পবিত্র মাহে রমজান এবং মাহে রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য ! (১ম খন্ড)

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি আমাদেরকে নিয়ামত হিসেবে দিয়েছেন সৎকাজ করার বিভিন্ন মৌসুম। যিনি রমজানকে করেছেন মহিমান্বিত, বরকতময়। যিনি উৎসাহ দিয়েছেন মাহে রমজানে ইবাদত-বন্দেগী যথার্থরূপে পালন করতে। পুণ্যময় কাজসমূহে অধিকমাত্রায় রত হতে। আমি আল্লাহর প্রশংসা করছি তার অফুরান নেয়ামতের জন্য।  শুকরিয়া করছি তাঁর অঢেল করুণার জন্য। দরুদ ও সালাম তাঁর প্রতি যিনি নামাজ ও রোজা আদায়কারীদের মধ্যে ছিলেন সর্বোত্তম। যিনি তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল সম্পাদনকারীদের মধ্যে ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তার প্রতি রহমত ও বরকত নাযিল করুন। তাঁর সাহাবাদের প্রতিও রহমত বর্ষণ করুন। তাবেয়ীন ও ঐকান্তিকতার সাথে, পৃথিবীতে আলো অন্ধকার যতদিন থাকবে, ততদিন যারাই তাদের অনুসরণ করবে তাদের সবার প্রতি বর্ষিত হোক আল্লাহর অফুরান রহতম ।
আল্লাহ তাআলা বড়-বড় উপলক্ষ্য রেখেছেন যা হৃদয়ে ইমানকে শানিত করে, অন্তরাত্মায় আন্দোলিত করে উচ্ছ্বসিত অনুভূতি। অতঃপর বাড়িয়ে দেয় ইবাদত আরাধনার অনুঘটনা, সঙ্কুচিত করে দেয় সমাজে পাপ ও অন্যায়ের ক্ষেত্রসমূহ । রমজান মুসলমানদেরকে দেয় ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, স্বচ্ছতা, সহমর্মিতা, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা,পবিত্রতা, উত্তমতা, সবর ও শৌর্যবীর্যের দীক্ষা। ইহা একটি সুমিষ্ট পানিয়ের প্রস্রবণ। ইহা ইবাদতকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ভূমি, আনুগত্যকারীদের জন্য দুর্পার দুর্গ। যারা পাপী তাদের জন্য ইহা একটি সুযোগ, যাতে তারা তাদের গুনাহ থেকে তাওবা করতে পারে। তাদের জীবন-ইতিহাসে  স্বচ্ছ কিছু অধ্যায় রচিত করতে পারে। তাদের জীবনকে ভরে দিতে পারে উত্তম আমলে, উৎকৃষ্ট চরিত্রে।
রমজানের ফজিলত:-
কালের বিবেচনায় এসব উপলক্ষ্যের  মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট, সম্মানের বিবেচনায় সর্বশ্রেষ্ঠ, প্রভাবের বিবেচনায় সুদূর বিস্তৃত উপলক্ষ্য হল সম্মানিত  মাহে রমজান যার টলটলে রস আস্বাদন করে আমরা হই পরিতৃপ্ত । চুমুকে চুমুকে তুলে নিই তার মধু। নাক ভরে শুঁকে নেই তার সুগন্ধি। মাহে রমজান ছাওয়াব-পুণ্য বহুগুণে বেড়ে যাওয়ার মাস। দরজা বুলন্দ হওয়ার মাস। পাপ-গুনাহ মোচন হওয়ার মাস। পদস্খলন থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মাস। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে আবদ্ধ করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে রোজা রাখবে, তারাবিহ পড়বে ইমান ও ছাওয়াব লাভের আশায়, তার অতীত জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। সহিহ হাদিসে এভাবেই এসেছে: আবু হুরায়রা (রাযি) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতেসাব – আল্লাহর কাছ থেকে ছাওয়াব প্রাপ্তির আশায় সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।[ বুখারি ও মুসলিম] { যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতেসাবসহ রমজানের রাত্রি যাপন করবে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। [ বুখারি ও মুসলিম]
মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ: রমজান মুসলমানদের জন্য বিশাল এক আনন্দের মাস। মহাকালের পরিক্রমায় ঘুরে ঘুরে আসে রমজান। আসে এই সম্মানিত মৌসুম। আসে এই মহান মাস। আসে প্রিয় মেহমান হয়ে, সম্মানিত অতিথি হয়ে। এই উম্মতের জন্য মাহে রমজান আল্লাহর এক নেয়ামত।  কেননা এ মাসের রয়েছে বহু গুণাবলি, বৈশিষ্ট্য। আবু হুরাইরা (রাযি) হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে: {যখন রমজান আসে বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে শিকল পড়িয়ে দেয়া হয়। [ বুখারি ও মুসলিম]
এটা নিঃসন্দেহে বড় সুযোগ। এটা এক সম্মানিত উপলক্ষ্য যেখানে স্বচ্ছতা পায় অন্তরাত্মা। ধাবিত হয় যার প্রতি হৃদয়। যাতে বেড়ে যায় ভাল কাজ করার উৎসাহ-উদ্যম। উন্মুক্ত হয়ে যায় জান্নাত, নাযিল হয় অফুরান রহমত। বুলন্দ হয় দরজা, মাফ করা হয় গুনাহ।
রমজান  তাহাজ্জুদ ও তারাবির মাস। যিকির ও তাসবিহর মাস। রমজান কুরআন তিলাওয়াত ও নামাজের মাস। দান সাদকার মাস। যিকির-আযকার ও দুআর মাস। আহাজারি ও কান্নার মাস।
যে কারণে রমজান আমাদের প্রয়োজন:-
মুসলিম ভাইয়েরা ! জাতির জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত হওয়া জরুরি যখন আত্মার পরিশুদ্ধি ও তৃপ্তি সম্পন্ন হবে। যখন ইমানের মাইলফলকগুলো নবায়ন করা হবে। যা কিছু নষ্ট হয়েছে তা সংস্কার করা হবে। যেসব রোগব্যাধি বাসা বেঁধেছে তা সারিয়ে তোলা হবে। রমজান সেই আধ্যাত্মিক মুহূর্ত যেখানে মুসলিম উম্মাহ তাদের বিভিন্ন অবস্থা সংস্কার করার সুযোগ পায়, তাদের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানোর সুযোগ পায়। তাদের অতীতকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ পায়। এটা আত্মিক ও চারিত্রিক বল ফিরিয়ে আনার একটি মাস। আর এ আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক শক্তি ফিরিয়ে আনা প্রতিটি জাতিরই কর্তব্য। মুসলমানরা এ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকে অধীর আগ্রহে। এটা ইমান নবায়নের একটা বিদ্যাপীঠ। চরিত্র মাধুর্যমণ্ডিত করার সময়। আত্মাকে শান
আমরা কীভাবে রমজানকে স্বাগত জানাব?
প্রিয় ভাইয়েরা! আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে আমাদেরকে প্রথমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। সকল পাপ-গুনাহ থেকে তাওবার মাধ্যমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। সকল প্রকার জুলুম অন্যায় থেকে বের হয়ে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। যাদের অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তাদের কাছে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। ভাল কাজের মাধ্যমে রমজানের দিবস-রজনী যাপনের মানসিকতা নিয়ে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। এ ধরনের আবেগ অনুভূতির মাধ্যমেই আশাসমূহ পূর্ণ হয়। ব্যক্তি ও সমাজ তাদের সম্মান ফিরে পায়। এর বিপরীতে রমজান যদি কেবলই একটি অন্ধ অনুকরণের বিষয় হয়। কেবলই কিছু সীমিত প্রভাবের নিষ্প্রাণ আচার পালনের নাম হয় । যদি এমন হয় যে রমজানে, পুণ্যের বদলে, পাপ ও বক্রতা কারও কারও জীবনে বেড়ে যায়, তবে এটা নিশ্চয়ই একটি আত্মিক পরাজয়, এটা নিশ্চয় শয়তানের ক্রীড়া, যার বিরূপ প্রভাব ব্যক্তি ও সমাজের উপর পড়তে বাধ্য।
এই মহান মাসের আগমনে মুসলমানদের জীবনে আসুক সুখ ও সমৃদ্ধি। সারা পৃথিবীর মুসলমানদের জীবনে এ মহান মৌসুমের আগমনে বয়ে যাক আনন্দের ফল্গুধারা। যারা আনুগত্যশীল, এ মাস তাদের নেক কাজ বাড়িয়ে দেওয়ার। যারা পাপী, তাদের জন্য এ মাস পাপ থেকে ফিরে আসার। মুমিন বেহেশতের দরজাসমূহের উন্মুক্তিতে খুশি না হয়ে পারে না? পাপী, দোযখের দরজাসমূহ এ মাসে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুশি হবে বই কি। এ এক বিশাল সুযোগ যা থেকে মাহরুম ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেও বঞ্চিত হয় না। সিয়াম ও কিয়ামের মাস রমজানের আগমন মুসলমানদের জন্য বিরাট সুখের সংবাদ। অতঃপর হে আল্লাহর বান্দারা আপনারা সিরিয়াস হোন, ঐকান্তিক হোন, রোজাকে কখনো কঠিন ভাববেন না। রোজার দিবসকে দীর্ঘ মনে করবেন না। রোজা ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকুন। আত্মিক ও বস্তুকেন্দ্রিক সকল প্রকার রোজাভঙ্গকারী বিষয় থেকে বিরত থাকুন।
পরের খন্ড

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »