার জান্নাত : জান্নাতই হচ্ছে মানবজীবনের চূড়ান্ত সফলতার কেন্দ্রবিন্দু। হজ একজন মোমিনকে তুলে দেয় সেই সফলতার স্বপ্নসিঁড়িতে। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? রাসূল (সা.) এর ভাষায়- 'এক ওমরা থেকে অন্য ওমরা- উভয়ের মাঝে সংঘটিত পাপরাশির জন্য কাফফারাস্বরূপ। আর মাবরুর হজের বিনিময় তো জান্নাত ছাড়া কিছু নয়।' (মুসলিম : ৩৩৫৫)।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাতির জনক ইবরাহিম (আ.) কে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছিলেন এভাবে- 'আর মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দাও। তারা দূর-দূরান্ত থেকে তোমার কাছে আসবে পদব্রজে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে।' (সূরা হজ : ২৭)।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »