কোরবানি কাকে বলে।এর হুকুম কি?এর ইতিহাস কি?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,
আসসালামু আলাইকুম,
সবাই ভাল আছেন আশা করি।আজ কোরবানি কাকে বলে? এর হুকুম কি? এর ইতিহাস সম্পর্কে লেখব যদি আল্লাহ ক্ষমতা দেন।
রাসূল (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা আজহার দিনকে এ উম্মতের জন্য মনোনীত করে এতে ঈদ প্রবর্তনের জন্য আমাকে আদেশ করছেন।’ যে বিষয়গুলো ঈদুল আজহাকে স্বার্থক ও আলোকোজ্জ্বল করেছে তার মধ্যে কোরবানি অন্যতম বিধান।
কোরবানি কি?
কোরবানি এটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলঃ
১,নৈকট্য অর্জন করা
২,কাছে আসা
৩, পুন্য
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়,
যে কাজের মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন করা যায় তাকে কোরবানি বলা হয়।
কোরবানির অপর নাম হলঃ اُضْحِيَّة যার অর্থ হলঃ
১,জবাই করা
২, উৎসর্গ করা
৩, শিকার করা
৪, পাকড়াও করা
৫, নৈকট্য অর্জন করা
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়,
هِيَ ذَبْحُ حَيَوَانٍٍِ مَّخْصُوْصٍِ فِيْ وَقْتٍِ مَّخْصُوْصٍٍٍِ بِطَرِقٍِ مَخْصُوصٍِ
নির্দিষ্ট সময়ে,নির্দিষ্ট পন্থায়,নির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে  اُضْحِيَّة     বলে। (ফাতওয়ায়ে শামি)
কোরবানি উম্মতে মুহাম্মদির জন্য কোনো বিশেষ প্রথা বা অভিনব হুকুম নয়। পুর্ববর্তি উম্মতদের উপরও ছিল। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
وَلِكُلِّ أُمَّةٍۢ جَعَلْنَا مَنسَكًۭا لِّيَذْكُرُوا۟ ٱسْمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلْأَنْعَـٰمِ ۗ فَإِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌۭ وَ‌ٰحِدٌۭ فَلَهُۥٓ أَسْلِمُوا۟ ۗ وَبَشِّرِ ٱلْمُخْبِتِينَ
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও। [হাজ্জ,৩৪]

কোরবানির হুকুম কি ? ওয়াজিব না সুন্নত ? এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের মাঝে দুটো মত রয়েছে।

প্রথম মত : কোরবানি ওয়াজিব।
ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানীফা রহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন।
(এক) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন :
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنْحَرْ
‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’ [কাওসার,২]
আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।
(দুই)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ، وَلَمْ يُضَحِّ، فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا»
রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।[মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজা- ৩১২৩ হাদিসটি হাসান]
যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্ক-বাণী। তাই কোরবানি ওয়াজিব।

(তিন) রাসূলে কারীম স. বলেছেন
: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِي كُلِّ عَامٍ أُضْحِيّة
: হে মানব সকল ! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি দেয়া। [মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজা- ৩১২৫ হাদিসটি হাসান]
দ্বিতীয় মত : কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।
এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। এবং ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রহ.-এর প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন : সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ।
যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কোরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কোরবানি হল ইসলামের একটি মহান নিদর্শন।
যারা কোরবানি সুন্নত বলেন তাদের দলিল :

(এক) রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :
إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ وَعِنْدَهُ أُضْحِيَّةٌ يُرِيدُ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلَا يَأْخُذَنَّ شَعْرًا، وَلَا يَقْلِمَنَّ ظُفُرًا
‘তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করতে চায়, যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কোরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নখ না কাটে।[ মুসলিম- ১৯৭৭]
এ হাদিসে রাসূল স.-এর ‘যে কোরবানি করতে চায়’ কথা দ্বারা বুঝে আসে এটা ওয়াজিব নয়।
(দুই) রাসূল স. তার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছেন। তার এ কাজ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে কোরবানি ওয়াজিব নয়।
শাইখ ইবনে উসাইমীন রহ. উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন: এ সকল দলিল-প্রমাণ পরস্পর বিরোধী নয় বরং একটা অন্যটার সম্পূরক। সারকথা হল যারা কোরবানিকে ওয়াজিব বলেছেন তাদের প্রমাণাদি অধিকতর শক্তিশালী। আর ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মত এটাই।
কোরবানির ইতিহাসঃ
কোরবানির বিষয়টি মানব ইতিহাসের মতো অতি প্রাচীন। হজরত আদম আঃএর পুত্রদ্বয় হাবিল-কাবিলের মাধ্যমে সর্বপ্রথম কোরবানির সূচনা হয়। সে সময় কোরবানির নিয়ম ছিল অন্য রকম। ভেড়া, দুম্বা,শস্য বা গম ইত্যাদি কোরবানির জন্য আল্লাহর দরকারে পেশ করা হতো। যার কোরবানি কবুল হতো আল্লাহর হুকুমে আকাশ হতে আগুন এসে তা ভস্মীভূত করে দিতো। আর যারটা কবুল হতো না তারটা পড়ে থাকত। হজরত নূহ আঃ, হজরত ইয়াকুব আঃ, হজরত মূসা আঃ-এর সময়েও কোরবানির প্রচলন ছিল। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে মুসলিম জাতির জনক হজরত ইব্রাহিম আঃ আল্লাহর প্রেমে প্রিয় পুত্রকে কোরবানি করার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক অবিস্মরণীয় সোনালি ইতিহাস সৃষ্টি করে গিয়েছেন।
হজরত ইব্রাহিম আঃ-এর প্রিয় বস্তু কোরবানিঃ
হজরত ইব্রাহিম আঃ স্বপ্নযোগে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি দেয়ার জন্য আদিষ্ট হন। এ জন্য তিনি তিন দিনে শত শত উট কোরবানি করলেন কিন্তু তা আল্লাহর দরবারে কবুল হলো না। বারবারই স্বপ্নযোগে আদেশ করা হলো, ‘তোমার প্রিয়বস্তু কোরবানি করো।’ হজরত ইব্রাহিম আঃ বুঝতে পারলেন, বৃদ্ধ বয়সে প্রাপ্ত একমাত্র প্রাণাধিক প্রিয় সন্তান এবং হজরত হাজেরার নির্বাসিত হয়ে বহু কষ্টে লালিত নয়নের মণি হজরত ইসমাইল আঃ সেই প্রিয় বস্তু।আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে হজরত ইব্রাহিম আঃ ও মা হাজেরা কোরবানির জন্য কলিজার টুকরা পুত্রকে সাজিয়ে নিলেন। কিশোর ইসমাইল আঃ নিজের জানকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দিয়ে আত্মত্যাগের বিস্ময়কর ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। পবিত্র কুরআনে ওই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। ‘হজরত ইব্রাহিম আঃ বললেন, বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে,আমি তোমাকে জবেহ করছি, এখন তোমার অভিমত কী? বলো। তিনি বললেন, আব্বাজান! আপনি যে বিষয়ে আল্লাহর তরফ থেকে আদিষ্ট হয়েছেন, তা পূর্ণ করুন। ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। যখন তারা উভয়ে আত্মসমর্পণ করলেন এবং পিতা কাত করে পুত্রকে শোয়ালেন, তখন আমি তাকে ডাকলাম, হে ইব্রাহিম! নিশ্চয়ই আপনি স্বপ্নকে সত্য পরিণত করে দেখিয়েছেন। আমি বিশিষ্ট বান্দাদের এরূপ পুরস্কার প্রদান করে থাকি। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল বড় পরীক্ষা। আর ইসমাইল আঃ-এর পরিবর্তে একটি শ্রেষ্ঠ জবেহর পশু দান করলাম।’ (সূরা সাফফাত, আয়াত ১০২ থেকে ১০৭)।
আল্লাহু আকবার তাকবিরঃ হজরত ইব্রাহিম আঃ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কলিজার টুকরা পুত্রের গলায় যখন ছুরি চালান, তখন হজরত জিব্রাইল আঃ আল্লাহর নির্দেশে বেহেশত থেকে একটা দুম্বা নিয়ে রওনা হলেন। তাঁর মনে ভয় ছিল না জানি পৃথিবীতে পৌঁছার আগেই ইব্রাহিম আঃ জবেহ কাজ শেষ করে দেন! আর এ জন্যই জিব্রাইল আঃ আকাশ থেকে উচ্চস্বরে ধ্বনি দিতে থাকেন ‘আল্লাহু আকবার’।এমন মধুর ধ্বনি শুনে হজরত ইব্রাহিম আঃ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন ।‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’।  হজরত ইসমাইল আঃ পিতার মুখে তাওহিদের বাণী শুনতে পেয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’ হজরত জিব্রাইল আঃ এবং দুই নবীর কালামগুলো আল্লাহর কাছে এতই পছন্দনীয় হলো যে, কিয়ামত পর্যন্ত ঈদুল আজহার দিনগুলোতে বিশ্ব মুসলিমের কণ্ঠে ওই কালামগুলো উচ্চারিত হতে থাকবে।
সুন্নতে ইব্রাহিমঃ আল্লাহর প্রেমিক হজরত ইব্রাহিম আঃ এর ধারালো ছুরি হজরত ইসমাইল আঃ-এর একটি পশমও কাটতে পারেনি। তার পরিবর্তে আল্লাহর হুকুমে জিব্রাইল আঃ বেহেশত থেকে জান্নাতি দুম্বা এনে দিলে তিনি তা কোরবানি করেন। হজরত ইব্রাহিম আঃ প্রাণ প্রিয় পুত্রকে কোরবানি দেয়ার কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহর প্রেমের গভীরতা কত তাই প্রমাণ করেছেন। তাই অনন্তকাল ধরে কোরবানির এ মডেল সুন্নতে ইব্রাহিম হিসেবে বিশ্বের সব মুসলমানের কাছে আজ স্মরণীয়, বরণীয় এবং অবশ্য পালনীয় হয়ে আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
সাহাবাদের কোরবানি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সা.) বলেছিলেন,¬ ‘সুন্নাতা আবিকুম ইবরাহিম’ অর্থাৎ এটা তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম আঃ-এর প্রতিষ্ঠিত আদর্শ (ইবনে মাজাহ)।
হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কোরবানি মূলত মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে একটি মহান পরীক্ষাস্বরূপ ছিল।                                                                                                                            পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে,¬
إِنَّ هَـٰذَا لَهُوَ ٱلْبَلَـٰٓؤُا۟ ٱلْمُبِينُ
নিশ্চয়ই এটা ছিল সুস্পষ্ট পরীক্ষা’ (সূরা সাফফাত-আয়াত-১০৬)।
পবিত্র কুরআনের সূরা আস সাফফাত, ৯৯ থেকে ১১৩ নম্বর আয়াতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কোরবানি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। একান্ত প্রার্থনায় ৮৬ বছর বয়সে হজরত ইবরাহিম (আ. পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে লাভ করেন। তাফসিরে মাজহারির বর্ণনা মতে, হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর বয়স যখন ১৩ বছর (মাত্র বালেগ), তখন পিতা ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে দেখেন, তিনি প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাঈল-কে (আ.) জবাই করছেন। (কোনো কোনো তাফসিরে বর্ণিত আছে¬, এ স্বপ্ন হজরত ইবরাহিমকে (আ.) তিনবার দেখানো হয়)। আম্বিয়া কেরামের স্বপ্ন যেহেতু ওহি হিসেবে গণ্য, তাই তিনি ৯৯ বছর বয়সে প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর সম্মতিক্রমে আল্লাহর আদেশ পালনার্থে প্রস্তুত হন। কিন্তু শয়তান পিতা-পুত্রের সে সাধনায় বাদ সাধে। মহামহিম আল্লহতায়ালার সে অগ্নিপরীক্ষায় পিতা ইবরাহিম (আ.) ও পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর আত্মত্যাগ যেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, শয়তান সে লক্ষ্যে তিন তিনবার ধোঁকা দেয়। প্রতিবারেই পিতা-পুত্র পর্বতসম ঈমানী চেতনা নিয়ে সে চক্রান্ত প্রতিহত করেন। ২১টি প্রস্তর নিক্ষেপে শয়তানকে নিরাশ করে তারা সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। (এ জন্যই হাজিরা মিনায় শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করেন।) তাদের উভয়ের প্রতি আল্লাহ খুশি হয়ে পুত্র ইসমাঈলের পরিবর্তে ফেরেস্তাদের দ্বারা আনীত পশু কোরবানির ব্যবস্থা করেন।
উম্মতে মুহাম্মদির কোরবানি হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কোরবানিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর গোটা জীবন ছিল কোরবানি তথা অতুলনীয় আত্মোৎসর্গ ও আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল। প্রিয় পুত্র ইসমাঈলকে কোরবানি করা ছিল ইবরাহিমি জীবনের অসংখ্য কোরবানির চরম ও শ্রেষ্ঠতম ঘটনা।
‘কোরবানি’ ও ‘ইসলাম’ উভয়‌ আনুগত্য, আত্মসমর্পণ, আত্মত্যাগ ও উৎসর্গীকরণের অর্থ বোঝায়। তাই পবিত্র কুরআনে ইবরাহিমি কোরবানির এ মহান আদর্শ ‘ইসলাম’ শব্দের মাধ্যমে প্রকাশিত। এরশাদ হয়েছে :                     إِذْ قَالَ لَهُۥ رَبُّهُۥٓ أَسْلِمْ ۖ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
অর্থাৎ তার প্রতিপালক যখন তাকে (ইবরাহিমকে) বলছিলেন আত্মসমর্পণ করো, তিনি বললেন, বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম(সূরা বাকারাহ, আয়াত-১৩১)।                                    এই আয়াত প্রমাণ করে যে, ইবরাহিমি মিল্লাতের মৌলিক নীতি ও স্বরূপ ‘ইসলাম’ শব্দের মধ্যেই নিহিত। (মা’রেফুল কুরআন, মাওলানা মহিউদ্দীন খান অনূদিত পৃষ্ঠা ৬৭)                                                   শুধু তাই নয়, হজরত ইবরাহিম (আ.)আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলেন¬
رَبَّنَا وَٱجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةًۭ مُّسْلِمَةًۭ لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَآ ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ
‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে (ইবরাহিম ও ইসমাঈল) মুসলিম (আনুগত্যশীল) করো এবং আমাদের বংশধর থেকেও একদলকে আনুগত্যকারী করো।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১২৮)।
উম্মতে মুহাম্মদি তথা মুসলমান তারই দোয়ার ফসল। আগেই তিনি এ জাতির নাম মুসলমান রেখেছিলেন।                                                                                                                            এরশাদ হয়েছে,
مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَ‌ٰهِيمَ ۚ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلْمُسْلِمِينَ
এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিম আ.-এর ধর্ম। তিনিই ইতঃপূর্বে তোমাদের ‘মুসলমান’ নামকরণ করেছেন এবং এতেও (কুরআনে) এ নাম রাখা হয়েছে (সূরা হজ, আয়াত-৭৮)।
ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনাদর্শে মুগ্ধ হয়ে মহান আল্লাহতায়ালা উম্মতে মুহাম্মদিকে তাঁর আদর্শের প্রতি দীক্ষিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।                                                                                                       এরশাদ হয়েছে,
قُلْ صَدَقَ ٱللَّهُ ۗ فَٱتَّبِعُوا۟ مِلَّةَ إِبْرَ‌ٰهِيمَ حَنِيفًۭا وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ
‘বলো আল্লাহ সত্য বলেছেন, অতঃপর একনিষ্ঠভাবে ইবরাহিমী মিল্লাত অনুসরণ করো’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত-৯৫।
সূরা মুমতাহিনায় এরশাদ হয়েছে ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য হজরত ইবরাহিমের মধ্যে উৎকৃষ্ট আদর্শ বিদ্যমান রয়েছে’ (আয়াত-৪)

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »