হিজরী চল্লিশ সন হলো সুন্নাতের অনাবিল বিশুদ্ধতা এবং এর মধ্যে মিথ্যার অনুপ্রবেশ ও জাল হাদীস রচনার একটি চিহ্নিত সীমারেখা। এরপর সুন্নতে চললো সংযোজন; সুন্নতকে করা হলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের হাতিয়ার এবং অভ্যন্তরীন বিচ্ছিন্নতাবাদের মাধ্যম। অর্থাৎ হিজরী চল্লিশ সন পর্যন্ত সুন্নত ছিল পবিত্র। তারপর এ দুর্ঘটনাটি ঘটল তখন, যখন হযরত আলী ( রাঃ ) ও হযরত মুয়াবিয়া ( রাঃ ) এর মধ্যকার বিরোধ যুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করলো। রক্ত ক্ষয় হলো প্রচুর, অনেক লোক প্রাণ হারালো, মুসলমানরা হয়ে পড়লো বিভক্ত বিভিন্ন দলে। বেশিরভাগ লোকই ছিলো হযরত আলী ( রাঃ ) এর পক্ষে মুয়াবিয়া ( রাঃ ) এর বিপক্ষে। তারপর উদ্ভব হলো খারিজীদের। তারা প্রথমে ছিল হযরত আলী ( রাঃ ) এর একান্ত সমর্থক। তারপর তারা তাকে বর্জন করলো এবং দোষারোপ করতে থাকলো হযরত আলী ( রাঃ ) ও মুয়াবিয়া ( রাঃ ) উভয়কে। হযরত আলী ( রাঃ ) এর শাহাদাৎ এবং ও মুয়াবিয়া ( রাঃ ) এর খিলাফত গ্রহণের পর আল-ই-বায়ত খিলাফত তাদের প্রাপ্য বলে দাবী করতে থাকলো। তারা উমাইয়্যা বংশের আনুগত্য স্বীকার করলো না। এ রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে মুসলমানগণ বহু বড় বড় ও ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পড়লো। প্রতিটি দলই নিজ নিজ দলের পক্ষে কুর’আন ও হাদীসকে দাঁড় করাতে চেষ্টা করতে লাগলো।
এটা অতীব সত্য কথা যে , প্রতিটি দল যা দাবী করবে , তার অনুকূলে কুর’আন ও সুন্নত থাকবে না। সুতরাং কোন কোন দল কুর’আনের অর্থকে বাদ দিয়ে বিরূপ বা বিকৃত ব্যাখ্যা শুরু করে দিল। আর সুন্নত যে অর্থ বহন করে , তা গ্রহণ না করে অপর অর্থ গ্রহণ করতে লাগলো। তাদের মধ্যে এমনও কোন কোন দল ছিল , যারা তাদের দলীয় সমর্থনে রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর নামে হাদীস বর্ণনা শুরু করলো। তাদের পক্ষে অতি কঠিন ঠেকলো কুর’আনের বেলায় অনুরূপ কিছু করার ; কারণ কুর’আন অতি সুরক্ষিত। মুসলমানদের বক্ষে বক্ষে কুর’আন , মুখে মুখে তিলাওয়াত। এখান থেকেই শুরু হলো জাল হাদীস রচনার আর বিশুদ্ধ হাদীসের সাথে জাল হাদীসের সংমিশ্রণ।
জাল হাদীস রচনাকারীরা প্রথমে যে গুপ্ত পথ রচনা করল , তা হলো বিভিন্ন ব্যক্তির ফযীলত সম্পর্কে । তাদের ইমাম ও দল- উপদলের শীর্ষস্থানীয় লোকদের ফযীলত সম্পর্কে তার বহু জাল হাদীস রচনা করলো । বলা হয়ে থাকে ‘ শিয়ারাই প্রথমে এর সূত্রপাত করলো। ’ ইবনে আবদুল হাদীদ ‘ শরহে নাহজুল বালাগাহ তে অনুরূপ কথা লিখেছেন—“ তোমরা জেনে রেখ , ফযীলত সম্পর্কে যত মিথ্যা হাদীস রচিত হয়েছে , এর মূল হলো শিয়াগণ ।”
ইরাক হলো জাল হাদীস রচনার আড্ডাখানা । হাদীসের ইমামগণও এর প্রতি ইংগিত করেছেন । ইমাম যুহরী ( রঃ ) বলেছেনঃ
“ আমাদের নিকট হতে হাদীস বের হয়ে যেত এক বিঘত তারপর ইরাক হতে ফিরে আসত আমাদের নিকট এক হাত হয়ে ।”
ইমাম মালেক ( রঃ ) বলতেন “ ইরাক হলো জাল হাদীসের টাকশাল । ”