দেনমোহর :: [প্রথম পর্ব]

পরম করুনাময় আল্লাহ্ এর নামে শুরু করলাম

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালই আছেন, আমি ও আমরা আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহ্র অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছি। তবে আর কথা বাড়িয়ে লাভ কি? বেশি কথা না বাড়িয়ে কাজের কথায় আসি।
———————————————————————————————————————————————————-

দেনমোহর

মহর এর আভিধানিক অর্থঃ 

মহর শব্দটি আরবী। হিব্রু ভাষায় “মহর” এবং সিরীয় ভাষায় মাহরা বলে। অর্থ হল, বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে (কনের) প্রাপ্য হক। শরীয়তের পরিভাষায়; বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে স্ত্রীকে স্বামী কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে প্রদত্ত মাল বা সম্পত্তিকে মহর বলে। যা প্রাপ্ত হওয়ার পর একমাত্র স্ত্রীর নিজস্ব সম্পত্তি স্বরুপ গণ্য হবে।

মহর এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাঃ

ইসলামী শরীয়তে ‘মহর’ এর গুরুত্ব কী, তা হৃদয়ংগম করার জন্য ফকীহদের সর্বসম্মত নিম্নেউল্লিখিত সিদ্ধান্ত ও বিধানটি লক্ষ্য করুন। মহর দেয়া ফরয। নির্ধারিত হলেও, নির্ধারিত না হলেও। এমনকি পক্ষদ্বয় যদি ‘মহর’ প্রদান না করার স্পষ্ট শর্তে বিবাহ সম্পন্ন করে অথবা বলে আমি তোমার বোন/কন্যাকে বিবাহ করব এবং তুমি আমার বোন/মেয়েকে বিবাহ কর যাতে মহরের দায়িত্ব কারে থাকবে না, তথাপি শর্তটি গোড়াতেই বাতিল ও অকার্যকর বলে পরিগণিত হবে। কারণ ‘মহর’ শরীয়াত নির্ধারিত অধিকার। পক্ষদ্বয়ের কোন শর্ত একে অদেয় সাব্যস্ত করতে পারবে না। এমতাবস্থায় বিবাহের পর মহর ধার্য করতে হবে, নতুবা মহরে মিছিল প্রদান ওয়াজিব হবে।

মহর সম্পর্কে স্ত্রীর ভুল ধারণঃ

মহর সম্পর্কে আমাদের মুসলিম সমাজে বেশ কিছু কুসংস্কার ও কুপ্রথার প্রচলন রয়েছে। আমাদের সমাজের অধিকাংশ বধূ মহরের গুরুত্ব, তাৎপর্য সম্পর্কে কিছুই জানে না। ফলে বিষয়টিকে বিয়ের সাথে একটি রসম ও প্রথা বলে মনে কর্। ফলশ্রুতিতে বধূরা ‘মহর’ থেকে বঞ্চিত হয়।পিতা-মাতার উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। পিতা-মাতার উত্তারাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে, স্বামী, সমাজ কর্তৃক নিগৃতা, পত্যিাক্তা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। ফুটপাতে, পুতি গন্ধময় বস্তীতে, নিষিদ্ধ পল্লতে বঞ্চিতা নারীর সংখ্যা লক্ষ লক্ষ; মানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল একবার বরপোর্ট দিয়েছিল, বাংলাদেশে পতিতা বৃত্তিতে নিয়োজিত আছে ২০ লক্ষ মহিলা। এদের সাক্ষৎকার নিলে জানা যেত যে, কত সংখ্যক মহিলা তাদের শারীয়া নির্ধারিত হক থেকে বঞ্চিতা হয়ে জাহান্নামের এ রাস্তায় পা বাড়িয়েছে। দুর্ভাগ্যের ও চরম করংকের এ অবস্থা থেকে মেয়েদের বাচোনোর জন্য তাদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকার ও হক সম্পর্কে সজাগ, সচেতন করা ও জ্ঞান দান করা দরকার। মহর একটা মেয়ের আর্থিক অগ্রমি নিরাপত্তা। সংকটকালে সে যেন এ সম্পদ ব্যবহা করে সম্মানজনকভাবে জীবন যাপন করতে পারে, তার জন্যে এ ব্যবস্থা।
বাহ্যত মেয়েরা জন্ম থেকে সংসারে বড় হয; বাবা/ভাইরা তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালন করে। বিয়ে হলে সে দায়িত্ব স্বামীর। স্বামী বিহনে ছেলে সন্তানদের দায়িত্ব। কিন্তু এমন একটা অবস্থা হতে পারে, যখন তার বাবা, ভাই নেই; থাকলেও তারা দায়িত্ব গ্রহণে অক্ষম।
স্বামী মারা গেছে অথবা স্বামী কর্তৃক তালাক প্রাপ্তা হয়েছে। ছেলে সন্তান নেই, আর থাকলেও দায়িত্ব নেয় না বা নিতে অক্ষম। এমন অবস্থায় একজন নারী যেন পথে নামতে না হয়, সেজন্য ইলাম মহর, পিতার সম্পদের ভাগী, স্বামীর সম্পদের ভাগী, ছেলের সম্পদের ভাগী, ভাইয়ের সম্পদের ভাগী জরেছে। তার পরও সমস্যা হলে ইসলম সরকারের উপর তার দায়িত্ব অর্পণ করে। যেমনটি-রাসূল (সাঃ) ঘোষণা করেছিলেন,যে ব্যক্তি ঋণ বা অসহায় স্ত্রী  সন্তান রেখে মারা গেল; তার ঋণ পরিশোধ ও স্ত্রী,সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আমার সরকারের উপর। উক্ত অধিকারগুলো যথাযথাভাবে একজন মেয়ে বুঝে পেলে, সংকটকালে তাকে পথে নামতে হবে না। সে সম্মানজন জীবন যাপন করতে পারবে। কিন্তু আমাদের সমাজে এর যথাযথ বাস্তবায়ন না থাকায় কত নারী যে বঞ্চিত, লাঞ্চিত, অপমানিত হয়ে নিরুদ্ধেশ হচ্ছে, কত যে হারিয়ে যাচ্ছে, সভ্য সমাজ থেকে নেমে যাচ্ছে অন্ধকার জীবরে; কত যে আত্মহত্যার মালা বরণ করে নিচ্ছে, কত মা বোন যে খুনের শিকার হচ্ছে, তার পরিসংখ্যান কেউ বলতে পারবে না। জাতির অর্ধেক নর; অর্ধেক নারী। নারীর অধিকার লঙ্ঘিত হলে নরের শান্তি দুরাশা মাত্র। আমার বোন/মেয়ে কষ্ট পেলে আমি শান্তিতে থাকব কি করে ভাবা যায়? তােই মেয়েদের অধিকার সচেতন করে গড়ে তোলা একান্ত আবশ্যক। নারী যেন স্বামীর নিকট থেকে তার শারীয়া: নির্ধারিত হক আদায় করে নেয়। এখানে লোকোচুরি বা লজ্জার কিছু নেই। এটা তার আইন সম্মত অধিকার।

স্ত্রীর সঙ্গে মোহর নিয়ে প্রতারণার কৌশলঃ

আমাদের সমাজে মোহর নিয়ে নানা রকম কুসংস্কার আছে। এর একটি হচ্ছে- স্ত্রীর কাছ থেকে ছলে-বলে, কলে-কৌশলে মাফ চেয়ে মোহর মাফ করিয়ে নেয়া।
দেশের কোন কোন অঞ্চলে এ কু-প্রথা চালু আছে যে, বিয়ের রাতেই স্ত্রীর কাছ থেকে মোহর মাফ করিয়ে নেয়া। দাদা,নানা, ভগ্নিপতি, দাদি,নানিরা শিখিয়ে দেন বরকে যে, প্রথম রাতেই মাফ চেয়ে নিও। ফলে (ক) অভিভাবক মনে করেন, মোহর মোটা অংকের নির্ধারিত হলে কি হবে, ছেলে মাফ চেয়ে নিবে অথবা না দিলেও চলবে। এই নির্ভরতায় মোটা অংকের মোহর মেনে নেন। (খ) ছেলে শেখানো পথে মাফ চেয়ে নেয়। (গ) মেয়ে যেহেতু মোহরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে কিছুই জানে না এবং প্রথম প্রথম সে মানসিকভাবে দুর্বল থাকে এবং অতি স্বাভাবিক ভাবেই সেই সময়ে সে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়ার অবস্থা ও অবস্থানে থাকে না। এমন অবস্থায় সে তার স্বামীকে মাফ করবে না, তা বলতে পারে না। (ঘ) বাসর রাতে আবেগ উচ্ছাস আর স্বামী নামক স্বপ্নের রাজপুরুষ, হৃদয় রাজ্যের প্রাণ পুরুষ, সারা জীবনের সঙ্গী যখন মোহর মাফ চায়, তো সে রেওয়াজ মোতাবেক মাফ করে দেয়ার সম্মতি দেয়। সে বুঝতে পারে না যে, এ ভালবাসা, আবেগ আর উচ্ছাস স্থায়ী নাও থাকতে পারে। মোহর নিয়ে এরুপ নাটক করার জন্য আল্লাহ কুরআনের আয়াত নাযিল করে মোহর ফরয করেননি; বরং পরিশোধযোগ্য করেছেন।
—————————————————————————————————————————————————————————————

পরবর্তী পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন

তাহলে আজ এই পর্যন্তই আলোচনা রাখলাম, আবার পরবর্তি পোষ্ট নিয়ে খুব তারাতারিই আপনাদের মাঝে হাজির হব, ততক্ষন আমাদের থাকুন।
ভাল লাগলে কমেন্টে জানাতে ভুলবে না…
ভুলে ভরা জীবনে ভুল হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়,যদি আমার লেখার মাঝে কোন ভুলত্রুটি থাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাই ভাল থাকবেন।
আমাদের অফিসিয়াল পেজ সবকিছু২৪ ডট কম

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »