কাফন ও দাফনের নিয়ম।

মানুষ জন্মের সাথে যে চিরসত্য নিয়ে পৃথীবিতে আসে তা হল মৃত্যু।জীবন যাকে দেওয়া হয়েছে তাকে এই স্বাদ নিতে হবেই।স্বয়ং এই দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাও মৃত্যুবরণ করবেন।এই চিরন্তন সত্যটি আমরা জানা সত্ত্বেও এই নিয়ে আমাদের তেমন কোন চিন্তা নেই।আরো আফসোস হল মানুষ মারা যাওয়ার পর কিভাবে তাকে কাফন-দাফন দেওয়া হবে সে সম্পর্কে কিছু মানুষ ছাড়া প্রায় সবাই জানেনা।আবার যারা জানে তারা প্রচুর ভুল করে।আপনি না জানার কারনে তার ভুল ধরতে পারছেননা।অথচ একজন মুসলিম হিসেবে এই সম্পর্কে জানা আবশ্যক।আজ জেনে নিন এ সম্পর্কে।তাহলে আপনার পরিবারের কেউ মারা গেলে কোন হুজুর লাগবেনা আপনি নিজেই সব করতে পারবেন।

কাফন ও দাফনের নিয়মঃ

পুরুষের কাফনের কাপড় ৩টি ও মাহিলার পাঁচটি হওয়া সুন্নাত।
১-ইজারঃ এটা মাথা থেকে পা পর্যন্ত লম্বা হবে।
*****************************
২-চাদরঃ এটা ইজার থেকে ৯ইঞ্ছি লম্বা হবে।
**********************************
৩-জামাঃ এটা গর্দান থেকে পা পর্যন্ত লম্বা হবে।
**************************************
এই হল পুরুষের ৩টি।মহিলাদের এই ৩টির সাথে আরো দুটি আছে।
৪-সীনা বন্দঃ এটা বগল থেকে রান পর্যন্ত হতে হবে।তবে নাভি পর্যন্ত হলেও চলবে।
********************************************
৫-উড়নাঃ এটা তিনহাত লম্বা হবে।
******************************************

পুরুষের কাফন পড়ানোর নিয়মঃ

*কাফনের কাপড়কে ৩/৫/৭ বার আগরবাতি প্রভৃতির ধোঁয়া  দিবে।
*প্রথমে চাদর বিছাবে,তার উপর ইজার,তার উপর জামার নীচের অর্ধাংশ বিছাবে এবং অপর অর্ধাংশ মাথার কাছে গুটিয়ে রাখবে।তারপর মৃত ব্যক্তিকে এই বিছানো কাপড়ের উপর চিত করে শোয়াবে এবং মাথার কাছে জামার গুটানো অংশ মাথার উপর দিয়ে এমনভাবে টেনে আনবে যেন জামার গলার ছিদ্র গলার সাথে লেগে যায়।এরপর গোসলের সময় যে কাপড় ছিল তা বের করবে এবং নাক,কান ও মুখ থেকে তুলা বের করে আনবে।তারপর মাথা ও দাঁড়িতে আতর/যে কোন হালাল খুশবু লাগাবে।তারপর কপাল,নাক,উভয় হাতের তালু,উভয় হাঁটু,উভয় পায়ে কর্পুর লাগাবে।তারপর ইজারের বাম পাশ উঠাবে অতঃপর ডান পাশ উঠাবে এবং ডান পাশ উপরে থাকবে।তারপর চাদরের বাম পাশ অতঃপর ডান পাশ উঠাবে।অতঃপর সুতা বা কাপড় দিয়ে মাথা,পা এবং শরীরের মধ্যখানে বেঁধে দিবে যেন বাতাসে বা নড়াচড়ার কারনে কাফন খুলতে না পারে।

মহিলাদের কাফন পড়ানোর নিয়মঃ

যেহেতু মহিলাদের ৫ কাপড় তাই পুরুষ আর মহিলার কাফন পড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু আলাদা নিয়ম আছে।
* কাফনের কাপড়কে ৩/৫/৭ বার আগরবাতি প্রভৃতির ধোঁয়া  দিবে।
*প্রথমে চাদর বিছাবে,তারপর ইজার,তারপর সীনা বন্দ,তারপর জামার নীচের অর্ধাংশ।তারপর মৃত মহিলাকে কাফনের উপড় চিত করে শোয়াবে।তারপর পুরুষের ওখানে বর্ণিত নিয়মানুযায়ী জামা পড়াবে, এরপর গোসলের সময় যে কাপড় ছিল তা বের করবে এবং নাক,কান ও মুখ থেকে তুলা বের করে আনবে।তারপর খুশবু লাগাবে।অতঃপর মাথার চুল ২ ভাগ করে একভাগ ডানদিকে আরেকভাগ বাম দিকে রাখবে।অতঃপর ওড়না মাথা এবং চুলের উপর রেখে দিবে তারপর সীনা বন্দ বগলের নীচ দিয়ে প্রথমে বাম দিকে পরে ডান দিকে জড়াবে।অতঃপর ইজারের বাম দিক তারপর ডান দিক এমনভাবে উঠাবে যেন ওড়না তার ভিতরে এসে যায়।তারপর চাদর অনুরূপভাবে বাম পাশে তারপর ডান পাশে উঠাবে এবং সবশেষে পূর্বোক্ত নিয়মে তিনস্থান বেঁধে দিবে।

দাফন করার নিয়মঃ

*কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে মৃতব্যক্তিকে সতর্কতার সাথে নামাবে।
*কবরে রাখার সময় নিম্নোক্ত দোয়া পড়া মুস্তাহাব।
بِسْمِ اللهِ وَعَليٰ مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ
অর্থঃ আলাহর নামে,আলাহর রাসুলের ধর্মের উপর তাকে রাখলাম।
*মৃতব্যক্তিকে কেবলামুখী করে ডান কাতে শুইয়ে দেয়া সুন্নাত।চিত করে শুইয়ে শুধু মুখ কেবলামুখী করা যথেষ্ঠ নয়।
*কবরে রাখার পর কাফনে যে গিরা দেয়া হয়েছিল তা খুলে দিবে।
*মহিলাকে কবরে রাখার সময় পর্দা করা মুস্তাহাব।তবে যদি শরীর প্রকাশ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে পর্দা করা ওয়াজিব।
*কাঠ,বাঁশ,পেপার দিয়ে ঢেকে দিবে এবং ফাকাগুলো বন্ধ করে দিবে।
*তারপর মাটি ফেলবে।মাথার দিক থেকে মাটি ফেলা মুস্তাহাব।
*প্রত্যেক ব্যক্তি উভয় হাতে মাটি নিয়ে ৩ বার ফেলবে।প্রথমবার ফেলার সময় مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ (তোমাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে),দ্বিতীয়বার وَ فِيْهَا نُعِيْدُكُمْ (এখানেই তোমাকে ফিরিয়ে আনা হল),তৃতীয়বার وَ مِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً اُخْرٰي (এখান থেকেই তোমাকে পুনরায় বের করা হবে) পড়বে।
*কবরের উপরের দিক এক বিঘত বা তার চেয়ে বেশী পরিমাণ উচু করা মুস্তাহাব।
*মাটি দেয়া শেষ হলে কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দিবে।
দাফন শেষ হলে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন তেলাওয়াত,দোয়া,তাসবীহ পড়া মুস্তাহাব।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »