পাক-নাপাক সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্নোত্তর!

প্রশ্ন

জামা-কাপড়ে নাপাকি লাগলে তা পাক করার সুন্নত তরীকা কী?

অনেক সময় ছোট বাচ্চারা বিছানায় পেশাব করার কিছু সময় পর বিছানা ভেজা থাকা সত্যেও হাত লাগালে হাত ভিজেনা। এই অবস্থায় সেখানে জামা লাগলে কী জামা নাপাক হবে?
আর জামা নাপাক হওয়ার জন্যে কী নির্দিষ্ট পরিমানের বেশী নাপাকী লাগা শর্ত, নাকি সামান্য পরিমান নাপাকী লাগলেই জামা নাপাক হয়ে যাবে?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم
জামা কাপড়ে নাপাক লাগলে তা দূরিভূত করার দ্বারা উক্ত কাপড় পবিত্র হয়ে যায়। দূরিভূত করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, যদি নাপাকটি শুকিয়ে যায়, এবং তা দেখা যায়, তাহলে তা রগরে একদম উঠিয়ে ফেললেই কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে। যদি রগরে উঠানো না যায়, তাহলে উক্ত নাপাক দূর করার দ্বারা উক্ত কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কোন সংখ্যার শর্ত নেই। নাপাকটি দূরিভূত হয়ে যাওয়া শর্ত।
তবে যদি নাপাক দেখা না যায়, বরং তা কাপড়ের সাথে মিশে গিয়ে থাকে, কিংবা কোথায় লেগেছে তা জানা না যায়, তাহলে পুরো কাপড় ভাল করে তিনবার ধৌত করা এবং প্রতিবার ভাল করে নিংড়ানো দ্বারা কাপড়টি পবিত্র হয়ে যাবে।
وَإِزَالَتُهَا إنْ كَانَتْ مَرْئِيَّةً بِإِزَالَةِ عَيْنِهَا وَأَثَرِهَا إنْ كَانَتْ شَيْئًا يَزُولُ أَثَرُهُ وَلَا يُعْتَبَرُ فِيهِ الْعَدَدُ. كَذَا فِي الْمُحِيطِ فَلَوْ زَالَتْ عَيْنُهَا بِمَرَّةٍ اكْتَفَى بِهَا وَلَوْ لَمْ تَزُلْ بِثَلَاثَةٍ تُغْسَلُ إلَى أَنْ تَزُولَ، كَذَا فِي السِّرَاجِيَّةِ. . . . . وَإِنْ كَانَتْ غَيْرَ مَرْئِيَّةٍ يَغْسِلُهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. كَذَا فِي الْمُحِيطِ وَيُشْتَرَطُ الْعَصْرُ فِي كُلِّ مَرَّةٍ فِيمَا يَنْعَصِرُ وَيُبَالِغُ فِي الْمَرَّةِ الثَّالِثَةِ حَتَّى لَوْ عَصَرَ بَعْدَهُ لَا يَسِيلُ مِنْهُ الْمَاءُ وَيُعْتَبَرُ فِي كُلِّ شَخْصٍ قُوَّتُهُ وَفِي غَيْرِ رِوَايَةِ الْأُصُولِ يَكْتَفِي بِالْعَصْرِ مَرَّةً وَهُوَ أَرْفَقُ. كَذَا فِي الْكَافِي وَفِي النَّوَازِلِ وَعَلَيْهِ الْفَتْوَى. كَذَا فِي التَّتَارْخَانِيَّة وَالْأَوَّلُ أَحْوَطُ. هَكَذَا فِي الْمُحِيطِ. (الفتاوى الهندية، كتاب الطهارة، الْبَابُ السَّابِعُ فِي النَّجَاسَةِ وَأَحْكَامِهَا وَفِيهِ ثَلَاثَةُ فُصُولٍ، الْفَصْلُ الْأَوَّلُ فِي تَطْهِيرِ الْأَنْجَاسِ-1/42)
কাপড়ে নাপাক লাগার পর যদি উক্ত নাপাক শুকিয়ে যায়, তাহলে উক্ত স্থানে হাত বা কাপড় লাগলে তা নাপাক হবে না। শুকানোর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নাপাক লেগে শুকিয়ে যাওয়া কাপড় নিংড়ালে কোন কিছু বের হয় না। অর্থাৎ কোন কিছুতে তা লাগলে নাপাকের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় না। তাহলে যে কাপড় শুকিয়ে যাওয়া নাপাকে লেগেছে সে কাপড় ও স্থান নাপাক হয় না। সুতরাং পেশাব শুকিয়ে গেলে উক্ত স্থানে হাত লাগার দ্বারা হাতে নাপাকীর চিহ্ন না দেখা যায়, তাহলে হাত বা কাপড় নাপাক হবে না।
وَإِذَا جَعَلَ السِّرْقِينَ فِي الطِّينِ فَطَيَّنَ بِهِ السَّقْفَ فَيَبِسَ فَوَضَعَ عَلَيْهِ مِنْدِيلٌ مَبْلُولٌ لَا يَتَنَجَّسُ (الفتاوى الهندية، كتاب الطهارة، الْفَصْلُ الثَّانِي فِي الْأَعْيَانِ النَّجِسَةِ-1/47، وكذا فى حلبى كبير-1/153)
যে নাপাক দেখা যায়, সে নাপাক এক দিরহাম পরিমাণ হলে কাপড় পাক থাকে, উক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়া শুদ্ধ আছে। তবে যদি এক দিরহাম থেকে অধিক হয়, তাহলে উক্ত কাপড়সহ নামায পড়া শুদ্ধ হয় না।
عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : تعاد الصلاة من قدر الدرهم من الدم (سنن الدر قطنى، كتاب الصلاة، باب قدر النجاسة التي تبطل الصلاة، رقم الحديث-1)
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-এক দিরহাম পরিণাম রক্তের দরুন নামাযকে পুনরায় আদায় কর। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩৮৯৬, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-১০৭৮৩, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাকী, হাদীস নং-১৩২৩, আল জামেউল কাবীর, হাদীস নং-২৩৮}
এ হাদীসটি দুর্বল। কিন্তু যেহেতু এ বিষয়ে এ হাদীসটিই পাওয়া যায়, এর বিপরীত কোন হাদীস বর্ণিত নেই। তাই এর উপর আমল করা হয়। সেই সাথে এমন কম নাজাসাত থেকে সাধারণত বেঁচে থাকা কষ্ট সাধ্য ব্যাপার তাই এ সহ নামায জায়েজ হওয়ার বিষয়টি যুক্তিগ্রাহ্য বিষয়ও। এছাড়া সাহাবাদের থেকে বর্ণিত রয়েছে যে,
فلما ذكره صاحب الأسرار عن علي وبن مسعود أنهما قدرا النجاسة بالدرهم وكفى بهما حجة في الاقتداء وروي عن عمر أيضا أنه قدره بظفره (عمدة القارى شرح صحيح البخارى، كتاب الوضوء، باب غسل الدم، رقم الحديث-227،3/140)
হযরত আলী রাঃ এবং ইবনে মাসউদ রাঃ [কাপড়] নাপাক হওয়ার পরিমাণ নির্দিষ্ট করেছেন এক দিরহাম। আর আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ নির্ধারণ করেছেন নখ পরিমাণ। {উমদাতুল কারী-৩/১৪০, আদিল্লাতুল হানাফিয়্যাহ-১০১}
والله اعلم بالصواب

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »