জীবনে আমি নিজের যেই আচরণের কারণে অনেক বেশি করে আফসোস করেছি, তার মধ্যে রাগ জিনিসটা একদম উপরের দিকে অবস্থান করে। জীবনের বিশাল একটা সময় রাগ হলে অসহায় হয়ে যেতাম, আমি চাইনা এমন কাজগুলো ধুম করে করে বসতাম, আর ফলাফলগুলোকে সামলাতে সামলাতে ভালো সময় পার হয়ে যেতো। রাগ করে এমন আচরণ হয়ে যায় যে — প্রিয়জন/বন্ধুদের সাথে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। অনেকে সহজেই আরো যা করেন তা হলো গ্লাস ভাঙ্গা, খাতা ছিঁড়ে ফেলা, কলম জানালা দিয়ে ফেলে দেয়া, মোবাইল ফোন ছুঁড়ে ফেলা এবং আরো কত কী!
নুমান আলী খানের “controlling anger” নামের আলোচনাটা দেখার পর আমার চিন্তা অনেক বদলে গিয়েছে। রাগ হলে এখন ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে পারি, নিজের আয়ত্বে থাকতে পারি অনেকটাই। সবচাইতে বড় কথা, বুকে যন্ত্রণার উপশম হয়ে যায় সহজেই। আলোচনা করতে গিয়ে তিনি পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা আশ-শুরার ৩৬-৪০ নাম্বার আয়াত উল্লেখ করেছেন।
নুমান আলী খানের “controlling anger” নামের আলোচনাটা দেখার পর আমার চিন্তা অনেক বদলে গিয়েছে। রাগ হলে এখন ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে পারি, নিজের আয়ত্বে থাকতে পারি অনেকটাই। সবচাইতে বড় কথা, বুকে যন্ত্রণার উপশম হয়ে যায় সহজেই। আলোচনা করতে গিয়ে তিনি পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা আশ-শুরার ৩৬-৪০ নাম্বার আয়াত উল্লেখ করেছেন।
“অতএব, তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগ মাত্র” [১] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, দুনিয়ার জীবনে আমাদের তিনি যা দিয়েছেন তা কেবল ভোগের উপকরণ। এখানে আল্লাহ “মাতা’আ” শব্দটি উল্লেখ করেছেন, আরবিতে যার অর্থ বোঝায় এমন একটা উপকরণ যা আমার আছে, কিন্তু সেইটা উপভোগ করতে পারায় আমি বিশেষ আনন্দ পাইনা। যেমন একটা ব্রাশ। ব্রাশ হাতে নিয়ে আমি এমন অনুভব করিনা যে আমার ব্রাশটা দারুণ। কারণ এর উপযোগিতা অল্প সময়ের জন্যই।
“আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী” [২] — আল্লাহ উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। অর্থাৎ আমাদের এই ক্ষণস্থায়ী উপকরণসমূহ, যা পৃথিবীতে তিনি দিয়েছেন, তার চাইতে আল্লাহর কাছে যা আছে/ তিনি যা রেখেছেন আমাদের জন্য তা অনেক উন্নতমানের এবং তা স্থায়ী। এখানে তিনি উল্লেখ করেছেন “আবকা” শব্দটি, যা কোনকিছুর তুলনামূলক দীর্ঘস্থায়িত্ব বুঝায়। আমাদের পৃথিবীর আনন্দের জিনিসগুলো কিছুই বেশিদিন থাকে না। যেমন সুন্দর একটা মার্সিডিজ বেঞ্জ হোক, গুলশানের একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি হোক, আমার নতুন আইফোন হোক — সবই একসময় ক্ষয় হয়, চাকচিক্য-উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর কাছে যা আছে, সেগুলো শেষ হয়ে যাবে না, বরং সেগুলো স্থায়ী।
কিন্তু সেই জিনিসগুলো কারা পাবে? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা জানিয়ে দিয়েছেনঃ “তাদের জন্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে। যারা বড় গোনাহ ও অশ্লীল কার্য থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধাম্বিত হয়েও ক্ষমা করে” [৩] যারা আসলেই বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে যে পৃথিবীর এইসব চাকচিক্যময় ভোগের উপকরণের চাইতে আল্লাহর কাছে যা আছে তা অনেক স্থায়ী আর উন্নতমানের। আর সেই দৃঢ় বিশ্বাসের ফলে যারা জীবনে যারা পথ চলতে পারে। আল্লাহ এই প্রসঙ্গে কিছু গুণাবলীর কথা উল্লেখ করেছেন যা বিশ্বাসীদের থাকতে হবে।
— বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
— অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকা
— ক্রোধান্বিত হয়েও ক্ষমা করা
— অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকা
— ক্রোধান্বিত হয়েও ক্ষমা করা
আমরা যদি আল্লাহর কাছে থাকা দীর্ঘস্থায়ী আর উন্নত আনন্দের উপকরণগুলো চাই, তাহলে আমাদের বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এমন নয় যে, বড় গুনাহ করতে করতে ছোট গুনাহ নিয়ে আলোচনা করবো। বরং এখানে প্রায়োরিটি হিসেব করতে হবে, বড় গুনাহগুলো থেকে দূরে চলে যেতে হবে। অশ্লীল কাজ থেকে দূরে চলে আসতে হবে। আমার হয়ত এখন আজেবাজে কিছু দেখতে ইচ্ছে করতে পারে, কিন্তু সেই ইচ্ছাটাকে দমন করতে হবে। যদি অনুমুতি নেই এমন কারো সাথে কথা বলতে/যোগাযোগ করতে ইচ্ছে করে, সে ইচ্ছেটাকে দমন করতে হবে। হয়ত আমাদের কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে, যেখানে গেলে অশ্লীল সময়ে, বিষয়ে সময় কাটবে — সেটাকে দমন করতে হবে। আর এই দমন করতে গিয়ে যেই যুদ্ধ নিজের সাথে সেটাই আমাদের পার্থিব যোগ্যতাকেও বাড়িয়ে দেবে, ফলে আমাদের আত্মার শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
এরপর আল্লাহ বলেছেন, রেগে গেলেও যারা ক্ষমা করে। এখানে আল্লাহ কিন্তু বলেননি, রেগে গেলে চুপ থাকে বা রেগে গেলে শান্ত থাকে। বরং তিনি বলেছেন রেগে গেলেও ক্ষমা করে দেয়ার কথা। সুবহানাল্লাহ! একজন মুমিন বান্দার কাছে আল্লাহ ক্ষমাশীলতা আশা করেন। অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করার অনুমুতি আল্লাহ দিয়েছেন, কিন্তু সেটার উদ্দেশ্য হলো সমাজে ন্যায়বিচার স্থাপন করা। কিন্তু যারা প্রতিশোধ না নিয়ে বরং আল্লাহর জন্য ক্ষমা করে দিবে, তাদের জন্য আল্লাহ পরের আয়াতে একটা সুসংবাদ দিয়েছেন।
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেনঃ “যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে; নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন নাই।” [৪] অর্থাৎ, ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিশোধ না নিয়ে বরং যে ক্ষমা করে করে, তার পুরষ্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। কেমন এই পুরষ্কার? সেকথা পূর্ববর্তী আয়াতেই আল্লাহ জানিয়েছিলেন — যা হলো উৎকৃষ্ট এবং স্থায়ী। আর এই পুরষ্কার আল্লাহ বরাদ্দ রেখেছেন তাদের জন্যই যারা আল্লাহর উপর প্রকৃতই ভরসা করে, তার প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং ব্যক্তিগত ক্ষতিতে রেগে না গিয়ে ক্ষমা করে দেয়। সেই পুরষ্কার তো শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার!!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে তার নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করার যোগ্যতা এবং তাওফিক দান করুন। আমাদেরকে সেই দলের অন্তর্ভুক্ত করে নিন, যাদের তিনি ভালোবাসেন, পছন্দ করেন। আল্লাহ আমাদের রেগে গেলেও ক্ষমা করার যোগ্যতা দান করুন যেন এই কাজের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি আমরা অর্জন করতে পারি, তার পুরষ্কার লাভ করতে পারি। আমিন।
নির্ঘন্টঃ
[১] [২] আল কুরআন — সূরা আশ-শুরাঃ ৩৬
[৩] আল কুরআন — সূরা আশ-শুরাঃ ৩৭
[৪] আল কুরআন — সূরা আশ-শুরাঃ ৪০
নুমান আলী খানের ১০ মিনিটের লেকচার, ইউটিউব ভিডিও
[১] [২] আল কুরআন — সূরা আশ-শুরাঃ ৩৬
[৩] আল কুরআন — সূরা আশ-শুরাঃ ৩৭
[৪] আল কুরআন — সূরা আশ-শুরাঃ ৪০
নুমান আলী খানের ১০ মিনিটের লেকচার, ইউটিউব ভিডিও