পরম করুনাময় আল্লাহ্ এর নামে শুরু করলাম
আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালই আছেন, আমি ও আমরা আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহ্র অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছি। তবে আর কথা বাড়িয়ে লাভ কি? বেশি কথা না বাড়িয়ে কাজের কথায় আসি।
————————————————————————————————————————————–
——————————————————————————
মোহর নিয়ে সামাজিক ভ্রান্তিঃ
চলমান সমাজ ব্যবস্থায় মোহর নিয়ে অনেক ভ্রান্তি বিদ্যমান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘মোহর’ কম নির্ধারণের চেষ্টা চলে, কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ মোহরের দোহাই দিয়ে অথবা বেশি নির্ধাণের চেষ্টা পারিবারিক ইমেজ, বংশের মর্যাদা বৃদ্ধির আশায়। অথচ এটা একটি ভুল ও প্রচলিত ভ্রান্তি। বরের সাধ্য ও সঙ্গতি অনুযায়ী উভয়ের কাছে গ্রহনযোগ্য একটা পরিমাণ ‘মোহর’ নির্ধারণ হওয়া উচিত।
অনেক সচ্ছল বর আছেন, যার মুরব্বীরা মোহর নির্ধারণের ক্ষেত্রে মোহরে ফাতেমীর দোহাই দেন এবং বরের সাধ্য ও সক্ষমতার চেয়ে অনেক কম মোহর নির্ধারণ করেন্ এটা সঙ্গত নয়। যদিও কম নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিয়েধাজ্ঞা নেই, তথাপি এক্ষেত্রে নীতিমালা হচ্ছে সঙ্গতি ও সাধ্য অনুযায়ী ‘মোহর’ নির্ধারণ হবে। তা না হয়ে কম হলে পরোক্ষভাবে কনেকে (বধুকে) আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। সে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিতা হয়। অথচ ফিকহের কিতাবাদীতে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ ‘মোহর’ নির্ধারণকে বাধ্যতামূলক বা উৎসাহিত করা হয়নি।
পক্ষান্তরে অযৌক্তিক মাত্রাতিরিক্ত মোহর নির্ধারণের প্রবণতাও দেশের কোন কোন অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়। বর বা ছেলের যা দেয়ার আদৌ সাধ্য নেই, তার উপর একটা অযৌক্তিক মোটা অংকের মোহর চাপিয়ে দেয়া হয়। একজনের মাসিক আয় ৪০০০/- টাকা। বছরের ৪০০০×১২=৪৮০০০/-টাকা। খরচ বাদে তার কাছে বছরে ২০০০/-টাকা সঞ্চিত হয় না। এ রকম এক ছেলের ‘মোহর’ নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা; এটি একটি উদাহরণ। উভয় পক্ষের মাতব্বরগণ মোহর নির্ধারণ করেন। একবারও চিন্তা করেন না যে, ছেলেটির বর্তমান আয় অনুসারে মোটা অংকের মোহর আদায়ের সাধ্য তার আছে কি না? ছেলের সাথে আলাপ করারও প্রয়োজন বোধ করেন না, অথচ ছেলেকে মোহর আবশ্যিকভাবে আদায় করতে হবে।
সুতরাং সামাজিক এই ভ্রান্তি থেকে উত্তোরণ ও পরিত্রাণ দরকার। সমাজের সকল মানুষ বিশেষত; যারা অভিভাবক, তাঁদের আরো সচেতনভাবে ভূমিকা পালন করা দরকার। একই সাথে যারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন, তাদের এ ক্ষেত্রে জাগ্রত ভূমিকা কাম্য। এতে লজ্জার কিছু নেই। অনায়াসে বর বলতে পারে, আমার এত টাকার বেশি ‘মোহর’ দেয়ার সাধ্য নেই। সমাজে এক্ষেত্রে সচেতনতা আসলে এরুপ ভ্রান্তি থেকে মুক্ত হতে পারে।
মোহর আদায় করা স্বামীর উপর ফরযঃ
মোহর এটা স্ত্রীর এমন হক, যা আদায় করা স্বামীর উপর নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাতের মতই ফরয। অনেক পুরুষরাই এটা জানে না।সূরা নিসার ২৪নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
“(পূর্বোক্ত হারাম বিবিগণ ব্যতীত) অন্য সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। এভাবে যে, তোমরা সম্পদের বিনিময়ে(অর্থাৎ মোহর প্রদান করে) তাদেরকে লাভ (বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ) করতে চাইবে। যৌন পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে দৈহিক কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে নয়।আর যে অর্থ বা সম্পদের বিনিময়ে তোমরা তাদের সাথে সঙ্গত হও. তাদেরকে সেই নির্ধারিত বিনিময়(ফরীযা) প্রদান কর।
এ বিষয় ভিত্তিক অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
“তোমরা হৃষ্ট চিত্তে (উপহার স্বরুপ) স্ত্রীদের ‘মোহর’ পরিশোধ কর।”-সূরা নিসাঃ আয়াতঃ৪
কুরআনের বহু আয়াতে “উজুরাহুন্না” শব্দের ব্যবহারের ‘মোহর’ প্রদানের তাকিদ রয়েছ্ েএ প্রেক্ষিতে পকীহগণ শরীয়ত স্ম্মত বিবাহের জন্য ‘মোহর’ প্রদান ফরজ বলে নির্দেশ করেছেন।
এক্ষেত্রে আমাদের সমাজে অনুভব ও বাস্তবায়নের ত্রুটি সুস্পষ্ট। অধিকাংশ লোক গতানুগতিক ধারায় বিষয়টিকে গ্রহণ কবে। সে জন্য অত্যাবশ্যক ও ফরয মনে করে মোহর আদায়ের প্রক্রিয়া সচরাচর দেখা যায় না। ফলে নারী সমাজ স্রষ্টা নির্ধারিত একটি হক থেকে বঞ্চিত থেকে যান।
নববধূর মোহর নগদে পরিশোধ করা সুন্নাতঃ
ইসলামী বিধানে একদিকে স্বামীর আর্থিক সামর্থ, অপরদিকে স্ত্রীর গুণাবলী ও সামাজিক মর্যাদা দৃষ্টে ‘মহর’ নগদ প্রদান করা সুন্নাত। হযরত (সা.) ও তাঁর সাহাবী (রা.) গণ ‘মহর’ আদায় করেছিলেন। হযরত ফাতিমার (রা.) মহর নগদ আদায় করা হয়েছিল, সেই বর্ম বিক্রি কর্।এক আনসারী মহিলার সাথে বিবাহের পর প্রসিদ্ধ সাহাবী আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) যখন হযরত (সা.) সমীপে আসলেন, তো হযরত (সা.) তাঁর কাছে মহরের পরিমাণ জানতে চাইলেন। উত্তরে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ বললেন, খেজুরের একটি গুটি পরিমাণ স্বর্ণখন্ড দিয়েছি।
নগদ মহর প্রদানের তাকীদেই পুর্বোক্ত দরিদ্র সাহাবীকে একটি লোহার আংটিও যদি পাওয়া যায়, খুঁজে আনতে রাসূল (সা.) আদেশ করেছিলেন।
নবুওত লাভের প্রায় ১৫ বৎসর পূর্বে হযরত খাদিজার সাথে হযরত (সা.) এর বিবাহে মহর প্রদত্ত হয়েছিল। সুতরাং মহর নগদ প্রদানই শরীয়তের বিধান।
মহর নগদ পরিশোধের ধারা সমাজে চালু হলে ইত্যকার অনেক সমস্যা, কুসংস্কার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। মাত্রাতিরিক্ত মহর নির্ধারিত করা, মহরনা দেয়ার মনোভাব এবং স্বামী স্ত্রী ও বিবাহ পরবর্তী অমিল বা বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে মহর নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়, তারও অবসান হবে। সর্বোপরি শরীয়তের বিধানের যথাযথ বাস্তবাযন হবে।
মহর প্রদানে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা সুন্নাতঃ
নবী করীম রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, খরচ খরচার বিবেচনার সহজতম বিবাহই সর্বোত্তম্ সুতরাং মহর হবে বরের আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মতকে মধ্যপন্থী উম্মত রুপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কাজেই মহরের বেলাতেও মধ্যপন্থা অবলম্বন করা সুন্নাত। যেমনটি পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত ফাতিমা (রা.) এর মহর ছিল চারশত মিসকাল পরিমাণ রৌপ্য। যে লৌহ বর্ম বিক্রয় করে হযরত আলী (রা.) হযরত ফাতিমার এর মহর দিয়েছিলেন। এর মূল্য পাওয়া গিয়েছিল ৪৮০ দিরহাম্।
উক্ত পরিমাণ মহর মধ্যপন্থা অবলম্বনের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ রুপে বিবেচিত হয়। যা সে যুগের প্রেক্ষিতে পরিমানে একেবারে স্বল্পও নয়, যাতে করে বিয়ে একটি খেলার ব্যাপার এবং কনের সত্ত্বাকে তুচ্ছ বলে মনে হতে পারে।অপর পক্ষে এত অধিকও ছিল না, যা নগদ পরিশোধ করা অসম্ভব বা দুস্কর হয়ে পড়ে।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে দ্বীনের সকল ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর সর্বাধিক প্রিয় হাবীব নবীজী (সা.) এর প্রদর্শিত নূরানী সুন্নাতের উপর আমল করার তৌফিক দান করুন।–আমীন
সাধ্য ও সক্ষমতা থাকলে মোটা অংকের ‘মোহর’ হতে পারেঃ
মোহরের সর্বোচ্চ কোন পরিমাণ নির্ধারিত হয়নি। এটাই ফক্বীহগণের সর্বসম্মত মত অতঃএব সক্ষমতা থাকলে যত অধিক ইচ্ছা মোহর নির্ধারণ করা যায, এর প্রমাণস্বরুপ কুরআন মাজীদের আয়াত পেশ করা হয়। যার অর্থ এই- ‘আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে (অর্থাৎ এক স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তদস্থলে) অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চাও এবং যদি তাকে (পূর্বোক্ত স্ত্রীকে) মোহর স্বরুপ বিপুল পরিমাণ মাল (কিনতার) প্রদান করে থাক, তথাপি তা থেকে সামন্য অংশও ফেরত নিও না। তোমার কি তা অন্যায়ভাবে ও প্রকাশ্য গুনাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে?
কিনতারের অর্থ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। হযরত উমর (রা.) মোহরের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন। উক্ত আয়াতের ভিত্তিতে আপত্তি উঠলে তিনি সে আপত্তি মেনে নেন এবং তার মত পরিবর্তন করেন। ঘটনাটি কিতাবে নিম্নোক্ত ভাষায় বর্ণিত হয়েছে-
হযরত উমর (রা.) মসজিদের মিম্বরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোহর সম্পর্কে বললেন, তোমরা মহিলাদের মোহর নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। ঘটনাটি “হযরত উমর (রা.) এর ১০০ ঘটনা” বইয়ে বর্ণিত হয়েছে।
———————————————————————————————————————————————-
তাহলে আজ এই পর্যন্তই আলোচনা রাখলাম, আবার পরবর্তি পোষ্ট নিয়ে খুব তারাতারিই আপনাদের মাঝে হাজির হব, ততক্ষন আমাদের থাকুন।
ভাল লাগলে কমেন্টে জানাতে ভুলবে না…
ভুলে ভরা জীবনে ভুল হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়,যদি আমার লেখার মাঝে কোন ভুলত্রুটি থাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাই ভাল থাকবেন।
আমাদের ইসলামিক পেজ সবকিছু২ ৪ডট কম