“ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কার কথা উত্তম যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি তো মুসলিমদের একজন।” ( সূরা ফুসসিলাত: ৩৩)

আজ আমাদের অনেক মুসলিম ভাই-বোনেরা অনলাইনে প্রচুর সময় ব্যয় করছে। আর তাদের বেশিরভাগই যুবক-যুবতী। আর যেহেতু আমরা মুসলিম তাই আমাদের সামনে ইসলাম রেখে এগিয়ে যাওয়াটাই স্বভাবিক। অথচ আজ বেশির ভাগ ছেলে-মেয়ে অনলাইনকে নিজের বিনোদনের ক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করে নিয়েছে। আবার অনেক মুসলিম ভাইয়েরা এই অনলাইনে ইসলাম প্রচারকে ইসলাম পরিপন্হি বলে ফতোয়া দিচ্ছেন। আসলে এতসব জঞ্চাল এর মধ্যে অনলাইনকে একজন মুসলিমের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে নেওয়া আসলেই কঠিন।
_____প্রথমেই আসি যেসব মুসলিম ভাইয়েরা অনলাইনে ইসলাম প্রচারকে ইসলাম পরিপন্হি বা বিদ’আত বলে আখ্যায়িত করেন তাদের ভাবনার জবাবে।
সকল সহীহ হাদীছ এর আলোকে আমরা জানি বিদ’আত হল এমন আমল ‘যা ছাওয়াব এর উদ্দেশ্যে করা হয় অথচ রাসূল(সা:) ও সাহাবে কেরামরা করেন নাই’।
এখন যদি দেখি ফেইসবুক রাসূল (সা:) এর জমানায় ছিল না কিন্তু দ্বীনের দাওয়াত ছিল। আর রাসূল(সা:) কে পৃথিবীতে পাঠানোই হয়েছে মানুষ জাতিকে সঠিক ধর্মের(ইসলাম) দিকে দাওয়াত দিতে। আর যারা অনলাইনে ইসলাম প্রচার করে তারা শুধু ইসলাম এর দিকে ডাকার জন্যই এইসব ফেইসবুক, ব্লগ বেছে নিয়েছে। অর্থাৎ এটা একটা সুন্নাত। যা প্রত্যেক মুসলিমের অপরিহার্য দায়িত্ব। তাইতো মহান আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে উল্লেখ করেন,
“ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কার কথা উত্তম যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি তো মুসলিমদের একজন।” ( সূরা ফুসসিলাত: ৩৩)
________এবার আসি যারা অনলাইনে অযথা সময় নষ্ট করছেন তাদের জন্য। আজ অনলাইনে ইসলামকে গালিসহ ইসলাম প্রচারে মিথ্যা বলার অন্ত নেই। তবে আমি অবাক হই যখন কোন মুসলিম সন্তান ১৮+ পোস্টে লাইক দেয় আর তা আমার wall এ show করে। কি করে মানুষের মানসিকতা এত নিচে নামতে পারে। আর যারা এইসব ১৮+ পেইজ চালাচ্ছে তারা কি মৃত্যুর কথা ভাবছে না। ধরে নিলাম তারা পথভ্রষ্ট। তাই বলে কি আপনিও তাদের এইসব page এ লাইক দিয়ে অশ্লীলতাকে ছড়িয়ে দিবেন?
আজ আপনাদের জন্য অনলাইন জগতে সদ্য পা রাখা নতুন বাচ্চাটিও মানসিকতা ঠিক রাখতে পারছে না। তারা অনলাইন বুঝে উঠার পূর্বেই এইসব বেহায়াপনার দেখা পাচ্ছে। মনে রাখবেন আপনার পেইজ, লাইক আর কমেন্ট এর জন্য যত ছেলে -মেয়ে নষ্ট হবে তাদের কাছ থেকে কিছু অংশ পাবেন। যা আপনার জাহান্নামের যন্ত্রণা দীর্ঘ করতে পারে। এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
“যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না”। [সুরা নুর: ১৯]
________এবার আসি আমার কিছু দুর্বল ঈমানদার মুসলিমদের কথা বলি। তারা ভালও হতে চায় আবার শয়তানের সাথেও পেরে উঠছে না। তাদেরকে দেখা যায় ইসলামিক পেইজের পোস্টেও লাইক দেয় আবার ১৮+ পোস্টও মিস করে না। আসলে জানার অভাব। অর্থাৎ সঠিকভাবে জানার মধ্যেই কেবল ইসলামকে উপলব্ধি করা যায়। তারা বেঝে না ইসলাম কখনো অন্যায়ের সাথে সমঝোতা করে না। যারা এইসব পাঁচমিশালী কাজ করছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলি, এক বালতি দুধে যদি এক ফোঁটা পস্রাব পরলে তা খাওয়ার অযোগ্য তেমনি ইসলামে অন্যায় কিছু মিশালে তাও বর্জনীয়। তবে মহান আল্লাহ নিতান্তই ক্ষমাশীল। আর তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوَءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٍ فَأُوْلَـئِكَ يَتُوبُ اللّهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللّهُ عَلِيماً حَكِيماً
“অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ।”(সূরা আন নিসা-১৭)
_______এবার আসছ মূল কথায়, আমাদের অনেক ভাই ইসলামের দাওয়ায় নিঃস্বার্থ কাজ করে যাচ্ছেন। আর তাদের পাশাপাশি অনেক বোনও এই কাজ করছেন। তারা তাদের চেষ্টা করে যাচ্ছেন, আর আমাদের উচিৎ তাদের এই কাজকে মূল্যায়ন করা। আর এই দ্বিনী ভাইদের পাশাপাশা দ্বিনী বোনদেরকেও তাদের ইসলামের প্রচারণার জন্য জানাই হাজার সালাম। আল্লাহ যেন তাদের জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে এইসব ভাই বোনদের উদ্দেশ্যে আরেকটি কথা বলে নেই, আপনাদের ইসলামের খেদমতে যা করবেন তা যেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই হয়। তাদের উদ্দেশ্যে রাসূল(সা:) এর একটি বানী-
জুন্দাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার কৃতকর্মের সুনামের লোক সমাজে প্রচার করে বেড়ায়, আল্লাহ্ কেয়ামতের দিন তার কৃতকর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্যের লোকদেরকে জানিয়ে ও শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে এ কাজ (সৎকাজ) করবে, আল্লাহ্ কেয়ামতের দিন তার প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকদের মাঝে প্রকাশ করে দিবেন।” [বুখারী: ৬৪৯৯]
_________আর এই দাওয়াত দেওয়া মানুষদের সম্পর্কে আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন মহান আল্লাহ। আর তা আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই মানতে হবে। দেখি ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ কি বলেন,
“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তাওবা: ৭১)
অর্থাৎ আমাদেরকে সৎকাজের পাশাপাশি অসৎ কাজের নিষেধ করতে হবে। আর তখনই আমারা হতে পারব মুমিন। আর তার জন্য আমাদেরকে ইসলাম বুঝে তা সবাইকে বুঝাতে হবে। আর তা মানা না মানা ঐ ব্যক্তির ব্যপার। তবে অন্যায়ের নিষেধ করতেই হবে। যতটুকু শক্তি আছে তার সর্বোচ্চ দিয়ে অন্যায়কে থামানোই মুমিনের কাজ।
_____পরিশেষে সকল মুসলিম ভাইদের সম্পর্কে একটা কথাই বলি আপনাকে সৃষ্টি করার মূল উদ্দেশ্য হল একটাই ইসলামকে মেনে নেওয়া। আর আপনি যদি এই খুদে অনলাইনেও এই ইসলাম ছেড়ে শয়তানের ইবাদত করেন তারও সুক্ষ্ম হিসাব দিতে হবে। অনলাইনে শয়তানের ইবাদত মানে ?
অশ্লীল পেইজে লাইক, অশ্লীল পোস্ট পড়া, ইসলামের বিরুধীদের সাথে বন্ধুত্ব, বান্ধবীদের সাথে রাত জেগে চেটিং, মেয়েরা নিজের সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য ছবি শেয়ার সহ আরো অনেক……
এতসব শয়তানি কর্মকান্ড নিজে ত্যগ করে অন্যকেও সচেতন করাই একজন মুসলিমের জরুরী দায়িত্ব।
” আমি মানব ও জীন জাতিকে কেবলমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।” –[সূরা যারিয়াত,আয়াতঃ ৫৬]

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »